এই দেখো এখানে ব্লগাররা আছে, এই ব্লগাররা সারা পৃথিবীতে যেটা হয়নি, সেটা ঘটিয়ে দিয়েছে।
তোমাদের কাছে ক্ষমা চাই! আমাকে ক্ষমা করেছ সবাই? আজকের মতো আনন্দের দিন আমি আমার জীবনে কোনো দিন পাই নাই!! ২০১৩ সাল ১৯৭১ হয়ে গিয়েছে!! তোমরা যারা ১৯৭১ দেখো নাই, সুযোগ পেয়েছ ২০১৩ সালকে আবার ১৯৭১ হিসেবে দেখার জন্য।
বাংলাদেশের মতো সুন্দর দেশ পৃথিবীতে নাই! ওপরে তাকাও কী সুন্দর আকাশ!! তাকাও কত সুন্দর গাছ!!
একজন আরেকজনের দিকে তাকাও, কত সুন্দর মানুষ!! তোমাদের মতো সুন্দর মানুষ পৃথিবীতে নাই।
আমরা অনেক সৌভাগ্যবান! যখন যেটা দরকার, সেটা পেয়েছি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছি। যখন যুদ্ধের সময় হয়েছে, তাজউদ্দীন আহমদ আমাদের যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্ম হয়েছে, তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখন তোমাদের দরকার, তোমাদের জন্ম হয়েছে।
জাহানারা ইমাম এখানে আন্দোলন করেছিলেন, জাহানারা ইমামের ছবি আছে। আমি শিওর, উনি ওপর থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন আর আনন্দে হাসছেন!! ৩০ লাখ শহীদ ওপরে আছে, তারা আমাদের দিকে দেখছে আর বলছে, ‘থ্যাংক ইউ’, ‘থ্যাংক ইউ’—তোমাদের ধন্যবাদ!
একটা সময় ছিল যেখানে হানাদার বলতে হতো, পাকিস্তান বলা যেত না। টেলিভিশনে রাজাকার কথাটা মানুষের মুখ থেকে বলা যেত না। তখন হুমায়ূন আহমেদ টিয়া পাখির মুখ দিয়ে বলেছিল, ‘তুই রাজাকার’!! আমি বলব, তোমরা বলবে, হুমায়ূন আহমেদ ওপর থেকে দেখছে। হুমায়ুন আহমদ দেখো—
কাদের মোল্লা! কাদের মোল্লা!
(জনতা—তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!)
সাঈদী! সাঈদী!
(জনতা—তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!)
সাকা চৌধুরী! সাকা চৌধুরী!
(জনতা—তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!)
কামারুজ্জামান! কামারুজ্জামান!
(জনতা—তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!)
নিজামী! নিজামী!
(জনতা—তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!)
গোলাম আযম! গোলাম আযম!
(জনতা—তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!)
বাংলাদেশে যত শহীদ হয়েছিল, তাঁরা সবাই এখন ওপর থেকে তাকিয়ে আমাদের দেখছে, আর বলছে—
এই বাংলাদেশকে আর কেউ কোনো দিন পদানত করতে পারবে না!
