কিন্তু খাবার নিয়ে টু শব্দও নয়। এক কথায় চমৎকার। অনেক ভাল, বলল ক্যাপ্টেন, অন্তত বিগলের বুকে ডারউইন যেমনটা খেয়েছিলেন তার চেয়ে।
এ নিয়ে ভিক্টর উইলিস বলেছিল, তিনি কি আর জানতেন ইতিহাসে বিগল কোথায় গিয়ে ঠেকবে? বিলাস আসবে কোত্থেকে? আমরা আমাদের অভিযানের সাথে ইতিহাসের যোগসূত্র জানি। আর, বাই দ্য ওয়ে, জানা থাকলে বিগলের কমান্ডার ইংল্যান্ডে ফিরে নিজের গলাই কেটে ফেলত।
ব্যাপারটা ভিক্টরের কাছে যথেষ্ট চিন্তার। তিনি ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী অথবা পপ-বিজ্ঞানী, তার ভক্ত শ্রোতাদের সামনে। তার মধ্য-প্যাসিফিক উচ্চারণ, ক্যামেরার সামনে ব্যয়বহুল হস্ত-সঞ্চালন অনেক কৌতুকের কারণ ছিল। তার উপর বিরাট দাড়ির বহর ছিল দর্শনীয়।
যে লোক এতো লম্বা চুল-দাড়ি গজাতে পারে, বলত সমালোচকের দল, সে লুকাতেও জানে বিস্তর।
ছজন ভি আই পির মধ্যে সে-ও একজন, কিন্তু ফ্লয়েড নিজেকে ঠিক সেলিব্রিটি মনে করে না। বরং বাকীদের ডাকে দ্য ফেমাস ফাইভ নামে। ইভা মারলিন খুব দুর্লভ সময়গুলোয় নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে পার্ক এভিনিউর নির্জন প্রান্ত ধরে কখনো-সখনো হাঁটতেও পারে। দিমিত্রি মাইকেলোভিচ তার ক্ষুদ্র উচ্চতার জন্যই হয়তো হাজার খণ্ড অর্কেস্ট্রার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে।
ক্লিফোর্ড গ্রিনবার্গ আর মার্গারেট মবালাও অচেনা বিখ্যাত তালিকায় পড়ে-অবশ্য পৃথিবীতে ফেরার সাথে সাথেই ব্যাপারটা আমূল বদলে যাবে। মার্কারিতে পা রাখা প্রথম মানব চেহারা-সুরতে তেমন আহামরি কিছু নয় যে তাকে তেমন আলাদাভাবে মনে রাখা যাবে। তার উপর খবরের জগতে রাজত্ব চালানোর কালটা চলে গেছে বছর ত্রিশেক আগেই। অন্যদিকে, যেসব লেখক সাক্ষাৎকার, টক-শো আর অটোগ্রাফ দেয়ার নেশায় আসক্ত নয়, তাদের মধ্যে মিসেস মবালা তার লাখ লাখ পাঠকের মনে কাজের মধ্য দিয়েই চির জাগরূক হয়ে থাকবে।
চল্লিশের দশকে তার সাহিত্যকর্ম বেশ নাড়া দিয়েছিল। যথারীতি এ স্কলারি স্টাডি অফ দ্য গ্রিক প্যান্থিয়ন বেস্ট সেলারের লিস্টে কামড়াকামড়ি করেনি, কিন্তু মিসেস মবালা এ বইয়ের অন্তর্নিহিত আর আবেগকে, ঐতিহ্যকে একটা আনকোরা যুগের সন্ধিক্ষণে, মহাকাশ যুগের প্রারম্ভে প্রকাশ করেছিল। এক শতাব্দী আগে যে নামগুলো শুধু অ্যাস্ট্রোনমার আর চিরায়ত মেধাবীদের কাছে পরিচিত ছিল তা আজ প্রতিটি শিক্ষিত মানুষের দুনিয়ার এক অংশ। প্রতিদিনই দু-চারটে খবর আসবে গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, আইও, টাইটান, বৃহস্পতি… এমনকি আরো নির্জন দুর্গম সব এলাকা থেকে ক্যারমে, প্যাসিফা, হাইপেরিয়ন, ফোবস… [**দেখুন: প্রাসঙ্গিক টিকা]
