–আ
.
(২)
28.02.68
ভ্রাত ভানু,
আমি দুই ব্যাটাকে তাদের বাপপিতেমর ভিটে দেখাতে সিলেট গিয়েছিলুম। ফিরে এসে, তোমার কার্ডদ্বয় পেয়ে আনন্দিত হলুম। বড়বাবু সম্বন্ধে আমি আর নতুন কী বলব!
এবারে তিনশোটি টাকার একখানা চেক শ্রীমোহিত চৌধুরী, Bus Proprietor, Nicha Patti, Bolpur. এই ঠিকানায় রেজিস্ট্রি করে পাঠালে কৃতজ্ঞ থাকব। সঙ্গে সঙ্গে একখানা p.c–তে তাঁকে জানিয়ো, তাঁর নামে চেক গেল এবং টাকাটা আমার বাড়ি চালানোর খরচারূপে। তুমি যে আমার প্রকাশক সে খবরটাও দিয়ো।
বিমল মুখুয্যে (বড়দা)-কে ফোন (473419) করে জানিয়ে আমি মার্চের শেষ সপ্তাহে বা এপ্রিলে দেশে ফিরব। তাকে স্বয়ং পরে লিখব। গজেনদাকে নমস্কার ও তোমাকে শুভ ঈদের আলিঙ্গন।
আশীর্বাদক
সৈয়দ মুজতবা আলী
নিচের ঠিকানায় একখানা “বড়বাবু” পাঠাতে পারো?
Per Regd. Post
Pakistan National Oils Ltd.
A.S. Mahmud Esq.
Motijheel (মতিঝিল)
Dacca. E. Pak.
পুন. PC.-তে 07 Paise স্ট্যাম্প লাগিয়ো।
Thanks.
.
॥ শ্রীমতী সুনন্দা সেনকে (লাবান, শিলং) লিখিত পত্র
(১)
৬।১১।৫৮
বউদি,
তোমার চিঠি পেলুম। আমি একটা জিনিস এ জীবনে কখনও করে উঠতে পারলুম না। আর পারব না বলে পঞ্চাশের পর সে চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছি এবং সর্ব ভুবনের গালাগাল খাই। সেটা balancing of the budget- টাকার নয়। সেটা তো আছেই, কিন্তু তার জন্য গালমন্দ শুনতে হয় না হয় সময়ের। আপন পড়া, তা-ও হতচ্ছাড়া, ছন্নছাড়া, নিয়ে এত বেশি সময় কাটিয়ে দিই যে অন্য কোনও কাজ করে উঠতে পারিনে। বিশ্ব-সংসার চটে যায়, ভাবে হৃদয়হীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন। আমি পড়ে পড়ে গাল খাই। তোমার short hand কি ক্রমেই long hand হচ্ছে পাস করছ কবে? চাকরি নেবে কখন? আমি যা জমিয়েছিলুম তা তো বিলেতে গিয়ে ফুকে দিয়ে এলুম।
যত টাকা জমাইছিলাম
শুঁটকী মৎস্য খাইয়া
সকল টাকা লইয়া গেল
গুলবদনীর মাইয়া।
এবারে নাগাড়ে শুঁটকি মৎস্য খেলেও আর টাকা জমবে না। তবু ভরসা আছে গরমে শিলং আসব। বউবাচ্চা আসবে কি না সে তো বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কিছুই ঠাহর করতে পারছিনে। আশা করি তোমরা কুশলে আছ। তোমার কর্তা কিরকম আছেন? বসন্তকালে বিরহ নাকি বড় পীড়াদায়ক– কবিরা বলেন।
— আলী সাহেব
শান্তিনিকেতন।
.
