- বইয়ের নামঃ মদিনা
- লেখকের নামঃ কাজী নজরুল ইসলাম
- বিভাগসমূহঃ প্রবন্ধ
অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা
অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা,
ফোটাও মনের বনে তুমি বকুল হেনা
চির-চেনা॥
যৌবন-মদ-গর্বিতা তন্বী
আননে জ্যোৎস্না, নয়নে বহ্নি,
তব চরণের পরশ বিনা
অশোক তরু মুঞ্জরে না, চির-চেনা॥
নন্দন-নন্দিনী তুমি দয়িতা চির-আনন্দিতা,
প্রথম কবির প্রথম লেখা তুমি কবিতা।
নৃত্য-শেষের তব নূপুরগুলি হায়
রয়েছে ছড়ানো আকাশে তারকায়,
সুর-লোক-উর্বশী হে বসন্ত-সেনা! চির-চেনা॥
আজ নিশীথে অভিসার তোমারই পথে
আজ নিশীথে অভিসার তোমারই পথে,
প্রিয়তম,
বনের পারে নিরালায় দিয়ো হে দেখা,
নিরুপম॥
সুদূর নদীর ধারে নিরালাতে বালুচরে –
চখার তরে যথা একা চখী কেঁদে মরে,
সেথা সহসা আসিয়ো গোপন প্রিয়
স্বপন সম॥
তোমারই আশায় ঘুরি শত গ্রহে শত লোকে,
(ওগো) আমারই বিরহ জাগে বিরহী চাঁদের চোখে,
অকূল পাথার নিরাশার পারায়ে এসো
প্রাণে মম॥
আধো-আধো বোল
ভৈরবী পিলু–কারফা
আধো-আধো বোল
লাজে বাধো-বাধো বোল
বলো কানে কানে।
যে কথাটি আধো রাতে
মনে লাগায় দোল –
বলো কানে কানে॥
যে কথার কলি সখি আজও ফুটিল না
শরমে মরম-পাতে দোলে আনমনা,
যে কথাটি ঢেকে রাখে বুকের আঁচল –
বলো কানে কানে॥
যে কথা লুকায়ে থাকে লাজ-নত চোখে
না বলিতে যে কথাটি জানাজানি লোকে
যে কথাটি ধরে রাখে অধরের কোল–
বলো কানে কানে॥
যে কথা বলিতে চাহ বেশভূষার ছলে,
যে কথা দেয় বলে তব তনু পলে পলে,
যে কথাটি বলিতে সই গালে পড়ে টোল –
বলো কানে কানে॥
আনো গোলাপ-পানি আনো আতরদানি গুলবাগে
আনো গোলাপ-পানি আনো আতরদানি গুলবাগে
সহেলি গো খুব ভালো লাগে, সুমধুর লাগে॥
বেদুইনি ছেলের বাঁশি কারে ডাকে
হেসে হেসে অনুরাগে॥
মরুযাত্রীদের উটের সারি
যেমন চাহে তৃষ্ণার বারি
তেমনই মম পিয়াসি পরান
যেন কার প্রেম-অমৃত বারি মাগে॥
চাঁদের পিয়ালাতে জোছনা-শিরাজি ঝরে যায়
আমারি হৃদয় সুমধুর সে মধু পায়।
হায় হায়! বাদাম গাছের আঁধার বনে
মধুর নিশ্বাস ওঠে বুলবুলির শিসের সনে।
বিরহী মোদের কোথায় হাসে কোন মদিনাতে
ফোরাত নদীর স্রোতের সম বুকে ঢেউ জাগে॥
আবার ভালোবাসার সাধ জাগে
আবার ভালোবাসার সাধ জাগে।
সেই পুরাতন চাঁদ আজি নতুন লাগে মধুর লাগে॥
যে ফুল দলিয়াছি নিঠুর পায়ে
সাধিয়া তারে বুকে জড়ায়ে
উদাসীন হিয়া হায় রেঙে ওঠে অবেলায়
সোনার গোধূলি-রাগে॥
আবার ফাগুন-সমীরণ কেন বহে
আবার ভুবন ভরি বেজে ওঠে বাঁশরি অসীম বিরহে।
তপোবনের বুকে ঝরনার সম
কে এলে সহসা নিরুপম,
তোমার নূপুর-ধ্বনি প্রাণে ওঠে অনুরণি
সহসা কে এলে প্রিয়তম আমার হৃদয়-বৃন্দাবনে
সহসা রাঙাইলে কুঙ্কুম-ফাগে॥
আমার গানের মালা আমি
আমার গানের মালা আমি
করব তারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
মোর করুণ অভিমান॥
চোখে সজল কাজল-লেখা
কণ্ঠে ডাকে কুহু-কেকা
কপোল যার অশ্রু রেখা
একা যাহার প্রাণ।
মালা করব তারে দান॥
শাখায় ছিল কাঁটার বেদন
মালায় ছিল সূচির জ্বালা,
কণ্ঠে দিতে খুশি হই আমি
মোর আনন্দের মালা।
বিরহে মোর প্রেম-আরতি
জ্যোতির্লোকের অরুন্ধতী
তার তরে মোর এই গান
মালা মোর করব তারে দান॥
আমি ‘মদিনা’ মহারাজার মেয়ে, সকলের জানা আছে
আমি ‘মদিনা’ মহারাজার মেয়ে, সকলের জানা আছে।
নওজোয়ান! তুমি কার ছেলে তুমি কেন এলে মোর কাছে॥
আমি গান গাইতে জানি
তুমি কি গান লিখতে জান?
