অথচ এতে তার কনও মন্দ লাগা নেই। শিক্ষা আজকালকার মেয়েদের বইপত্র নয়, আসবাব ও তৈজসপত্রের প্রতিই অধিক আকর্ষণ জন্মাতে সাহায্য করে। আমি বেশ কিছু বাড়িতে দেখেছি তারা কিছু ইংরেজি অপাঠ্য আর সস্তা কিছু বাংলা উপন্যাস দিয়ে বুকশেল্ফ সাজিয়ে রেখে বেশ একটা জাতে উঠার ভাব করে। আর ভাল কিছু হৃষ্টপুষ্ট বই দিয়ে বুকশেল্ফ ভরে রেখে তারা, যতটা না পড়বার তাগিদে তারও বেশি বুকশেল্ফ ভরবার লক্ষ্যে।
মেয়েদের লেখাপড়া আমি এখনও যা দেখি অধিকাংশই ভাল বিয়ে হবার জন্য। তাই একবার ভাল বিয়ে হয়ে গেলে পড়াশোনার ধারে কাছে দিয়ে সে মেয়ে এগোয় না। বিদুষী মেয়ে নিয়ে আবার কি না কি জ্ঞানের ঝামেলায় পড়তে হয় তাই বাড়তি লেখাপড়ার বিষয়ে স্বামী উৎসাহ তো জোগায় না বরঞ্চ অযথা সময় নষ্ট বলে নিরুৎসাহিত করে। অবশ্য এদেশের বাজার ছেয়ে যাওয়া সস্তা উপন্যাস পড়বার চেয়ে চিকেন কালিয়ায় মসলার পরিমাণ মুখস্ত করা ঢের ভাল।
২. সস্তায় আর কিছু না পাওয়া গেলেও মেয়ে পাওয়া যায়, রূপোপজীবিনী থেকে শুরু করে দিনমুজুর, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির নিম্নবিত্ত শ্রমিক এদেশে বেশ সস্তায় মেলে। ওজন করলে খাসির মাংসের চেয়ে মেয়ে মাংসের দাম কম।
৩. নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির দাবি নিয়ে সারাদিন যে ছেলেটি মিছিলে চিৎকার করে, ঘরে ফিরে সেই বিবাহযোগ্য ছেলে তার মা’কে খুব কড়া কণ্ঠে বলে-ফর্সা মেয়ে ছাড়া বিয়ে করব না। মেয়ে শিক্ষিত কিনা, রুচিশীল কিনা, মেয়ের আচার ব্যবহার শোভন কি না ইত্যাদি দেখবার আগে ছেলে এবং তার অভিভাবক প্রথম দেখে মেয়ের চামড়া সাদা কিনা। মানুষের শরীরের চামড়া সম্পূর্ণ ক্রোমোজোমের চরিত্র, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জল-খাদ্যের উপর নির্ভর করে। এদেশি মানুষের স্বাভাবিক ত্বকের রঙ বাদামি। অথচ একটি মেয়ের সৌন্দর্য বিচার হয় তার ব্যক্তিত্বে নয়, তার ত্বকের উজ্জলতায়, তার নাক চোখ ঠোঁটের আকার আকৃতিতে। খুব খুদ্র পরিসরেও বর্ণবাদ চলে। শুধু আফ্রিকা নয়, তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ঘরেই গোপনে বর্ণবাদ চলছে।
মেয়েমানুষ অনেকটা পোশাকের মত। একে সোডা সাবান দিয়ে কেচে ফর্সা করতে পারলে অনেকের আনন্দ হয়। পুরনো পোশাক ফেলে দিতে মানুষের মায়া নেই, নতুন পোশাকের দিকে ঝোঁকও খুব বেশি। একে প্রয়োজনে গায়ে চড়াতে হয়, পোশাকটি যত সেলাইয়ে নিখুঁত, বুননে ঠাসা, ঝকঝকে তকতকে, তত পরতে আরাম। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পোশাকের যায়গায় পোশাক, মানুষের জায়গায় মানুষ। পোশাক যেমন হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকে, স্বামীর সংসারে মেয়েরাও তেমন বায়বীয় হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছে, ব্যবহৃত হওয়াই তার প্রধান কাজ।
