নবীন বসন্তের রানি তুমি
দ্বৈত গান
পুরুষ॥ নবীন বসন্তের রানি তুমি
গোলাপ-ফুলি ঢং॥
স্ত্রী॥ তব অনুরাগের রঙে
আমি উঠিয়াছি রেঙে
প্রিয় এই অপরূপ ঢং॥
পু॥ পলাশ কৃষ্ণচূড়ার কলি
রাঙা ও পায়ে এলে কি দলি?
স্ত্রী॥ বেয়ে প্রেমের পথের গলি
এলাম কঠোর হৃদয় দলি
মম পায়ে তাহারই রং॥
পু॥ হায়, হৃদয়-হীনা হৃদয়-সাথি হয় না সে জানি,
অবুঝ হৃদয় তবু চাহে তায় জানে সে পাষাণী।
স্ত্রী॥ ধরিয়া পায়ে প্রেম জানায়ে
যাও পলায়ে শেষে কাঁদায়ে।
পু॥ বায়ু কেঁদে যায় ফুল ঝরায়ে।
স্ত্রী॥ না না যাও যাও মন চেয়ো না
গন্ধ লহো ফুল চেয়ো না,
আছে কাঁটা ফুলের সঙ্গ॥
নমো নটনাথ এ নাট-দেউলে
ভজন
নমো নটনাথ! এ নাট-দেউলে
করো হে করো তব শুভ চরণপাত।
তোমার সংগীতে নৃত্য-ভঙ্গিতে
হউক হেথা নব জীবন সঞ্জাত॥
তব প্রসাদে দেব-দেব হে আদি কবি,
বাক-মুখর হল মূক এ ছায়াছবি,
আজি এ ছবিপটে
তব মহিমা রটে,
আলোছায়ায় দুলে স্বপন-রাঙা রাত॥
তব আশিসে হে মহেন্দ্র দিক আনি
অভিনব আশা প্রাণ এ রূপবাণী।
হৃদয়ে সকলের
দাও হে ঠাঁই এর,
আনুক এ রূপলোকে নবীন প্রভাত॥
নমো নম রাম-খুঁটি
নমো নম রাম-খুঁটি।
তুমি গাদিয়া বসেছ আমাদের বুকে, সাধ্য নাই যে উঠি॥
তুমি নির্বিকার হে পরম পুরুষ
আপনাতে আছ আপনি বেহুঁশ,
তব বাঁধন ছিঁড়িতে বৃথা টানাটানি
বৃথা মাথা কুটোকুটি॥
আইন কানুন আচার বিচার
বিধি ও নিষেধ স্ত্রী পরিবার,
শত রূপে তুমি জগৎ মাঝার
চাপিয়া আছ যে টুঁটি॥
কত রূপে তব লীলার প্রকাশ
কভু হও খুঁটো কভু হও বাঁশ,
কভু হাড়ি-কাঠ কভু ঘানি-গাছ
ঘোরাও ধরিয়া ঝুঁটি॥
কখনও পাঁচনিরূপে পিঠে পড়
কখনও জোয়ালরূপে কাঁধে চড়,
কখনও কঞ্চি বাঁশ চেয়ে দড়
কভু গুঁতো কভু লাঠি।
ঠুঁটো ত্রিভঙ্গ হে প্রভু তোমার
ভয়ে মোরা গুটিসুটি॥
রাম-খুঁটি
নাচিছে নটনাথ শংকর মহাকাল
মাঢ় মিশ্র কাওয়ালি
নাচিছে নটনাথ, শংকর মহাকাল।
লুটাইয়া পড়ে দিবারাত্রির বাঘছাল,
আলো-ছায়ার বাঘ-ছাল॥
ফেনাইয়া ওঠে নীলকণ্ঠের হলাহল,
ছিঁড়ে পড়ে দামিনী অগ্নি-নাগিনি দল,
দোলে ঈশান-মেঘে ধূর্জটি-জটাজাল॥
বিষম ছন্দে বোলে ডমরু নৃত্যবেগে,
ললাট-বহ্নি দোলে প্রলয়ানন্দে জেগে।
চরণ-আঘাত লেগে জাগে শ্মশানে কঙ্কাল॥
সে নৃত্য-ভঙ্গে গঙ্গা-তরঙ্গে
সংগীত দুলে ওঠে অপরূপ রঙ্গে,
নৃত্য-উছল জলে বাজে জলদ তাল॥
নৃত্যের ঘোরে ধ্যান-নিমীলিত ত্রিনয়ন
প্রলয়ের মাঝে হেরে নব সৃজন-স্বপন,
জ্যোৎস্না-আশিস ঝরে উছলিয়া শশী-থাল॥
নাচিয়া নাচিয়া এসো নন্দদুলাল
বেহাগ মিশ্র কাহারবা
নাচিয়া নাচিয়া এসো নন্দদুলাল।
মোর প্রাণে, মোর মনে এসো ব্রজগোপাল॥
এসো নূপুর-রুনুঝুনু পায়ে,