তা হলে তুমি বাড়ি গিয়ে
আমার তরে অনেক গান লিখে আনো;
তা হলে তোমায় মালা গেঁথে দিব
মোর গুলবাগানে অনেক ফুল ফুটেছে ফুলের গাছে॥
তুমি মহারাজার, বাদশার ছেলে হও,
তাহলে আমার ঘরে এসে কথা কও।
তব ভালো নাম কি হে কবি
তা হলে আঁকব আমি তোমার ছবি
আমি পর্দানশিন কুমারী, মোরে এখন কেউ নাহি যাচে॥
আরক্ত কিংশুক কাঁপে। মালতীর বক্ষ ভরি
আরক্ত কিংশুক কাঁপে। মালতীর বক্ষ ভরি
চন্দ্রের অমৃত-স্পর্শে উঠিতেছে শিহরি শিহরি॥
নীরব কোকিলের গুঞ্জন
চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, বাড়িয়াছে বক্ষের স্পন্দন।
মোদের নাচের নূপুরের ছন্দ
কভু চপল কভু মৃদু-মন্দ,
বসন্ত-উৎসব-সজ্জা অন্তরাল হতে মৃদু ভাষে
সুন্দর গুঞ্জন-ধ্বনি কেন ভেসে আসে।
মমতার মধু-বিন্দু, ক্ষরিল মোরা মধু খেয়ে বলিলাম–আহা মরি॥
ধরণির অঙ্গ হতে বাসরের সজ্জা পড়ে খুলি
গভীর আনন্দে মোরা চাহি দুটি আঁখি তুলি।
চৈত্রের পূর্ণিমা রাত্রি এল ফিরি
প্রিয়, তুমি কেন চলে গেলে ধীরি ধীরি।
তুমি ফিরে এলে মোরা লভিলাম অমৃতের স্বাদ
চন্দ্রের অমিয়া পান করি॥
ইরানের রূপ-মহলের শাহজাদি শিরীঁ! জাগো
ইরানের রূপ-মহলের শাহজাদি শিরীঁ! জাগো
জাগো শিরীঁ
‘প্রিয়া জাগো’ বলে তোমার প্রিয়তম
ডাকে শোনো আগে রাতে ধীরে ধীরে॥
(তুমি) ধরা দিবে বলেছিলে বে-দরদি
(যদি) পাহাড় কাটিয়া আনিতে পার নদী।
হেরো গো শিলায় আজি উঠিয়াছে ঢেউ
(সেথা) তব মুখ ছাড়া নাহি আর কেউ,
প্রেমের পরশে যেন মোমের পুতুল হয়েছে পাষাণ গিরি॥
গলিল পাষাণ, আমি তোমার প্রিয়তম ফিরে এলাম বিরহী বিবাগী
তোমার দেখার লাগি
তুমি আমার প্রিয়তমা হও আমার পানে চাহো ফিরি
এসো শিরী! এসো শিরী!!
একা ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলে কে
একা ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলে কে
ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী?
আধেক অঙ্গ জলে, রূপের লহর তোলে
সে ফুল দেখে বেভুল সিনান বিসরি॥
একি নতুন ছবি,আঁখিতে দেখি ভুল,
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে ঝিলের জলে অরুণ গাগরি।
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
গলে পড়ে সে শত তরঙ্গে,
শারদ আকাশে দলে দলে আসে
মেঘ-বলাকা খেলিতে সঙ্গে!
আলোক-মঞ্জরি প্রভাত-বেলা
বিকশি জলে কি গো করিছে খেলা?
