৩.
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই বড় কিছু ঘটে, তখন ছাত্র-শিক্ষক সবাই আমাদের লাইব্রেরির সিঁড়িতে এসে জড়ো হয়েছি। একজন-দুজন কিছু বলে অন্যরা শোনে। ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর অনেকটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ছাত্র-শিক্ষকেরা সেখানে উপস্থিতি হয়েছে। ছাত্ররা কথা বলেছে, শিক্ষকেরা কথা বলেছে। বক্তব্যের বিষয়বস্তু মোটামুটি এক, আমরা কলঙ্কমুক্ত হয়েছি, একই ধারাবাহিকতায় জেলহত্যা মামলার বিচার করে দ্বিতীয়বার কলঙ্কমুক্ত হব। আমাকে যখন কথা বলতে দিয়েছে, আমি তখন আরও একটি কথা যুক্ত করেছি, বলেছি, আজ যেমন এখানে এসেছি, ঠিক সেরকম কিছুদিনের ভেতর আবার এখানে এসে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে পুরো জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হলো।’
সরকার আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে, আমরা সরকারের সেই প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করেছি। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি সেই প্রক্রিয়াটি শুরু হওয়ার জন্য। এটি ডিসেম্বর মাস, এটি বিজয়ের মাস। এই মাসে এই দেশের সবাই যেন নতুন করে ঘোষণা করে যে এই দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমরা করবই করব।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে আমরা প্রথমবার অনুভব করেছি গ্লানিমুক্তির অনুভূতিটি কী রকম। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে আমরা নতুন করে আবার সেই গ্লানি আর কলঙ্ক ধুয়ে-মুছে ফেলতে চাই।
নতুন প্রজন্মের চোখের দিকে তাকিয়ে তখন আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারব, বাঙালি বীরের জাতি-এই জাতির ইতিহাসে কোনো গ্লানি নেই, কোনো কলঙ্ক নেই।
চলচ্চিত্রের নতুন প্রজন্ম তৈরি করছি
শুরু হলো ‘ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব’। চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসব। সংগঠনটির সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। উৎসব নিয়ে প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকার।
> আপনি এখন ঢাকায়?
>> হ্যাঁ, আজ (শনিবার) বিকেলে ‘ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব’ উদ্বোধন হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে থাকব।
> এই উৎসব নিয়ে ছোটদের আগ্রহ কেমন মনে হচ্ছে?
>> এই উৎসবের জন্য শিশু-কিশোরেরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে। আমরা তাদের দেখানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভালো ভালো চলচ্চিত্র নিয়ে আসি। আর ছোটরা কিন্তু ভালো যেকোনো কিছু গ্রহণ করে। আমরা এই উৎসবে ছোটদের সেসব ভালো চলচ্চিত্র দেখাব।
> ছোটদের কিন্তু টিভির প্রতি একটা আকর্ষণ রয়েছে।
>> টিভি আর চলচ্চিত্র কিন্তু এক জিনিস নয়। চলচ্চিত্র অনেক বড় মাধ্যম। চলচ্চিত্রের আলাদা একটা জগৎ আছে। এটা তাদের বোঝাতে হবে। আমি বলব, এই উৎসব তাদের বিশ্বের ভালো ভালো সব চলচ্চিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
টিভিতে তো এখন অসংখ্য অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে… কিন্তু তার মধ্যে ছোটদের জন্য কয়টা হচ্ছে? এই যে প্রতিবছর ঈদের সময় টিভি চ্যানেলগুলো টানা কয়েক দিন নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে, তার মধ্যে ছোটদের জন্য তেমন কিছুই থাকে না। ছোটরা সব সময়ই অবহেলিত।
> ছোটদের জন্য চলচ্চিত্র তৈরির ব্যাপারে আমাদের নির্মাতারা কতটা আগ্রহী?
>> আগ্রহটা হবে কীভাবে। কাজলের দিনরাত্রি ছবিটি তৈরি করেছেন সজল খালেদ। ওর সঙ্গে কথা হলো। ছবিটি তৈরির জন্য সরকারের কাছ থেকে ও যে অনুদান পেয়েছে, এরপর ছবির কাজ শেষ করার জন্য তাঁর গাড়ি আর স্ত্রীর গহনা বিক্রি করতে হয়েছে। এভাবে সম্ভব? শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারে আরও ভালোভাবে সহযোগিতা করার জন্য আমি সরকারকে অনুরোধ করছি।
> আপনার দৃষ্টিতে এই উৎসব আয়োজন কতটা ফলপ্রসূ?
>> ছোটদের জন্য এই ‘আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুধু বিনোদনের জন্য এই উৎসব আয়োজন করছি না, আমরা একদিকে যেমন তাদের ভালো চলচ্চিত্র দেখার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলছি, তেমনি তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারেও উদ্বুদ্ধ করছি। এই উৎসবে ছোটদের নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। তাদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আমরা চলচ্চিত্রের নতুন একটি প্রজন্ম তৈরি করছি। ৮-১০ বছর পর আমরা যে নির্মাতাদের দেখব, আশা করছি তাদের বেশির ভাগই হবে এই উৎসবে অংশ নেওয়া ছেলেমেয়েরা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
জানুয়ারি ২০, ২০১৩
জাতি গ্লানিমুক্ত হোক
সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর আবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করলে নববর্ষের দিনটি অন্য যেকোনো দিন থেকে কোনোভাবেই আলাদা কোনো দিন নয় (আনন্দের উচ্ছ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাঝেমধ্যে গভীর রাতে পুলিশ ডাকতে হয়, তবে সেটা অন্য ব্যাপার!)। অন্য বছরের কথা জানি না, কিন্তু আমরা চাইলে এ বছরটাকে আলাদাভাবে পালন করতে পারি, আমরা সবাই মিলে ঘোষণা করতে পারি, ২০১০ সালটি হবে গ্লানিমুক্তির বছর, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বছর।
নতুন প্রজন্মের যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা কখনো ভালো করে দিতে পারিনি, তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল এ প্রশ্নটি—পৃথিবীর সব দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়, আমরা কেন আমাদের যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে পারি না? এ দেশে তারা কেন বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়? কেন তারা বড় গলায় কথা বলে?