৪. আমি বেশ কিছু সংসারে দেখেছি, স্বামী তার রুমাল, মোজা, টাই, নিজেই খুঁজে নিলে স্ত্রী বড় রাগ করেন। কারণ স্ত্রী আশা করেন, স্বামীর যে কনও কাজেই যেন স্ত্রীর প্রয়োজন হয়, স্ত্রী কাছে না থাকলে স্বামীর স্বাভাবিক জীবনযাপন যেন বাধাগ্রস্ত হয়, স্বামীর দৈনন্দিন জীবনে যেন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং স্বামী যেন স্ত্রীর অভাব অনুভব করেন তাই জীবনযাপনের সকল ক্ষেত্রেই স্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামীকে তার উপর নির্ভরশীল করাতে চান।
তাই স্বামী যদি দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো একাই মিটিয়ে ফেলেন, তার নাওয়া-খাওয়া, তার জামা-কাপড়, জুতো-মোজা ইত্যাদির ব্যাপারে স্ত্রীর প্রয়োজন না পড়ে তবে স্ত্রীর তো ভীষণ বিপদ। কারণ ভালবাসার তাগিদ যদি স্বামীর না থাকে, অন্তত কাজকর্মের তাদিগে যেন স্ত্রীকে তিনি কাছে রাখেন। কাছে থাকার জন্য, স্বামীর ঘরে নির্ঝঞ্চাট বসবাসের জন্যে স্বামীকে নিজের ওপর নির্ভরশীল করানো অসহায় মেয়েদের এক ধরনের দুর্বল চাতুর্য।
আমাদের সমাজ মেয়েদের এত হেয় করে রেখেছে যে নিজ সংসারেও তাকে অভিনয় করতে হয়। একটি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সংসার নামক মঞ্চে প্রতিনিয়ত তার অভিনয়ের পরীক্ষা চলে। ফলাফল সামান্য এদিক ওদিক হল তো মেয়েটির সমূহ সর্বনাশ।
১১. প্রোসটেটনামা
প্রোসটেট নামে পুরুষের শরীরে একপ্রকার গ্ল্যান্ড থাকে। পঞ্চাশের অধিক বয়স বিশেষত ষাট সত্তর বছর বয়সে পুরুষের প্রোসটেট গ্ল্যান্ড আকারে বড় হয়। প্রোসটেট গ্ল্যান্ড, দুটো হরমোনের গতিবিধি পরিচালনা করে। একটি এন্ড্রোজেন, অপরটি এস্ট্রোজেন। বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে এন্ড্রোজেন হরমোন ক্রমশ কমে আসে কিন্তু এস্ট্রোজেন একই অনুপাতে কমে না। এস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যে প্রোসটেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যায়, মোদ্দা কথা এন্ড্রোজেন এবং এস্ট্রোজেন হরমোন দুটোর পরিমাণগত অসামঞ্জস্যই প্রোসটেট বড় হওয়ার মূল কারণ। এই রোগের প্রধান উপসর্গ ঘন ঘন পস্রাবের বেগ, প্রথমে রাতে, এরপর রাত এবং দিন উভয় সময়ে। পুনঃ পুনঃ এবং দু’তিন ফোঁটা পস্রাবের অস্বস্তি, তার উপর পস্রাব করার সময় বিষম জ্বালাপোড়াও অনুভূত হয়। নিজ ইচ্ছায় পস্রাবের আরম্ভ, গতি ও সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হয় না। ধীরে ধীরে কিডনি আক্রান্ত হলে পস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। পস্রাব শুরু ও শেষ হওয়ার সময় কিছু রক্ত যাওয়াও এসময় বিচিত্র কিছু নয়।
প্রোসটেট বড় হওয়ার প্রথম দিকে পুরুষের যৌন উত্তেজনা হঠাৎ বৃদ্ধি পায় যদিও শেষদিকে পুরুষত্বহীনতাই স্থায়ী হয়। মজার ব্যপার হচ্ছে, বুড়ো কুকুরের মধ্যেও প্রোসটেট বড় হওয়ার লক্ষন খুব দেখা দেয়। প্রোসটেট উপরের দিকে ঠেলে বড় হওয়ার কারণে কুকুরের মলনালী সঙ্কুচিত হয়। এর ফলে মলনালী সারাক্ষণ ভরা ভরা ঠেকে এবং মলত্যাগের যে চেষ্টা বুড়ো কুকুরেরা করে যায় তা অর্থহীন এবং যন্ত্রণাদায়ক।