আবেশে বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি॥
এল ফুলের মহলে ভোমরা গুনগুনিয়ে
এল ফুলের মহলে ভোমরা গুনগুনিয়ে
ও-সে কুঁড়ির কানে কানে কি কথা যায় শুনিয়ে॥
জামের ডালে কোকিল কুতূহলে,
আড়ি পাতি ডাকে কূ কূ বলে
হাওয়ায় ঝরা পাতার নূপুর বাজে রুনঝুনিয়ে॥
ধীরে সখা ধীরে – কয় লতা দুলে
জাগিয়ো না কুঁড়িরে, কাঁচা ঘুমে তুলে–
গেয়ো না গুন গুন গুন গুন সুরে
প্রেমের ঢুলে ঢুলে।
নিলাজ ভোমরা বলে, ‘না-না-না-না’
– ফুল দুলিয়ে॥
এসো এসো বন-ঝরনা উচ্ছল-চল-চরণা
এসো এসো বন-ঝরনা উচ্ছল-চল-চরণা।
সর্পিল ভঙ্গে লুটায়ে তরঙ্গে
ফেন-শুভ্র ওড়না॥
পাষাণ জাগায়ে এসো নির্ঝরিণী
এসো যৌবন-চঞ্চলা জল-হরিণী,
মরু-তৃষিতের প্রাণে ঢালো ধারা-জল
শ্যাম-মেঘ বরনা॥
এসো বুনো পথ বেয়ে সুমধুর গান গেয়ে
গভীর অরণ্যের মৌন-ব্রত ভেঙে ভয়হীন পাহাড়ি মেয়ে
নৃত্যপরা পায়ে ছন্দ আনো
আনন্দ আনো মৃত-প্রাণ জাগানো।
অনাবিল হাসির ঝরা ফুল ছড়ায়ে
এসো মঞ্জুলা মনোহরণা॥
কার মঞ্জীর রিনিঝিনি বাজে – চিনি চিনি
সিন্ধুড়া–কাওয়ালি
কার মঞ্জীর রিনিঝিনি বাজে – চিনি চিনি
কার মঞ্জীর রিনিঝিনি বাজে – চিনি চিনি
প্রাণের মাঝে সদা শুনি তারই রাগিণী –
চিনি চিনি॥
বন-শিরীষের জিরিজিরি পাতায়
ধীরে ধীরে ঝিরিঝিরি নূপুর বাজায়,
তমাল ছায়ায় বেড়ায় ঘুরে মায়া-হরিণী।
চিনি চিনি॥
আমার গানে তারই চরণের অনুরণনে
ছন্দ জাগে রসে গন্ধে রূপে বরনে ।
কান পেতে রই দুয়ার-পাশে
তারই আসার আভাস আসে,
ঝংকার তোলে মনের বীণায় বীণ-বাদিনী–
চিনি চিনি॥
গত রজনির কথা পড়ে মনে
গত রজনির কথা পড়ে মনে
রজনিদগন্ধার মদির গন্ধে।
এই সে ফুলেরই মোহন-মালিকা
জড়ায়ে ছিল সে কবরী-বন্ধে॥
বাহুর বল্লরি জড়ায়ে তার গলে
আধেক আঁচলে বসেছি তরুতলে,
দুলেছে হৃদয় ব্যাকুল ছন্দে॥
মুখরা ‘বউ কথা কও’ ডেকেছে বকুল-ডালে
লাজে ফুটেছে লালি গোলাপ কুঁড়ির গালে।
কপোলের কলঙ্ক মোর মেটেনি আজো যে সই
জাগিছে তারই স্মৃতি চাঁদের কপোলে ওই।
কাঁদিছে নন্দন আজি নিরানন্দে॥
গোধূলির রং ছড়ালে কে গো আমার সাঁঝ গগনে
৪১
মাঢ়-খাম্বাজ-মিশ্র–দাদরা
গোধূলির রং ছড়ালে কে গো আমার সাঁঝ গগনে
গোধূলির রং ছড়ালে কে গো আমার সাঁঝ গগনে
বিবাহের বাজল বাঁশি আজি মোর নৌজোয়ানি জীবনে॥
নতুন করে আমার বাঁচিবার সাধ জাগে
সুন্দর লাগে ধরা মোর আনন্দিত নয়নে॥
ঘরে যদি এলে প্রিয়
২৪
মাঢ়-মিশ্র–কারফা
ঘরে যদি এলে প্রিয়
ঘরে যদি এলে প্রিয়
নাও একটি খোঁপার ফুল।
আমার চোখের দিকে চেয়ে
ভেঙে দাও মনের ভুল॥
অধর কোণের ঈষৎ হাসির আলোকে
বাড়িয়ে দাও আমার গহন কালোকে
যেতে যেতে মুখ ফিরিয়ে
দুলিয়ে যেয়ো দুল॥
একটি কথা কয়ে যেয়ো, একটি নমস্কার,
সেই কথাটি গানের সুরে গাইবো বারবার
হাত ধরে মোর বন্ধু ভুলো
তোমার মনের সকল ভুল॥
চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, মাধবী-কানন মধুক্ষরা
চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, মাধবী-কানন মধুক্ষরা
মধুর আনন্দ-উল্লাসে রাত্রে ভাসে বসুন্ধরা॥
মুকুল-সৌগন্ধ ভারে দখিনা পবন
নৃত্যের ছন্দে চলে মর্মরিয়া বেণু-বন।
তটিনী ঊর্মির মর্ম নিয়া
শত ভঙ্গে চন্দ্র নিবেদিয়া
দুর্নিবার প্রেমোচ্ছ্বাসে কণ্ঠ-কল-গীতে ভরা॥
মধুর পূর্ণিমা নিশি, পূর্ণপাত্র শিরাজি হস্তে যেন সাকি,
জ্যোৎস্নার মদির স্বপ্নে মুকুলিত মাধবীর আঁখি।
গোলাপের স্নিগ্ধগন্ধে অস্থির অন্তর,
আজি রাত্রে হাসিছে সমাহিত প্রসন্ন সুন্দর।
পরিতৃপ্ত চকোরের রুদ্ধ-কণ্ঠ লভিতে চন্দ্রের
পান করি শারাব গেলাস-ভরা।
ছড়ায়ে বৃষ্টির বেল-ফুল
ছড়ায়ে বৃষ্টির বেল-ফুল
ঝরায়ে দোলন-চাঁপা বকুল
দুলায়ে মেঘলা চাঁচর-চুল
চপল চোখে কাজল মেখে আসিল কে॥
ছিটিয়ে জল বাজায়ে কে মেঘের মাদল
একা ঘরে বিজলিতে এমন হাসি হাসিল কে॥
এলে কি গো দুরন্ত মোর ঝোড়ো হাওয়া
চির-বিরহী প্রিয় মধুর পথ-চাওয়া
হৃদয়ে মোর দোলা লাগে
ঝুলনেরই আবেশ জাগে
ভুলে যাওয়া আমারে আবার
ভালোবাসিলে কে॥
তোমার গানের চেয়ে তোমায় ভালো লাগে আরও
তোমার গানের চেয়ে তোমায় ভালো লাগে আরও
(মোর) ব্যথায় আস প্রিয় হয়ে, কথায় যখন হারো।
(তব) সুর যবে দূরে যায় চলে
তখন আস মোর আঁখির জলে
ভালোবাসায় যে মধু দাও বঁধু
তা কি ভাষায় দিতে পার॥
আমায় যখন সাজাও সুরে ছন্দ অলংকারে
তখন তুমি থাক যেন কোন গগনের পারে।
গান থামিয়ে একলা ঘরে
আস যখন আমার তরে
সেই তো আমার আনন্দ, তাহা ছন্দে দিতে পার॥
দুরন্ত বায়ু পূরবইয়াঁ
৩৭
কাফি-সিন্ধু–কাহারবা
দুরন্ত বায়ু পূরবইয়াঁ
বহে অধীর আনন্দে।
তরঙ্গে দুলে আজি নাইয়াঁ
রণ-তুরঙ্গ ছন্দে॥
অশান্ত অম্বর-মাঝে
মৃদঙ্গ গুরুগুরু বাজে,
আতঙ্কে থরথর অঙ্গ
মন অনন্তে বন্দে॥
ভুজঙ্গী দামিনীর দাহে
দিগন্ত শিহরিয়া চাহে,
বিষণ্ণ ভয়-ভীতা যামিনী
খোঁজে সে তার ছন্দে॥
মালঞ্চে এ কী ফুল-খেলা,
আনন্দে ফোটে যুথি বেলা,
কুরঙ্গী নাচে শিখী-সঙ্গে
মাতি কদম্ব-গন্ধে॥
একান্তে তরুণী তমালী
অপাঙ্গে মাখে আজি কালি,
বনান্তে বাঁধা পল দেয়া
কেয়া-বেণির বন্ধে॥
দিনান্তে বসি কবি একা
পড়িস কি জলধারা-লেখা,
হিয়ায় কি কাঁদে কুহু-কেকা
আজি অশান্ত দ্বন্দ্বে॥
দোলন চাঁপা বনে দোলে দোল-পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে
দোলন চাঁপা বনে দোলে দোল-পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে।
(শ্যাম) পল্লব কোলে যেন দোলে রাধা, লতার দোলনাতে॥
(যেন) দেব-কুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি
আরতির মৃদু জ্যোতি প্রদীপ-কলি, দোলে যেন দেউল-আঙিনাতে॥
বন-দেবীর ওকী রুপালি ঝুমকা চৈতি সমীরণে দোলে –
রাতের সলাজ আঁখি-তারা যেন তিমির আঁচলে।
ও যেন মুঠিভরা চন্দন-গন্ধ, দোলে রে গোপিনির গোপন আনন্দ,
