সম্ভবত ক্যাথেরিনা। প্রত্যেকের সাইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স পরীক্ষার জন্য। যাই হোক, গত সপ্তায় ছবিটা দেখার সময় তুমি ঘর ফাটিয়ে হেসেছিলে।
ব্রেইলোভস্কি একদম চুপসে গেল-কার্নো ভুল কিছু বলেনি। সে সময়টা নিজের স্পেসশিপ লিওনভে উষ্ণ আর আলোয় ভরা পরিবেশে ও কাটিয়েছে বন্ধুদের মাঝে-কোনো পিচ কালো বরফ হয়ে যাওয়া স্পেসশিপে নয়। যেভাবেই বলা হোক না কেন, এ শিপটা ভূতে পাওয়া। একবার যেহেতু এলিয়েন পশু দেখা দিয়েছে বৃহস্পতির কোথাও-আর ভয় না পাবার যুক্তি খোঁজার দরকার নেই। এখন কোনো এক অপ্রতিরোধ্য এলিয়েন জন্তুর কল্পনা করা একেবারে সহজ যে আঁধার করিডোরগুলো বেয়ে চলেছে এমন কিছু পাওয়ার আশায় যা হয়ত সে দশ বছর ধরে খাচ্ছে না। আঁধার খুব ভয়াবহ। কোনো মানুষের সাহস মাপার শ্রেষ্ঠ নিক্তি হতে পারে ডিসকভারি। বাসা থেকে শত শত কোটি মাইল দূরে, শিকারী এলিয়েনের এলাকায় দশ বছরের রহস্যঘেরা আর আইওর সালফার ধুলায় বোঝাই এক শিপ যা শুধু অন্ধকারে ভরা, যার পাঁচ সদস্যই তিনটা আচমকা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল। সেই স্পেস ক্রুদের লাশ যে নেই তাই বা কে জানে?
এর পুরোটাই তোমার দোষ-দাদী (হয়ত তুমি আজ সাইবেরিয়ান তুন্দ্রা অঞ্চলে তোমার ভালবাসা মাখা কঙ্কাল নিয়ে শুয়ে আছ।)-আশা করি আমার মনটাকে সারা জীবনের জন্য ঐসব ভয়াল রূপকথায় ভরে দাওনি। আজও চোখদুটো বন্ধ করলে সেই বাবা যোগীকে দেখি যে সবুজ বনের মাঝে থাকা তার ছোট্ট কুঁড়ের ভেতর থেকে মাংস ছাড়া মুরগীর পাগুলো পরিষ্কার করছে…
যথেষ্ট হয়েছে। আমি একজন মেধাবী তরুণ ইঞ্জিনিয়ার যে রাশিয়ার সবচে গুরুত্ববহ মহাকাশ মিশনে সবচে বড় চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করবে। আমি যে প্রায়ই ভয় পাওয়া এক ছোট ছেলে তা কস্মিনকালেও আমেরিকান বন্ধুকে জানাতে চাই না…
ডিসকভারি এবার আলোর দিকে। ভেতরে সেই একই অন্ধকার। শব্দটা ভয় কাটাতে মোটেও সাহায্য করল না-বরং আরো বাড়িয়ে দিল। অনেক শব্দ। সেগুলো এত ক্ষীণ যে স্পেস স্যুটের আওয়াজ ছাপিয়ে অভিজ্ঞ একজন অ্যাস্ট্রোনট ছাড়া আর কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু ম্যাক্স ব্রেইলোভস্কি মৃত্যুপুরীর নিরবতায় কাজ করে করে একজন অভ্যস্ত মানুষ। শব্দগুলো উল্টো পথে স্নায়ুতে আঘাত করছে যদিও ও ভালমতোই জানে যে এটাই নিয়ম, হঠাৎ করে আলোতে গেলে ছোটখাট ক্যাচক্যাচ এমনকি বিস্ফোরণের শব্দও হতে পারে। কারণ শিপটি এক কয়লা আগুনের গোলার উপরে রোস্ট করতে থাকা কোনো প্রাণীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে গত দশ বছর। এটা বৃহস্পতীয় এলাকা, তাই যখন ডিসকভারি গ্রহরাজের পেছনে থাকে-তখন অকল্পনীয় ঠাণ্ডা। যখনি সূর্যের দেখা পাবে, তখন বরফের আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে সৌর জগতের আলোক দেবের কাছেতো অভিযোগ জানাবেই। আলো আর আঁধারের মাঝে এখানে সব সময়ই বড় ব্যবধান।
মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো এবার তার স্পেসস্যুটও সমস্যা শুরু করে। এখন ব্রেইলোভস্কি উভয় সংকটে। স্যুটের জয়েন্টের উপর কাজ করা সব শক্তি বদলে গেছে ভয়ংকরভাবে। এমনকি সে আর নিজের মনের গতিবিধি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আমি এক আনাড়ী-মাত্র নিজের ট্রেনিং শুরু করতে বসেছি… সে রেগে গিয়ে নিজেকেই বলতে লাগল। কোনো ঘটনা এ অবস্থাটা ভেঙে দেবে। এখনি…
ওয়াল্টার, চল এটমোস্ফিয়ার পরীক্ষা করে দেখি।
চাপ ঠিক আছে। তাপমাত্রা…কমই। শূন্য থেকে একশো পাঁচ ডিগ্রি কম।
দারুণ! রাশিয়ান আবহাওয়ার মতোই। আঁটসাট। যেভাবেই হোক, আমার স্পেসস্যুটের ভিতরের বাতাস ঠান্ডাটাকে দূরে সরিয়ে রাখবে।
আমরা এগিয়ে যাব। কিন্তু তার আগে আমার লাইটটা তোমার চেহারায় বুলিয়ে নিই। তুমি নীল হয়ে যেতে নিলে যেন বুঝতে পারি। কথা বলতে থাক।
ব্রেইলোভস্কি ওর ভিজর আনলক করে মুখের সামনের প্লেটটা সরিয়ে দিল। কয়েকটা বরফ শীতল আঙুল ওর গালে আদর বুলিয়ে দিলে ও লাফিয়ে ওঠে ভয়ানকভাবে। ঠিক ফিঞ্চের মতো-যেগুলো দানা খুঁটে খাওয়ার সময় মানুষ দেখলে লাফায়। এরপর একটা গভীর শ্বাস নিল-ভয় থেকে বেঁচে যাওয়ার শ্বাস।
ঠাণ্ডা… কিন্তু আমার লাংস এখনো জমে যাচ্ছে না। একটা মজার গন্ধ পাচ্ছি। পুরনো, একেবারে পুরোনোই মনে হচ্ছে, যেন কিছু একটা… ওহ! না! আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে হঠাই ব্ৰেইলোভস্কি ফেসপ্লেট নামিয়ে ফেলল।
কী ব্যাপার, ম্যাক্স? এই প্রথম ব্যগ্র মনোভাব নিয়ে প্রশ্নটা করল কার্নো। কোনো জবাব নেই ব্রেইলোভস্কির পক্ষ থেকে। দেখে বোঝাই যায় নিজেকে ফিরে পেতেই ব্যস্ত রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার। আসলে ওকে দেখে মনে হচ্ছে ঐ চিরকালীন ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হবে এবার। অন্তত স্পেসসুটের জন্য আসলেই সব সময় ভয়াবহ। বমি করেই বসবে হয়ত।
দীর্ঘ নিরবতা। এরপর কার্নো ভরসা দেয়ার সুরে বলল, আমিই যাচ্ছি ভিতরে। সত্যি, আমি নিশ্চিত তুমি কোনো না কোনো ভুল করেছ। সবাই জানে, পোল হারিয়ে গেছে মহাশূন্যে। বোম্যান রিপোর্ট করেছে যে ও… আর সবাইকে বাইরে ফেলে দিয়েছে যারা মরেছিল হাইবারনেশনে থাকতেই। ডেভিড একজন মহাকাশযান অধিনায়ক আমরা ধরেই নিতে পারি কথাটা ঠিক। আর তার স্পেসস্যুটটাতো আমরা পোড বে তেই পেলাম। এখানে কেউ থাকতে পারে না। স্থানটা ভয়ানক ঠাণ্ডা। আরো কিছু বলে বসল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভুলে গিয়ে, ঠাণ্ডাটা লাশকাটা ঘরের চেয়েও বেশি…