যথারীতি, ফ্লয়েড এটুকুও যোগ করল, আমরা তার জবাব পাব যদি কখনো সুন্দরমতো সময় করে গুছিয়ে উঠতে পারে…
সকালের নাস্তার পর পরই যাত্রী আর বিজ্ঞানীদল ভিড় করল ক্যাপ্টেন স্মিথের কাছে। পরবর্তী ব্রিফিংয়ের আশায়। বিজ্ঞানীদের আসলে এমন কোনো ব্রিফিংয়ের আদৌ প্রয়োজন নেই, কিন্তু এটা নিয়ে না রাখার পর যদি কোনো ভুল ভ্রান্তি হয়েই যায় তো পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে। তারচে ক্যাপ্টেনের কাছে ক্লিয়ার থাকাই ভাল।
এমনটা ভাবা খুবই সহজ যে ইউনিভার্স কোনো নেবুলার মধ্যদিয়ে পথ করে যাচ্ছে-ধূমকেতুর পাশ দিয়ে নয়। সামনের পুরো আকাশ সাদা কুয়াশায় আচ্ছন্ন । একই রকম নয়-কোথাও কালচে, কোথাওবা ঘন, মাঝে মাঝে উজ্জ্বল জেটের ছোঁয়া; ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এই ম্যাগনিফিকেশনে ধূমকেতুটির নিউক্লিয়াস পর্যন্ত দেখা যায়; কালো, ছোট্ট বিন্দু। আর এই উৎস থেকেই চারপাশের সব জাদুর উৎপত্তি।
ঘণ্টা তিনের মধ্যে ড্রাইভ বন্ধ করতে পারব আমরা। বলল ক্যাপ্টেন, তখন নিউক্লিয়াসের কত কাছে থাকব আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন? মাত্র এক হাজার কিলোমিটার। এবং আপেক্ষিক গতি থাকবে শূন্য। তখনই চূড়ান্ত কয়েকটা পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষার পালা। তারপর? ল্যান্ডিং সাইট খুঁজে বের করব আমরা।
“তারমানে ওজনশূন্যতা আসছে কাঁটায় কাঁটায় ১২:০০ টায়। তার আগে আপনাদের কেবিন স্টুয়ার্ডরা সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবে। আবারও ব্যাপারটা বদলে যাবে, তবে এবার দু ঘণ্টার পালা নয়-টানা তিন দিন। এই যা, তারপরই আবার ওজন ফিরে পাচ্ছি।
“হ্যালির মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে চিন্তিত? ভুলে যান। পৃথিবীর হাজার ভাগের এক ভাগ। অনেক অনেকক্ষণ থাকলে ব্যাপারটা এক-আধটু বুঝে উঠতে পারবেন হয়তো; ব্যস-এটুকুই। কোনো জিনিসের এক মিটার পতন হতে সময় লাগে মোটামুটি পনের সেকেন্ড…
“নিরাপত্তার খাতিরে আমি আপনাদের সবাইকে এখানে, অবজার্ভেশন লাউঞ্জে পেলেই বেশি খুশি হব। বেল্ট যেন শক্ত করে বাঁধা থাকে, অন্তত সাক্ষাৎ আর
স্পর্শের সময়টায়। অবশ্য এখান থেকেই সবচে ভালভাবে ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করা যাবে। পুরো অপারেশনে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগবে না আশা করি। খুবই ছোট ছোট থ্রাস্ট কারেকশন ব্যবহার করব; কিন্তু সেসব ছোট্ট থ্রাস্ট শিপের যেকোন অংশ থেকে আসতে পারে, তাই কাছেপিঠে থাকাটা ঠিক নয়; আঁকিলাগতে পারে।
আসলে ক্যাপ্টেন স্পেস সিকনেসের কথাই বলতে চায়। কিন্তু এই শব্দটা ইউনিভার্সে ব্যবহার না করার চুক্তি হয়েছে আগেই। অনেক হাতই সিটের নিচে পথ হাতড়ে বেড়াচ্ছে। ছাই ফেলতে ভাঙা কুলাটা আছে তো? প্লাস্টিক ব্যাগটা না থাকলে বিপদে পড়তে হতে পারে।
