> নিজের লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
>> আমাদের বাচ্চাদের বিজ্ঞান এবং গণিতের পাঠ্যবইগুলোর ভাষা খুবই কটমটে বিজ্ঞানের সহজ বিষয়গুলোও জটিল করে লেখা হয়। আমার দুটি ইচ্ছা এবং পরিকল্পনার একটি হচ্ছে তাদের জন্য সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের বইগুলো লিখে দেওয়া। [কাজ শুরু করেছি!]
> পরিণত পাঠকদের জন্য লিখতে আপনার দ্বিধা কেন?
>> আমার কোনো দ্বিধা নেই, ভয় আছে। ছোট বাচ্চারা তাহলে আমাকে খুন করে ফেলবে। তারা যদি আমাকে অনুমতি দেয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমার একটা বড় উপন্যাস লেখার ইচ্ছা আছে। এটি হচ্ছে আমার জীবনের দ্বিতীয় ইচ্ছা। এটা যদি শেষ করতে পারি তাহলে আমি মনে করব আমার দায়িত্বের একটা ধাপ শেষ হলো। তখন পরের ধাপ নিয়ে কাজ শুরু করব।
> আপনার প্রিয় লেখক কারা?
>> এই প্রশ্নেরও মনে হয় উত্তর নেই। লেখকদের নাম বলে শেষ করা যাবে না। কোনো কোনো লেখক হয়তো শৈশবে বা কৈশোরে খুব প্রিয় ছিলেন, এখন বড় হয় গেছি বলে তার লেখা পড়ি না, কিন্তু আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় অবশ্যই তার নাম থাকতে হবে। আবার এই মুহূর্তে যে লেখকের লেখা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি তার নামটিও থাকতে হবে, কাজেই তালিকাটি শেষ করতে পারব না। তবে প্রিয় কবির বেলায় কাজটি খুব সহজ। আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। আগে সবসময় আমার ব্যাকপেকে তার একটা বই থাকত, এখন আমি আমার ই-বুক রিড়ারে তার বই রাখি! [যারা ই-বুক রিডার বলতে কী বোঝায় জানেন না তাদের জন্য বলছি : পৃথিবীতে বই প্রকাশনার যুগে একটা বিপ্লব ঘটেছে, মানুষ আজকাল কাগজের বই না পড়ে ই-বুক রিডারে বই পড়া শুরু করেছে। এর মাঝে সেটা প্রায় বইয়ের মতো হয়ে গেছে, একটু অভ্যাস হয়ে গেলে কোনো সমস্যাই হয় না। শরহফষব একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড, তাদের ই-বুক রিডার থেকে যে কোনো সময় যে কোনো বই কিনে এক মিনিটের মাঝে পড়তে শুরু করা যায়। আগে বই কিনে রাখতাম পরে পড়ব বলে, পড়া হতো না। এখন বই কিনি আর পড়ি। কী মজা!]
> কোন কোন লেখকের লেখায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
>> যার লেখাই পড়ে আনন্দ পেয়েছি তার লেখাতেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। একটি বই যদি আলাদা করে উল্লেখ করতে হয় তাহলে সেটা মার্ক টোয়েনের লেখা টম সয়ার। কৈশোরে সেই বই পড়ে আমার মাথা ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল সেই থেকে আমি তার মতো করে লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
> সমকালের পক্ষ থেকে আপনাকে ৫৯তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
>> দিলেন তো মনে করিয়ে। মনে ছিল না ভালোই ছিলাম! এই বয়সে কে জন্মদিনের কথা মনে করতে চায়?
সূত্র: দৈনিক সমকাল
ডিসেম্বর ২৩, ২০১১
মায়েদের জন্য ভালোবাসা
বহু বছর আগে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম তখন আমার ছেলেমেয়েরা খুব ছোট। তারা তাদের স্কুলটাকে খুব পছন্দ করত। তার কারণ সেখানে লেখাপড়া ছাড়া আরও অনেক কিছু হতো। যে রকম মে মাস এলেই স্কুলের সব বাচ্চা খুব উৎসাহ নিয়ে তাদের মায়েদের জন্য কোনো একটা উপহার তৈরি করা শুরু করত। মে মাসের ১১ তারিখ ‘মা দিবস’। সেদিন বাচ্চারা রীতিমতো হইচই করে মায়ের হাতে সেটা তুলে দিত! (বাবা দিবস মনে হয় ষড়যন্ত্র করে জুন মাসে রাখা হয়েছে−তত দিনে স্কুল ছুটি হয়ে যায় বাবার জন্য আর উপহার তৈরি হয় না!)
ব্যাপারটাতে খানিকটা ছেলেমানুষি আছে, কিন্তু আমার মনে হয়, এই ছেলেমানুষিটুকু খুবই দরকার। ছাগল বা গরুর বাচ্চা জন্ন হওয়ার পরই তিড়িং-বিড়িং করে লাফাতে থাকে, কিন্তু মানুষের বাচ্চার মতো অসহায় হয়ে আর কেউ জন্ন নেয় না। মায়েরা সেই অসহায় বাচ্চাকে বুকে ধরে মানুষ করেন বলে পৃথিবীতে এখন ছয় বিলিয়ন মানুষ! (এই ছয় বিলিয়ন মানুষের মধ্যে একজনও নেই যাকে কোনো একজন মা পেটে ধরেননি!) পৃথিবীর এই সভ্যতার একেবারে গোড়ার ব্যাপারটা হচ্ছে সন্তানের জন্য ভালোবাসা। অন্যসব ভালোবাসা থেকে এই ভালোবাসা অনেক বেশি খাঁটি আর গভীর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কাব্যগাথা তৈরি হয়েছে মায়েদের নিয়ে। কোনো কিছুর জন্য আমাদের ভালোবাসা গভীর হলে কোনো না কোনোভাবে সেখানে আমরা ‘মা’ কথাটি জুড়ে দিই। তাই নিজের দেশকে বলি মাতৃভুমি, মুখের ভাষাকে বলি মাতৃভাষা! নিজেদের সভ্য হিসেবে পরিচয় দিতে হলে সবার আগে দেখি মায়েদের আমরা কতটুকু সম্মান করি, সেই ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি মায়ের পায়ের নিচে হচ্ছে বেহেশত!
নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ করে আমাদের কিছু আলেম-ওলামা বলে বসেছেন, আমি যদি পুরুষ মানুষ হয়ে থাকি তাহলে আমার মা যেহেতু একজন মহিলা তিনি আমার থেকে নিচু স্তরের মানুষ। পত্রিকায় ছাপা হওয়া সেই খবর আমাকে কয়েকবার পড়তে হয়েছে বিশ্বাস করার জন্য যে সত্যিই এই কথাগুলো আলেম-ওলামারা বলেছেন। আলেম-ওলামাদের এ রকম একটা কথা বলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না, আমাদের চারজন উপদেষ্টা নারী উন্নয়ন নীতিমালাটি এই আলেম-ওলামাদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁরা যেন এই কথাগুলো বলতে পারেন তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁরা শুধু এই কথাটি বলেননি, ধর্মের দোহাই দিয়ে নারী উন্নয়ননীতির এমন সব পরিবর্তনের কথা বলেছেন যে সেই পরিবর্তন করা হলে এই নারী উন্নয়ননীতিকে আর ‘নারী উন্নয়ন নীতি’ বলা যাবে না, এটাকে ‘পুরুষের ঔদ্ধত্যের নীতি’ বা এই ধরনের নতুন কোনো একটা নাম দিয়ে চালাতে হবে।