আমি আবার দাচায় নির্বাসিত হওয়ার মতো যথেষ্ট গোপন কথা বলেছি-হয়ত পরে আর আমাদের দেখা করতে দেবে না গোয়েন্দা সংস্থার টিকটিকিগুলো। সুতরাং তোমাদের ট্র্যাকিং এক্সপার্টদের বল আরো যত্নের সাথে কাজ করতে, বলবে তো? তাদের মনে করিয়ে দাও যে সৌর জগতের সবচে বড় ম্যাগনেটোস্ফিয়ারটা বৃহস্পতির।
বুঝলাম-অনেক ধন্যবাদ। নিচে যাবার আগে আর কিছু বলবে? আমি ফ্রিজ করব এখন।
ভয় পেও না বন্ধু। তুমি অভিজ্ঞ। যখনই এসব অবাঞ্ছিত সংকেত বাতিল করার ফিল্টার ওয়াশিংটনে পাঠাবে-তখন থেকে সপ্তাখানেক অপেক্ষা কর। পরিস্থিতি খুব গরম হয়ে যাবে। খুব্বি উত্তপ্ত।
২. বাড়ির ভেতর ডলফিন
ডলফিনরা প্রতি সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার ঠিক আগে ডাইনিং রুমে সাঁতার কাটে। ফ্লয়েড যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যের বাসায়-এরা রুটিন ভেঙেছিল তখনি, মাত্র একবার। পাঁচ নম্বর সুনামির দিন আসেনি। সৌভাগ্যক্রমে হিলোতে পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে জলোচ্ছ্বাসটা। পরে ফ্লয়েডের বন্ধুরা সময় মতো আসতে না পারায় ফ্লয়েড তার পরিবারকে গাড়িতে তুলে মুনা কি এর দিকে উঁচু জায়গার খোঁজে এগিয়ে যায়।
এরা দারুণ, কিন্তু তাকে স্বীকার করতে হয়েছে যে এদের কৌতুক প্রবণতা মাঝেমাঝে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে। এক স্বাস্থ্যবান সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ বাড়িটির ডিজাইন তৈরি করেছিল। ভিজে যাওয়াতে সে কখনো কিছু মনে করত না, কারণ সাধারণত স্নানের পোশাক পরাই ছিল সেই লোকটার বৈশিষ্ট্য।
কোনো এক সদস্যের অপেক্ষায় যখন সন্ধ্যার পোশাক পরা পরিচালনা পরিষদের বাকি সদস্যেরা পুলের চারিদিকে একটু একটু করে চুমুক দিয়ে ককটেল পান করছে, তখন হল এক মজার ঘটনা। ডলফিনরা বুঝতে পেরেছিল দ্বিতীয়বার আদর পাবে; সাথে খাবারও। সুতরাং ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার লোক পরে এমন ঢিলেঢালা পোশাক পরা একটা নোংরা ডলফিনকে রিসিপশন কমিটি সাদরে গ্রহণ করে দারুণ মজা পেয়েছে। বুফে ছিল খুবই নোতা।
ফ্লয়েড প্রায়ই চিন্তা করত-প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে বানানো আমার অদ্ভুত আর সুন্দর বাড়ি দেখলে ম্যারিয়ান কী ভাবত! ও কখনো সমুদ্র পছন্দ করেনি, শেষে সাগরই জিতেছে তার ওপর। সময় মানুষের শোককে ধীরে ধীরে বদলে দেয়। এখনো আলো ঝলকের মতো তার মনে পড়ে খবরটার কথা যার মধ্যে প্রথম শব্দগুলি ছিল ভয়াবহ : ড, ফ্লয়েড-জরুরি এবং ব্যক্তিগত। এবং তারপর ফুরেসেন্ট প্রিন্টের পাকানো কাগজের সাইনগুলো মেসেজ পাঠিয়ে দ্রুতবেগে তার হৃদয় জ্বালিয়ে ফেলে : আপনাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, লন্ডন-ওয়াশিংটন ফ্লাইট ৪৫২ নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে ক্র্যাশ করেছে বলে জানা গেছে। উদ্ধার শিপ লোকেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভয়-কেউ বেঁচে নাও থাকতে পারে।
