[*এর থেকে মালুম, তালিম, মুয়াল্লিম।]
কাজেই ও নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোনও লাভ নেই।
রুবাইয়াতের অন্ত্যানুপ্রাস aaba হবে। তার একটা দৃষ্টান্ত পাবেন দেশে বিদেশের ৩৭৪ পৃ. সান্গে ওতন্ etc-। মাঝে মাঝে a a a a ও হয়।
আরও দু একটা কথা উত্থাপন করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু পেটের অসুখে কাতর হয়ে পড়েছি। বাঙালির birthright আমাশয়।
A. I. R.
কটক
—নমস্কারান্তে
মুজতবা আলী
পুনশ্চঃ আপনি আমার লেখার যে প্রশংসা করেছেন তার দাওয়াই হিসেবে আপনাকে উষা কাগজের আষাঢ় ১৩৬১-র (33B, Amherst street থেকে প্রকাশিত ) শেষ পাতা পড়তে অনুরোধ করি। লেখকসেন। কে বলে বদ্যিরা বড় ঐক্যবদ্ধ? আপনি বলেন, আমার লেখা আশমানের তারা, উনি বলেন, পিঠের পাঁচড়া (সিলেটি প্রবাদ)।
আপনার রাস্তা Tawnsend না Tawnshend? অভিধান বলেন, দুইটারই উচ্চারণ Taunzend.
.
(৩)
২৩।৭।৫৪
শ্রদ্ধাস্পদেষু,
আপনার চিঠি পেয়েই উত্তর দিচ্ছি। একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলুম।
বাংলা ভাষায় আরবি, ফারসি এবং উর্দুর মূল এবং বানান নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে মোহদী নামক মাসিকে। অথচ সেগুলোর ব্যবহার আজ পর্যন্ত কোনও কোষকার করেননি। রাজশেখরবাবুর অভিধানের প্রথম প্রকাশ ভুলে ভুলে ছয়লাপ ছিল। তার বহু ভুল দেখিয়ে এক বাঘা মৌলবি সায়েব মোহম্মদীতে একটি প্রবন্ধ লেখেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অনেক লেখা ওই মাসিকে বেরিয়েছে। এমনকি গত বত্সর ঢাকা থেকে প্রকাশিত মোহম্মদীতে মৌলনা আক্ৰম (আক্রমণ ) খার অভিধানের (ইটি তিনি শেষ করতে পারেননি) কিছুটা বেরিয়েছে। এইসব back number না দেখলে আপনার অভিধান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কারণ দু-চারটি শব্দের মূল আমাকে রীতিমতো হকচকিয়ে দিয়েছিল।
ছবীকে না হয় ছবি লিখলেন, কিন্তু বুকের মাঝে বাজল যে বিন্ (বীণা) লিখবেন কি?
অথচ আপনিই নজীর লিখেছেন।
কোষকারের অন্যতম প্রধান কাজই তো নিক্তি ধরে মাপা, এটা অচলিত না সুচলিত না অচল। তা না হলে তো সবাই অভিধান লিখত– আমিও লিখতুম। এ যেন কসাই বলছে, বকরির গলা কাটব কী করে, বড় মায়া হয়।
তাই দেখুন Oxford-কে Concise করতে গিয়ে কোষকারকে কতখানি ভাবতে হয়েছে। এ শব্দটি ইংরেজিতে মাত্র একবার ব্যবহৃত হয়েছে–কিন্তু প্রয়োগ করেছেন শেকস্পিয়ার দেবো কি দেবো না?
