বাজিয়ে বাঁশি মনের বনে
সুরট মিশ্র দাস পয়রা
বাজিয়ে বাঁশি মনের বনে
এসো কিশোর বংশীধারী।
চূড়ায় বেঁধে ময়ূর-পাখা
বামে লয়ে রাধাপ্যারি॥
আমার আঁধার প্রাণের মাঝে
এসো অভিসারের সাজে,
নয়ন-জলের যমুনাতে
উজান বেয়ে ছুটুক বারি॥
এমনি চোখে তোমায় আমি
দেখতে যদি না পাই হরি,
দেখাও পদ্মপলাশ আঁখি,
তোমার প্রেমে অন্ধ করি।
ঘুচাও এবার মায়ার বেড়ি
পরাও তিলক কলঙ্কেরই
‘শ্যাম রাখি কি কুল রাখি’ ভাব
শ্যাম হে আর সইতে নারি।
বিজন গোঠে কে রাখাল বাজায় বেণু
বাউল
বিজন গোঠে কে রাখাল বাজায় বেণু।
আমি সুর শুনে তার বাউল হয়ে এনু গো॥
ওই সুরে পড়ে মনে
কোন সুদূর বৃন্দাবনে
যেত নন্দদুলাল ব্রজের গোপাল বাজিয়ে বেণুবনে।
পথে লুটত কেঁদে গোপবালা, ভুলত তৃণ ধেনু গো॥
কবে নদিয়াতে গোরা
ও ভাই ডেকে যেত এমনি সুরে এমনি পাগলকরা,
কেঁদে ডাকত বৃথাই শচিমাতা, সাধত বসুন্ধরা,
প্রেমে গলে যেত নরনারী যাচত পদরেণু গো॥
বেলা পড়ে এল জলকে সই চল চল
খাম্বাজ খেমটা
বেলা পড়ে এল জলকে সই চল চল।
ডাকিছে ওই তটিনী ছলছল॥
বকের সারিকার মালা দুলিয়ে,
আসিছে সাঁঝ ওই চিকুর এলিয়ে,
আকাশের কোলে শিশু-শশীরে ওই
দেখিতে আসিছে তারকা দলে দলে॥
কমলিনীর মলিন মুখ
হাসে জলে শাপলা শালুক,
বনের পথ হল আঁধার
জোনাকি ওই চমকে ঝলমল॥
ব্রজের দুলাল ব্রজে আবার আসবে ফিরে কবে
কীর্তন
ব্রজের দুলাল ব্রজে আবার আসবে ফিরে কবে?
জাগবে কি আর ব্রজবাসী ব্যাকুল বেণুর রবে?
বাজবে নূপুর তমালছায়ায়
বইবে উজান হৃদ-যমুনায়,
অভাগিনি রাধার কি আর তেমন সুদিন হবে?
গোঠে নাহি যায় রাখালেরা আর
লুটায়ে কাঁদে পথের ধুলায়,
ধেনু ছুটে যায় মথুরা পানে
না হেরি গোঠে রাখাল-রাজায়।
উড়িয়া গিয়াছে শুকসারি পাখি
শুনি না কৃষ্ণ-কথা (আর),
শ্যাম-সহকার তরুরে না হেরি
শুকাল মাধবীলতা।
শ্যাম বিনে নাই সে শ্যাম-কান্তি,
শুকায়েছে সব।
কদম তমাল তরুপল্লব হাসি-উৎসব শুকায়েছে সব।
সখী গো –
চির-বসন্ত ছিল যথা আজ সেথা শূন্যতা
হাহাকার রবে কাঁদে শ্যাম (হে)
ললিতা বিশাখা নাই, নাই চন্দ্রাবলী
নাই ব্রজে শ্রীদাম সুদাম। (সখা হে)
ভবের এই পাশা খেলায়
বাউল লোফা
ভবের এই পাশা খেলায়
খেলতে এলি, হায় আনাড়ি।
হাতে তোর দান পড়ে না
হাত খোলে না তাড়াতাড়ি॥
তুই আর তোর সাথি ভাই
কাঁচা খেলোয়াড় দু-জনাই,
মায়া-রিপুর সাথে তাই
নিত্য হেরে ফিরিস বাড়ি॥
তোরই সে চালের দোষে
যায় কেঁচে তোর পাকা ঘুঁটি,
ফিরিতে হয় অমনি
যেমনি যাস ঘরে উঠি।
ও হাতে হরদম চক ছয়-তিন-নয় পড়ছে আড়ি॥
সংসার-ছক পেতে হায়,
বসে রোস মোহের নেশায়,
হেরে যে সব খোয়ালি
যাসনে তবু খেলা ছাড়ি॥
প্রাণ মন দুই ঘুঁটিতে যুগ বেঁধে তুই যা এগিয়ে,
দেহ তোর একলা ঘুঁটি রাখ আড়িতে মার বাঁচিয়ে।
আড়িতে মার খেলে তুই স্বর্গে যাবি জিতবি হারি॥
ভালো প্রিয় ভোলো ভোলো আমার স্মৃতি
পিলু খাম্বাজ লাউনি
ভালো প্রিয় ভোলো ভোলো আমার স্মৃতি।
তোরণ-দ্বারে বাজে করুণ বিদায়-গীতি॥
তুমি ভুল করে এসেছিলে,
ভুলে ভালো বেসেছিলে,
ভুলের খেলা ভুলের মেলা
তাই প্রিয় ভেঙে দিলে।
ঝরা ফুলে হেরো ঝুরে কানন-বীথি॥
তব সুখ-দিনে তব হাসির মাঝে অশ্রু মম
রবির দাহে শিশিরসম শুকাইবে প্রিয়তম!
