আপনি সহৃদয়। তাই আব্দুর রহমান সে-ও বড়ই দরদী ছিল– আপনার হৃদয়ে সরাসরি ঢুকে গেছে। আপনার মতো কোনও সজ্জন যখনই তার প্রশংসা করেন তখনই আমার মনে বড় বেদনা জাগে, তার সম্বন্ধে তো আরও অনেক অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু আপনি কৃতী লেখক, বিলক্ষণ অবগত আছেন, কোনও চরিত্র অঙ্কনে একটা অপটিমাম মাত্রা আছে। কিংবা বলতে পারেন, আপনার (আমার না বলে আপনারই বললুম, কারণ সে ছিল আমার দৈনন্দিন জীবনের ডালভাত আর আপনার কাছে সে রস-প্রতিম)। আবদুর রহমান আমার কাব্যের উপেক্ষিতা ঊর্মিলা। কিন্তু থাক। নিজের কথাই সাত কাহন!
বলতে ভুলে গিয়েছি, ওই তিন মাসের সফর অ্যাসন তলিফদেহ হয়েছিল যে মাসাধিককাল অধম দণ্ডবৎ, লাঠ্যাবৎ (বিবেকানন্দ পশ্য) হয়ে শয্যাশায়ী। নয়া-পুরনা বেবাক আলীপুর আমার কাছে বার্লিনের চেয়ে সুদূরতর। মধ্যিখানে নকশলাইট–আমার কাছে most welcome! ড্যাং ড্যাং করে চলে যাব।
আমার দুই ব্যাটা ১৮ এবং ১৬ আপনার লেখার– যাকে বলে Fan-grand admirers. শুধু বড় ব্যাটা শুধোলে, এই জরাসন্ধবাবু (আমার বাচ্চারা তাদের জননীর মতো– [আমো তাই) ঈষৎ Old-fashioned, হিন্দু নামে বাবুটা হরবকৎ জুড়ে দেয়) বললেন, মার্কিন criminologist ওঁকে বললে, এ দেশে born criminal নেই, (অপরাধ নেবেন না, আমার কথাগুলো ঠিক ঠিক মনে নেই; আপনার কেতাবখানাও নেই। বললে পেত্যয় যাবেন না, আপনার তাবৎ কেতাব কভু কড়ি ফেলে, কভু-বা ফোকটে যোগাড় করেছি কিন্তু ধন্যি আমার চেলারা, তেনারা পঙ্গপালের মতো আপনার বেবাক বই গিলে ফ্যালেন– except যেগুলো আমি কোনও গতিকে বাবাজি ও তাদের গর্ভধারিণীর জন্য পাচার করি; জানেন তো পাকিস্তানে আমাদের তাবৎ বই ব্যান্ড়!) তার অর্থটা কী? মা কালীর দোহাই দিয়ে বলেছি, আপনি ভাববেন না, আপনার লেখাতে কোনও এমবিগিটি ঝাপসাপারা ছিল। আপনার রচনা limpid, sparkling, flows like oil from a bottle. আমি বললুম, বাবাজি, যখন কলকাতা আসবে (ভারত-পাক লড়াইয়ের পর ওদের পক্ষে এ দেশে আসা কঠিন হয়ে গিয়েছে) তখন তোমাকে চারুবাবুর কাছে নিয়ে যাব। সেখানে মোকাবেলা করো। চারুবাবু! আমি বলছি জরাসন্ধের কথা। আমি বললুম, ওই! যাহা বাহান্ন তাহা তিরানব্বই। যাহা জরাসন্ধ তাহা চারুচন্দ্র। তখন বলে কী জানেন, ওঁর মতো great writer তোমাকে কি তার বাড়িতে ঢুকতে দেবেন? অর্থাৎ টাপেটোপে বোঝালে I am a very poor writer; great writer আপনি আমাকে পাত্তা দেবেন কেন?