ও কী রে চুরি করা শ্যামের নূপুর – চন্দ্র-যামিনীর মোহন হাতে॥
না-ই পরিলে নোটন খোঁপায়
না-ই পরিলে নোটন খোঁপায়
ঝুমকো-জবার ফুল।
এমনি এসো লুটিয়ে পিঠে
আকুল এলোচুল॥
সজ্জা-বিহীন লজ্জা নিয়ে,
এমনি তুমি এসো প্রিয়ে,
গোলাপ ফুলে রং মাখাতে
হয় যদি হোক ভুল॥
গৌর দেহে না-ই জড়ালে
গৌরী-চাঁপা শাড়ি,
ভূষণ পরে না-ই বা দিলে
রূপের সাথে আড়ি।
যেমন আছ এমনি এসো,
নয়ন তুলে ঈষৎ হেসো,
সেই খুশিতে উঠবে দুলে
আমার হৃদয়-কূল॥
নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই
নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই
(হে প্রিয়তম)
নিত্য নূতন রূপে আবার আসব এই হেথাই॥
চাঁদনি রাতের বাতায়নে রইবে চেয়ে উদাস মনে,
বলব আমি, ‘হারাইনি গো নাই ভাবনা নাই;
আকাশ-লোকে তারার চোখে তোমার পানে চাই!’
সাঁঝ সকালে জল নিতে যাও যে বনপথ বেয়ে –
ঝরা মুকুল হয়ে আমি সে-পথ দেব ছেয়ে।
বাতাস হয়ে লহর তুলে ঘোমটা মুখের দেব খুলে,
বলবে হেসে, ‘হায় কালা-মুখ, তোমার মরণ নাই?’
সত্যি আমার নাই তো মরণ তোমায় ভালোবেসে,
তোমার আমার পাওয়ার আশায় আবার আমি এলাম হেসে
কাছে কাছে ছিলাম বলে
দূরে তুমি যাওনি চলে
বাহির ছেড়ে আজ পেয়েছি তোমার অন্তরেতে ঠাঁই।
নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না
নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না
দীপ নিভিতে দাও।
নিবু-নিবু প্রদীপ নিবুক হে পথিক
সারা রাত ঘরে থেকে যাও॥
আজও শুকায়নি মালার গোলাপ
আশা-ময়ূরী মেলেনি কলাপ,
বাতাসে এখনও জড়ানো প্রলাপ,
বারে বারে ফিরে চাও।
দীপ নিভিতে দাও॥
ঘুমে ঢলে পড়তে দিয়ো না অলস আঁখি
ক্লান্ত করুণ কায়,
সুদূর নহবতে সানাই বাজিতে দাও।
উদাস যোগিয়ায়।
হে প্রিয় প্রভাতে তব রাঙা পায়
বকুল ফুল ঝরিয়া মরিতে চায়,
তোমার হাসির আভায় দিক রাঙিয়ে দাও।
দীপ নিভিতে দাও॥
নিশি-রাতে রিম ঝিম ঝিম বাদল-নূপুর
নিশি-রাতে রিম ঝিম ঝিম বাদল-নূপুর
বাজিল ঘুমের সাথে সজল মধুর॥
দেয়া গরজে বিজলি চমকে,
জাগাইল কে মোর ঘুমন্ত প্রিয়তমকে।
আধো ঘুম ঘোরে চিনিতে নারি ওরে
‘কে এল’ ‘কে এল’ বলে ডাকিছে ময়ূর॥
দ্বার খুলি পড়শি কৃষ্ণা মেয়ে আছে চেয়ে
মেঘের পানে আছে চেয়ে।
কারে দেখি আমি কারে দেখি
মেঘলা আকাশ না ওই মেঘলা মেয়ে।
ধায় নদীজল মহাসাগর পানে
বাহিরে ঝড় কেন আমায় টানে,
জমাট হয়ে আছে বুকের কাছে
নিশীথ আকাশ যেন মেঘ ভারাতুর॥
নূরজাহান! নূরজাহান সিন্ধুনদীতে ভেসে
নূরজাহান! নূরজাহান
সিন্ধুনদীতে ভেসে
(এলে) মেঘলা-মতীর দেশে
ইরানি গুলিস্তান॥
নার্গিস লালা গোলাপ আঙুর-লতা
শিরীঁ ফরহাদ শিরাজের উপকথা
এসেছিলে তুমি তনুর পিয়ালা ভরি
বুলবুলি দিলরুবা রবারের গান॥
তব প্রেমে উন্মাদ ভুলিল সেলিম সে যে রাজাধিরাজ–
চন্দন-সম মাখিল অঙ্গে কলঙ্ক লোক-লাজ!
