এরচে কাছে যাবার কোনো মানে নেই… মানেটা কী? প্রশ্ন তুলল ক্রিস।
মুখে মৃদু হাসি ছড়িয়ে দিল ভ্যান ডার বার্গ। গত কমিনিটে যেন সে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এসেছে; এখন শাসন না মানা দুরন্ত কোনো বাচ্চা ছেলে যেন।
সারকামস্পিস আরো যেন খুশি হয়ে উঠেছে গ্যানিমিডের বিজ্ঞানী, ল্যাটিন শব্দ। মানেটা হল, নিজের চারদিকে তাকাও চোখ কান খোলা রেখে। আগে বড় ক্যামেরাটা বের করা যাক… ওয়াও!
হঠাৎ কেমন যেন ঝাঁকি খেল বিল টি। তারপর ঠ্যাঙগুলো শক অ্যাবজর্ডিং প্রোগ্রামের কল্যাণে এমনভাবে দুলল যে আরেকটু হলেই সি সিকনেস শুরু হয়ে যেত।
ভূকম্পনের ব্যাপারে গ্যানিমিডের কথাই ঠিক। বলল ফ্লয়েড, গুছিয়ে নেয়ার পর, কোনো সিরিয়াস ভয় নেইতো?
না-ও থাকতে পারে। মিলে যেতে আরো ত্রিশ ঘণ্টা বাকী। এটাকে দেখে পাথরের শক্ত স্ল্যাবের কথাই মনে পড়ে। কিন্তু তবু, এখানে আমরা বসে বসে বাদাম খেয়ে সময় নষ্ট করব না। আর, আমার মাস্কটা ঠিক আছে তো? লক্ষণ বেশি ভাল ।
স্ট্রাপ শক্ত করে দিচ্ছি। এইতো, ঠিক হ্যায়। শক্ত করে দম নিন, এখন আরাম লাগছে, না? আমি আগে যাব।
ভ্যান ডার বার্গ খুব আশা করেছিল সেই আগে লিটল স্টেপ ফেলবে। কিন্তু বিধি বাম হলে কী আর করা? এখানে ফ্লয়েডই কমান্ডার, তার উপর ভূকম্পনে কোনো ক্ষতি হল কিনা তা দেখতে যাবার দায়িত্ব আছে ওর কাঁধে। যদি এখনি আবার উড়াল দিতে হয় তো সেটা বের করার জন্য ওকেই পা রাখতে হবে মাউন্ট জিউসের পাদদেশে।
প্রথমেই সে একবার ছোট্ট স্পেসক্রাফটটার চারপাশে চক্কর কেটে নিল। ল্যান্ডিং গিয়ারগুলো এমন ঝাঁকি খেয়ে ঠিক আছে তো? ঠিকই আছে, বুড়ো আঙুল দেখালো মই বেয়ে নামতে থাকা ভ্যান ডার বার্গের দিকে। যদিও সে স্বর্গে পরা সেই হাল্কা ব্রিদিং অ্যাপারেটাসের সাথে সেই স্পেস স্যুটই পড়েছে, তবু কেমন যেন লাগছে তার।
ল্যান্ডিং পড়ে নেমেই একটু ঠিকঠাক করে নিতে চেষ্টা করল বিজ্ঞানী। কিন্তু সাথে সাথেই উপরে তাকিয়ে ফ্লয়েডের কাজ খেয়াল করল।
স্পর্শ করবেন না! চিৎকার করল সাথে সাথে, ডেঞ্জারাস!
চিৎকার শুনে এক লাফে মিটার খানেক সরে গেল ফ্লয়েড। এক বিচিত্র পাথরকে সে পরীক্ষা করছিল। একটা বড় কাঁচের টুকরা দ্যুতি ছড়াচ্ছিল সেখানে।
“নিশ্চই তেজস্ক্রিয় নয়, কী বলেন? বেশ ভয় পেয়ে গেল সে।
না। কিন্তু আমি যাবার আগে দূরে থাকুন।
অবাক হয়ে ফ্লয়েড দেখল যে ভ্যান ডার বার্গ আগে থেকেই মোটা হাতমোজা পরে এসেছে। একজন স্পেস অফিসার হিসেবে ফ্লয়েড অনেক সময় নিল একটা ব্যাপার বিশ্বাস করতে; এখানে-এই ইউরোপায় খোলা হাওয়ায় চামড়া বের করা যাচ্ছে। এই সৌর জগতের কোথাও, এমনকি মঙ্গলের বুকেও শরীরের কোনো অংশ অনাবৃত করা অসম্ভব।
অতি সাবধানে ভ্যান ডার বার্গ নিচে এসে কাঁচের জিনিসটার একটা টুকরো তুলে নিল। এমনকি এই কিম্ভূত আলোতেও দারুণভাবে ঝিকিয়ে উঠল জিনিসটা। আর ফ্লয়েড দেখল এর ধারটা বেশ তীক্ষ্ণ।
চেনা সৃষ্টিজগতে সবচে ধারালো ছুরি।
দাঁত কেলিয়ে বলল ভ্যান ডার বার্গ। তারপর হঠাৎ বুঝতে পারল মাস্কের নিচে কাজটা সহজ নয়।
তো, আপনি এখনো জানেন না জিনিসটা ঠিক কী?