(২)
২৩ নভেম্বর, ১৯৫৮
বউদি,
আজ তোমার পাঠানো জামাটি পেয়েছি, আমি এই দুপুরের গরমে সেটা পরে উল্লাসে নৃত্য করছি। জানিনে, তুমি আমার একটি গল্প চাচা কাহিনীতে পড়েছ কি না; তাতে বরোদার রাজা আবিসিনিয়ার রাজাকে একখানি লাল কাশ্মীরি শাল উপহার দেওয়াতে তিনি নাকি খুশির তোড়ে, সেই রেড-সির গরমে অঙ্গে শাল জড়িয়ে জাহাজময় উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করে করে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। আমার অবস্থা তাই, সেই বর্ণনা পড়ে নিয়ে আমার হাল মালুম হবে। ইউরোপে পুরনো বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে গল্পগুজোব করেছি আর ডাইনে-বাঁয়ে তাকিয়ে দেখেছি। এবং ভালো ভালো বর্দো ব্যার্গান্ডি খেয়েছি। তবে অল্প-স্বল্প ও জিনিস বেশি মাত্রায় খেলে সুখ পাওয়া যায় না। সত্যি বলছি বিনয় নয়–আমার লিখতে ভালো লাগে না, ওর ভিতর কেমন যেন একটা দম্ভ আছে। আজ এখানেই থাক, লেখাগুলো নিয়ে নাকের জলে, চোখের জলে।
আলী সাহেব
শান্তিনিকেতন
.
॥ শ্ৰীমনোরঞ্জন চৌধুরীকে (লাবান, শিলং-৪) লিখিত পত্র ॥
[১৯৬৫ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিতপঞ্চতন্ত্র কয়েক পর্যায়েপন্টক শব্দ ব্যবহৃত হয়। পড়ে মনে হল উদ্দিষ্টরা একাধারে অবিজ্ঞ এবং চালাকের ভানকারী। একটু পালটিয়েপণ্ঠক শব্দটি অধিকতর অর্থবাহী হয় কি না বিবেচনা করতে লেখায় যে উত্তর পাই সেই পূর্ণ চিঠিটি এতৎসহ প্রকাশের জন্য পাঠাচ্ছি। চিঠির বয়ানপন্টক শব্দের কৌসুলীর হলেও পরবর্তী এক কিস্তিতে তদীয় পন্টক শব্দ ব্যবহার কালে উল্লেখ করেছিলেন অথবা পণ্ঠক যেমন কোনও পাঠক মনে করেন (হুবহু ভাষাটি মনে নেই) ॥
১৬।১১।৬৫
জনাব চৌধুরী সাহেব,
আপনার নামটি আমার স্পষ্ট মনে আছে, কিন্তু আশ্চর্য, চেহারাটি মনে নেই– (বোধহয় শ্যামবর্ণ ছিপছিপে) সাধারণত উল্টোটাই হয়। নয় কি?
পঞ্চতন্ত্র five days wonder.- ওর স্থায়ী মূল্য নেই। এবং যেই হাল্কাশৈলী ছেড়ে কদিচ কখনও সিরিয়স বিষয় নিয়ে আলোচনা করি অমনি পাঠককুল কড়া কড়া চিঠি লেখেন। আমি ভাড়–ওদের মতে– আমি আবার জ্যাঠামো করতে যাই কেন? আপনি কিন্তু প্রাচীন দিনের আত্মীয়তার স্মরণে দয়া রাখবেন।
পণ্ঠক বলতে আমার কী আপত্তি? কিন্তু ঘটিরা বলে পাটা (পাঁঠা) মাতাব্যথা (মাথাব্যথা) কতা (কথা)! তাই পন্টক। ঘটিরাপাঠা বলে না, বলে পাটা।
তদুপরি পাঁঠা বা পাঁটা বা পন্টক অর্থ গবেট, গাড়ল– সে তো ঠক হতে পারে না– ঠক হতে হলে তো বুদ্ধির প্রয়োজন।
আপনার আশীর্বাদ মাথা (মাতা) পেতে নিলুম।
শঙ্কর আপনাকে জয়যুক্ত করুন। কিমধিকমিতি ॥
— খাকসার
সিতু
পো, আ, বোলপুর,
পশ্চিমবঙ্গ
পুঃ দয়া করে জনাব সায়েব, ভবদীয় লিখবেন না। আমাকে আগেরই মতো দেখবেন।
পাঠকের নিবেদন – ১০
অবধূত যখন তাঁর মরুতীর্থ নিয়ে মুরুব্বিহীন হালে নিঃশব্দে বাংলা সাহিত্যের আসরে প্রবেশ করলেন তখন উভয় বাংলার বাঙালি পাঠক মাত্র যে বিস্মিত হয়েছিলেন সে-কথা নিশ্চয়ই অনেকের স্মরণে আছে। এ তো মরুতীর্থ নয়; এ যে রসে রসে ভরা রসতীর্থ।