অনিচ্ছুক শিশুকে মা যেমন তার পুষ্টির জন্য লেগে পড়ে থেকে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে, ধরে বেঁধে দুধটুকু না খাইয়ে ছাড়েন না, শ্রীমাও তেমনই তার সন্তানদের মুক্তির জন্য লেগে পড়ে থেকে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে, ধরে-বেঁধে, আনন্দলোকের অমৃতস্বাদটি পাইয়ে তবে ছেড়েছেন।
যুগে যুগে, কালে কালে লোক-উদ্ধার করতে ঈশ্বরের অবতরণ ঘটে। সমাজ যখন আত্মবিস্মৃত হয়ে বিভ্রান্তির পথে ছোটে, কল্যাণ-অকল্যাণ, শ্রেয়-অশ্রেয়ের পার্থক্য হারায়, মানুষ শব্দটার অর্থ ভোলে, তখনই ঈশ্বরকে নেমে আসতে হয় আলোর মশাল ধরে অন্ধকার যুগকে পথ দেখাতে।
সময়সীমা পার হলেই লোকলোচন থেকে অন্তর্হিত হতে হয় তাকে, কিন্তু লোকমানসে যে শুভশক্তির বীজ বপন করে যান, তা সমকাল এবং দূরবর্তীকাল পর্যন্ত অন্ন যোগায়।
এমনই এক যুগসন্ধিকালে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর পুণ্য-আবির্ভাব অন্ধকারে পথ দেখাতে। দীপশিখা জ্বলতে থাকে গৃহকোণে বা দেহলীতে, তার আলোকরেখা বহুদুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তাই বাংলাদেশের ক্ষুদ্র গ্রাম কামারপুকুর-জয়রামবাটী থেকে বিচ্ছুরিত আলোকধারা পৃথিবী প্লাবিত করে।
আশ্চর্য এক সমন্বয়মন্ত্র দিলেন তারা যুগকে, কালকে, পৃথিবীকে। আর দিলেন ভালবাসা।
অগাধ অফুরন্ত ভালবাসা।
জ্ঞানী-পণ্ডিত, ত্যাগী-বৈরাগী, ভক্ত-শরণাগত, আবার মূর্খ-অজ্ঞানী, পাপী-তাপী, সকলের জন্যই রয়েছে তাঁর ভালবাসার ভাঁড়ার–দুহাট করে খোলা। ভালবাসাই তাঁর শিক্ষামন্ত্র।
সেই অফুরন্ত ভালবাসার সুনিবিড় স্নিগ্ধচ্ছায়ায় এসে বসতে পারলে, শান্তি আসে, সান্ত্বনা আসে, আর ভরসা আসে–আমরা গৃহহীন নই। আমাদের একটি আশ্রয় আছে।