এসো প্রেম-যমুনা নাচায়ে,
এসো বেণু বাজায়ে এসো ধেনু চরায়ে
এসো কানাই রাখাল॥
ঝুলনে হোরিতে রাসে,
এসো কুরুক্ষেত্র-রণে, এসো প্রভাসে,
এসো শিশুরূপে, এসো কিশোর বেশে,
এসো কংস-অরি, এসো মৃত্যু করাল॥
এসো মহাভারতের দেবতা,
আনো নৃত্যের তালে নব বারতা,
এসো মধুকৈটভ-অরি আনো নব গীতা,
এসো নারায়ণ ভগবান বিশ্ব-ভূপাল॥
নাচে ওই আনন্দে নন্দদুলাল
খাম্বাজ কাহারবা
নাচে ওই আনন্দে নন্দদুলাল।
তাতা থই তাতা থই –
নাচে বৃন্দাবনে হরি ব্রজগোপাল॥
ছন্দ নামে, দক্ষিণে বামে,
টলে বাঁকা শিখীপাখা।
উছল যমুনাজলে বাজিছে তাল।
নাচে নন্দদুলাল॥
বিরাট খেলে হেরো আজ শিশুর রূপে,
স্বর্গে কাঙাল করি ধরায় এল চুপে চুপে।
এত রূপ কেমনে দেখি,
দিলে বিধি দুটি আঁখি
তাহে আবার পলক পড়ে;
বিশ্ব-পালক হল বালক রাখাল॥
নিয়ে কাদা মাটির তাল
ভোজপুরি — হোরি খচমচি
নিয়ে কাদা মাটির তাল
খেলে হোরি ভূতের পাল।
নর্দমা হতে ছিটায় কর্দম হরদম কাহার চাঁড়াল॥
দুই পাশের পথিকের গায়
কাদা ছিটিয়ে মোটর যায়,
নল দিয়ে ওই জল ছিটায়
ফুটপাথে উড়িয়া-দুলাল॥
খচমচ খচমচ বাজায় তাল
ভোজপুরি মাড়োয়ারি ভাই,
ঝি ফেলে দেয় ছাদ থেকে
গোবর-গোলা, আখার ছাই,
দেয় ঢেলে পিচদানির পিচ
কাপড়-চোপড় লালে লাল॥
ভুঁড়িতে ফুঁড়িছে ডাক্তার পিচকারি ওই
হোলি হ্যায়!
টক্কর খেয়ে উলটে পড়ে ময়লা গাড়ি –
হোলি হ্যায়!
ষাঁড়ের গুঁতোয় খানায় পড়ে
খেলে হোরি পাঁড় মাতাল॥
পরান হরিয়া ছিলে পাসরিয়া
দ্বৈত গান
পুরুষ॥ পরান হরিয়া ছিলে পাসরিয়া।
কেমনে লো প্রিয়া আনন্দে!
স্ত্রী॥ ছিনু কী যেন স্বপনে মগ্না
পু॥ আজি হবে কি এ কন্ঠ-লগ্না?
স্ত্রী॥ না, না।
পু॥ হায় ফুল ফুটবে না কি এ বসন্তে।
মালঞ্চে পাপিয়া উঠিছে ডাকিয়া,
বিরহী এ হিয়া উঠিছে কাঁপিয়া
হৃদয় চাপিয়া রেখো না আর,
খোলো গো মনের দ্বার!
স্ত্রী॥ মুখে আসে না বুকের ভাষা,
কেমনে জানাই ভালোবাসা?
পু॥ প্রেমের দরিয়া ওঠে উছলিয়া,
স্ত্রী॥ কে করে সে প্রেমের আশা।
পু॥ চাও?
স্ত্রী॥ যাও।
পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
পিলু-মিশ্র কাহারবা
পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া।
চাঁদিনি রাতের চাঁদোয়া-তলে
বুকের আঁচল দিব পাতিয়া॥
নয়ন-মণির মুকুরে তোমার
দুলিবে আমার সজল ছবি,
সবুজ ঘাসের শিশির ছানি
মুকুতা-মালিকা দিব গাঁথিয়া॥
ফিরোজা আকাশ আবেশে ঘুমায়,
দিঘির বুকে কমল ঘুমায়,
নীরব যখন পাখির কূজন
আমরা দুজন রব জাগিয়া॥
ছাতিম তরুর শীতল ছায়ায়
ঘুমাব মোরা প্রিয় ঘুম যদি পায়,
বনের শাখা ঢুলাবে পাখা,
ঝরিবে রাঙা ফুল কপোল চুমিয়া।