সরকারী নিয়ম অনুসারে হাইড্রোতেলে কিছু তিল তেল দেওয়া হয়। রাসায়নিক পরীক্ষায় তিল তেল সহজেই ধরা যায়, সেজন্য ঘিএ হাইড্রোতেল থাকলে তিল তেলের জন্যই ভেজাল ধরা পড়ে। কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষা সাধারণের সাধ্য নয়, সেজন্য প্রস্তাব হয়েছে, হাইড্রোতেলে এমন রঙ দেওয়া হক যাতে ঘি মেশালে রঙ দেখেই লোকে ভেজাল বুঝতে পারে। এই প্রস্তাব একেবারে নিরর্থক। হাইড্রোতেলে যদি প্রচুর রঙ থাকে তবেই ঘিএ তার ভেজাল ধরা পড়বে। কিন্তু লাল নীল সবুজ ব্রাউন ইত্যাদি রঙের হাইড্রোতেল তৈরি করা বৃথা, কেউ তা কিনবে না।
হাইড্রোতেলের দোষ
হাইড্রোতেলে প্রপূরিত গাঢ় স্নেহাম্ল বেশী, সেজন্য তার কতকটা হজম হয় না, মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এই কারণে খাদ্য হিসাবে তেলের চাইতে হাইড্রোতেল নিকৃষ্ট।
শারীরবিজ্ঞানী আর স্বাস্থ্যবিশারদগণ মাঝে মাঝে এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন যাতে লোকে উদবিগ্ন হয়। কয়েক বৎসর থেকে তারা প্রচার করছেন সিগারেটখোরদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার বেশী দেখা যায়। সিগারেট ব্যবসায়ীরা এই মত খণ্ডনের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন, নামজাদা ডাক্তারদের দিয়ে প্রতিবাদও প্রচার করাচ্ছেন, তথাপি সিগারেটের অনিষ্ট করতা এখন প্রায় সর্বস্বীকৃত হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে সাধারণ লোকেও খুব জল্পনা করছে, কিন্তু সিগারেটের কাটতি এখন পর্যন্ত কিছুমাত্র কমে নি। লোকের মনোভাব বোধ হয় এই হুজুকে পড়ে নেশা ছাড়তে পারব না, ক্যানসার যখন হবে তখন দেখা যাবে। সম্প্রতি শারীরবিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত করেছেন, স্নেহদ্রব্যে যদি প্রপূরিত স্নেহা থাকে তবে তা বেশী খেলে রক্তে কোলেস্টেরল নামক পদার্থ উৎপন্ন হয়, তার ফলে থ্রম্বোসিস হতে পারে। হাইড্রোতেলে প্রপূরিত স্নেহাম্ন বেশী, সেজন্য এসব জিনিস খেলে থ্রম্বোসিসের সম্ভাবনা বাড়ে। মাখন আর ঘিও নিরাপদ নয়, কারণ তাতেও প্রপূরিত স্নেহা আছে। অতএব তরল তেল খাওয়াই সব চেয়ে ভাল।
ঘিএর অনুকল্প
এদেশে যেমন ঘিএর, পাশ্চাত্ত্য দেশে তেমনি মাখনের আদর। মাখন দুর্মূল্য, সেজন্য দরিদ্রের জন্য মাখনের অনুকল্প মার্গারিনএর প্রচলন হয়েছে। ঘিএরও একটা অনুকল্প দরকার। মার্গারিন দেখতে মাখনের মতন হলেও উপাদান মাখনের সমান নয়, কিন্তু সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। আমাদের দেশে ঘিএর যে অনুকল্প হবে তারও উপাদান আর লক্ষণ নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। হাইড্রোতেলে প্রপূরিত স্নেহা যদি খুব কমানো হয়, অর্থাৎ চীনাবাদাম তেলে যদি বেশী হাইড্রোজেন সংযোগ নিষিদ্ধ হয় তবে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা কমবে। এ রকম হাইড্রোতেল হয়তো খুব নরম হবে, গ্রীষ্মকালে তেলের মতন তরল থাকবে, কিন্তু নিরাপত্তার জন্য তাই চালাতে হবে। সরকার স্বয়ং উদযোগী হয়ে কিছু করবেন মনে হয় না, কিন্তু জনমত যদি প্রবল হয়, তবে আইন করতে বাধ্য হবেন।
এক বিষয়ে চর্বি আর গাঢ় হাইড্রোতেল ঘি আর তরল তেলের চাইতে শ্রেষ্ঠ। বিস্কুটে ঘি বা তেলের ময়ান দিলে চলে না। পূর্বে দেশী বিলাতী সব বিস্কুটেই চর্বির ময়ান চলত, এখন হাইড্রোতেল দেওয়া হয়। রান্নার হাইড্রোতেল যদি পাতলা করা হয় বিস্কুটওয়ালাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে।
বাজারে প্রায় গন্ধহীন ও বর্ণহীন চীনাবাদাম তেল পাওয়া যায়, তার দাম সাধারণ তেলের চাইতে বেশী, কিন্তু হাইড্রোতেলের চাইতে কম। অনেক গুজরাটী আর মারোয়াড়ী খাবারওয়ালা তা ঘিএর বদলে ব্যবহার করে। এই deodorized decolorized তেলে হাইড্রোজেন যোগ করা হয় না, তেলের স্বাভাবিক স্নেহাই বজায় থাকে। বাঙালী গৃহস্থ এই তেল ঘিএর অনুকল্পরূপে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।