ওদিকে ইউসুফ চুপচাপ। জিগ্যেস করলুম– তুই বলছিস না কেন রে! বাক্সের অথবা টেবিলের, যাই বল– ভিতর থেকে ইউসুফের গলা শোনা গেল ও তো আমি জানি। আমি বললুম, বলে যা, সে সমস্ত কনজুগেশনটা ভুল না করে গড় গড় করে আবৃত্তি করে গেল। হু! ছেলেটা শয়তান বটে, কিন্তু পড়াশোনায় ভালো।
ঘণ্টা পড়ল। বললুম, ইউসুফ বেরিয়ে আয়। সুড়ুৎ করে বেরিয়ে এল। বললুম, বল্ আর কখোনও করবিনে। কী যেন একটা বিড়বিড় করে বলল, ঠিক বুঝতে পারলাম না।
ততক্ষণে ক্লাস ডিসমিস করে দিয়েছি বলে সে একটা ছোটাসে ছোটা সেলুট সেরে ডবল মার্চ করে বেরিয়ে গিয়েছে। তখন বুঝতে পারলুম, দুষ্টুমি করবে না এ প্রতিজ্ঞা করতে সে নারাজ, তাই তাড়াতাড়ি কেটে পড়েছে।
রেজিস্টার, বই, খড়ি, ডাস্টার গুছিয়ে নিয়ে যেই দাঁড়াব বলে টেবিলের তলা থেকে পা টেনে আনতে গিয়েছি অমনি দু পা-ই আটকা পড়ে গেল। কী ব্যাপার! ঘাড় নিচু করে দেখি, আমার দু জুতোর দুই ফিতে একসঙ্গে বাঁধা।
কী করে হল? এ তো বড় তাজ্জব! অবশ্যি, বুঝতে সময় লাগল না। আমার অভ্যাস পা দু-খানি একজোড় করে বসার। ইউসুফ তারই সুবিধে নিয়ে অতি আস্তে আস্তে ফিতের গিঠ খুলে দু ফিতে অর্থাৎ দুই জুতো একসঙ্গে বেঁধে দিয়েছে! আর সে এমনি মোলায়েম কায়দায় যে, আমি কিছুই টের পাইনি!
আমি হার মানলুম।
বাড়ি ফেরার পথে দূর থেকে দেখি, বাড়ির দেউড়ির সামনে ইউসুফ আমার চাকর আব্দুর রহমানকে হাত-পা নেড়ে কী সব বোঝাচ্ছে, আর বিরাট-বপু আব্দুর রহমান সর্বাঙ্গ দুলিয়ে হেসে কুটিকুটি। আমাকে দেখেই ইউসুফ চটপট চম্পট।
পরদিন কলেজে যাবার সময় আব্দুর রহমান জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বলল, একরকম বোতামওলা বুট ফিতেওলা জুতোর চেয়ে ভালো।
আমি চটে গিয়ে বললুম, বস্ বস্, আর জ্যাঠামো করতে হবে না।