পলাশ ফুলের মউ পিয়ে ওই
শংকরা একতালা
পলাশ ফুলের মউ পিয়ে ওই
বউ-কথা-কও উঠল ডেকে।
শিস দিয়ে যায় উদাস হাওয়া
নেবুফুলের আতর মেখে॥
এমন পূর্ণচাঁদের রাতি
নেই গো সাথে জাগার সাথি,
ফুলহারা মোর কুঞ্জবীথি
কাঁটার স্মৃতি গেছে রেখে॥
শূন্য মনে একলা গুনি
কান্নাহাসির পান্না-চুনি,
বিদায়বেলার বাঁশি শুনি
আসছে ভেসে ওপার থেকে॥
পলাশ-মঞ্জরী পরায়ে দে লো মঞ্জুলিকা
রসিয়া [?] কাহারবা
পলাশ-মঞ্জরী পরায়ে দে লো মঞ্জুলিকা।
আজি রসিয়ার রাসে হব আমি নায়িকা লো
মঞ্জুলিকা॥
কৃষ্ণচূড়ার সাথে রঙ্গনে অশোকে
বুলাল রঙের মোহন তুলিকা লো
মঞ্জুলিকা॥
মাদার শিমুল ফুলে, রঙিন পতাকা দোলে,
জ্বলিছে মনে মনে আগুন শিখা লো
মঞ্জুলিকা॥
পিউ পিউ পিউ বোলে পাপিয়া
দেশ-মিশ্র আদ্ধা কাওয়ালি
পিউ পিউ পিউ বোলে পাপিয়া।
বুকে তারই পিয়ারে চাপিয়া।
বাতাবি নেবুর ফুলেলা কুঞ্জে
মাতাল সমীরণ প্রলাপ গুঞ্জে,
ফুলের মহলায় চাঁদিনি শিহরায়
নদীকূলে ঢেউ ওঠে ছাপিয়া॥
এমনই নেবুফুল এমনই মধুরাতে
পরাত বঁধু মোর বিনোদ-খোঁপাতে,
বাতায়নে পাখি করিত ডাকাডাকি,
মনে পড়ে তায় উঠি কাঁপিয়া॥
পিয়াসি প্রাণ তারে চায়
পিলু ঠুংরি
পিয়াসি প্রাণ তারে চায়,
এনে দে তায়।
জনম জনম বিরহী প্রাণ মম
সাথিহীন পাখি-সম কাঁদিয়া বেড়ায়।
চাঁদের দীপ জ্বালি খুঁজিছে আকাশ তারে
না পেয়ে তাহার দিশা কাঁদে সে বাদল-ধারে।
ঝরে আভিমানে ফুল তারে না-দেখতে পেয়ে,
বহে কাঁদন-নদী পাষাণ-গিরি বেয়ে।
আসিব বলে সে গেছে চলে
(আমি) আজও আছি বেঁচে তারই আশায়॥
ফিরিয়া এসো এসো হে ফিরে
দেশ কাওয়ালি
ফিরিয়া এসো এসো হে ফিরে,
বঁধু এ ঘোর বাদলে নারি থাকিতে একা।
হায় গগনে মনে আজই মেঘের ভিড়
যায় নয়নজলে মুছে কাজললেখা॥
ললাটে কর হানি কাঁদিছে আকাশ,
শ্বসিছে শনশন হুতাশ বাতাস,
তোমারই মতো ঝড় হানিছে দ্বারে কর,
খোঁজে বিজলি তোমারই পথ-রেখা॥
মেঘেরে শুধাই তুমি কোথায়,
কাঁদন আমার বাতাসে ডুবে যায়!
