জাগো জাগো, রে মুসাফির
ভৈরবী কাহারবা
জাগো জাগো, রে মুসাফির
হয়ে আসে নিশিভোর।
ডাকে সুদূর পথের বাঁশি
ছাড় মুসাফিরখানা তোর॥
অস্ত-আকাশ-অলিন্দে ওই পান্ডুর কপোল রাখি
কাঁদে মলিন ভোরের শশী, বিদায় দাও বন্ধু চকোর॥
পেয়েছিলি আশ্রয় শুধু, পাসনি হেথায় স্নেহ-নীড়,
হেথায় শুধু বাজে বাঁশি উদাস সুরে ভৈরবীর।
তবু কেন যাবার বেলা ঝরে রে তোর নয়নলোর॥
মরুচারী, খুঁজিস সলিল অগ্নিগিরির কাছে হায়,
খুঁজিস অমর ভালোবাসা এই ধরণির এই ধুলায়।
দারুণ রোদের দাহে খুঁজিস কুঞ্জছায়া স্বপ্নঘোর॥
জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী
যোগিয়া একতালা
জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী,
চিন্ময়ী রূপে জাগো।
তব কনিষ্ঠা কন্যা ধরণি
কাঁদে আর ডাকে ‘মা গো’ ॥
বরষ বরষ বৃথা কেঁদে যাই,
বৃথাই মা তোর আগমনি গাই,
সেই কবে মা আসিলি ত্রেতায়
আর আসিলি না গো॥
কোটি নয়নের নীল পদ্ম মা
ছিঁড়িয়া দিলাম চরণে তোর,
জাগিলিনে তুই, এলিনে ধরায়,
মা কবে হয় হেন কঠোর॥
দশ ভুজে দশ প্রহরণ ধরি
আয় মা দশ দিক আলো করি,
দশ হাতে আন কল্যাণ ভরি
নিশীথ-শেষে উষা গো॥
তুমি নন্দনপথ-ভোলা
পিলু – কাফি কাহারবা
তুমি নন্দনপথ-ভোলা
মন্দাকিনী-ধারা উতরোলা॥
তোমার প্রানের পরশ লেগে
কুঁড়ির বুকে মধু উঠিল জেগে,
দোলন-চাঁপাতে লাগে দোলা॥
তোমারে হেরিয়া পুলকে ওঠে ডাকি
বকুলবনের ঘুমহারা পাখি,
ধরার চাঁদ তুমি চির-উতলা॥
তোমার ফুলের মতন মন
আশাবরি দাদরা
তোমার ফুলের মতন মন।
ফুলের মতো সইতে নারে
একটু অযতন॥
ভুল করে এই কঠিন ধরায়
তুমি কেন আসিলে হায়,
একটি রাতের তরে হেথায়
ফুলের জীবন॥
গাঁথবে মালা পরবে গলায়
অর্ঘ্য দেবে দেবতা-পায়,
ফেলে দেবে পথের ধূলায়
মিটলে প্রয়োজন॥
তোমার সৃষ্টি-মাঝে হরি
ভৈরবী দাদরা
তোমার সৃষ্টি-মাঝে হরি
হেরিতে যে নিতি পাই তোমায়।
তোমার রূপের আবছায়া ভাসে
গগনে, সাগরে, তরুলতায়॥
চন্দ্রে তোমার মধুর হাস,
সূর্যে তোমার জ্যোতি প্রকাশ,
করুণা-সিন্ধু, তব আভাস
বারিবিন্দুতে হিমকণায়॥
ফোটা ফুলে হরি, তোমার তনুর
গোপীচন্দন-গন্ধ পাই,
হাওয়ায় তোমার স্নেহের পরশ,
অন্নে তোমার প্রসাদ খাই,
রাসবিহারী! তোমার রূপ দোলে
দুঃখ শোকের হিন্দোলে,
তুমি, ঠাঁই দাও যবে ধরো কোলে,
মোর বন্ধু-স্বজন কেঁদে ভাসায়॥
তোমারে কী দিয়া পূজি ভগবান
জৌনপুরী মিশ্র আদ্ধা কাওয়ালি
তোমারে কী দিয়া পূজি ভগবান।
আমার বলে কিছু নাহি হরি
সকলই তোমারই যে দান॥
মন্দিরে তুমি, মুরতিতে তুমি
পূজার ফুলে তুমি, স্তব-গীতে তুমি,
ভগবান দিয়ে ভগবান পূজা
করিতে – তুমি যদি ভাব অপমান॥
কেমন তব রূপ দেখিনি হরি,
আপন মন দিয়ে তোমারে গড়ি,
হাস না কাঁদ তুমি সে রূপ হেরি,
