সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্রামে-গঞ্জেও এখন ডিস্কো চলে, চলে মিস সুন্দরী প্রতিযোগিতা । রাশিয়ার মেয়েরা এখন মেধার অনুশীলনের চেয়ে শরীরের সৌন্দর্য প্রদর্শনকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। তারা বুক, কোমর ও নিতম্বের মাপ নিয়ে এখন ভীষণ ব্যস্ত। রাস্তাঘাটে পর্ণে-পত্রিকার স্তৃপ, ঘরে ঘরে ব্লু-ফিল্ম চলছে।
বার্লিন-প্রাচীর ভেঙে ফেলবার পর পূর্ব জার্মানীর তরুণেরা প্রথম ঢুকেছে পশ্চিম জার্মানীর ব্রেথেলে। স্বাধীনতার স্বাদ ওরা ব্রেথেলে ঢুকেই পেয়েছে, এবং দুঃখ এই যে, অবাধ যৌনতাকেই ওরা স্বাধীনতা বলে ভাবছে। রাশিয়ায় এখন নারীকে পণ্য বানাবার পশ্চিমী কায়দাকানুন চলছে। নারী এখন আর মানুষ নয়, ভোগের বস্তু, নারী-সম্ভোগ এখন স্বাধীনতার অন্য নাম।
এই যদি হয় গ্লাসনস্তের চূড়ান্ত ফলাফল, তবে ধিক্ গ্লাসনস্তে, ধিক্ তাদের স্বাধীনতায়। কম্যুনিজমকে ধূলিসাৎ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পশ্চিমি ক্লেদই তারা ঘরে নেবে—এর বেশি কিছু নয়। এর বেশি প্রাপ্তি তাদের নেই।
সমাজতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বার পর মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে নারী-দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয়। নারীকে পণ্যের শেকলে বেঁধে বোকা নারী-পুরুষ উভয়েই এখন উল্লাস করছে। ধুন্ধুমার নৃত্য করছে। নারী এখন ওদেশে, অবিকল পুঁজিবাদী দেশের মত, সুস্বাদু খাদ্য। খাদকেরা লেনিনের আদর্শ আগুনে পুড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিকৃত সভ্যতার দিকে।
হায় পতন! হায় দানবীয় উচ্ছাস! লেনিন, আপনি ক্ষমা করুন। আপনার এই নির্বোধ উত্তরাধিকারিদের ক্ষমা করুন। যে গার্হস্থ্য বাদিগিরি থেকে নারীকে আপনি মুক্ত করেছিলেন, সেই নারীই এখন সাধ করে নিজেকে শৃঙ্খলে জড়াচ্ছে, সেই নারীই শখ করে এখন নিজের শরীরকে প্রলোভনের বস্তু বানাচ্ছে। লেনিন, আপনি লজ্জায়, ঘৃণায় আপনার চোখ বন্ধ করুন। যেন এই বিকৃতি, যেন এই নোংরা সভ্যতা আপনাকে দেখতে না হয়।
৬৮. ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলা নেতৃত্ব
গত ১ রবিউল আওয়াল ১৪০২ হিঃ ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখে চট্টগ্রামের ইসলামি ঐক্যজোট ও হিযবে ইসলামী ‘ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলা নেতৃত্ব’ সম্পর্কে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। প্রচারপত্রটি লিখেছেন ইসলামি ঐক্যজোটের আহ্বায়ক মুফতি মুহাম্মদ ইজহারুল ইসলাম। সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন ‘আমাদের বদ আমলের কারণে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ একদলীয় শাসন এ জাতির কাঁধে চাপানো হয় এবং ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের জনসাধারণের চেতনায় এক বিদ্রোহাত্মক মনোভাবের সৃষ্টি হয় এবং ফলত মুজিবের পতনের পরে পর্যায়ক্রমে জাতর ইতিহাসের পর্দায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটে’। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার কারণে কখনও এই দেশে কোনও ধর্মীয় উচ্ছঙ্খলতা সৃষ্টি হয়নি। মুসলমানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল মসজিদ মাদ্রাসা, তারা অবাধে নামাজ পড়েছে, রোজা করেছে, ঈদুল আযহার উৎসবেও মুসলমানরা কখনও বাধাগ্রস্ত হয়নি। এই অপার স্বাধীনতা পাবার পরও জনসাধারণের চেতনায় বিদ্রোহাত্মক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছিল এবং এ কারণে মুজিবের পতন ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই মিথ্যাচার আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে পারে, কিন্তু মুজিব আমলের জনরোষ সম্পর্কে র্যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে, তারা নিশ্চয় একথা স্বীকার করবেন যে জনরোষের কারণ আর যা কিছুই হোক, ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।