এখন মনে হচ্ছে একমাত্র আমিই জানি না।
সাথীকে কাঁধে ধরে জিউস পর্বতের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল ভ্যান ডার বার্গ। এই দূরত্ব থেকে পর্বতটা আধ আকাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে সদম্ভে। শুধু শ্রেষ্ঠ বললেই চলে না-বরং এই জগতের একমাত্র পর্বত এটা।
দৃশ্যটা শুধু মিনিট খানেকের জন্য দেখতে থাকুন, তারিফ করতে থাকুন মনে মনে। আমি একটা জরুরী কল করব এর মধ্যে।
একটা কোড দিল সে তার কমসেটে। একটু পর রেডি ফ্ল্যাশ ভেসে উঠল, সাথে সাথেই হড়বড় করে বলে উঠল জোর গলায়, গ্যানিমিড সেন্ট্রাল ১০৯, দিস ইজ ভ্যান। রিসিভ করেছেন?
একটু পরই স্পিকার থেকে একটা যান্ত্রিক শব্দ ভেসে এল:
হ্যালো, ভ্যান। গ্যানিমিড সেন্ট্রাল ১০৯ বলছি। রিসিভ করতে প্রস্তুত।
ভ্যান ডার বার্গ তার জীবনের চিরস্মরণীয় মুহূর্তটাকে আরো একটু প্রলম্বিত করে তারপর শুরু করল কথা।
পৃথিবীর আইডেন্ট আঙ্কল ৭৩৭ কে বের করুন, এখুনি। তারপর কথাটা প্রচার করুন, লুসি ইজ হেয়ার, লুসি ইজ হেয়ার। বলুন দেখি কী বলতে হবে?
গ্যানিমিড ম্যাসেজটা রিপিট করাতে ফ্লয়েড ভাবল, যে খবরই সে পাঠিয়ে থাক না কেন, আমার হয়তো উচিত ছিল তাকে বাধা দেয়া। কিন্তু দেরি যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে।
স্যরি অ্যাবাউট দ্যাট, ক্রিস। দাঁত কেলিয়ে আবারও হাসল ভ্যান ডার বার্গ, আবারও তার হাসি বাঁধা পেল মুখোশের কারণে, আমি আর সবকিছুর উপর প্রাধান্য পেতে চেয়েছিলাম।
তোর প্রাধান্যের খেতা পুড়ি, তুমি যদি এখুনি কথা বলা শুরু না কর, তত তোমার প্যাটেন্ট করা সেসব গ্লাস-চাকু দিয়ে এফোঁড়-ওফোড় করে দিব।
গ্লাস, অবশ্যই! যাক, ব্যাখ্যাটা… এই! সবুর! ভয় পাইয়ে দিবে তো! ব্যাখ্যা করতে গেলে জল আরো ঘোলা হবে, আমারও চাকুর ঘা খেতে হতে পারে, তাতে পরিবেশ পরিষ্কার হবে না একটুও। তারচে সরাসরি ফ্যাক্ট নিয়ে কথা বলা যাক…
“জিউসের পর্বত… জিউসের পর্বত একটা অখণ্ড হীরা। অনুমিত ভর? এক মিলিয়ন মিলিয়ন টন। কিংবা, তুমি যদি অন্য পথে ব্যাপারটাকে দেখতে চাও, সতেরতম ক্যারেটের চেয়ে অন্তত দু বার দশ দিতে হবে উপরে। আমি কিন্তু গ্যারান্টি দিতে পারব না এটার সবটাই অটুট কিনা সে বিষয়ে…
৭. দ্য গ্রেট ওয়াল
সপ্তম পর্ব – দ্য গ্রেট ওয়াল
৪৯. ঈশ্বরের জন্য
বিল টি থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে তাদের ছোট্ট গ্রানাইট ল্যান্ডিং প্যাডে জড়ো করতে করতে ক্রিস ফ্লয়েড মাথার উপর জ্বলতে থাকা পাহাড়টাকে ট্যারা চোখে একবার দেখে নেয়। এভারেস্টের চেয়ে বড় একটা, মাত্র একটা ডায়মন্ড! এই ছড়ানো ছিটানো টুকরাগুলি নিশ্চই লাখ ভাগের এক ভাগ নয়, বিলিয়ন ভাগের এক ভাগই হবে…