তোমাদের আমি অনুরোধ করি—
যখন লেখাপড়ার কথা তখন লেখাপড়া করবে। যখন গান গাওয়ার কথা তখন গান গাইবে। যখন কবিতা লেখার কথা কবিতা লিখবে। ছবি আঁকার কথা ছবি আঁকবে। ভাস্কর্য বসানোর কথা ভাস্কর্য বসাবে। প্রেম করার কথা প্রেম করবে।
বাংলাদেশকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশে তৈরি করবে। নোবেল প্রাইজ আনবে। যখন রাস্তায় নামার দরকার পড়বে তখন রাস্তায় নামবে।
তোমাদের কাছে সারা বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। যত শহীদ আছে সবাই কৃতজ্ঞ, আমরা সবাই কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ সবাইকে।
ব্লগারদের আলাদাভাবে ধন্যবাদ! তারা যেটা করেছে তার কোনো তুলনা নাই। সবাইকে ধন্যবাদ!!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
মে ০৪, ২০১৩
শিক্ষা সফর
ইউনিভার্সিটিতে আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, তখন লেখাপড়া ছিল একটু পুরনো ধাঁচের। তিন বছর পড়ার পর অনার্স পরীক্ষা শুরু হতো। সেটা শেষ করার পর এক বছরের মাস্টার্স। আমরা যে বছর পাস করেছি, সেই বছর থেকে মাস্টার্সের জন্য নতুন একটা বিভাগ খোলা হলো। সেটার নাম থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স।
এটা মোটামুটি আধুনিক একটা বিভাগ। আমেরিকান কায়দায় দুটি সেমিস্টার। দুই সেমিস্টারে পাঁচটি পাঁচটি করে ১০টি আধুনিক কোর্স। আমরা প্রথমদিকের ১০ জন – ছয়জন ছেলে ও চারজন মেয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে এই আধুনিক বিভাগে ভর্তি হয়ে গেলাম। বাকি ছেলেমেয়েরা পুরনো বিভাগে রয়ে গেল।
এক বিভাগের ছেলেমেয়েদের দুই ভাগে ভাগ করলে যা হয়, তা-ই হলো। দুই ভাগের মাঝে একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। তারা দলে ভারী, পুরো ডিপার্টমেন্টই তাদের। আমাদের মাত্র একজন শিক্ষক, নিজেদের ক্লাসরুম নেই, ল্যাব নেই, বসার জায়গা নেই, খানিকটা উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াই। পুরোনো বন্ধুবান্ধবরা কখনো আমাদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে, কখনো হিংসা করে।
আমার নিজের সমস্যা একটু অন্য রকম, সারা জীবন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এসেছি। যখনই সম্ভব হয়েছে পার্সেন্টেজ দিয়ে সটকে পড়েছি। বড় ক্লাস, কেউ টের পায়নি। ছোট ক্লাসে সেটা করা যায় না, হাতেগোনা ১০ জন মাত্র ছাত্রছাত্রী, স্যারেরা সবার মুখ চেনেন, পালানোর উপায় নেই। আমি মুখ কালো করে ক্লাস করি। নতুন বিভাগ, স্যারদের খুব উত্সাহ, আমরা নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পাই না।
এর মাঝে নিঃশ্বাস নেওয়ার একটু সময় হলো। শীতের শুরুতে ঠিক করা হলো, আমরা শিক্ষা সফরে যাব। নামেই শিক্ষা সফর – এর মাঝে শিক্ষার কিছু নেই। কদিন সবাই মিলে কক্সবাজার, রাঙামাটি এ রকম মনোরম জায়গায় ঘুরে বেড়ানো। শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য সব বিভাগ ইউনিভার্সিটি থেকে টাকা পেয়েছে, সবার জন্য সমান টাকা এবং আমরা হঠাত্ করে আবিষ্কার করলাম, অন্যান্য বিভাগে ৫০-৬০ জন যে টাকা পেয়েছে, আমাদের মাত্র ১০ জনে সেই টাকা। আমরা মোটামুটি রাজার হালে ঘুরে বেড়াতে পারব।
তবে একটি সমস্যা এবং সেটি গুরুতর। আমরা সব ছেলেমেয়ে মিলে যেতে চাই, সঙ্গে একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক না থাকলে মেয়েদের বাবা-মায়েরা যত বড় শিক্ষা সফরই হোক, সেখানে যেতে দেবেন না। আমাদের এই নতুন থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স বিভাগের শিক্ষক মাত্র একজন এবং তিনি তখন বিদেশে। আমাদের সঙ্গে যাওয়ার কেউ নেই! আমরা শুকনো মুখে কয়েকজন স্যারের কাছে আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করলাম এবং তাদের মাঝখান থেকে একজন স্যার রাজি হয়ে গেলেন!