যে কলঙ্ক লয়ে হাসে চাঁদ নীলাকাশে
(যাহা) লেখা থাকে শুধু প্রেমিকের ইতিহাসে
দেবে চিরদিন নন্দন-লোকচারী
(তব) সেই কলঙ্ক সে প্রেমের সম্মান॥
পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া।
চাঁদিনি রাতের চাঁদোয়া তলে
বুকের আঁচল দিব পাতিয়া॥
নয়ন-মণির মুকুরে তোমার
দুলিবে আমার সজল ছবি
সবুজ ঘাসের শিশির ছানি
মুকুতা-মালিকা দিব গাঁথিয়া॥
ফিরোজা আকাশে আবেশে ঝিমায়,
দীঘির বুকে কমল ঘুমায়,
নীরব যখন পাখির কূজন
আমরা দু জন রব জাগিয়া॥
ছাতিম তরুর শীতল ছায়ায়
ঘুমাব মোরা প্রিয় ঘুম যদি পায়
বনের শাখা ঢুলাবে পাখা
ঝরিবে রাঙা ফুল কপোল চুমিয়া॥
প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই॥
পরি চাঁপা রঙের শাড়ি, খয়েরি টিপ,
জাগি বাতায়নে, জ্বালি আঁখি-প্রদীপ
মালা চন্দন দিয়ে মোর থালা সাজাই॥
তুমি আসিবে বলে সুদূর অতিথি
জাগি চাঁদের তৃষ্ণা লয়ে কৃষ্ণা-তিথি
কভু ঘরে আসি কভু বাহিরে চাই॥
আজি আকাশে বাতাসে কানাকানি,
জাগে বনে বনে নব ফুলের বাণী,
আজি আমার কথা যেন বলিতে পাই॥
বঁধু জাগাইল এ কোন পরম সুন্দরের তৃষা
২০
(আধুনিক গান)
বঁধু জাগাইল এ কোন পরম সুন্দরের তৃষা
(বঁধু) জাগাইল এ কোন পরম সুন্দরের তৃষা।
(মোর) হাসিয়া দিন যায়, পোহায় জাগরণে নিশা॥
এ ভীরু ফুলকলি জাগাও বঁধু
তোমার বুকে ছিল এ মধু
আমি পরম আনন্দ চাই
দিয়ো না মিলনে বেদনা মিশা॥
বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে
বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে
ঝরা বন-গোলাপের বিলাপ শোনে।
শিরাজের নওরোজে ফাল্গুন মাসে
যেন তার প্রিয়ার সমাধির পাশে
তরুণ ইরান-কবি কাঁদে নিরজনে॥
উদাসীন আকাশ থির হয়ে আছে
জল-ভরা মেঘ লয়ে বুকের কাছে।
সাকির শরাবের পিয়ালার পরে
সকরুণ অশ্রুর বেলফুল ঝরে,
চেয়ে আছে ভাঙা চাঁদ মলিন-আননে॥
বেণুকা ওকে বাজায় মহুয়া-বনে
বেণুকা ওকে বাজায় মহুয়া-বনে।
কেন ঝড় তোলে তার সুর আমার মনে॥
বলে, আয় সখী, সে দুরন্তে সখী
আমারে কাঁদাবে সারা জনম ওকি?
সে কি ভুলিতে দেবেনা সারা জীবনে॥
সখী মন্দ ছিল তার তির ধনুক মধুর
বাজে এবার সুমধুর তার বেণুকার সুর
সখী কেন সে বন-বিলাসী
আমার ঘরের পাশে বাজায় বাঁশি
আছে আরো কত দেশ কত নারী ভুবনে॥
ভালোবাসার ছলে আমায় তোমার নামে গান গাওয়ালে
ভালোবাসার ছলে আমায় তোমার নামে গান গাওয়ালে।
চাঁদের মতন সুদূর থেকে সাগরে মোর দোল খাওয়ালে॥
কাননে মোর ফুল ফুটিয়ে উড়ে গেল গানের পাখি,
যুগে যুগে আমায় তুমি এমনি করে পথ চাওয়ালে॥
আঁকি তোমার কতই ছবি, তোমায় কতই নামে ডাকি,
পালিয়ে বেড়াও, তাই তো তোমায় রেখার সুরে ধরে রাখি।
মানসী মোর! কোথায় কবে আমার ঘরের বধূ হবে,
লোক হতে লোকান্তরে সেই আশে তরি বওয়ালে॥
মদিনা! মদিনা! কেন তোমার এত অহংকার
‘মদিনা’! ‘মদিনা’! কেন তোমার এত অহংকার?
