দোলন চাঁপা বনে দোলে দোল-পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে
দোলন চাঁপা বনে দোলে দোল-পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে।
(শ্যাম) পল্লব কোলে যেন দোলে রাধা, লতার দোলনাতে॥
(যেন) দেব-কুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি
আরতির মৃদু জ্যোতি প্রদীপ-কলি, দোলে যেন দেউল-আঙিনাতে॥
বন-দেবীর ওকী রুপালি ঝুমকা চৈতি সমীরণে দোলে –
রাতের সলাজ আঁখি-তারা যেন তিমির আঁচলে।
ও যেন মুঠিভরা চন্দন-গন্ধ, দোলে রে গোপিনির গোপন আনন্দ,
ও কী রে চুরি করা শ্যামের নূপুর – চন্দ্র-যামিনীর মোহন হাতে॥
না-ই পরিলে নোটন খোঁপায়
না-ই পরিলে নোটন খোঁপায়
ঝুমকো-জবার ফুল।
এমনি এসো লুটিয়ে পিঠে
আকুল এলোচুল॥
সজ্জা-বিহীন লজ্জা নিয়ে,
এমনি তুমি এসো প্রিয়ে,
গোলাপ ফুলে রং মাখাতে
হয় যদি হোক ভুল॥
গৌর দেহে না-ই জড়ালে
গৌরী-চাঁপা শাড়ি,
ভূষণ পরে না-ই বা দিলে
রূপের সাথে আড়ি।
যেমন আছ এমনি এসো,
নয়ন তুলে ঈষৎ হেসো,
সেই খুশিতে উঠবে দুলে
আমার হৃদয়-কূল॥
নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই
নিরুদ্দেশের পথে আমি হারিয়ে যদি যাই
(হে প্রিয়তম)
নিত্য নূতন রূপে আবার আসব এই হেথাই॥
চাঁদনি রাতের বাতায়নে রইবে চেয়ে উদাস মনে,
বলব আমি, ‘হারাইনি গো নাই ভাবনা নাই;
আকাশ-লোকে তারার চোখে তোমার পানে চাই!’
সাঁঝ সকালে জল নিতে যাও যে বনপথ বেয়ে –
ঝরা মুকুল হয়ে আমি সে-পথ দেব ছেয়ে।
বাতাস হয়ে লহর তুলে ঘোমটা মুখের দেব খুলে,
বলবে হেসে, ‘হায় কালা-মুখ, তোমার মরণ নাই?’
সত্যি আমার নাই তো মরণ তোমায় ভালোবেসে,
তোমার আমার পাওয়ার আশায় আবার আমি এলাম হেসে
কাছে কাছে ছিলাম বলে
দূরে তুমি যাওনি চলে
বাহির ছেড়ে আজ পেয়েছি তোমার অন্তরেতে ঠাঁই।
নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না
নিশি না পোহাতে যেয়ো না যেয়ো না
দীপ নিভিতে দাও।
নিবু-নিবু প্রদীপ নিবুক হে পথিক
সারা রাত ঘরে থেকে যাও॥
আজও শুকায়নি মালার গোলাপ
আশা-ময়ূরী মেলেনি কলাপ,
বাতাসে এখনও জড়ানো প্রলাপ,
বারে বারে ফিরে চাও।
দীপ নিভিতে দাও॥
ঘুমে ঢলে পড়তে দিয়ো না অলস আঁখি
ক্লান্ত করুণ কায়,
সুদূর নহবতে সানাই বাজিতে দাও।
উদাস যোগিয়ায়।
হে প্রিয় প্রভাতে তব রাঙা পায়
বকুল ফুল ঝরিয়া মরিতে চায়,
তোমার হাসির আভায় দিক রাঙিয়ে দাও।
দীপ নিভিতে দাও॥
নিশি-রাতে রিম ঝিম ঝিম বাদল-নূপুর
নিশি-রাতে রিম ঝিম ঝিম বাদল-নূপুর
বাজিল ঘুমের সাথে সজল মধুর॥
দেয়া গরজে বিজলি চমকে,
জাগাইল কে মোর ঘুমন্ত প্রিয়তমকে।
আধো ঘুম ঘোরে চিনিতে নারি ওরে
‘কে এল’ ‘কে এল’ বলে ডাকিছে ময়ূর॥
দ্বার খুলি পড়শি কৃষ্ণা মেয়ে আছে চেয়ে
মেঘের পানে আছে চেয়ে।
কারে দেখি আমি কারে দেখি
মেঘলা আকাশ না ওই মেঘলা মেয়ে।
ধায় নদীজল মহাসাগর পানে
বাহিরে ঝড় কেন আমায় টানে,
জমাট হয়ে আছে বুকের কাছে
নিশীথ আকাশ যেন মেঘ ভারাতুর॥
নূরজাহান! নূরজাহান সিন্ধুনদীতে ভেসে
নূরজাহান! নূরজাহান
সিন্ধুনদীতে ভেসে
(এলে) মেঘলা-মতীর দেশে
ইরানি গুলিস্তান॥
নার্গিস লালা গোলাপ আঙুর-লতা
শিরীঁ ফরহাদ শিরাজের উপকথা
এসেছিলে তুমি তনুর পিয়ালা ভরি
বুলবুলি দিলরুবা রবারের গান॥
তব প্রেমে উন্মাদ ভুলিল সেলিম সে যে রাজাধিরাজ–
চন্দন-সম মাখিল অঙ্গে কলঙ্ক লোক-লাজ!
