বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণা কিংবা প্রগতিবাদী ভাবনা এসবকে বড্ড অসামাজিক কাজ বলে আপনাকে বোঝাতে চাইবে। কীভাবে আপনি একজন মানুষকে দরোজা থেকে বিদেয় করে দিতে পারেন? কিংবা ফিরে আসতে পারেন কারো দোরগোড়া থেকে? আদতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তো স্পষ্ট করেই বলেছেন, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আমাদের কল্যাণ কীসে, তা আমাদের রব-ই ভালো জানেন; কিন্তু আমাদের রবের আদেশকে পাশ কেটে অন্য কিছুতে, অন্য কোথাও যখন আমরা আমাদের কল্যাণ খুঁজতে যাবো, হতে পারে সেটাই আমাদের জন্য জাহান্নামের চৌরাস্তা।
ছয়.
আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা, পারিপার্শ্বিক রীতি-নীতিতে আমরা এতটাই বেশরম আর বেখবর হয়ে আছি যে, আমাদের কাজকর্মগুলো কখন যে ইসলামের সীমাতিক্রম করে চলে যাচ্ছে, সেই হুঁশ আমাদের নেই। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আমরা হারামের মাঝে ডুবে থাকছি, হারাম দেখছি, হারাম কাজ করছি, হারাম খাচ্ছি, কিন্তু কী আশ্চর্য, আমাদের এতে কোনো চৈতন্য নেই। নেই কোনো ভাবান্তর! আমরা যা করছি তা ইসলামের মাপকাঠিতে কতখানি ঠিক আর কতখানি ভুল, তা ভেবে দেখার, তা পরখ করে নেওয়ার কোনো তাড়না আমরা অনুভব করি না। আমাদের চকৃতকর্মের জন্য আখিরাতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে, সেই ভয়ে আমরা শিউরে উঠি না। যুগের জাহিলিয়াত আমাদের এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলেছে যে, সমস্ত অধার্মিকতা, সমস্ত অ-ইসলামি কার্যকলাপ, সমস্ত অবাধ্যতা এখন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। আমরা এতে খুব সুন্দর আর পরিপাটিভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
পর্দা এবং দৃষ্টি হিফাযতের গুরুত্ব আর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনের পর থেকে পারতপক্ষে আমাদের সমাজের তথাকথিত বিবাহ-আয়োজনগুলোতে না যাওয়ার চেষ্টা করি সাধারণত। কারণ আমাদের মধ্যে জাহিলিয়াত কতটা শক্তপোক্ত আসন গেঁড়ে বসেছে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই সমস্ত বিয়ে-বাড়ি।
কনে সেজেগুজে স্টেজে বসে আছে আর ফটোগ্রাফাররা নানান ভঙ্গিতে, নানান। এঙ্গেলে কনের ছবি উঠাচ্ছে। কখনো দূর থেকে, কখনো কাছ থেকে। শুধু তো ভাড়া করে আনা ফটোগ্রাফাররাই নয়, আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনগুলোও এখানে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে। স্টেজে বসে থাকা কনের শারীরবৃত্তীয় সকল কলা আমাদের ক্যামেরাগুলোতে ধরা পড়ে। এরপর সেসব ছবি আমাদের বদৌলতে বিভিন্ন মনোহর আর মনকাড়া ক্যাপশনে ছড়িয়ে পড়ে ভাচুয়ালে। হাজার-লক্ষ চোখ আর দৃষ্টির ভেতর দিয়ে যেতে যেতে, কনেকে নিয়ে কত হাজার রকমের চিন্তা যে অন্তরগুলোতে দানা বাঁধে সেই হিশেব কোথাও মিলবে না।
আপনি যদি বলতে চান কিংবা আপনাকে যদি বলা হয়–যে ফটোগ্রাফাররা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে, তারা কেনই-বা এমন কুৎসিত, বিদঘুঁটে চিন্তা করতে যাবে, তাহলে আপনি ভুল করছেন। আপনার মনে রাখা উচিত–এরা পুরুষ, ফেরেশতা নয়। মানুষের ভদ্রস্থ পোশাক কিংবা মার্জিত চেহারা দেখে বিভ্রান্ত হতে নেই। একেবারে। আড়ালে, একান্ত গোপনে, নিবিড় নির্জনতায় তারা যে কল্পনার কোন কোন রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়, ইন্টারনেটের কোন অলি-গলিতে ঘোরাফেরা করে, তা আমি আর আপনি কি জানি? একটা সরল চেহারার ওপাশে কোন কুৎসিত চিন্তা আর লোলুপ দৃষ্টিটা লুকিয়ে আছে, সেই সংবাদ তো আমাদের কাছে পৌঁছায় না। তাই সাবধান হতে হবে আমাকে। আমি কারো বাবা কিংবা ভাই। আমার মেয়েকে স্টেজে বসিয়ে হাজারো পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচাতে, আমার বোনকে হাজারো পুরুষের অসংলগ্ন ভাবনা থেকে রক্ষা করতে, ওয়েডিং ফটোগ্রাফির মতো . এমন জাহিলিয়াতকে, এমন তথাকথিত সামাজিকতাকে সাহস করে রুখে দিতে হবে। সামাজিকতার নামে, আধুনিকতার নামে গজিয়ে ওঠা এই উদ্ভট ফিতনাকে মোকাবেলা করতে হবে আমাদের নারীদেরকেই। তাদের ঠিক করতে হবে– ওয়েডিং ফটোগ্রাফির নাম করে হাজারো পুরুষের খায়েশ পূরণের সামগ্রী তারা হতে চায় কি না? সাহস করে তারা যদি ‘না’ বলতে পারে, যুগের এই জাহিলিয়াত তখন অনেকখানি রুখে দেওয়া সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।
সাত.
বাইরে বেরোলে একটা দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। কোনো আঙ্কেল-আন্টি তাদের মেয়েকে নিয়ে হয়তো শপিংয়ে এসেছেন। আঙ্কেলের মুখে চাপ দাঁড়ির রেশ দেখা যায় এবং আন্টি থাকেন বোরকা পরিহিত অবস্থায়, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য–তাদের ষোড়শী কন্যা, যে কিনা বিয়ের উপযুক্ত, তার গায়ে বোরকা-হিজাবের নাম-গন্ধও থাকে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়–বোরকা-হিজাবটাকে তারা হয়তো-বা বয়সের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয়াদি ভেবে বসে আছেন। তারা হয়তো ভাবেন, বয়স বাড়লেই কেবল গায়ে বোরকা-হিজাব উঠাতে হয়। উর্বর তারুণ্যে, ভরা যৌবনে খোলামেলা চলাফেরাটাই তাদের কাছে কেমন যেন যুক্তিযুক্ত!
আমি যদি জিজ্ঞেস করি, আপনি কি দাইয়ুস হতে চান? আপনি হয়তো-বা প্রথমেই থতমত খাবেন। অবাক হয়ে পাল্টা জানতে চাইবেন, ‘দাইয়ুস কী?’
আপনি জানেন না দাইয়ুস কাকে বলে! কিন্তু নিজের অজান্তে, অগোচরে আপনি হয়তো দাইয়ুস হয়ে বসে আছেন। দাইয়ুস হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার অধীনস্থ নারীগণ বেপর্দা চলাফেরা করে।[9] অর্থাৎ, আপনি যখন পরিবারের বড় এবং দায়িত্ববান সন্তান, তখন আপনার মা যদি বেপর্দা চলাফেরা করে, কিন্তু আপনি তাতে বাধা