তোমার বাড়িতে আমি কভু আসব না আর।
মোরে বাংলার সকলে ভালোবাসে
সেই গৌরবে এসেছিলাম তোমার কাছে।
মদিনা! মদিনা! মদিনা
মদিনা! মদিনা! মদিনা!
তোমায় ছাড়া আর কারেও ভালোবাসি না।
‘মদিনা! তব আর একটা নাম কি
কেউ বলে ‘হাসনাহেনা’, আমি তোমায় ‘মদিনা’ বলে ডাকি।
মদিনা! আমি তোমায় ছাড়া আর কারেও জানি না॥
মদিনা! তুমি রইবে চিরদিন মোর ঘরে এসে
তোমায় আমায় মিলন হবে ভালোবেসে।
‘মদিনা!’ আমার ছেলে দুটির ডাক নাম ‘সানি’ ও ‘নিনি’
ওরা দুটি ভাই,
‘সানি’ ও ‘নিনি’রে যেন আপন ছেলের মতো ভালোবেসো
এই আমি চাই।
আমি নওজোয়ান, আমি কবি সুন্দর, সুন্দরের পূজারি,
আমায় ভালোবাসে বাংলার সব নরনারী।
আমার কথার ফুলে ‘মদিনা’
তোমার গানের ডালা সাজাই।
মদিনা! মদিনা! মদিনা!
তোমায় ছাড়া আর কারেও ভালোবাসি না।
মম তনুর ময়ূর সিংহাসনে এ রূপকুমার কবি নৌজোয়ান
মম তনুর ময়ূর সিংহাসনে এ রূপকুমার কবি নৌজোয়ান।
মোর ঘুম যবে ভাঙিলে প্রিয়তম, উঠিল পূর্ণিমা চাঁদ
জ্যোৎস্নায় হাসিল আশমান॥
আমি ‘মদিনা’ হেরেমের নন্দিনী যে
আছি প্রাসাদে আছি বন্দিনী যে,
ভেবেছিনু তুমি শুধু রূপের পাগল
যদি সমান ভালবেসে থাকো
তা হলে আমায় শিখাও এসে তোমার গান॥
তুমি অনেক ছবি এঁকেছ যে মম, মোরে দিলে যে মধু।
সেই মধু চেয়ে সেই মধু বুকে লয়ে বলি,
ফিরে এসো ফিরে এসো বঁধু।
আমার ঘরে এসো হে প্রেমিক বিরহী
কেন গান গেয়ে ফির ‘মদিনা’ ‘মদিনা’ কহি,
চলে গেছে বিষাদের বিলাপ
ভাঙাও এসে মোর অভিমান॥
মহুয়া বনে আধো নিশীথ রাতে বেণুকা বাজায়ে
মহুয়া বনে আধো নিশীথ রাতে বেণুকা বাজায়ে
ডাকে গো মোরে কোন বিরহী।
সে মানা মানে না, সখী সে কি জানে না
আমি ভবনের বধূ, বন-বালিকা নহি॥
বন-কেতকী বলে, তারে চাতকী জানে
তাই কাঁদিয়া মরে চেয়ে মেঘের পানে।
বলে যমুনার জল,ওর ডাক সে যে ছল
তাই রোদনের স্রোত হয়ে অকূলে বহি॥
মোমতাজ! মোমতাজ! তোমার তাজমহল
মোমতাজ! মোমতাজ! তোমার তাজমহল
(যেন) বৃন্দাবনের একমুঠো প্রেম, আজও করে ঝলমল॥
কত সম্রাট হল ধূলি স্মৃতির গোরস্থানে,
পৃথিবী ভুলিতে নারে প্রেমিক শাহজাহানে
শ্বেত মর্মরে সেই বিরহীর ক্রন্দন-মর্মর, গুঞ্জরে অবিরল॥
কেমনে জানিল শাহজাহান? প্রেম পৃথিবীতে মরে যায়!
(তাই) পাষাণ-প্রেমের স্মৃতি রেখে গেল পাষাণে লিখিয়া হায়?