তার বই শুধু সার্থকই হয়নি বরং মানুষকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার পুরনো ঐতিহ্যের ছোঁয়া। প্রকাশ করেছে জুপিটার-জিউসের পারিবারিক কাহিনী যিনি ছিলেন সব দেবতার পিতা। এমনকি সম্পাদকরা এ-ও বলেছিল যে, তার দ্য ভিউ ফ্রম অলিম্পাস, টু দ্য প্যাশন্স অফ দ্য গডস এর মতো একটা লেখা লিখতে পারলে তারা সার্থক হত।
যাত্রীদের একজন শিপটাকে বোকাদের জাহাজ বলে বেড়ায়। ভিক্টর উইলিস ব্যাপারটার সাথে শতাব্দী-পুরনো এক ঘটনার মিল খুঁজে পেয়েছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী আর লেখককে সাথে নিয়ে ক্যাথরিন এ্যান পোটার পাল তুলে দিয়েছিল সমুদ্রে; এ্যাপোলো ১৭ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে চান্দ্র অভিযানের প্রথম অধ্যায়ের পতন দেখার জন্য।
ব্যাপারটা মনে রাখব। মবালা বলল, তৃতীয় দৃষ্টি দেয়ার আসল সময় হয়তো এখুনি, তবে ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হবে পৃথিবীতে ফেরার পর…
১১. মিথ্যা
কয়েক মাস আগেই রালফ ভ্যান ডার বার্গ দ্বিতীয়বার মাউন্ট জিউসের দিকে চোখ তুলে মনোযোগ দেয়ার এনার্জি খুইয়ে বসেছে। গ্যানিমিডকে বশ । মানানোটাই ফুল টাইম জবের চেয়ে বেশি কিছু। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো সে এই ফুল টাইম জব করেও হপ্তার পর হপ্তা মূল এলাকা দার্দানাস বেসের বাইরে থেকে প্রস্তাবিত গিলগামেশ-ওসিরিস মনোরেল নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে বেড়ায়।
গ্যালিলীয় জগতের তৃতীয় উপগ্রহের ভূগোল উল্টে গেছে বৃহস্পতির রূপ বদলের সাথে সাথে। বদলাচ্ছে আজো। নূতন সূর্যটা ইউরোপার বরফ গলিয়ে দিলেও তার দৈবতেজ এখানেও সমান নয়, কারণ চার লক্ষ কিলোমিটার দূরত্ব। কিন্তু সারাক্ষণ সূর্যটার দিকে মুখ করে থাকা অংশকে চলনসই উত্তাপ দিয়ে যেতে পারে।
উপগ্রহের এখানে-ওখানে ছোট ছোট অগভীর সমুদ্র। কোনো কোনোটা দুনিয়াবী মেডিটারিয়ানের মতো বড়। বিংশ শতাব্দীতে করা ভয়েজার অভিযানগুলোর চোখ থেকে খুব বেশি এলাকা বাঁচেনি, তাই আগের দিনের মানচিত্র ছিল প্রায় পূর্ণ এবং সে মানচিত্রও বদলে গেছে আমূল। আজো বদলাচ্ছে, দেদার। গলতে থাকা পার্মাফ্রস্ট, তাপে দ্রুত হওয়া টেকটোনিক প্লেটের চলন, তার উপর দু পাশের অভ্যন্তরীণ উপগ্রহের সমান জোয়ার-শক্তি প্রতিনিয়ত উপগ্রহটাকে এমনভাবে উল্টেপাল্টে দেয় অহর্নিশি যে মানচিত্রকারদের দুঃস্বপ্ন দেখতে আর বাকী নেই।
কিন্তু এই একই ব্যাপার উল্টে গেছে, প্ল্যানেটারি ইঞ্জিনিয়াররা এখন আহ্লাদে আটখানা। এ যেন তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস। রুদ্র, অসভ্য, পুরনো মঙ্গলকে হিসাবের বাইরে রাখলে এ-ই সে মহাজাগতিক এলাকা যেখানে একদিন মানুষ চড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখতে পারে; খোলা বাতাসে বুক ভরে নিয়ে। গ্যানিমিড়ে আছে প্রচুর পানি, জীবনের সব রাসায়নিক উপাদান, আর লুসিফার যখন মন-মর্জি ভাল রাখে তখন পৃথিবীর চেয়েও ভাল আবহাওয়ার দেখা পাওয়া যায়।