অন্যদিকে, তারাও নিশ্চই পুরোটার তুলনায় এতোটুকুই হবে।
এমিতে হীরের দাম সব সময় উৎপাদক আর বিক্রেতারা চড়িয়ে রাখে আকাশের গায়ে। যদি এই সময় এমন একটা হীরা-পর্বত বাজারে নামে, তাও আবার জেম ডায়মন্ড-নিশ্চই হীরা-ব্যবসা পাতালে ধসে পড়বে… কোনো সন্দেহ নেই।
এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেন তাদের ইউরোপা অভিযানে এতোগুলো দল খাবলাখাবলি করেছে এতোদিন! এ্যাদ্দিন রাজনৈতিক আর আর্থিক পার্টিগুলোর নাক গলানোর কোনো শেষ ছিল না।
নিজের তত্ত্ব প্রমাণ করার পর আবার ভ্যান ডার বার্গ চিরাচরিত নিরামিশাষী বিজ্ঞানী হয়ে গেল। এখন আর তার গবেষণায় কোনো বাধা দু চোখে দেখতে পারবে না।
শাটল থেকে অনেক কষ্টে একটা পোর্টেবল ড্রিল নামিয়ে এনে মিটারখানেক এলাকা ছিদ্র করল তারা। কাজটা করতে ভ্যান ডার বার্গ বেশ বেগ পেয়েছিল। কারণ এবার আর ক্রিস ফ্লয়েড তেমন কোনো সহায়তা করতে রাজি ছিল না। কিন্তু কাহাতক অন্যের কষ্ট দেখা যায়-সেও হাত লাগালো একটু পরে। তারপর আবার জিনিসটা সযত্নে তুলে রাখল শাটলের ভিতরে।
ফ্লয়েড বেশ কিছু কাজে প্রাধান্য পেলেও দেখা যাচ্ছে মরার প্রাধান্যের কারণে কঠিন কাজগুলো আগ বাড়িয়ে নিজেকেই করতে হয়। একটা সিসমোগ্রাফ ঠিক করার এবং টিভিটা ট্রাইপডে বসানোর আগে সে চারদিকে ছড়ানো বহুমূল্য রত্নগুলোর কয়েকটা বগলদাবা করে নিল।
একেবারে যদি নাও হয়, সাবধানে কম ক্ষতিকর কয়েকটা টুকরো নিতে নিতে বলল, জিনিসগুলোকে ভাল স্যুভেনির হিসেবে রাখা যাবে।
যদি রোজির বন্ধুরা এগুলো পাওয়ার কারণে মেরে না ফেলে আমাদের।
তীক্ষ্ণ চোখে ভ্যান ডার বার্গ তার সতীর্থের দিকে চেয়ে থাকে। তার মনে একটা চিন্তাই ঝড় তুলছে, ক্রিস কতোটা জানে… কতোটা জানে বাকীরা?
এখন রহস্য খুলে যাওয়াতে বলতে আর কোনো দ্বিধা নেই। আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের কম্পিউটারগুলো পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়ে বেড়াবে।
বেজন্মা কুত্তা! সাথে সাথে গাল দিল ফ্লয়েড, ঘৃণার চেয়ে উৎসাহ বেশি ঝরে পড়ছে তার কণ্ঠে, তো, এ-ই তোমার মেসেজের সারাংশ?
“একজন বিজ্ঞানী আর্থিক বাজারে লাভবান হতে পারবে না এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে কোন্ কালে? তাই পৃথিবীতে আমার বন্ধুর কাছে খবরটা দিয়ে দিলাম, ব্যস। কিন্তু বিশ্বাস কর আমার কথা, এই কাজেই আমি বেশি আনন্দ পাইযেমনটা আর সব বিজ্ঞানবিদের ক্ষেত্রে হওয়া উচিৎ। রেঞ্জটা দিবে, প্লিজ?