ন্যায়দণ্ড কেন আপনার কুল্লে বই আমার ভালো লেগেছে, লাগে এবং লাগবে। আপনি জনপ্রিয় থাকুন। বিদগ্ধদের জন্য মেলা উত্তম উত্তম লেখক যথা কালিদাস, দান্তে রয়েছেন। আমি বিদগ্ধ নই। আমি (উপস্থিত আপনার এফিডেভিট মাফিক মেনে নিচ্ছি, তর্কস্থলে যে আমি বিদগ্ধ কচড়ু, হাইব্রাও, connoisscur, gourmet, comme its fant, যাবতীয়) আপনার ভাষা ও শৈলী (language & style) অর্থাৎ form, বিষয়বস্তু (content) দুই-ই বড় ভালোবাসি। তদুপরি আপনি a great raconteur = recounter.
৫নং পার্ল রোড
পো, সার্কাস এভিনিউ
কলিকাতা-১৭
—গুণমুগ্ধ
সৈয়দ মু আ—
.
॥ শ্রীগজেন্দ্রকুমার মিত্রকে লিখিত পত্র ॥
(১)
১২। ১২।৬৫
ভাই গজেনদা
কাল বিকেলে তোমার ১১১২-র চিঠি পেয়েছি। (১) পারতপক্ষে PO, Bolpur ছাড়া বাকি ঠিকানাটা আদ্যন্ত বাংলায় লিখবে। (ডক্টরটা কিছুদিনের জন্য নামের পূর্বে জুড়ে দিয়ো। পাড়ায় ডাকঘরে আরেকটু পরিচিত হওয়ার পর drop করবে। কারণ আমাদের পাড়ার পিয়ন অল্পই ইংরেজি জানে। প্রায়ই অন্যলোকের চিঠি পাই, (যদিও typed); তার থেকে knowledge by inference, আমার চিঠিও অন্যের বাড়ি যায়। পরস্ত্রী আমার কাছে আসুক… etc, etc, এই knowledge by inference সংস্কৃতে রসিয়ে দেওয়া আছে।
(ক) দেবদত্ত মোটা
(খ) দেবদত্তকে কেউ কখনও দিনের বেলা খেতে দেখেনি। (অতএব knowledge by inference);
(গ) দেবদত্ত রাত্রে খায়।
(২) অবধূতের কিছু ছাপা হলেই পাঠাবে বুঝেছি, অন্য উপদেশ পরামর্শও বুঝেছি। কিন্তু যতদিন না আসে, বলতে পার, বিষয়বস্তুটা কী? মনে হচ্ছে হিমালয়-ভ্রমণ–তা ছাড়া?
(৩) পৌষ ফাগুনের পালা তুমি খুব সম্ভব আমাকে এযাবত দাওনি। এবারে বিবির ওখানে তালাশ করে দেখলুম যে-কটা একবার দিয়েছিলে সেগুলো তখনই পড়া হয়ে যায়, একপৌষ ফাগুন তার সঞ্চয়নে নেই। অতএব পাঠিয়ে দিলে পড়ব নিশ্চয়ই অবশ্য অবসরমতো দিন পনেরোর ভিতর।
(8) Same applies toসোহাগপুরা।
কিন্তু দাদা, মতামত দিতে আমার বড় বাধো বাধো ঠেকে। তোমার মতো কুতুবমিনারি লেখকের প্রশংসা করা বিড়ম্বনা, তোমার লেখা অপছন্দ করার অর্থ, আমার রুচির অভাব। এক মার্কিন নাকি লন্ডনে Titan-এর ছবি দেখে বউকে বলে, Gee, I dont think I like that one পাশে দাঁড়িয়েছিল একজন গাইড। বললে, Sir, Titan is not being tested; your taste in being tested!
তবেই কও, এই ডিলেমার সলুশন কী? By the way, before I end, যে কোনও দিন abruptly তোমাকে, ভানুকে সবাইকে চিঠি লেখা হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে আমার অনিচ্ছায়। কেন, শুধালে উত্তর বড় দীর্ঘ হবে। তখন চটো না।
—আ
নীচুপট্টি পো,
বোলপুর
বীরভূম।