সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়
খাম্বাজ দাদরা
সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়
নবীন আমন ধানের খেতে।
হেমন্তের ওই শিশির-নাওয়া হিমেল হাওয়া,
সেই নাচনে উঠল মেতে॥
টই-টুম্বুর ঝিলের জলে
কাঁচা রোদের মানিক ঝলে,
চন্দ্র ঘুমায় গগনতলে
সাদা মেঘের আঁচল পেতে॥
নটকান-রং শাড়ি পরে কে বালিকা
ভোর না হতে যায় কুড়াতে শেফালিকা।
আনমনা মন উড়ে বেড়ায়
অলস প্রজাপতির পাখায়,
মৌমাছিদের সাথে সে চায়
কমল-বনের তীর্থে যেতে॥
সাগর আমায় ডাক দিয়েছে
বাউল দাদরা
সাগর আমায় ডাক দিয়েছে
মন-নদী তাই ছুটছে ওই।
পাহাড় ভেঙে মাঠ ভাসিয়ে
বন ডুবিয়ে তাই তো বই॥
তরঙ্গে তাই রাত্রি দিন
গান গেয়ে যাই নিদ্রাহীন
বাজিয়ে ঢেউ-এর বীণ।
বন্যা এনে মায়ার পুরী ভাসিয়ে নাচি তাথই থই॥
সেই পুরানো সুরে আবার গান গেয়ে কে যায় নিতি
ঝিঁঝিট কাহারবা
সেই পুরানো সুরে আবার গান গেয়ে কে যায় নিতি।
গেয়েছিল এমনই সুরে একদা এক অতিথি॥
কণ্ঠে তাহার এমনি মায়া প্রাণ-মাখানো এমনই,
গাইত হতাশ তরুণ পথিক, এমনই করুণ-গীতি॥
এনেছিল বাসন্তী রং তার ছোঁয়া আমার প্রাণে,
মুছে গেছে রঙের সে দাগ, কে জাগায় ফের তার স্মৃতি॥
চলে গেছে তাহার সাথে বসন্ত মোর অকালে,
ভরে গেছে ঝরা ফুলে শুকনো পাতায় বনবীথি॥
ভুলিয়া ছিলাম ভালো তাই কি পুন কাঁদাতে
আসিল সে সিঁদুর-রাগে রাঙাতে সাঁঝের সিঁথি॥
সেদিনও প্রভাতে রাতুল শোভাতে
ভৈরবী আদ্ধা কাওয়ালি
সেদিনও প্রভাতে রাতুল শোভাতে
হেসেচ বুকে মোর চারুহাসিনী।
পরেছ খোঁপাতে আমার-দেওয়া ফুল
সে কি গো সবই ভুল বিজনবাসিনী॥
যেচেছ কত না আদর-সোহাগ
ক্ষণে অভিমান ক্ষণে অনুরাগ,
কত প্রিয় নামে ডেকেছ আমারে
সে কি গেছ ভুলে মধুভাষিণী॥
আমার আশা সাধ সাধনা সুখ হাসি
তোমার সাথে প্রিয় গিয়াছে সব ভাসি
কেন ফেলে দিলে নিরাশার কূলে,
কোন অপরাধে বলো উদাসিনী॥
হুল ফুটিয়ে গেলে শুধু
ভৈরবী দাদরা
হুল ফুটিয়ে গেলে শুধু পারলে না হায় ফুল ফোটাতে।
মৌমাছি যে ফুলও ফোটায় হুল ফোটানোর সাথে সাথে॥
আঘাত দিলে, দিলে বেদন,
রাঙাতে হায় পারলে না মন,
প্রেমের কুঁড়ি ফুটল না তাই
পড়ল ঝরে নিরাশাতে॥
আমায় তুমি দেখলে নাকো, দেখলে আমার রূপের মেলা।
হায় রে দেহের শ্মশানচারী, শব নিয়ে মোর করলে খেলা।
শয়ন-সাথি হলে আমার রইলে নাকো নয়ন-পাতে॥
ফুল তুলে হায় ঘর সাজালে, করলে নাকো গলার মালা,
ত্যজি সুধা পিয়ে সুরা হলে তুমি মাতোয়ালা।
নিশাস ফেলে নিভাইলে যে দীপ আলো দিত রাতে॥
হেসে হেসে কলসি নাচাইয়া কিশোরী চলে
ভৈরবী খেমটা
হেসে হেসে কলসি নাচাইয়া কিশোরী চলে।
রিনিঠিনি কলস-কাঁকনে কী কথা বলে॥
নেচে চলে চাঁপা-বরনা যেন ঝরনা
বাহু দোলাইয়া,
নয়ন-কুরঙ্গ জাগায় গো তরঙ্গ
নদীর জলে॥
এত রূপ লাখ চোখে ধরে না
তারে দেখি কী করে,
বিধি দিল দুটি আঁখি আমারে
তাহে হায় পলক পড়ে।
গ্রামের পথ চাহে তারে
ডাকে বাঁশি বন-পারে,
গিরি-দরি-নদী চাহে যারে
তাহারে চাহি কোন ছলে॥
হোরির রং লাগে আজি গোপিনীর তনু মনে
রসিয়া হোরি
হোরির রং লাগে আজি গোপিনীর তনু মনে।
অনুরাগে-রাঙা গোরীর বিধু-বদনে॥
ফাগের লালি আনিল কে,
কাজল-কালো চোখে
কামনা-আবির ঝরে রাঙা নয়নে॥
অশোক রঙন ফুলের আভা
জাগে ডালিম-ফুলি গালে,
নাচিছে হৃদয় আজি
রসিয়ার নাচের তালে।
তাম্বুল- রাঙা ঠোঁটে
ফাগুনের ভাষা ফোটে,
প্রাণের খুশির রং লেগেছে
রাঙা বসনে॥