এককালে চলন্তিকায় সৈয়দ শব্দ ছিল না যদিওশেখ ছিল, মোগলপাঠানও ছিল আমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর তিনি সৈয়দ দিলেন– অবশ্য কাকতালীয়ও হতে পারে।
পূর্ব বাংলার ভদ্র সাহিত্যে আজকাল হরবকত, ফজর, জোহর, আসর, মগরিব, এশা এইপঞ্চসন্ধ্যার (পাঁচ নমাজের) উল্লেখ থাকে। আমার মা-ও বলতেন মগরিবের একটু আগে, কিংবা আসর-মগরিবের দরমিয়ান (অর্থাৎ মধ্যে) এবং এই পদ্ধতিতে সময় বোঝাতেন। আপনি এগুলো দেবেন, না দেবেন না? ওই তো আপনার গব্বযন্তনা– আমাদের কাছ থেকে এককণাওহমদরদী পাবেন না। (সহ+অনুভূতি, হম্+দর্দ, Sym+Pathos)
ধর্ম জানেন, আমি মস্করা করিনি। আমার এখনও মনে পড়ছে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বেনামিতে লেখা (কস্যচিৎ ভাইপোস্য) ব্রজবিলাস কিংবা তার পরের কোনও বেনামি লেখাতে আমি কট্টর* পেয়েছি। এবং চাটিম চাটিম আঁধারের আলোতে না হলে শ্রীকান্তে পড়েছি। কোনও এক মজলিসে পিয়ারী গাইবেন, তবলচি চাটিম চাটিম বোল তুলছে। আমি সিলেটের খাজা বাঙাল। এসব লবজো আমি তো আর গড়তে পারিনে।
[*‘করতা’ পেয়েছি ফতোয়া অর্থে এবং ওই অর্থেই ‘তৈলবট’।]
সুনীতিবাবুর শব্দগুলো দেখিনি। বলি কী প্রকারে? ওদুদ সায়েবের অভিধান সম্বন্ধে আর কিছু বলতে আমি নারাজ। অপ্রিয় কথা বলতে আমার বড় বাধে।
চট্ট+আর্য-চাটার্জি, বন্দ্যো+আর্য=ব্যানার্জি ইত্যাদি। বড়বাবু (দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর) বলেন চট্ট+উপাধ্যায় ইত্যাদি থেকে নয়। তার প্রবন্ধে এই আলোচনাটি পড়েছেন কি? যতদূর মনে পড়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সঙ্গে একমত ছিলেন।
Tawnshend, lawnsend দুটোই ইংরেজিতে আছে। উচ্চারণ একই– Taunzend/ Daniel Jones তাই বলেন। কিন্তু তা হলে অর্থাৎ বাংলায় টাউনজে লিখলে চিঠি মারা যাবে।
নমস্কারান্তে কটক
–মুজতবা আলী
.
(৪)
১২।১০।৫৪
সদন্তঃকরণেষু,
পূজার পাঁচটা লেখা শেষ হতে না হতেই গৃহিণী দুটি শিশু নিয়ে এখানে উপস্থিত। একটার ২ বছর ৮ মাস, আরেকটার ৯ মাস। তাছাড়া অলসেশিয়ন কুরছানা, রোডেসের মুর্গিমোর্গা, হাঁস, ফুলবাগান সবজিবাগান, বারবিটু পাখি (গাছে, তার বাসার সুব্যবস্থা), পুকুরে পদ্ম– কত বলব? বিরাট ধুন্দুমার! আমি লবদ্বার বন্ধ করে মুর্শিদের নাম জপ করছি। একদম Paradise lost!
অপরাধ নেবেন না কিন্তু আমার মনে হয়, ঢাকার লোক যদি কলকাতায় জন্মায় তবে তার দু কূলই যায়। কুট্টির স্ল্যাঙ সে শেখবার সুযোগ পায় না। আবার সামবাজারীওসেখে না। অবশ্য যদি কেহ শ্যামবাজার অঞ্চলে মানুষ হয় তবে আলাদা কথা। পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপনি সে অঞ্চলে বড় হননি। না হলেরেতে এবং রান সম্বন্ধে প্রশ্ন শুধাতেন না।
পক্ষান্তরে আমি পনেরো বছর বয়সে সিলেটের যাবতীয় slang শিখে ঘটি দেশে আসি। তার পর বছর দুই শ্যামবাজারের রক্-ক্লাবে বকাটে ছোঁড়াদের সঙ্গে বিস্তর আড্ডা মারি। আমি নিজে বিশৃবকাটে এবং একটি তুখোড় ইয়ার (বিদ্যাসাগর পশ্য)।