বুঝিতে পারি না – তাই কাঁদে প্রাণ॥
কোটি রবি শশী আরতি করে যার
মৃৎ-প্রদীপ জ্বালি আমি দেউলে তার,
বন-ডালায় পূজা-কুসুমসম্ভার
যোগী মুনি করে যুগ যুগ ধ্যান।
কোথায় শ্রীমুখ তব কোথায় শ্রীচরণ,
চন্দন দিব কোনখান॥
দাও দাও দরশন পদ্মপলাশলোচন
ভৈরবী কাওয়ালি
দাও দাও দরশন পদ্মপলাশলোচন
কেঁদে দু-নয়ন হল অন্ধ।
আকাশ-বাতাস-ঘেরা তব ও মন্দির-বেড়া
আর কতকাল রবে বন্ধ॥
পাখি যেমন সন্ধ্যাকালে বন্ধু-স্বজন পালে পালে
উড়ে এসে বসেছিল ডালে হে,
রাত পোহালে একে একে উড়ে গেল দিগ্বিদিকে,
পড়ে আছি একা নিরানন্দ।
টুটিল বাঁধন মায়ার, কবে শুনিব এবার
ও রাঙা চরণ-নূপুর-ছন্দ॥
দুঃখ-শোক-রৌদ্রজলে ফেলে মোরে পলে পলে
ছলিতেছ হরি কত ছলে হে,
জীবনের বোঝা প্রভু বহিতে কি হবে তবু,
সহিতে পারি না আর দ্বন্দ্ব।
মরণের সোনার ছোঁয়ায় ডেকে লও ও রাঙা পায়
দেখাও এবার মুখচন্দ॥
দিয়ো ফুলদল বিছায়ে
বারোয়াঁ ঠুংরি
দিয়ো ফুলদল বিছায়ে
পথে বঁধুর আমার।
পায়ে পায়ে দলি ঝরা সে ফুলদল
আজি তার অভিসার॥
আমার আকুল অশ্রুবারি দিয়ে
চরণ দিয়ো তার ধোয়ায়ে,
মম পরান পুড়ায়ে জ্বেলো
দীপালি তাহার॥
দিয়ো ফুলদল বিছায়ে
বারোয়াঁ ঠুংরি
দিয়ো ফুলদল বিছায়ে
পথে বঁধুর আমার।
পায়ে পায়ে দলি ঝরা সে ফুলদল
আজি তার অভিসার॥
আমার আকুল অশ্রুবারি দিয়ে
চরণ দিয়ো তার ধোয়ায়ে,
মম পরান পুড়ায়ে জ্বেলো
দীপালি তাহার॥
দুঃখ ক্লেশ শোক পাপতাপ শত
সিন্ধু কাওয়ালি
দুঃখ ক্লেশ শোক পাপতাপ শত
শ্রান্তি মাঝে হরি শান্তি দাও দাও।
কান্ডারি হে আমার পার করো করো পার,
উত্তাল তরঙ্গ অশান্তি পারাবার,
অভাব দৈন্য শত হৃদি-ব্যথা-ক্ষত,
যাতনা সহিব কত প্রভু, কোলে তুলে নাও॥
হে দীনবন্ধু করুণাসিন্ধু,
অম্বরব্যাপী ঝরে তব কৃপা-বিন্দু,
মরুর মতন চেয়ে আছি নব ঘনশ্যাম –
আকুল তৃষ্ণা লয়ে, প্রভু, পিপাসা মিটাও॥
নখ-দন্তবিহীন চাকুরি-অধীন আমরা বাঙালি বাবু
নখ-দন্তবিহীন চাকুরি-অধীন আমরা বাঙালি বাবু।
পায়ে গোদ, গায়ে ম্যালেরিয়া,
বুকে কাশি লয়ে সদা কাবু॥
ঢিলে-ঢালা কাছা কোঁচা সামলায়ে,
ভুঁড়ি বয়ে ছুটি নিটপিটে পায়ে,
আপিসে কষিয়া কলম পিষিয়া
ঘরে এসে খাই সাবু॥
রবিবার ছুটি আছে বলে ভাই
বাবা বলে চিনে ছেলেপিলে তাই,
নাকে শাঁখ বেঁধে সেদিন ঘুমাই,
নয় ঘরে বসে খেলি গ্রাবু॥
হাঁচি টিকটিকি সিন্নি মানিয়া
পরান-পাখিরে রেখেছি ধরিয়া,
দেখে ব্যাঙের ছাতারে উঠি চমকিয়া
ভয় হয় বুঝি তাঁবু॥
এগজামিনের লাঠি ধরে ধরে
দাঁড়াই আসিয়া আপিসের দোরে,
মাইনে যা পাই তাই দিয়ে খাই
কদলী আর অলাবু॥
গোলামের কুঁড়ি ফোটার এ বোঝা
নামায়ে কোমর হতে দাও সোজা
বাতে আর হাড়-হাবাতে ধরেছে –
বাপ্পুরে কনে যাবু॥
বাঙালি বাবু