জিউস স্টেশন বসানোর আগে তিন তিনবার তাদের পা কেঁপে গেল মহা ভূকম্পনে। প্রথমে পায়ের নিচে একটু মৃদু আন্দোলন, তারপর সবকিছু কাঁপা শুরু করে-সবশেষে অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়ে একটা লম্বা গর্জন ভেসে আসে। কোনো নির্দিষ্ট দিক থেকে নয়, বরং সবদিক থেকে।
এমনকি মাঝেমধ্যে শব্দটা আকাশ থেকেও হয়! কী অবাক ব্যাপার! ফ্লয়েড ভেবে কোনো ব্যাখ্যা পায় না। এম্নিতে তার বিশ্বাস নেই যে এখানকার পাতলা আবহাওয়ায় বাতাসে ভাসিয়ে কোনো কথা বলা সম্ভব। সেখানে কিনা হুঙ্কার!
ভ্যান ডার বার্গ সারাক্ষণ তাকে বোঝাচ্ছে, এগুলো এখনো তেমন ক্ষতিকর পর্যায়ে যায়নি। কিন্তু একটা শিক্ষা পেয়েছে ফ্লয়েড। কখনো সে এক্সপার্টদের কথায় বেশি ভরসা করে না। সত্যি, সে বিল টির শক এবজর্ভিং সিস্টেমকে দেখল টালমাটাল হয়ে সামলে নিচ্ছে পরিস্থিতি। খেয়া নৌকাটাকে যেন আকাশে ছুঁড়ে দেয়া হয়েছিল। তারপরও সামলে নিচ্ছে কী করে কে জানে!
মনে হচ্ছে হয়ে এল! অবশেষে বলল বৈজ্ঞানিক, অবশেষে। এবং সাথে সাথেই ফ্লয়েড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল জোরে।
সব চ্যানেল থেকে গ্যানিমিড এখন অপার তথ্য পাচ্ছে। এই ব্যাটারিগুলো হাজার বছর ধরে টিকে যাবার কথা, লুসিফারও সব সময় সোলার প্যানেলকে আলো দেবে, বাকীটা আল্লা মালুম।
গিয়ার যদি সপ্তা খানেকের বেশি টিকে যায় তো আমি অত্যাশ্চর্যান্বিত হব। বাজি ধরতে রাজি আছি, ল্যান্ড করার পরও পর্বতটা অবস্থান বদলেছে; আমাদের উপর পড়ে যাবার আগে চলো ভালোয় ভালোয় ভাগি।
আমার দুঃখ আরো বেশি, ক্রিস। হাসছে ভ্যান ডার বার্গ, তোমার জেটের আঁচে এই সব কষ্ট বানচাল হয়ে যাবে।
তাতে কীবা এসে যায়? আপনা পরাণ বাঁচাতে পারছি তো! ব্যস। তার উপর এত আবর্জনা উগরে দিয়েছি যে এখন উড়াল দিতে বড়জোর আগের অর্ধেক শক্তি লাগবে। অবশ্য তুমি যদি আরো কয়েক বিলিয়ন… নাকি ট্রিলিয়ন? তুলতে চাও…
হিংসুটে কেন তুমি এত? কিন্তু পৃথিবীতে নিয়ে কী লাভ হবে কে জানে! প্রথমেই জাদুঘরগুলো কেড়ে নিবে বেশিরভাগ, তারপর কটা বাঁচবে আর তা দিয়ে কী করা যাবে এখনি বলতে পারব না।
গ্যালাক্সির সাথে কথা আদানপ্রদানের কারণে কন্ট্রোল প্যানেলে ফ্লয়েডের হাত উড়ে বেড়াচ্ছে।
মিশনের প্রথম ধাপ শেষ। বিল টি উড়তে প্রস্তুত। আগের কথামতোই ফ্লাইট প্ল্যান ঠিক করা থাকল।
ক্যাপ্টেন ল্যাপ্লাসের জবাব শুনে তারা মোটেও অবাক হয়নি।
নিশ্চিত ভো, সামনে যেতে চাচ্ছেন? মনে রাখবেন, আপনাদের হাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি শুধু সাপোর্ট দিব।
ইয়েস স্যার, আমরা দুজনেই মহাখুশি। বোঝাই যাচ্ছে বাকী ক্রুদের মানসিক অবস্থা কেমন। আর বৈজ্ঞানিক লাভ যে কী হবে সেটা পরে বলব, এখন দুজনেই আমরা উত্তেজিত।