হাসিবে তব নিশীথে নব চাঁদের তিথি।
ফোটে ফুল যায় ঝরে
গহন বনে অনাদরে,
গোপনে মোর প্রেম-কুসুম
তেমনই গেল গো মরে ;
আমার তরে কাঁটার ব্যথা কাঁদুক নিতি॥
ভালোবেসে অবশেষে কেঁদে দিন গেল
বাউল কাহারবা
ভালোবেসে অবশেষে কেঁদে দিন গেল,
ফুল-শয্যা বাসি হল, বঁধু না এল।
পানের খিলি শুকাইল বাটাতে ভরা,
এ পান আমি কারে দিব সে বঁধু ছাড়া,
নীলাম্বরী শাড়ি ছি ছি পরলেম মিছে লো॥
সখী এবার ধরে দিস যদি তায়
তারে রাখব বেঁধে বিনোদ খোঁপায়,
কাঙালে পাইলে রতন যেমন রাখে লো॥
সোঁদা-মাখা দিসনে কেশে, গন্ধে যে লো তার
মনে আনে চন্দন-গন্ধ সোনার বঁধুয়ার।
এত দুঃখ ছিল আমার এই বয়েসে লো॥
ভুবনে ভুবনে আজি ছড়িয়ে গেছে রং
হোরি
কাফি সাদ্রা
ভুবনে ভুবনে আজি ছড়িয়ে গেছে রং।
রাঙিল, মাতিল ধরা অভিনব ঢং॥
রাঙা বসন্ত হাসে নন্দন-আনন্দে,
চিত্ত-শিখী নাচে মদালস-ছন্দে,
নাচিছে পরানে আজি তরুণ দুরন্ত
বাজায়ে মৃদং॥
কামোদ নটে আমোদে ওঠে গান
মাতিয়া ওঠে প্রাণ।
উতল যমুনা-জলতরঙ্গ,
অঙ্গে অপাঙ্গে আজি খেলিছে অনঙ্গ,
পরানে বাজে সারং সুর
কাফির সঙ্গ॥
ভুল করে আসিয়াছি অপরাধ যেয়ো ভুলে
খাম্বাজ – মিশ্র কাহারবা
ভুল করে আসিয়াছি
অপরাধ যেয়ো ভুলে।
দেবতা চাহে কি ফুল মরে যবে পদমূলে॥
ভুলে গেছি স্বপন-ঘোরে
তুমি যে ভুলেছ মোরে,
তব খুঁজি স্মৃতির রেখা
ভাঙন-ধরা মনের কূলে॥
নাহি মনে – ব্যথা দিয়ে কবে কথা কয়েছিলে,
বিশ্ব আমার শূন্য করে কবে বঁধু বিদায় নিলে।
হাসি-মুখখানি শুধু মনে ওঠে দুলে দুলে॥
আমার স্মৃতির চিতা পুড়িতে সে কত বাকি,
দেখিয়া চলিয়া যাব যে দেশে নাই তোমার আঁখি।
তুমি থাক হাসির দেশে, আমি হতাশার কূলে॥
ভোলো অতীত-স্মৃতি ভোলো কালা
বেহাগ-খাম্বাজ ঠুংরি
ভোলো অতীত-স্মৃতি ভোলো কালা।
কী হবে কুড়ায়ে এ ছিন্ন মালা॥
মিছে রোধি পথ
মিনতি করিছ কত,
জাগায়ে পুরানো ক্ষত
দিয়ো না জ্বালা॥