ফ্লয়েড আসলে কখনোই ভদকায় মজা পায়নি, কিন্তু নিজের পছন্দ-অপছন্দ না দেখিয়েই আর সবার সাথে যোগ দিয়েছিল বিজয় ড্রিংক পার্টিতে। স্বাস্থ্য কামনা করা হয়েছিল শিপের ডিজাইনারদের আর সবাই ধন্যবাদ দিয়েছিল স্যার আইজ্যাক নিউটনকে। তখন তানিয়া তার বোতলটা কাপ বোর্ডে ফেরত দেয় কারণ আরো অনেক অনেক কাজ বাকি।
সবাই ভেবেছে এমন হতে পারে, তবু বিচ্ছিন্নতার ধাক্কাটায় যেন সবাই হঠাৎ আঘাতের বিস্ফোরণের পরের ছাইয়ে ঢাকা পড়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পরেই এক বিশাল জ্বলন্ত চাকতি ভেসে উঠল চোখের সামনে। একপাশ থেকে অন্যপাশে ঘুরতে ঘুরতে দ্রুত শিপ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সাথে সাথেই শুরু হল মাতাল কথাবার্তা।
দেখ! চিৎকার করে উঠল ম্যাক্স, ফ্লাইং সসার! একটা ক্যামেরা হবে?
এরপর যে হাসিটা বয়ে গেল,সেটার আছে আলাদা ঐতিহাসিক তাৎপর্য। মানসিক মুক্তি আনে এমন হাসি। কিন্তু হাসিটায় বাধা দেয় ক্যাপ্টেনের সিরিয়াস। মনোভাব, বিদায় বিশ্বস্ত হিট শিল্ড, দারুণ কাজ করলে তুমি।
কিন্তু কী আশ্চর্য! বলল শাসা, ওজন হবে কমসে কম দু টন। জিনিসটা না থাকলে বাড়তি কিছুই বহন করতে পারব না।
ওটা ভাল রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং হয়ে থাকলে, বলল ফ্লয়েড, আমিই এর জন্য যথেষ্ট। কয়েক টনকে অনেক বড় মনে করা এক মিলিগ্রামকে সামান্য ভাবার চেয়ে অনেক ভাল।
সবাই তার মহৎ মনোভাবকে বাহবা দেয়। আলাদা হয়ে যাওয়া শিল্ডটা হলুদাভ হয়ে লাল আর সবশেষ হয় চারদিকের মহাশূন্যের মতো কালো রঙা। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়েই হারিয়ে গেল; কোনো নক্ষত্রের আলো ঠিকমতো শিপে পড়লে জিনিসটা দেখাই যেত না।
প্রাথমিক অর্বিট চেক কমপ্লিট। বলল ভ্যাসিলি, আমাদের ডানদিকের ভেক্টরের দিকে প্রতি সেকেন্ডে দশ মিটার যাচ্ছি। প্রথম চেষ্টায় খারাপ না।
সাথে সাথে একটু স্বস্তির আভাস খেলে গেল সবার মনে। কয়েক মিনিট পরে ভ্যাসিলি আরো একটা ঘোষণা দেয়, যাত্রাপথ পরিবর্তনের চেষ্টার ধরন পাল্টাচ্ছি। প্রতি সেকেন্ডে ডেল্টা ভি ছ মিটার। এক মিনিটের মধ্যে বিশ সেকেন্ডের প্রজ্বলন শুরু হবে।
বৃহস্পতি এত কাছে যে এর কক্ষপথ ধরে ঘোরার কথাও বিশ্বাস হয় না। মেঘের সাগর থেকে বেরিয়ে এলে একটা এয়ারক্রাফট থেকে পৃথিবীকে যেমন দেখায় তেমন লাগছে বৃহস্পতিকে। এত বিশালতায় পরিমাপের কোনো হিসাব থাকে না। যেন কোনো পার্থিব সূর্যাস্তের সময় তারা পৃথিবীর আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। নিচের গোলাপী আর লালের লালিমা যেন অতি পরিচিত।
