আপনি যদি এ কাব্যখানা পড়ে না থাকেন তবে দয়া করে জোগাড় করে নেবেন। Quite apart from our present discussion. এরকম উত্তম কাব্য আমি জীবনে কমই পড়েছি। আব্দুর রহমান-কৃত সন্দেশ রাসক edited by হাজারীপ্রসাদ দ্বিবেদী, হিন্দি গ্রহরত্নাকর লিমিটেড, হীরাবাগ, বোম্বাই-৪)।
এবং finally বলুন তো, আমার নিজের প্রতি আমার যা কর্তব্য আছে সেটা পোলেমিকে ঢুকে সফল হবে, না, যেটুকু সময় পাই সেটা সৃষ্টিকর্মে (তা সে ভালো হোক মন্দ হোক) লাগালে। আমাকে আক্রমণ করে এ যাবৎ যেসব incompetent লেখা বেরিয়েছে আমি তো তার একটারও উত্তর দিইনি। তাতে সময় নষ্ট, শক্তিক্ষয় এবং সব বেফায়দা।
আমিও শারীরিক কুশলে নেই। বিশ্বভারতীতে চাকরি নিয়ে আমার সর্বনাশ হয়েছে। আশা করি আপনি কুশলে আছেন। সশ্রদ্ধ নমস্কার জানবেন।
—গুণমুগ্ধ সৈয়দ মুজতবা আলী
শান্তিনিকেতন
.
॥ প্রাণতোষ ঘটককে লিখিত পত্র ॥
Indian Council for Cultural Relations
২১ সেপ্টেম্বর ৫০
প্রিয়বারেষু,
আসবার সময় আপনার সঙ্গে দেখা করে আসতে পারিনি তখন কলকাতায় বড় ডামাডোল। এমনকি হাওড়া হয়েও আসিনি, এসেছিলুম দমদম হয়ে অ্যারোপ্লেনে।
এসে অবধি প্রায়ই ভেবেছি আপনাকে লিখি কিন্তু গোড়ার দিকে কাজে ব্যস্ত ছিলুম এবং শেষের দিকে দিল্লির বাতাবরণের চাপে এমনি নির্জীব হয়ে পড়ি যে আর কোনও কাজে মন যায়নি– সামান্যতম চিঠি লেখাতে পর্যন্ত না।
মৌলানা সাহেব আমাকে কলকাতা থেকে ধরে নিয়ে আসেন উপরের প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারিরূপে। আমার অপরাধ আমি আরবি, ফারসি এবং ফরাসি জানি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান (এবং বর্তমানে একমাত্র) কর্ম হচ্ছে আরবি-ফারসি-তুর্কি-ভাষী মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ভারতবর্ষের সংস্কৃতিগত যোগসূত্র স্থাপনা করা। দিল্লির পররাষ্ট্র বিভাগ ভাষা এবং অন্যান্য বিষয়ে অজ্ঞতাবশত এ-কর্মটি করতে পারেননি বলে মৌলানা সাহেবের শরণাপন্ন হন। মৌলানা সাহেবের জন্ম মক্কায়, পড়াশোনা করেন অজহরে কাইরোতে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সব ভাষাই জানেন এবং অতি উত্তম আরবি লিখতে পারেন।
উপস্থিত আমরা একখানা আরবি ত্রৈমাসিক চালাচ্ছি। ভারতবর্ষ সম্বন্ধে বিশেষ করে মিশর এবং ইরাকের কৌতূহলের অন্ত নেই– আমরা সেই কৌতূহলের ওপর নির্ভর করে ভারতবর্ষের সনাতন বাণী এবং পরবর্তী যুগের কৃষ্টি সামঞ্জস্য এবং বর্তমান যুগের গান্ধী রবীন্দ্রনাথ তাঁদের সম্মুখে পরিবেশন করবার চেষ্টা করছি। সাধারণের মনোরঞ্জন করবার জন্য পঞ্চতন্ত্র অনুবাদ করছি (পঞ্চতন্ত্রের কিয়দংশ একাদশ শতাব্দীতে কালিয়া দিমনি নামে আরবিতে ও ইয়ার-ই-দানিশ নামে ফারসিতে অনূদিত হয় এবং সেই সময় থেকে এই বই মধ্যপ্রাচ্যেআরব্য-রজনীর মতো জনপ্রিয় হয়ে আছে)।