ঝড়ের নূপুর পরি রাঙা পায়,
মোর শ্যামল-সুন্দর দাও দেখা॥
ফিরে গেছে সই এসে
দাদরা ঠুংরি
ফিরে গেছে সই এসে (নন্দকুমার)
অভিমানে ডাকিনি হেসে (নন্দকুমার)
হানিয়া অবহেলা
এ কী হল জ্বালা,
ডাকি আজি তাহারেই
নয়ন-জলে ভেসে – (নন্দকুমার)॥
ফিরে ফিরে দ্বারে আসে যায় কে নিতি
ভৈরবী দাদরা
ফিরে ফিরে দ্বারে আসে যায় কে নিতি − ।
তার অধরে হাসি আর নয়নে প্রীতি॥
দোদুল তাহার কায়া ঘনায় চোখে মায়া
জেগে ওঠে দেখে তায় পুরানো স্মৃতি॥
তাহার চরণ-পাতে তাহার সাথে সাথে,
আসে আঁধার রাতে শুক্লা চাঁদের তিথি॥
গেলে মন দিতে চাহে না সে নিতে,
ধরিতে গেলে চোখে সে কী তার ভীতি॥
ডাকি প্রিয় বলে তবু সে যায় চলে,
পায়ে পায়ে দলে হৃদয়-ফুল-বীথি॥
ফিরে যা সখী ফিরে যা ঘরে
কীর্তন
ফিরে যা সখী ফিরে যা ঘরে
থাকিতে দে লো এ পথে পড়ে
যে পথ ধরে গিয়াছে হরি চলি।
আমি যাব না আর গোকুলে,
লোকনিন্দা মানব না সই
যাব না আর গোকুলে,
সখী শিশিরে আর ভয় কী করি ভেসেছি যবে অকূলে॥
সখী দিসনে লো দিসনে লো রাখ গোপী-চন্দন,
চন্দনে জুড়ায় না প্রাণের ক্রন্দন,
দ্বিগুণ বাড়ায় জ্বালা নব মালতী-মালা,
ও যে মালা নয়, মনে হয় সাপিনির বন্ধন॥
সখী যাহার লাগিয়া বসন ভূষণ, সেই গেল যদি চলে,
কী হবে এ ছার ভূষণের ভার ফেলে দে যমুনাজলে।
সকলের মায়া কাটায়েছি সখী, টুটিয়াছে সব বন্ধন,
যেতে দে আমায়, যথা মথুরায় বিহরে নন্দন॥
দেখব তারে, — আমি রাজার সাজে দেখব তারে
রাজার সাজে কেমন মানায় গো-রাখা রাখাল-রাজে।
আমার হৃদয়ের রাজা রাজ্য পেয়েছে
দেখিতে যাইব আমি,
যদি চিনিতে না পারে আসিব লো ফিরে
দুয়ারে ক্ষণেক থামি।
মোর রাজ-দর্শন পুণ্য হবে,
আমি তীর্থের ফল লভিয়া ফিরিব
দেখিয়া জীবনস্বামী॥
বন-হরিণীরে তব বাঁকা আঁখির
পিলু খেমটা
বন-হরিণীরে তব বাঁকা আঁখির,
ওগো শিকারি, মেরো না তির॥
ভীরু-হরিণী বনের ছায়ায়,
খেলে বেড়ায় সে অধীর (চপলা)।
তার সুখ-হাসি-সাধ লয়ে হে নিষাদ
দিয়ো না নয়নে নীর॥
আজও বোঝে না সে বাঁকা-চোখের ভাষা,
পিয়ার লাগি জাগেনি পিয়াসা।
সরল চোখে তার প্রেমের লালি
ফোটেনি আবেশ মদির (নয়নে)।
তার আয়নার প্রায় স্বচ্ছ হিয়ায়
আঁকিয়ো না হায়, দাগ গভীর॥
বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু
ভজন
বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু
আর হইব না পথহারা।
বন্ধু-স্বজন সব ছেড়ে যায়
তুমি একা জাগো ধ্রুবতারা॥
মায়ারূপী হায় কত স্নেহনদী
জড়াইয়া মোরে ছিল নিরবধি,
সব ছেড়ে গেল হারাইল যদি
তুমি এসো প্রাণে প্রেমধারা॥
ভ্রান্ত পথের শ্রান্ত পথিক লুটায় তোমার মন্দিরে,
প্রভু, আরও যাহা কিছু আছে মোর প্রিয়
লও বাঁচায়ে বন্দিরে!
জগতের এই প্রেম বিষ-মিশা,
মিটে না তাহাতে অগস্ত্য-তৃষা;
হে প্রেমসিন্ধু, মিটাও পিপাসা
চাহি না বন্ধু-সুত-দারা॥
কী হবে লয়ে এ মায়ার খেলনা
কী হবে লয়ে এ তাসের ঘর,
ছুঁতে ভেঙে যায় তবু শিশুপ্রায়
ভুলাও মোদেরে নিরন্তর।
ডাকি লও মোরে মুক্ত আলোকে
তব আনন্দ-নন্দন-লোকে
শান্ত হোক এ ক্রন্দন, আর
সহে না এ বন্ধন-কারা॥
বাজিছে বাঁশরি কার অজানা সুরে
বাগেশ্রী আদ্ধা কাওয়ালি
বাজিছে বাঁশরি কার অজানা সুরে।
ডাকিছে সে যেন তার সুদূর বঁধুরে॥
তারা-লোকের সাথিরে যেন সে চাহে ধরাতে,
তারই কাঁদন যেন ঝরা কুসুমে ঝুরে॥
চাঁদের স্বপন লয়ে জাগে সে নিশীথে একা,
নিরালা গাহে গান হায় বিষাদ-মধুরে॥
তাহারই অভিমান যেন উঠিছে বাতাসে কাঁপি,
তাহারই বেদনা দূর আকাশে ঘুরে॥