মুহূর্তের জন্য মনে হল কর্নেল যেন অন্য কিছু চায়। তারপর এ নিয়ে ভালমতো চিন্তা করে, সঠিক বিদায় জানিয়ে গোমরা মুখে মিশে গেল বাইরে, রাতের কালিগোলা অন্ধকারে।
এতদিন পর এমন তাড়া দিয়ে খবর পাঠানোর কী হল? প্রশ্ন করল ক্যারোলিন, প্রয়োজনীয় হোক বা নাহোক, আজ রাতে কোনো মেহমান আসার কথা নেইতো!
গেস্টের কথা ছাড়, আমার উপর হুকুম করাকে ঘৃণা করি, বিশেষত ভিক্টর মিলসন,..
কর্নেল রিপোর্ট করার সাথে সাথেই সে তোমাকে ডাকবে।
এবং তখন অবশ্যই আমাদের ভিডিওর সুইচ অফ থাকবে। শব্দ করতে হবে, যেন ঘরে কয়েকজন আছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে, এখন আমার কিছু বলার নেই।
যদি প্রশ্ন করি, কী নিয়ে কিছু বলার নেই?
স্যরি, প্রিয়তমা, তোমাকে বলা হয়নি। মনে হয় ডিসকভারি চালাকি করছে আমাদের সাথে। ভেবেছিলাম কক্ষপথে আছে ডিসকভারি, এখন দেখা যাচ্ছে, ধ্বংসের পথে।
পড়ে গেছে ভিতরে?
না-তা একেবারে অসম্ভব। স্পেস শিপটা বৃহস্পতি-আইওর মাঝখানে যথেষ্ট দূরত্বে পার্ক করা। সেখানেই থাকতে হবে, অবশ্য বাইরের দিকের চাঁদের আকর্ষণ সামনে পেছনে ঘোরাবে।
কিন্তু এখন খুব খারাপ কিছু একটা হচ্ছে, যার পূর্ণ ব্যাখ্যা আমরা জানি না। স্পেসশিপটা দ্রুত আইওর দিকে ভেসে যাচ্ছে-মাঝে মাঝে দ্রুত যায় এমনকি মাঝে মাঝে চলে আসে পেছনের দিকেও। এ অবস্থা চলতে থাকলে দু-তিন বছরের মধ্যে সোজা পড়ে যাবে আইওর বুকে।
আমি ভেবেছিলাম অ্যাস্ট্রোনমিতে এমন হতে পারে না। এটা কি আকাশ বিষয়ের বলবিদ্যা না যাকে প্রকৃত বিজ্ঞান হিসাবে ধরা যায়? তার মানে আজো
আমরা তথাকথিত নিঃস্ব পিছিয়ে পড়া জীববিজ্ঞানীর পর্যায়ে পড়ে আছি?
যখন সবকিছু হিসাবের মধ্যে আনা হয়, তখন তা প্রকৃত বিজ্ঞান। কিন্তু খুব অদ্ভুত কিছু ব্যাপার ঘটছে আইওর ক্ষেত্রে। এর আগ্নেয়গিরির কথা বাদ দিলেও প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক বিচ্ছুরণ ঘটছে-তার উপর বৃহস্পতির চৌম্বকক্ষেত্রের চারদিকে ঘুরছে প্রতি দশ ঘণ্টা অন্তর। বোঝাই যায় শুধু মাধ্যকর্ষণ বলই ডিসকভারিকে টেনে নামাবে না… এ নিয়ে আমাদের তাড়াতাড়ি ভাবতে হবে।
অল রাইট, এটা আর তোমার সমস্যা না। এজন্য তোমার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
তোমার সমস্যা-ঠিক একই কথা দিমিত্রিও বলেছিল। আর দিমিত্রি, একটা ধূর্ত বুড়ো খেকশিয়াল!
