সে এয়ারলক স্ট্যাটাস লেখার উপরের সালফার আবরণ সরিয়ে হতাশ হল।
মরা, অবশ্যই। দশটা বছর… আমি কি ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করব?
করলে ক্ষতি নেই-তবে লাভও নেই।
তোমার কথাই ঠিক, আচ্ছা… ম্যানুয়ালি যাচ্ছি…
বাঁকাচোরা দেয়ালের চুলের মতো চিকণ রেখাটাকে বড় হতে দেখা এবং তা থেকে হাল্কা ধোয়ার স্পেসে বেরিয়ে যেতে দেখাটা ভয়ংকর। সাথে একটা ছোট কাগজের টুকরোও হারিয়ে গেল মহাকাশে। কোনো মেসেজ নাকি? তারা কোনোকালেই জানবে না। জিনিসটা একইভাবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে গেল তারার মেলার ওপাশে।
ব্রেইলোভস্কি অনেকক্ষণ ধরে ম্যানুয়াল কন্ট্রোলটা ঘোরাচ্ছে। কালো, রাগী চেহারার পথটা এক সময় গেল খুলে। কার্নো আশা করেছিল অন্তত ইমার্জেন্সি লাইটগুলো এখনো কাজ করছে, কিন্তু তেমন ভাগ্য নেই তার।
তুমিই এবার বস, ওয়াল্টার। আমেরিকান এলাকায় স্বাগতম।
ভিতরে ঢুকে পরিবেশটা তেমন স্বাগত মনে হচ্ছে না। অন্তত তার হেলমেটের আলো চারপাশে পড়ার পর এমন কথা মনে হতেই পারে। যতটুকু মনে পড়ে তার, সবতো ঠিকই আছে। এরচে বেশি কী আশা করেছিলাম আমি? রেগে নিজেকেই প্রশ্ন করল সে।
ম্যানুয়ালি দরজাটা বন্ধ করতে সময় লাগল আরো বেশি, কিন্তু আর কোনো বিকল্প নেই পাওয়ার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত। বন্ধ করে দেয়ার আগের মুহূর্তে কার্নো বাইরে তাকানোর একটু ঝুঁকি নিল।
বিষুবরেখার কাছাকাছি একটা দোলায়মান নীল সমুদ্র দেখা যায়, নাকি হ্রদ? সে নিশ্চিত, এটা কয়েক ঘণ্টা আগেও সেখানে ছিল না। উজ্জ্বল হলুদ আলো হল সোডিয়ামের গলিত রূপের বহিঃপ্রকাশ। আলোটা দেখা যায় হ্রদের আশপাশে। আর রাতের পুরো আকাশ প্লাজমা ডিসচার্জে ভরা। প্লাজমার ভৌতিক নিঃসরণ এ উপগ্রহের এক নিয়মিত ছবি।
ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্নের উপাদান এটা। এ-ও যেন যথেষ্ট নয়, এর পরও এক পাগলাটে শিল্পীর পরাবাস্তবতার আরো বহু আঁচড় পড়েছে এর উপর। সরাসরি আগুনের উৎসগুলো থেকে উঠে এসে অদ্ভুত জ্বলন্ত উপগ্রহের আগুন-গোলাগুলো যেন শেষ হয়ে যাওয়া কোনো বুলফাইটারের চোখ, যে মৃত্যু দেখছে সামনে। আর সেই মৃত্যু হল চিকণ হয়ে যাওয়া চাঁদটার দেহ, যেন পাগলা ষাড়ের প্রকাণ্ড শিং।
চিকণ চাঁদের মতো উঠে আসছে বৃহস্পতি। এর অর্বিটে একই পথে চলতে থাকা ডিসকভারি আর লিওনভকে যেন সে স্বাগত জানাবে।
১৮. উদ্ধার অভিযান
অদ্ভুতভাবে ভূমিকা উল্টে গেছে পেছনের হ্যাঁচটা বন্ধ হওয়ার পরই। তৃপ্তি লাগছে কার্নোর। ও এখন নিজের বাড়িতেই। আর ঠিক উল্টোটাই যেন খাটে ব্ৰেইলোভস্কির বেলায়। ডিসকভারির ভিতরের পিচ-কালো করিড়োর আর টানেলের গোলক ধাঁধা তাকে স্বস্তি দিচ্ছে না মোটেও। ম্যাক্স-এ শিপ সম্পর্কে যা জানে তা শুধুই ডিজাইন ড্রয়িং দেখে দেখে। আর কার্নো ডিসকভারির এখনো জন্ম না নেয়া জমজের উপর মাসের পর মাস এত্তো কাজ করেছে যে চোখ বাঁধা অবস্থায় অলিগলি ছুঁড়ে বেড়াতে পারবে-বেশ আরামেই।