যে কলঙ্ক লয়ে হাসে চাঁদ নীলাকাশে
(যাহা) লেখা থাকে শুধু প্রেমিকের ইতিহাসে
দেবে চিরদিন নন্দন-লোকচারী
(তব) সেই কলঙ্ক সে প্রেমের সম্মান॥
পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
পলাশ ফুলের গেলাস ভরি
পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া।
চাঁদিনি রাতের চাঁদোয়া তলে
বুকের আঁচল দিব পাতিয়া॥
নয়ন-মণির মুকুরে তোমার
দুলিবে আমার সজল ছবি
সবুজ ঘাসের শিশির ছানি
মুকুতা-মালিকা দিব গাঁথিয়া॥
ফিরোজা আকাশে আবেশে ঝিমায়,
দীঘির বুকে কমল ঘুমায়,
নীরব যখন পাখির কূজন
আমরা দু জন রব জাগিয়া॥
ছাতিম তরুর শীতল ছায়ায়
ঘুমাব মোরা প্রিয় ঘুম যদি পায়
বনের শাখা ঢুলাবে পাখা
ঝরিবে রাঙা ফুল কপোল চুমিয়া॥
প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই॥
পরি চাঁপা রঙের শাড়ি, খয়েরি টিপ,
জাগি বাতায়নে, জ্বালি আঁখি-প্রদীপ
মালা চন্দন দিয়ে মোর থালা সাজাই॥
তুমি আসিবে বলে সুদূর অতিথি
জাগি চাঁদের তৃষ্ণা লয়ে কৃষ্ণা-তিথি
কভু ঘরে আসি কভু বাহিরে চাই॥
আজি আকাশে বাতাসে কানাকানি,
জাগে বনে বনে নব ফুলের বাণী,
আজি আমার কথা যেন বলিতে পাই॥
বঁধু জাগাইল এ কোন পরম সুন্দরের তৃষা
২০
(আধুনিক গান)
বঁধু জাগাইল এ কোন পরম সুন্দরের তৃষা
(বঁধু) জাগাইল এ কোন পরম সুন্দরের তৃষা।
(মোর) হাসিয়া দিন যায়, পোহায় জাগরণে নিশা॥
এ ভীরু ফুলকলি জাগাও বঁধু
তোমার বুকে ছিল এ মধু
আমি পরম আনন্দ চাই
দিয়ো না মিলনে বেদনা মিশা॥
বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে
বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে
ঝরা বন-গোলাপের বিলাপ শোনে।
শিরাজের নওরোজে ফাল্গুন মাসে
যেন তার প্রিয়ার সমাধির পাশে
তরুণ ইরান-কবি কাঁদে নিরজনে॥
উদাসীন আকাশ থির হয়ে আছে
জল-ভরা মেঘ লয়ে বুকের কাছে।
সাকির শরাবের পিয়ালার পরে
সকরুণ অশ্রুর বেলফুল ঝরে,
চেয়ে আছে ভাঙা চাঁদ মলিন-আননে॥