যতোটা সম্ভব, নিরপেক্ষ স্বরে ফ্লয়েড উত্তর দিল, ভিক্টর, আছি কেমন আমি অভিযোগ করতে পারি না। অনেক অনেক ভাল। কী সমস্যা?
সার্কিটটা কি নিরাপদ?
না, আমি আর এমন কোনো কাজ করি না যে আমাকে গোপন সার্কিট ব্যবহার করে বিদেশী গুপ্তচরের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
হু। আচ্ছা, আমি এটাকে এভাবেই রাখবো। তোমার পরিচালিত শেষ প্রজেক্টের কথা কি মনে আছে?
সম্ভবত ভুলিনি। এই মাসখানেক আগেও নভশ্চরণবিজ্ঞানের সাব কমিটি আমাকে আরো প্রমাণ দিতে ডেকেছিল, ভুলি কী করে?
অবশ্যই, অবশ্যই। আসলে আমার নিজের জন্যই তোমার দেয়া বিবৃতিটা পড়া উচিত, যখনই এক মুহূর্ত সময় পাই। কিন্তু ফলো-আপ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় রাতদিন; সেটাই সমস্যা।
আমি ভেবেছিলাম সিডিউল অনুসারে ঠিকঠাক চলছে সবকিছু।
দুর্ভাগ্যচলেনি। আমাদের এগিয়ে যাবার কোনো পথই নেই; সবচে বেশি অগ্রাধিকার দিলেও মিশন শুরুর দিনটা মাত্র কয়েক সপ্তাহ এগিয়ে আনা যেত। মোদ্দা কথা, আমাদের অনেক দেরি হবে।
সরল ভাব দেখিয়ে ফ্লয়েড বলল, বুঝলাম না।
আমরা সময় নষ্ট করতে চাই না-অবশ্যই চাই না; কিন্তু বাস্তবে সময়সীমাটা বেঁধে দেয়া নেই।
এখন এক বচন করার সময় শেষ-বহুবচন বল। কাজ করছে দুটো ব্যাপার। ফ্লয়েড ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে।
অবাক করছ তুমি আমাকে।
ভিক্টর যদি কোনো ভোগান্তি দেখে থাকে সেটা ফ্লয়েডের সমস্যা নয়। ফ্লয়েড এড়িয়ে গেল তার উদ্বেগকে, হ্যাঁ দুটো সমস্যা সামনে-একটা মানুষের বানানো; অন্যটা না। সবচে বড় কথা, আমরা সবার আগে সেখানে যেতে পারব না। পুরনো শত্রুরা কমপক্ষে এক বছর আমাদের মনে আঘাত করবে।
খবর খারাপ।
খারাপ না। এমনকি তারা প্রতিযোগিতা না করে গেলেও আমাদের অনেক দেরি হবে। পৌঁছে সেখানে কিছু পাব না।
হাস্যকর। আমি নিশ্চিত কংগ্রেস যদি মাধ্যাকর্ষণ আইন বাতিল করত, আমি শুনতাম।
আমি সিরিয়াস। পরিস্থিতি সুবিধার না-এখন বর্ণনা দিতে পারব না। তুমি কি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে ওখানে?
হ্যাঁ। মধ্যরাতের পর ওয়াশিংটনে একটা ভাল তোলপাড় হবে, শান্তির সাথে ভেবে ফ্লয়েড উত্তর দিল।
চমৎকার। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একটা প্যাকেজ পাবে। পড়ে আমাকে কল করো।
দেরি হয়ে যাবে না?
