৩. বরমান এতই গোপনে থাকতেন যে তাঁর সম্বন্ধে কেউই সবিস্তর কিছু লিখতে পারেননি। রনবের্গ মোকদ্দমায় সবাই তার বিরুদ্ধে গায়ের ঝাল ঝেড়েছেন বটে কিন্তু তথ্য বিশেষ কিছু দিতে পারেননি। এছাড়া আছে (১) বরমান লেটার্স– স্ত্রীকে লেখা বরমানের পত্রগুচ্ছ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর এগুলো প্রকাশিত হয়েছে। (২) ট্রেভার-রোপার লিখিত লাস্ট ডে অব হিটলার। (৩) প্রাগুক্ত হফমান লিখিত হিটলার উয়োজ মাই ফ্রেন্ড। (৪) গেরহার্ট বলটু কৃত ডি লেৎসতেন টাগে ড্যার রাইসকানৎসলাই (অর্থাৎ জর্মন প্রধানাবাসের শেষ কটি দিন)। এই বলটু হিটলার ভবন (মাটির গভীরের অ্যার রেড শেলটার– বুঙ্কার) ত্যাগ করেন হিটলারের মৃত্যুর মাত্র ছাব্বিশ ঘন্টা পূর্বে।
8. Goering too was a rare guest. Hitlers culinary confections he declared was not to his taste. But the lick-spittling Borman dutifuly consumed raw carrots and leaves in his masters company,–and then he would retire to the privacy of his own room and devour with relish his pork chop or a fine Wiener Schnitzel (calf cutlet); Hoffmann, p 202.
৫. অধিকাংশ লোকের বিশ্বাস, হিটলারের মৃত্যুর দু দিন পরে যখন বুঙ্কার রাশান সৈন্য দ্বারা অধিকৃত হয় তখন বুর্গড এবং ক্রেবস্ আত্মহত্যা করেন। বরমান পালান। গোড়ায় তাঁর সঙ্গে পলায়মান যারা পরে বন্দি হন তাঁরা বলেন, বরমান রাশান দ্বারা নিহত হন। পরে নানা সন্দেহের অবকাশ দেখা দিল। তাই আজ জর্মন সরকার এক লক্ষ মার্ক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তাঁর পলায়ন সম্বন্ধে সবিস্তার বর্ণনা, তিনি বেঁচে আছেন কি না সে সম্বন্ধে সবচেয়ে ভালো আলোচনা পাঠক পাবেন, ট্রেভার-রোপার লিখিত পুস্তকে, পৃ ২২১।
ল্যাটে
রদাঁগৎ কাকে বলে জানো?
একরকমের ফরাসি কোট। প্রায় ফ্ৰককোটের কাছাকাছি। এর বেশি কিছু জানি নে, কখনও দেখিনি।
শব্দটা– রাদার, সমাসটা– কোত্থেকে এসেছে?
আমার ইংরেজ বন্ধু সিরিল বেশভূষা বাবদে পয়লা নম্বরি, কিন্তু শব্দ, ভাষা এসব বাবদে তাঁর অণুমাত্র ইনট্রেসটু নেই। তাই একটু উৎসাহ দেখিয়ে বললুম, কোত্থেকে?
চেনবার জোটি নেই। ইংরেজি রাইডিং কোটের এই হল ফরাসি উচ্চারণ। শুধু তাই নয়, এতে আরও মজা। সেই রাগৎ যখন ফের বিলেতে এল তখন তার ইংরেজি উচ্চারণ হয়ে গেল রেডিংগট এবং ফ্রান্সে নবজন্মপ্রাপ্ত এ পোশাক এদেশে আবার এক নবজন্ম লাভ করে হয়ে গেল মেয়েদের পোশাক– পুরুষ আর এটি এদেশে পরে না, অন্তত এ নামে পরিচিত পোশাকটি পরে না। কিন্তু রাগৎ এখনও ফ্রান্সের ভারিক্কি পোশাক। তোমারও তো বয়স হতে চলল, আর যাচ্ছও ফ্রান্সে–
আমি বললুম, থাক, আমার সাদামাটা লাউনজ স্যুটেই চলবে।
***
ফ্রান্সের একটি জায়গা দেখার আমার অনেককালের বাসনা।
বহু বছর পূর্বে আমরা একবার মার্সেলস বন্দরে নামি। সঙ্গে ছিলেন দেশনেতা স্বর্গত আনন্দমোহন বসুর পুত্র ড, অজিত বসু ও তাঁর স্ত্রী শ্রদ্ধেয়া মায়া দেবী।