প্রচারপত্রে আরও দাবি করা হয়েছে—‘জিয়াউর রহমান রাজনৈতিকভাবে জাতিকে ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে মুক্ত করে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেন। শতকরা নববই ভাগ মুসলমানের এ মাটি ও আবহাওয়া ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মদ্রোহিতার নাগপাশ থেকে বাহ্যিকভাবে মুক্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।‘ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মদ্রোহিতা এদেশে ঘটেনি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যা ঘটেছে তা ধর্মনিরপেক্ষতা থাকাকালীন নয়, বরং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করবার পর।
১৯৭০ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সরকার বদলের যে রাজনৈতিক কারণ এই প্রচারপত্রে বর্ণনা হয়েছে, তা মিথ্যে, ভুল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এইজন্য বললাম, কারণ উদ্দেশ্য এখানে এসে স্পষ্ট হয়— জেনারেল এরশাদের ব্যক্তিগত দুষ্ট আচরণ থেকে আরম্ভ করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আটরশি ভিত্তিক সকল ভাওতাবাজি দীর্ঘ নয়টি বুছর ওলামায়ে কেরামসহ সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা একটিমাত্র কারণেই হজম করেছিল যে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্বে রয়েছেন দু’জন মহিলা।
তা-ই যদি হয়, তবে আমার প্রশ্ন তৌহিদী জনতা যখন এরশাদের পতন ঘটাল এবং দেশে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা হল, তখন এই জনতা কেন মহিলা এবং তার দলকে নির্বাচিত করল? মহিলা ছাড়াও এবং এরশাদ ছাড়াও, পুরুষপ্রধান রাজনৈতিক দল তো এদেশে ছিলই এবং মহাসমারোহে নির্বাচনের প্রার্থীও হয়েছিল। তৌহিদী জনতার মূল আপত্তি নাকি মহিলা নেতৃত্বে। মুফতি তার উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট করেছেন কোরান হাদিসের উদাহরণসহ, যেমন মহিলা নেতৃত্বে কোনও কিছুর সুরাহা হবে না। বরং আমাদের আশঙ্কা, এতে নেমে আসবে আরও অসংখ্য অমঙ্গল ও গজব। কারণ আল্লাহর রাসুল এরশাদ করেছেন– ‘কখনও ঐ জাতির মঙ্গল সাধিত হয় না যাঁরা নিজেদের নেতা নির্ধারণ করেন কোনও মহিলাকে’ (বোখারি শরীফ হাদিস ৪৪২৫)। মুফতি ইজহারুল ইসলাম আরও লিখেছেন–‘মুসলিম মিল্লাতের নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী যিনি, তাকে ইমাম, খলিফা, সুলতান বা আমিরুল মুমেনীন বলা হয়। সেই ইমাম ও খলিফা বা রাষ্ট্র সরকার প্রধান মহিলা হওয়ার কোনও অবকাশ ইসলামী শরিয়তে নেই। বিকারগ্রস্ত মস্তিষ্কগুলোতে ইসলাম নামটি মাথাব্যথার কারণ হলেও এদেশের শতকরা নববইভাগ মুসলমান এখনও পর্যন্ত আল্লাহ রাসুল ও পরকালে বিশ্বাসী বিধায় ইসলামী শরিয়ত ও খোদায়ী শাসন অনুশাসনের অনুরাগী। রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান মহিলা হওয়ার কোনও রকমের যৌক্তিকতা আছে বলে আজ পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞ আলেম মত প্রকাশ করেননি।‘