অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট জানালেন, ‘প্রাচীন পুরাকীর্তি, মহাকাব্য ও ধর্মগ্রন্থের জন্য আলাদা আইন আছে। সেই আইনে সেগুলো সুরক্ষিত। পুরী, কোনারক, খাজুরাহ, অজন্তা, ইলোরার স্থাপত্য, ভাস্কর্য এবং চিত্রকলা ও ধর্মও ঐতিহাসিক কারণে আইনে সংরক্ষিত। সেই আইনে চিকিৎসাশাস্ত্রের বইয়েরও ঠিক একই রক্ষাকবচ আছে।’
রক্ষাকবচ না থাকলে মহাভারত, রামায়ণ, বাইবেলের মত হাদিস কোরানও নিষিদ্ধ করতে হয়। সব দেশেই একটি আলাদা আইনে পুরাকীর্তি ও ধর্মগ্রন্থ সুরক্ষিত থাকে। অশ্লীলতার দোষ দিলে এর বাইরের নানা কীর্তি ও শিল্পের বিরুদ্ধেই দিতে হয়। রক্ষাকবচ বা সংরক্ষণের আলাদা আইন না থাকলে অশ্লীলতার দোষ এগুলোকেও দেওয়া যেত, যেমন—সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হইয়াছে (সূরা বাকারা আয়াত ১৮৭)। পাদটীকা—প্রথম দিকে রামযানের রাতে ঘুমাইয়া গেলে পর পুনরায় জাগিয়া খাদ্য গ্রহণ এবং স্ত্রী গমনের নিয়ম ছিল না। সাহাবীদের কেহ কেহ এই বিধি কখনও কখনও লঙ্ঘন করিয়া ফেলিতেন ও ইহাতে অনুতপ্ত হইতেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাযিল হয়।
‘তোমরা মসজিদে ই’তিকাফরত অবস্থায় তাহদের সহিত সঙ্গত হইও না।‘ (প্রাগুক্ত) লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বল—‘উহা অশুচি’ । সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সঙ্গ বর্জন করিবে; এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সঙ্গম করিবে না। সুতরাং তাহারা যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হইবে তখন তাহদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন করিবে যে-ভাবে আল্লাহ তোমাদিগকে আদেশ দিয়াছেন। (সূরা বাকারা আয়াত ২২২)
তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্য ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার। (সূরা বাকারা আয়াত ২২৩)
অতঃপর যদি সে তাহাকে তালাক দেয় তবে সে তাহার জন্য বৈধ হইবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সঙ্গে সঙ্গত না হইবে। (সূরা বাকারা আয়াত ২৩০)
নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং খেতখামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট মনোরম করা হইয়াছে। এইসব ইহজীবনের ভোগ্যবস্তু। (সূরা আল ইমরান আয়াত ১৪)
সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হইল তখন আমি তাহাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করিলাম। এবং এইভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করি। সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল সে তাহা হইতে অসৎকর্ম কামনা করিল এবং দরজাগুলি বন্ধ করিয়া দিল ও বলিল—‘আইস’ (সূরা ফুসুফ আয়াত ২২/২৩)
নগরে কতিপয় নারী বলিল, আযীযের স্ত্রী তাহার যুবক-দাস হইতে অসৎকর্ম কামনা করিতেছে, প্রেম তাহাকে উন্মত্ত করিয়াছে। (সূরা য়ুসুফ আয়াত ৩০)
নারী শয়তানের আকৃতি ধরে নিকটে আসে এবং শয়তানের আকৃতিতে ফিরে যায়। যখন তোমরা কেউ নারী দেখে সুখানুভব কর এবং তোমাদের অন্তরে সে পতিত হয়, তখন সে যেন তার স্ত্রীর দিকে মন আকৃষ্ট করে নেয় এবং তার সঙ্গে সঙ্গম করে। কেননা, তার অন্তরে যা আছে, তা সঙ্গম দ্বারা বিদূরিত হয়ে যাবে। (বোখারি হাদিস)
অতিরিক্ত গরমের দিনে, ভরা পেটে, ঘর্মাক্ত কলেবরে এবং গোসলের পরক্ষণে সঙ্গম করবে না। কারণ এতে সন্তান মুর্খ ও বোকা হতে পারে। (বোখারি হাদিস)
স্বামী তাঁর স্ত্রীকে চারটি কারণে প্রহার করতে পারেন। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী যদি স্ত্রীকে আহ্বান করেন এবং স্ত্রী সেই আহানে সাড়া না দেয়। (তিরমিজি হাদিস)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, সোমবারের সহবাসের সন্তান খোদাভক্ত ও কোরানে হাফেজ হয়। মঙ্গলবারের সহবাসের সন্তান মুমিন ও আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়। বৃহস্পতিবার দ্বিপ্রহরের পূর্বে সহবাসের সন্তান বিজ্ঞপণ্ডিত হয়। তার উপর জাদুমন্ত্রের বাণও কার্যকর হবে না। শুক্রবার দ্বিপ্রহের পূর্বে সহবাসের সন্তান হয় অত্যন্ত উত্তম ও সৎ চরিত্রবান। (তিরমিজি)
ধর্মগ্রন্থ কখনও অশ্লীলতার দোষে দূষিত হয় না। এসব সংরক্ষণের আলাদা আইন আছে, রক্ষাকবচ আছে। তাই মহাভারত, রামায়ণ, গীতা, বাইবেল, কোরান, হাদিস সকল ধর্ম এবং ধর্ম-সংক্রান্ত গ্ৰন্থই রক্ষাকবচের গুণে পার পেয়ে যায় এবং আমরা তা মাথায় তুলে রাখি।
৬৬. নারীর সবচেয়ে বড় শত্রু দ্বিধা এবং ভয়
আমি কোনও দল করি না, আমি একা। আমার কোনও সংগঠন নেই, সংস্থা নেই, সমিতি নেই, পরিষদ নেই, আমি যা লিখি নিজ দায়িত্বে লিখি। একা লিখি। আমার পেছনে বিশাল কোনও পেশীশক্তি নেই, যা আমাকে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা করবে। আমি কোনও স্তাবক পুষি না।
এই ব্ৰহ্মাণ্ডে একটি বিন্দুর মত আমি একা। আমার মত এত একা, আর যারা লেখেন, তারা নন। আমি একজন নারীবাদী পুরুষকে জানি, তিনি তার সংস্থা থেকে নারীর জন্য কল্যাণকর প্রচারপত্র প্রকাশ করেন। কল্যাণকর যে কোনও কিছুকে আমিও সমর্থন করি। কিন্তু সেই সংস্থাই যখন নারীর কল্যাণকামী অন্য শক্তিকে প্রতিরোধ করে তখন সংস্থাটির কল্যাণ কামনা নিয়ে আমার বড় সংশয় হয়। আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই তিনি বা তার সংস্থা আসলে নারীর নয়, নিজেদের কল্যাণ কামনা করেন। নিজেদের খ্যাতি এবং বিত্তের বাইরে আর যা কিছু তা নেহাত লোক-দেখানো ছাড়া কিছু নয়।