বড়ই দুঃখের বিষয় এই গুণী, জ্ঞানী কর্মবীর অজিত বসু সম্বন্ধে কেউ কিছু লেখেননি। আসলে ইনি চিকিৎসক ছিলেন কিন্তু তার জ্ঞানসাম্রাজ্য যে কী বিরাট বিস্তীর্ণ ছিল সেটা আমি আমার অতি সীমিত জ্ঞানের শিকল দিয়ে জরিপ করে উঠতে পারিনি।
তার কথা আরেকদিন হবে।
তখনকার মতো আমাদের উদ্দেশ্য ছিল জিনিভা যাওয়া। কিন্তু খবর নিয়ে জানলুম, সন্ধ্যার আগে তার জন্য কোনও থ্রু ট্রেন নেই।
গোটা মধ্য এবং পশ্চিম ইয়োরোপ তিনি চিনতেন খুব ভালো করে। এবং বিখ্যাত শহর হলেই তিনি ইয়োরোপের ইতিহাসে সে শহর কী গুরুত্ব ধরে ধাপে ধাপে বলে যেতে পারতেন, কারণ তার মতো পুস্তক কীট আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি।
বললেন, তার আর কী হয়েছে! চলুন, ততক্ষণে অ্যাকস্ হয়ে আসি। মাইল আঠারো পথ।
আমি বললুম, সে কী? অ্যাকস-লে-ব্যাঁ তো অনেক দূরে।
তিনি হেসে বললেন, আমার জানা মতে তিনটে অ্যা আছে। উপস্থিত যেটাতে যেতে চাইছি সেটা আগা খানের প্যারা জায়গা অ্যাক্স-লে-ব্যাঁ নয়– এটার পুরোনাম অ্যাকস–আঁ-প্রভাঁস!
আমি বললুম, প্রভাঁস? তা হলে এ জায়গাতেই তো আমার প্রিয় লেখক আলস দোদে তার লেটারজ ফ্রম মাই মিল লিখেছিলেন, এখানকারই তো কবি মিস্ত্রাল যিনি নোবেল প্রাইজ পান–
ড. বোস বললেন, পূর্ব বাঙলার যে লোকসাহিত্য আছে সেটা প্রভাঁসের আপন ফরাসি উপভাষায় রচিত সাহিত্যের চেয়ে কিছু কম মূল্যবান নয়। অথচ দেখুন, মিস্ত্রাল যে-রকম একটা উপভাষা– একটা ডায়লেকটে, অবশ্য আজ এটাকে ডায়লেকট বলছি–কাব্য রচনা করে বিশ্ববিখ্যাত হলেন, নোবেল প্রাইজ পেলেন, ঠিক তেমনি পুব বাঙলায় কেউ সেই ভাষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, গর্ব অনুভব করে, মিসূত্রালেরই মতো পরিশ্রম স্বীকার করে, সেটিকে আপন সাধনার ধন বলে মেনে নিয়ে নতুন সৃষ্টি নির্মাণ করে না কেন? জানেন, আমি বাঙাল?
ইতোমধ্যে যান এসে গেছে।
এদেশের বর্ণনা আমি কী দেব? অ্যাও নাকি দু হাজার বছরের পুরনো শহর। কই, মেয়েগুলোকে দেখে তো অত পুরনো বলে মনে হল না! তা হলে বলতে হয়, শহরটা দু হাজার বছরের নতুন।
পার্কের একটি বেঞ্চিতে বসে ভাবছিলুম, এই তো কাছেই তারাসক শহর যাকে বিখ্যাত করে দিয়েছেন দোদে তার তারতারা দ্য তারাসকঁ লিখে।(১) তারই পাশে ছোট্ট জায়গাটি– মাইয়ান (জানি নে, প্রভাঁসলে তার উচ্চারণ কী) যেখানে কবি মিস্ত্রাল তার সমস্ত জীবন কাটালেন। তারই মাইল সাতেক দূরে বাস করতেন দোদে– ভিয়েই গ্রামের কাছে। কবি মিত্রালের বর্ণনা লিখে একাধিক ফরাসি লেখক নিজেদের ধন্য মেনেছেন। কিন্তু অপূর্ব দোদের বর্ণনাটি –এক রোববারের ভোরে ঘুম থেকেই উঠে দেখেন, বৃষ্টি আর বৃষ্টি, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। গোটা পৃথিবীটা গুমড়ো মুখ করে আছে। সমস্ত দিনটা কাটাতে হবে একঘেয়েমিতে। হঠাৎ বলে উঠলেন, কেন, তিন লিগ আর কতখানি রাস্তা? সেখানে থাকেন কবির কবি মিস্ত্রাল। গেলেই হয়।