গুঞ্জামালা গলে কুঞ্জে এসো হে কালা
মালগুঞ্জ ত্রিতাল
গুঞ্জামালা গলে কুঞ্জে এসো হে কালা।
বনমালী এসো দুলায়ে বনমালা॥
তব পথে বকুল ঝরিছে উতল বায়ে,
দলিয়া যাবে বলে অকরুণ-রাঙা পায়ে,
রচেছি আসন তরুণ তমাল-ছায়ে,
পলাশ শিমুলে রাঙা প্রদীপ-জ্বালা॥
ময়ূরে নাচাও তুমি তোমারই নূপুর-তালে,
বেঁধেছি ঝুলনিয়া ফুলেল কদমডালে,
তোমা বিনা বনমালী বিফল এ ফুল-দোল,
বাঁশি বাজাবে কবে উতলা ব্রজবালা॥
গোধূলির রং ছড়ালে কে গো আমার সাঁঝ-গগনে
মাঢ়-খাম্বাজ-মিশ্র দাদরা
গোধূলির রং ছড়ালে কে গো আমার সাঁঝ-গগনে।
বিবাহের বাজল বাঁশি আজি বিদায়ের লগনে॥
নূতন করে আবার বাঁচিবার সাধ জাগে,
সুন্দর লাগে ধরা নিবু-নিবু মোর নয়নে॥
এতদিন কেঁদে কাঁদে ডেকেছি নিঠুর মরণে,
আজি যে কাঁদি বঁধু বাঁচিতে হায় তোমার সনে॥
আজি এ ঝরা ফুলের অঞ্জলি কি নিতে এলে,
সহসা পুরবি সুর বেজে উঠিল ইমনে॥
হইল ধন্য প্রিয় মরণ-তীর্থ মম,
সুন্দর মৃত্যু এলে বরের বেশে শেষ জীবনে॥
ঘুমায়েছে ফুল পথের ধুলায়
দেশ কাওয়ালি
ঘুমায়েছে ফুল পথের ধুলায়, (ওগো)
জাগিয়ো না উহারে ঘুমাইতে দাও।
বনের পাখি ধীরে গাহো গান,
দখিনা হাওয়া ধীরে ধীরে বয়ে যাও॥
এখনও শুকায়নি চোখে তার জল,
এখনও অধরে হাসি ছলছল;
প্রভাত-রবি শুকায়ো না তায়,
ধীরে কিরণে তাহারই নয়নে চাও॥
সামলে পথিক ফেলিয়ো চরণ –
ঝরেছে হেথায় ফুলের জীবন,
ভুলিয়া দোলো না ঝরা পাতাগুলি –
ফুল-সমাধি থাকিতে পারে হেথাও॥
চমকে চমকে ধীর ভীরু পায়
আরবি (নৃত্যের) সুর কাহারবা
চমকে চমকে ধীর ভীরু পায়
পল্লিবালিকা বন-পথে যায়।
একেলা বন-পথে যায়॥
শাড়ি তার কাঁটা-লতায়,
জড়িয়ে জড়িয়ে যায়,
পাগল হাওয়াতে অঞ্চল লয়ে মাতে –
যেন তার তনুর পরশ চায়॥
শিরীষের পাতায় নূপুর,
বাজে তার ঝুমুর ঝুমুর,
কুসুম ঝরিয়া মরিতে চাহে তার কবরীতে,
পাখি গায় পাতার ঝরোকায়॥
চাহি তার ওই নয়নে
হরিণী লুকায় বনে,
হাতে তার কাঁকন হতে মাধবী লতা কাঁদে,
ভ্রমরা কুন্তলে লুকায়॥
চাঁদের পিয়ালাতে আজি
বাগেশ্রী কাওয়ালি
চাঁদের পিয়ালাতে আজি
জোছনা-শিরাজি ঝরে।
ঝিমায় নেশায় নিশীথিনী
সে শরাব পান করে॥
সবুজ বনের জলসাতে
তৃণের গালিচা পাতে,
উতল হাওয়া বিলায় আতর
চাঁপার আতরদানি ভরে॥
সাদা মেঘের গোলাব-পাশে
ঝরিছে গোলাব-পানি,
রজনিগন্ধার গেলাসে
রজনি দেয় সুরা আনি।
কোয়েলিয়া কুহুকুহু,
গাহে গজল মুহুমুহু,
সুরের নেশা সুরার নেশা
লাগে আজি চরাচরে॥
চায়ের পিয়াসি পিপাসিত চিত আমরা চাতক-দল
চায়ের পিয়াসি পিপাসিত চিত আমরা চাতক-দল।
দেবতারা কন সোমরস যারে সে এই গরম জল।
চায়ের প্রসাদে চার্বাক ঋষি বাক-রণে হল পাশ,
চা নাহি পেয়ে চার-পেয়ে জীব চর্বণ করে ঘাস।
লাখ কাপ চা খাইয়া চালাক
হয়, সে প্রমাণ চাও কত লাখ?