ভাগ্য অন্যদিকে না ঘুরে গেলে সেও ঐ ফ্লাইটে থাকতে পারত। কিছু দিন ধরে ইউরোপে মহাশূন্য প্রশাসন ব্যবসা ভাল লাগছিল না। তাই প্যারিসে আরো কদিন থেকে যায় ফ্লয়েড; পাইলট সোলারিসের সাথে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষিই শেষ পর্যন্ত তার জীবনটা বাঁচিয়ে দিল। অবশ্য সে এভাবে ব্যপারটা ভাবতে চায় না।
এখন একটা নতুন চাকরি, এক নতুন বাড়ি এবং একজন নতুন স্ত্রী থাকলেও ভাগ্য এখানে সহায় হয়নি। পাল্টা অভিযোগ এসেছে বারবার। আর সেই বৃহস্পতি মিশনের উপর তদন্ত চলল আরো কতবার তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এ সমস্ত ব্যাপার মিলে ওয়াশিংটনে ধ্বংস হয়েছে তার ক্যারিয়ার, কিন্তু যোগ্য মানুষ তার যোগ্যতার জন্যেই কখনো দীর্ঘ সময় বেকার থাকে না। আরো ধীর লয়ের ইউনিভার্সিটির জীবন সব সময়ই তাকে টানত এবং পৃথিবীর সবচে সুন্দর এক এলাকার সাথে গাঁটছড়া বাঁধার পর তার মনে হয় এমন কিছু হতোই, এটাই তার সার্থক গন্তব্য। চাকরির একমাস পরে যখন একঝাঁক টুরিস্টের সঙ্গে কিলাওয়ায় অগ্নিঝর্না দেখছে তখনই হবু দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়।
ক্যারোলিনের কাছে হেউড ফ্লয়েড সন্তুষ্টি খুঁজে পেয়েছে। এ তুষ্টি ঠিক সুখের মতো দামি, সুখের মতো স্থায়ী। ম্যারিয়নের দুকন্যার একজন ভাল সৎ মা। তাকে উপহার দিয়েছিল প্রথম পুত্র। ক্রিস্টোফার। বয়সে কুড়ি বছরের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মেয়েটা তার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারে। ভাল করে দেয় মনটা। ভাগ্যকে ধন্যবাদ, সে এখন দুঃখবোধ ছাড়াই ম্যারিয়নের কথা গভীরভাবে মনে করতে পারে। কিন্তু মনমরা ও ব্যাকুল ভাব থেকেই যায়, এটুকু জীবনের বাকি সময় থাকবে সঙ্গে সঙ্গে।
ফ্লয়েড হাতের মৃদু ইশারায় ডাকল ক্যারোলিনকে। সে মাছ ছুঁড়ছিল বড় পুরুষ ডলফিন-যাকে তারা স্কারব্যাক বলে ডাকে-ওটার দিকে। নীরব সংকেত আসছে কমসেট থেকে। ক্যারোলিনের আগেই কথা বলার জন্য সে সরু ধাতব ব্যান্ডে টোকা দিয়ে হেঁটে চলে গেল কাছের ঘরে ছড়ানো কমসেটের দিকে। এ যোগাযোগের যন্ত্রগুলো ভালই কাজ দেয়।
চ্যান্সেলর বলছি। কে?
হেউড? আমি ভিক্টর। আছ কেমন? এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে অনুভূতির এক সম্পূর্ণ প্রবাহ ফ্লয়েডের মনে বিদ্যুতের মতো চমকে ওঠে। বিরক্ত হয় অনেকটা। ফোন করেছে তার উত্তরসূরি, সেই এন সি এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ফ্লয়েড নিশ্চিত, তার সর্বনাশের পেছনে এ লোকই দায়ী। সে ওয়াশিংটন থেকে চলে আসার পর কখনো একবারও তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি ভিক্টর। কিন্তু রাগ ভাবটা একটু কমে গিয়ে এল আগ্রহ; তারা কী বলতে চায়? কিন্তু ফ্লয়েড তো কিছুতেই তাদের উপকার করবে না। তারপর এল শিশুসুলভতার জন্য লজ্জা এবং সবশেষে এক উত্তেজনার উচ্ছ্বাস। ভিক্টর মিলসন তাকে ডাকতে পারে মাত্র একটা কারণে।