ম্যাগনিফিকেশন বাড়ছে, স্ক্রিনের ইমেজটা আরো আরো চলে যাচ্ছে ভিতরের দিকে। মুহূর্তকালের জন্য ফ্লয়েডের মনে হল যেন কোনো এরোপ্লেনে আছে সে-প্লেনটা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে হাল্কা মেঘের ভিতর পথ করে নিয়ে। নিউক্লিয়াসটা আরো আরো স্পষ্ট হচ্ছে; এখন আর দেখতে মোটেও কালো বিন্দু নয়, বরং এবড়োথেবড়ো চন্দ্রকলার মতো। যেন মহাসৃষ্টির অসীম সাগরে পথ হারানো কোনো নিঃসঙ্গ দ্বীপের পথ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে, ধীরে ধীরে হাজার বছরের রহস্য-কুয়াশার চাদর সরে যাচ্ছে।
এখনো পরিমাপ বোঝার কোনো উপায় নেই। যদিও ফ্লয়েড জানে সামনের দৃশ্যটা টেনেটুনে দশ কিলোমিটার হবে, তবু দেখেশুনে চাঁদের কথা মনে পড়ে যায়। চাঁদটা এতো বাষ্প ছড়ায় না, আর বুকে এমন বিশাল কোনো জ্বালামুখও নেই।
মাই গড! চিৎকার করে উঠল মাইকেলোভিচ, এটা আবার কী?
সে নিউক্লিয়াসের নিচের প্রান্তে আঙুল তুলল; আঁধার অংশটার শেষপ্রান্তে আলো দিচ্ছে কী যেন। নিয়মিত ছন্দে অন-অফ, অন-অফ! দু-তিন সেকেন্ডে একবার করে। নিশ্চই কোনো প্রাকৃতিক ব্যাপার নয়। যেন কোনো সিগন্যাল বাতি।
যেন কেন? অবশ্যই বাতি। কৃত্রিম বাতি। কোনো ইশারা দিচ্ছে ওটা। কী ইশারা?
ড. উইলিস তার ধৈর্যের পরিচয় দিল, আমি এক লহমায় আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে পারি।
কিন্তু ক্যাপ্টেন স্মিথ প্রথমে শুরু করল ব্যাখ্যাটা, আপনাকে হতাশ করতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত, মাইকেলোভিচ সাহেব। ওটা স্যাম্পলার পোব টুর বিকন। জিনিসটা মাসখানেক হল হ্যালির গায়ে সেঁটে আছে; আমরা যাব, তুলে আনব।
কী লজ্জার কথা! আর আমি কিনা ভেবে বসে আছি সেখানে কেউ একজন…কিছু একটা আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে।
তেমন কোনো সৌভাগ্য কি আর হবে? একা আমরাই ওর দিকে এগিয়ে গেছি। বিকনটা আমাদের ল্যান্ড করার জায়গা নির্দেশ করছে। হ্যালির দক্ষিণ মেরুতে; এখন স্থায়ী আঁধার সেখানটায়। আমাদের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের সাপেক্ষে সেটাই সুবিধাজনক স্থান। সূর্যালোক পাশে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রী। পানির স্ফুটনাঙ্কের অনেক উপরে।
দেখেশুনে খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত মনে হচ্ছে না যে যাই বলুক। তিতকুটে চেহারা করে দিমিত্রি বলল, বিশেষত ঐ জেটগুলোতো মোটেও ভাল লক্ষণ দেখায় না। আচ্ছা, এই মরার পার্ক কি না করলেই কি নয়?
“ওই জেটগুলোও আমাদের অন্যপাশে পার্কিয়ের অন্যতম কারণ। ওখানে কোনো ব্যস্ততা নেই। এখন, আপনারা ক্ষমা করলে আমি একটু ব্রিজের দিকে যেতে চাই। একেবারে আনকোরা কোনো ভুবনে প্রথমবারের মতো ল্যান্ড করার সুযোগ আমার জীবনে এই প্রথম এলো। আর বড় সন্দেহ হয় জীবনে আর একবার নতুন দেশে প্রথমবার নামতে পারব কিনা। সুতরাং…