কাজ এগুনো খুবই কঠিন। এ অংশটা তৈরিই হয়েছে জিরো গ্র্যাভিটির জন্য। আর অনিয়ন্ত্রিত পাকচক্র এটাকে উপহার দিয়েছে কৃত্রিম অভিকর্ষ। তাও ভাল-কিন্তু গতিটা সব সময়ই আরো বেশি অসুবিধা গড়ে দিচ্ছে কাজের জন্য।
আমাদের প্রথমে যা করণীয়, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল কার্নো, একটা হ্যান্ডহোল্ড ধরার আগে কয়েক মিটার পিছলে গিয়ে, এ মরার বনবনানি থামানো… কিন্তু ইঞ্জিন ছাড়া কোনোকালেও সম্ভব না। আল্লা আল্লা করে শুধু এটুকুই আশা করি যে, ডেভ বোম্যান স্পেসশিপটাকে এতিম করে যাওয়ার আগে যন্ত্রপাতির প্রতি একটু হলেও দয়া দেখিয়েছে।
ও শিপকে মরুভূমি করে চলে গেছে-তুমি শিওর? তার ফিরে আসার ইচ্ছা ছিল হয়ত।
হতে পারে। মনে হয় না কোনোকালে আমরা জানতেও পারব। ও নিজেও যদি নিজের ভিতরটা জানত… সেটাকেও বড় করে দেখা যায়।
ওরা এরই মধ্যে পোড বে তে চলে এসেছে। এটা ডিসকভারির স্পেস গ্যারেজ। সাধারণত এখানে তিনটা আয়তাকার মডিউল থাকে। প্রতিটায় চড়তে পারে মাত্র একজন। স্পেসশিপের বাইরের টুকটাক কাজেই বেশি ব্যবহার করা হয় এগুলোকে। শুধু তৃতীয় পোডটা বাকি। প্রথম খোসাটা ফ্র্যাঙ্ক পোলের রহস্যময় অ্যাক্সিডেন্টে খোয়া গেল। দু নম্বরটা আছে ডেভ বোম্যানের সাথেও যেখানেই থাক না কেন গত দশ বছর ধরে।
পোড বে টায় দুটা বাড়তি স্পেস স্যুটও দেখা যায়। হেলমেট ছাড়া এগুলোকে ভাল দেখাচ্ছে না। মুণ্ডু কাটা এক জোড়া ঝুলন্ত লাশ। আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না–এগুলো দশ বছর ধরে দুজনের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রতীক্ষা তাদের জন্য যারা হাজার বছরেও ফিরে আসবে না। ব্ৰেইলোভস্কির স্যুটটা হয়ত ওদের দুরবস্থা দেখে কাজ বন্ধ করে দেবে।
কার্নোর রসজ্ঞান-বলা ভাল কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন রসজ্ঞান এ মুহূর্তে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অবশ্য এটা দুঃখজনক হলেও অবাক করা ব্যাপার না।
ম্যাক্স, ও একটা ভয়াল সিরিয়াস সুরে বলল, প্লিজ স্পেসশিপের বিড়ালের পেছনে দৌড়াতে যেও না।৯৭।
কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্য ব্রেইলোভস্কি অতলে পড়ে গেল। খুব একটা সহজ না হয়েই বলল, আশা করি তুমি ওটা বোঝাওনি… সাথে সাথেই সংযত করল নিজেকে। এখন দুর্বলতা প্রকাশের সময় না। আবার বলল, যে আমাদের লাইব্রেরিতে ঐ ছায়াছবিটা রেখেছে তাকে দেখে নেব।