ক্যারোলিনের অনেক আগ থেকেই ফ্লয়েডকে চেনে দিমিত্রি। এটা ফ্লয়েডের সমস্যা না হতে পারে, কিন্তু এখনো আছে তার দায়দায়িত্ব। আরো অনেকে জড়িত এতে, কিন্তু শেষ বিশ্লেষণে বৃহস্পতি অভিযানের জন্য পরিকল্পনাটা ফ্লয়েডই অনুমোদন করেছিল। দেখাশোনা করেছে পরিকল্পিত কাজগুলো।
ফ্লয়েড বিবেকের অস্বস্তিতে ভোগে, একজন বিজ্ঞানী হিসেবে উল্টো কাজ করাটা কি ঠিক? তারই প্রজেক্ট এই ডিসকভারি। তার ভাবনা একজন আমলার মতো। মিশন ব্যর্থতার কথা তুলে সে পুরনো প্রশাসনের অদূরদর্শী রাজনীতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে পারত, পারত বিরোধিতা করতে-যদিও কী পরিমাণে সেগুলো বিপর্যয়ে প্রয়োগ করা হয়েছিল তা তখনও পর্যন্ত অনিশ্চিত।
জীবনের এ অধ্যায়ের পাট চুকিয়ে দিলেই সবচে ভাল হয়, তার এ সব চিন্তা ও কর্মশক্তি নতুন পেশায় দেয়া যায় সহজেই। কিন্তু মন থেকেই সে জানে, অসম্ভব; দিমিত্রি পুরনো পাপ না করলেও সেগুলো স্বেচ্ছায় ভেসে উঠতো।
চারজন লোক মারা গেছে, আর একজন অদৃশ্য গ্রহ-চাঁদের মেলায়।
ডক্টর হেউড ফ্লয়েডের হাতে কয়েক বছর যাবৎ লেগে আছে রক্ত, সে জানে না কীভাবে এসব ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়।
৩. এস এ এল ৯০০০
ডক্টর শিবশুমানিয়া চন্দ্রশেখরাম পিল্লাই, আরবানার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রফেসর, অপরাধের চিরন্তন বিচারবুদ্ধি তারও আছে। কিন্তু সে হেউড ফ্লয়েডের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন ব্যক্তিত্বের লোক। তার ছাত্র এবং সাথীরা সন্দেহ করে এই বেঁটেখাটো বিজ্ঞানী হয়ত পুরোপুরি মানবীয় নয়। তারা জেনে অবাক হবে না যে সে কখনো মৃত নভোচারীদের সম্পর্কে ভাবেনি। ড. চন্দ্রের কষ্ট কেবল তার হারানো শিশু, হাল ৯০০০ এর জন্য। এমনকি এত বছর পরেও।
ডিসকভারি থেকে রেডিওতে পাওয়া ডাটার উপর সে অপরিসীম পর্যালোচনা করেছে। তার পরও নিশ্চিত হতে পারেনি-কোথায় ছিল ভুলটা। সে শুধু তথ্যগুলো ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু সত্যি ঘটনাটা তার জানা দরকার। আর সত্যটা হালের সার্কিটে বন্দী, সৌর জগতের অন্য পাশে, বৃহস্পতি এবং আইওর মাঝখানে।
ট্র্যাজেডির মুহূর্ত পর্যন্ত ঘটনা পরিষ্কারভাবে সবার জানা; সেখানে কমান্ডার বোম্যান আবার যোগাযোগ করে। তারপর দেয় কিছু বিস্তারিত বর্ণনা। কিন্তু সমস্যার কথা জেনেও কেন যেন ব্যাখ্যা করেনি।
ভেসে চলেছে ডিসকভারি, গ্রহরাজের দিকে। পৃথিবী তখন দু আলোক ঘণ্টা দূরে। জন্মদিনের পার্টিতে নাক গলালো বুদ্ধিমান কম্পিউটার হাল, সেই বিখ্যাত কথা, …আমরা একটা সমস্যায় পড়েছি।
হ্যাঁ, যে ডিশটা এতোদূর থেকেও নিখুঁতভাবে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করে তার নাম ই ভি এ। ই ভি এ-কে সেদিকে আবদ্ধ রাখে ছোট্ট একটা জটিল সার্কিট, সার্কিটটাও শিপগাত্রের বাইরে, অ্যান্টেনার ভিতে বসানো। হাল জানায়, সেটা নষ্ট হবে দুদিনের মধ্যে। ফলাফল সবার জানা-হারিয়ে যাবে পৃথিবী, হারাবে যোগাযোগ, তারপর শিপে বসে হাতেনাতে অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে এখান থেকে পৃথিবীকে খুঁজে পাওয়া আর মহাসমুদ্রে তলানো পিন তুলে আনা সমান কথা। তাই, বেরিয়ে গিয়ে ইউনিটটা তুলে আনা উচিত।