তুর্কিতে সংস্কৃতের অধ্যাপক আছেন, আমরা ইরানে একজন সংস্কৃতের অধ্যাপক পাঠিয়েছি। কাইরো, বাইরুৎ, দমস্কস, বাগদাদেও পাঠাবার বাসনা রাখি।
তা ছাড়া ছাত্র-পাঠানো, বিদেশি ছাত্রের আমন্ত্রণ, ভারতীয় সাহিত্যের অনুবাদ, কলা-নিদর্শনের ফিলম ও ল্যান্টার্ন-স্লাইড, সঙ্গীতের রেকর্ড, বেতার-যোগে যোগাযোগ স্থাপনা-এসব বিস্তর কাজ সামনে পড়ে আছে। ভারতবর্ষের মৌলবি-মাওলানারা আমাদের কাজে সাহায্য করেছেন, পূর্বেই বলেছি, বিদেশ থেকেও কৌতূহলের উৎসাহ পেয়েছি।
আসছে বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগ খোলা হবে। তখন কাজ হবে, সিংহল, বর্মা, মালয়, থাই এবং ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনা করা। তার পর ক্রমে ক্রমে চীন-জাপান, পশ্চিম ইয়োরোপ ও আমেরিকা।
ঈষৎ অবান্তর, তবু বলি– ইংলন্ডে কোনও বুদ্ধ, মহাবীর, চৈতন্য, গাঁধী জন্মাননি তবু British Council for Cultural Relations প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আর আমাদের কর্তারা উপস্থিত একলক্ষ টাকা খরচ করছেন। ওদিকে ইংরেজ দুশো বছর ধরে বিদেশে আমাদের মুখে বিস্তর কলঙ্কপ্রলেপ প্রাণপণপ্রেমসে লেপেছে–তার বিরুদ্ধে লড়তে হলে কত টাকার প্রয়োজন বিবেচনা করুন।
যাক– আপনাকে আর পাঁচালী শোনাব না– পুজোর হিড়িকে নিশ্চয়ই বড্ড ব্যস্ত আছেন।
তবু দিনকাল কী রকম কাটছে জানাবেন। আমি মাসিক দৈনিক বসুমতী বহুকাল হল দেখিনি বাংলা বলতে এখানেদেশআনন্দবাজার আরসত্যযুগের সঙ্গে মাঝে মাঝে ঝলকের তরে দর্শন হয়। আনন্দবাজার ইত্যাদি দৈনিক হাওয়ায় আসে এবং এখানে অপরাহু তিনটের সময় বিলি হয়।
এখানে বাসা পেয়েছি Constitution House-এ। পার্লামেন্টের মহামান্যবর সদস্যরা এখানে সেশনের সময় বাস করেন। এরা M.P; কেউ বলে মহাপুরুষ, কেউ বলে মহাপাপী, কেউ-বা বলেমহা-পাষণ্ড। খোদায় মালুম, কোনটা ঠিক।
আশা করি কুশলে আছেন।
—মুজতবা আলী
102 Constitution House
New Delhi-1
.
(২)
সদন্তঃকরণেষু,
আপনি শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ, আপনি জানেন। কিন্তু উপস্থিত শোকাতুর হয়ে আছেন বলে নিবেদন করছি–
অশৌচ ও শ্রাদ্ধ-শান্তির ব্যবস্থার গূঢ় অর্থ অশৌচের ক-দিন শোক করার পর, শ্রাদ্ধ-শান্তি করে পুনরায়, সাধারণ্যের মধ্যে আপন স্থান গ্রহণ করবে। শোকের অন্ত নেই, তাই পাছে মানুষ ক্রমাগত শোক করে করে তার কর্তব্য অবহেলা করে তাই শাস্ত্রকার ক-দিন পর দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যাবে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ব্রাহ্মণ উচ্চবর্ণের অর্থাৎ তার জ্ঞান আছে বলে আশা করা গিয়েছে, সে অল্পদিনেই মন বেঁধে কর্তব্য-কর্মে ফিরে যেতে পারবে তাই তার অশৌচ (period of mourning) সবচেয়ে কম। পাছে না জেনে কেউ তাকে কোনও প্রকারের পীড়া দেয় তাই ওই সময়ে শোকাতুরকে বিশেষ বেশ পুরতে হয়–ইংরেজ যে রকম কালো পোশাক পরে, কিংবা বাহুতে কালো পট্টি বাঁধে।