তা হবে। কিন্তু আগেও প্রচুর সময় নষ্ট করেছি। আর নষ্ট করতে চাই না। মিল্টন সময়মতো পাঠায় জিনিসটা। ঠিক এক ঘন্টা পর এয়ার ফোর্সের একজন কর্নেলের মাধ্যমে সিলমোহর করা এক বিরাট খাম পেল ও। ফ্লয়েড এর সারমর্ম পড়ার সময় কর্নেল ক্যারোলিনের সাথে ধৈর্য ধরে খোশগল্প করে নিল, ভদ্রভাবে।
মনে হয় আপনি পড়ে শেষ করলে এটা আমাকে নিয়ে যেতে হবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বার্তাবাহক কৈফিয়ত দিল। পড়ার প্রিয় দোলনা বিছানায় আরাম করে বসে ফ্লয়েড বলল, শুনে খুশি হলাম।
দুটো ডকুমেন্ট, প্রথমটা খুব ছোট। উপরে টপ সিক্রেট সিল আঁটা। টপ কথাটা কেটে ফেলা হয়েছে এবং সংশোধনী তিনটা সই করে অনুমোদন করা, সবগুলোই পুরোপুরি অস্পষ্ট। বোঝাই যায়, কোনো বড় প্রতিবেদনের অংশ এটা। ভালমতো পরীক্ষা করা হয়েছে বারবার। ফাঁকা জায়গায় ভর্তি দেখে পড়তে বিরক্ত লাগে। উপসংহার একটা বাক্যে লেখা: রাশিয়ানরা ডিসকভারিতে পৌঁছবে এর আইনসম্মত মালিক পৌঁছার অনেক আগে। ফ্লয়েড আগেই তা জানত, সে দ্রুত মন ফেরালো দ্বিতীয় ডকুমেন্টের দিকে। এবার আর তারা নামে ভুল করেনি দেখে খুশি হয়েছে। অনেকটা। দিমিত্রি যথারীতি নির্ভুল। মহাশূন্যযান নভোচারী এলেক্সি লিওনভ মানুষসহ অভিযানে বৃহস্পতির দিকে রওনা দেবে এবার।
দ্বিতীয় ডকুমেন্ট অনেক বড় এবং স্রেফ গোপনীয়; প্রকাশের আগে অনুমোদনের অপেক্ষায় এটা ছিল বিজ্ঞানের এক খসড়া পত্র। শিরোনাম প্রাণবন্ত, মহাশূন্যযান ডিসকভারি: ব্যতিক্রমী কাক্ষিক আচরণ।
তারপর অঙ্ক ও জ্যোতির্বিদ্যার ছকের এক ডজন পাতা। আমেরিকান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাস্ট্রোনটিক্স ফাঁদে পড়েছে। ডিসকভারির খোঁজ নিতে পারেনি ঠিকমতো। ফ্লয়েড মনে গানের সুর তুলে চোখ বুলিয়ে গেল এগুলোয়। চেষ্টা করল নিজেদের কাজ সমর্থনের বা অস্বস্তির ছোটখাট লেখা খুঁজে বের করার। শেষ পর্যন্ত অবাক হয়ে কষ্টের এক হাসি দিল সে। সম্ভবত কেউ ভাবেনি যে মহাশূন্যযানের সঙ্গে যোগাযোগকারী ট্র্যাকিং স্টেশন ও ক্যালকুলেটরে অবাক করা তথ্য ধরা পড়তে পারে। উত্তেজিত মনোভাব গোপন করার কাজ চলছে। কিছু লোক অবশ্যই চাকরি হারাবে এবং সে জানে, ভিক্টর মিলসন তাদের বরখাস্তে মজা পাবে-যদি সে নিজেই প্রথম পর্যায়ে বাদ না পড়ে। কংগ্রেস যখন ট্রাকিং নেটওয়ার্কের বরাদ্দ কেটেছিল তখন সে খুব চেঁচিয়েছে। হয়ত টাকা কাটায় ডিসকভারির খোঁজ নেয়া যায়নি এ কথাটা তাকে বাঁচাবে, কে জানে।
ধন্যবাদ, কর্নেল পেপারে চোখ বুলাননা শেষ করে ফ্লয়েড বললো সাজানো গোছানো দলিল আমার খুব ভাল লাগল। পুরোপুরি আগের মতো। ঐ একটা জিনিস আমি মিস করিনি।
কর্নেল খামটা যত্ন করে ব্রিফকেসে রেখে লক করে দিল।
ড. মিলসন তার ডাকের জবাব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাওয়ার আশা করবেন।
আমি জানি। কিন্তু আমার নিরাপদ সার্কিট নেই, কয়েকজন নামী মেহমানও আসছেন। আমি যে দুটো ডকুমেন্টই পড়েছি একথা বলার জন্য হিলোতে আপনাদের অফিসের দিকে যেতে পারব না। গেলে আমার বারোটা বাজবে। তাকে বলবেন আমি সেগুলো ভালমতো পড়েছি, পরের যে কোনো যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করব।