মাতালের দাদা আমরা চাতাল, বাচাল বলিস বল॥
চায়ের নামে যে সাড়া নাহি দেয় চাষাড়ে তাহারে কও,
চায়ে যে ‘কু’ বলে চাকু দিয়ে তার নাসিকা কাটিয়া লও।
যত পায় তত চায় বলে তাই
চা নাম হল এ সুধার ভাই।
চায়ের আদর করিতে হইল দেশে চাদরের চল॥
চা চেয়ে চেয়ে কাকা নাম ভুলে পশ্চিমে চাচা কয়,
এমন চায়ে যে মারিতে চাহে সে চামার সুনিশ্চয়।
চা করে করে ভৃত্য নফর
নাম হারাইয়া হইল চাকর,
চা নাহি খেয়ে বেচারা নাচার হয়েছে চাষা সকল॥
চায়ে এলে যায় চাল-কুমড়ো সে, চাঁদা করে মারো চাঁটি,
চা না খাইয়া চানা খায় আজ দেখহ অশ্ব-জাতি।
একদা মায়ের মুণ্ডেতে শিব
চা ঢেলে দেন, বের করে জিভ
চা-মুণ্ডা রূপ ধরিলেন দেবী সেইদিন রে পাগল॥
চায়ে পা ঠেকিয়ে সেদিন গদাই পড়িল মোটর চাপা,
চাঁট ও চাটনি চায়েরই নাতনি, লুকাতে পারো কি বাপা?
চায়ে সর বলে গালি দিয়ে মাসি
চামর ঢুলায় হয়ে আজ দাসী,
চাটিম চাটিম বুলি এই দাদা চায়ের নেশারই ফল॥
চা-স্তোত্র
চিরকিশোর মুরলীধর কুঞ্জবনচারী
সুরট মিশ্র ঝাঁপতাল
চিরকিশোর মুরলীধর কুঞ্জবনচারী
গোপনারী-মনোহারী বামে রাধা প্যারি॥
শোভে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম করে,
গোষ্ঠবিহারী কভু, কভু দানবারি॥
তমালতলে কভু কভু নীপবনে
লুকোচুরি খেল হরি ব্রজবধূ সনে
মধুকৈটভারি কংস-বিনাশন,
কভু কণ্ঠে গীতা, শিখীপাখাধারী॥
ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা
ইমন মিশ্র কাওয়ালি
ছন্দের বন্যা হরিণী অরণ্যা
নাচে গিরিকন্যা চঞ্চল ঝরনা।
নন্দনপথ-ভোলা চন্দনবর্ণা॥
গাহে গান ছায়ানটে,
পর্বতে শিলাতটে,
লুটায়ে পড়ে তীরে
শ্যামল ওড়না॥
ঝিরিঝিরি হাওয়ায় ধীরিধীরি বাজে
তরঙ্গ-নূপুর বনপথ-মাঝে।
এঁকেবেঁকে নেচে যায় সর্পিল ভঙ্গে
কুরঙ্গ সঙ্গে অপরূপ রঙ্গে,
গুরুগুরু বাজে তাল মেঘমৃদঙ্গে
তরলিত জোছনা বালিকা অপর্ণা॥
ছাড়ো ছাড়ো আঁচল বঁধু
পিলু – কাহারবা
ছাড়ো ছাড়ো আঁচল, বঁধু,
যেতে দাও।
বনমালী, এমনি করে মন ভোলাও॥
একা পথে দুপুরবেলা
নিরদয়, এ কী খেলা।
তুমি এমনি করে মায়াজাল বিছাও।
পথে দিয়ে বাধা
এ কী প্রেম সাধা,
আমি নহি তো রাধা, বঁধু, ফিরে যাও॥
নিখিল নর-নারী
তোমার প্রেম-ভিখারি
লীলা বুঝিতে নারি তব শ্যামরাও॥
জাগো জাগো জাগো নব আলোকে
টোড়ি কাওয়ালি
জাগো জাগো! জাগো নব আলোকে
জ্ঞান-দীপ্ত চোখে
ডাকে উষসী আলো।
জাগে আঁধার-সীমায় রবি রাঙা মহিমায়,
গাহে প্রভাত-পাখি হেরো নিশি পোহাল॥
জাগো ঊর্ধ্বে ধরার শিশু স্বপ্ন-আতুর,
নব বিস্ময়-লোকে জাগো সৃজন-বিধুর!
রাঙা গোধুলিবেলা রচো ধূলির ধোঁয়ায়,
আনো কল্প-মায়া, নাশো গহন কালো॥