(যেন) তাজের পাষাণ-অঞ্জলি লয়ে নিঠুর বিধাতা পানে
অতৃপ্ত প্রেম, বিরহী-আত্মা আজও অভিযোগ হানে,
(বুঝি) সেই লাজে বালুকায় মুখ লুকাইতে চায় শীর্ণা যমুনা-জল॥
রুম ঝুম ঝুম রুম ঝুম কে বাজায়
রুম ঝুম ঝুম রুম ঝুম কে বাজায়
জল-ঝুমঝুমি।
চমকিয়া জাগে ঘুমন্ত বনভূমি॥
দুরন্ত অরণ্যা গিরি-নির্ঝরিণী
রঙ্গে সঙ্গে লয়ে বনের হরিণী
শাখায় শাখায় ঘুম ভাঙায়
ভীরু মুকুলের কপোল চুমি।
কুহ কুহু কুহরে পাহাড়ি কুহু
পিয়াল-ডালে,
পল্লব-বীণা বাজায় ঝিরিঝিরি সমীরণ
তারই তালে তালে।
সেই জল-ছলছল সুরে জাগিয়া
সাড়া দেয় বন পারে বাঁশি রাখালিয়া;
বউ কথা কও কোকিল পাপিয়া
পল্লির প্রান্তর ওঠে শিহরি
বলে, চঞ্চলা কে গো তুমি
রেশমি চুড়ির তালে কৃষ্ণচূড়ার ডালে
রেশমি চুড়ির তালে কৃষ্ণচূড়ার ডালে
পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা ডেকে ওঠে পাপিয়া
আঙিনায় ফুল-গাছে
প্রজাপতি নাচে
ফেরে মুখের কাছে
আদর যাচিয়া॥
দুলে দুলে বনলতা কহিতে চাহে কথা
বাজে তারই আকুলতা কানন ছাপিয়া।
শ্যামলী কিশোরী মেয়ে
থাকে দূর নভে চেয়ে
কালো মেঘ আসে ধেয়ে
গগন ব্যাপিয়া॥
শুকনো পাতার নূপুর পায়ে
শুকনো পাতার নূপুর পায়ে
নাচিছে ঘূর্ণি বায়।
জল-তরঙ্গে ঝিলমিল ঝিলমিল
ঢেউ তুলে সে যায়
দিঘির বুকে শতদল দলি,
ঝরায়ে বকুল চাঁপার কলি,
চঞ্চল ঝরনার জল ছলছলি
মাঠের পথে সে ধায়॥
বনফুল আভরণ খুলিয়া ফেলিয়া
আলুথালু এলোকেশ গগনে মেলিয়া
পাগলিনি নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া
ধূলি-ধূসর কায়॥
ইরানি বালিকা যেন মরু-চারিণী
পল্লবী প্রান্তর বন-মনোহারিণী
ছুটে আসে সহসা গৈরিক-বরনি
বালুকার উড়নি গায়॥
শোনো ও সন্ধ্যামালতী বালিকা তপতী
শোনো ও সন্ধ্যামালতী
বালিকা তপতী–
বেলাশেষের বাঁশি বাজে।
মাধবী চাঁদের মধুর মিনতি
উদাস আকাশ-মাঝে॥
তব মৌন ব্রত ভাঙো, কও কথা কও,
মোর নৃত্য-আরতির সঙ্গিনী হও!
মাধবী হেনা হেরো এল বাহিরে –
রস-রাজে হেরি রাস-নৃত্যের সাজে॥
তুমি যার লাগি সারা দিন বিরহ-ধ্যান -লীন
একাকিনী কুঞ্জে,
হেরো সে মাধব নিশীথ ভ্রমর হয়ে
তব পাশে গুঞ্জে।
হেরো সুন্দর দাঁড়ায়ে তব দ্বারে আঁধারে,
মঞ্জরি-দীপ জ্বালো, ডাকো তারে
বুকের চন্দন-সুরভি ঢালো
পাতার আঁচলে মুখ ঢেকো না লাজে॥
সখী বাঁধলো ঝুলোনিয়া
কাজরী–কার্ফা
সখী বাঁধলো ঝুলোনিয়া।
নামিল মেঘলা বাদরিয়া॥
চল কদম তমাল তলে গাহি কাজরি।
চল লো গোরী শ্যামলিয়া॥
বাদল পরিরা নাচে গগন-আঙিনায়
রিমিঝিম রিমিঝিম বৃষ্টি-নূপুর পায়।
এ হিয়া মেঘ হেরিয়া ওঠে মাতিয়া॥
মেঘ বেনিতে বেঁধে বিজলি-জরিন ফিতা,
গাহিব দুলে দুলে শাওন-গীতি কবিতা
শুনিয়া বঁধুর বাঁশি বন-হরিণী চকিতা,
দয়িত-বুকে হব বাদল-রাতে দয়িতা,
কাজল, মাজি লহো আঁখিয়া॥