এক ধরনের মোহ; আসলে পার্থিব কিছুর সাথেই এর তুলনা চলে না। রঙটা বৃহস্পতির অংশ। পৃথিবীর গোধূলী লালিমা সূর্য থেকে ধার করা। নিচের গ্যাসগুলো পরিচিত হয়েও অপার্থিব। ভাসছে মিথেন, অ্যামোনিয়া, আর ডাইনীর ক্রুর মতো হাইড্রোকার্বনের মেঘ। কোনো মুক্ত অক্সিজেনের দেখা নেই; মুক্ত শ্বাসের নেই উপায়।
মেঘেরা উঁচু থেকে উঁচুতে সারি সারি বিন্যস্ত। সাধারণত সমান্তরালে থাকে, মাঝে মধ্যে ঘূর্ণিগুলো বিরক্ত করছে মেঘ-সারিকে। এখানে সেখানে উজ্জ্বল গ্যাস উপরে উঠে আসায় সুন্দর লাইনগুলো হয় এলোমেলো। ফ্লয়েড একটা বিরাট ঘূর্ণির কালো প্রান্তের দেখা পেয়েছে, এত নিচে নেমে গেছে ওটা-মেপে শেষ করা যাবে না।
এবার সে গ্রেট রেড স্পটের খোঁজ শুরু করল, সাথে সাথেই নিজেকে একটু বোকাও ভেবে নিল। নিচে যতটুকু দেখা যায়, তার পুরোটা হয়ত গ্রেট রেড স্পটের শতভাগের কয়েকভাগ। কেউ যদি ছোট একটা প্লেন নিয়ে ক্যানসাসের উপর উড়তে উড়তে আমেরিকার ম্যাপটা দেখতে চায়, তাকে বোকা না বলে কী বলা যায়!
সংশোধন শেষ। এবার আমরা আইও আর বহস্পতির মাঝামাঝি একটা স্থির অর্বিটে। এসেছি অষ্টম ঘণ্টার পঞ্চান্ন মিনিটে।
বৃহস্পতি থেকে ন ঘণ্টারও কম সময়ে সরে এলাম, এবার অপেক্ষা করতে হবে যার জন্য আসা। ভাবল ফ্লয়েড। আমরা দৈত্য থেকে দূরে চলে এসেছি-কিন্তু সে কোনো একটা বিপদ পেতে বসে আছে আমাদের জন্য, এবার প্রস্তুত হতে হবে। সামনের সবটা এখনো শুধুই রহস্য।
একবার যেহেতু চ্যলেঞ্জটা পেরিয়ে এসেছি, আরো একবার বৃহস্পতির দিকে যেতে হবেই। ঘরে ফিরতে হলে বৃহস্পতির আকর্ষণ শক্তি দরকার।
১৬. প্রাইভেট লাইনে আলাপ
হ্যালো, দিমিত্রি। উডি বলছি, পনের সেকেন্ডের মধ্যে কি-টু চাপব…হ্যালো, দিমিত্রি-কি-থ্রি আর কি-ফোর তৈরি কর, কিউব করে বর্গমূল দাও, পাইয়ের বর্গ যোগ করে সমষ্টিকে কি-ফাইভ হিসেবে ব্যবহার কর। তোমাদের কম্পিউটার যদি আমাদেরগুলো থেকে লাখো গুণ দ্রুত কাজ করে, তাহলে এ ম্যাসেজ কেউ ভাঙলে ভাঙতেও পারে। আমি জানি, তোমাদেরগুলো লক্ষগুণ শক্তিশালী নয়। আমরাও এটা ভাঙতে পারব না। মনে হয় কিছু ব্যাখ্যা দেবে-এ কাজে তুমি খুব দক্ষ।
যাই হোক, আমার দারুণ একজন সোর্স আছে। সে বলেছে বুড়ো আন্দ্রে এবারও রিজাইন করতে পারেনি। তোমার কর্মকর্তাদের দল আর সবার মতোই ব্যর্থ। এবারও তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে। আমার মাথাটার প্রশংসা করতে হয়, আজো এটা একাডেমিকে ঠিকমতো সেবা দেয়। আমি জানি, বুড়ো নব্বইয়ের উপরে-আর দিনে দিনে হচ্ছে আরো অথর্ব। স্যরি, তাকে সরানোর কাজে আমার কোনো সাহায্যই পাবে না, যদিও আমি বুড়ো বিজ্ঞানীদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার কাজে পৃথিবীর… ধ্যাৎ… সৌর জগতে সবচে বেশি দক্ষ।