অভিযাত্রীদলের দেখা হয়েছিল দুর্ঘটনার সাথে। এর মধ্যে একটা নীরব সচেতনতাও ছিল কারণ তাদের জাতি এমন তাড়াহুড়ো করতে চায়নি।
ইউরোপায় হঠাৎ জীবন আবিষ্কার এ পরিস্থিতিতে যোগ করে এক নতুন মাত্রা। এরই মাঝে হয়ত সেই নতুন মাত্রা ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছে পৃথিবী এমনকি লিওনভেও। কিছু এক্সোবায়োলজিস্ট চিৎকার করে উঠেছেন, আমি আপনাদের তাই বলেছিলাম! সাথে সাথে এটাও বলেন যে, ব্যাপারটা আসলে তত বড় চমক নয়। যতটুকু পেছনে তাকানো সম্ভব-উনিশো সত্তুরের দিকে রিসার্চ ডুবোজাহাজগুলো অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণীর একত্রিশটা কলোনি পেয়েছিল যেগুলো প্রতিকূল পরিবেশেও গঠনের দিক দিয়ে উন্নত। তাদের পরিবেশটা যেকোনো জীবনের জন্য দারুণ বিরূপ। প্রশান্ত মহাসাগরের তলায় অগ্নিগিরির আশপাশে বা ভিতরে গভীর খাদে সেগুলোর বাসা। সেখানে আগুন-ঝর্না প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে বেরিয়ে এসে অতল সাগরের পানিকে অসম্ভব গরম করে তোলে। সাগর তলের মরুভূমিতে মরুদ্যান সৃষ্টি করেছে। প্রাণীগুলো!
যা একবার পৃথিবীতে ঘটতে পারে, তা লক্ষ লক্ষ বার মহাবিশ্বে ঘটেছে বলে আশা করা যায়।
বিজ্ঞানীদের বিশ্বাসের এক অটল অবিচল সিংহাসন এই এক কথা।
পানি অথবা নিদেনপক্ষে বরফ পাওয়া যায় বৃহস্পতির সব চাঁদে। আর আইওতে– অবিরাম গর্জাতে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত চলে সব সময়। তাই পাশের এ বিশ্বে কম ভয়াল অবস্থা আশা করাটা যৌক্তিক। এ দু ব্যাপার এক করে ইউরোপা বানায় জীবন সুধা। পানি আর আগ্নেয়গিরির সহায়তায় জীবন শুধু সম্ভবই নয়-অপরিহার্য। প্রকৃতির আর সব বিস্ময় বেরিয়ে আসে এ গ্রহের পরিবেশের সবটুকু লুকানো অংশ মিলিয়ে দেখলে।
এখনো ঐ সমাধান আরেক প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে যা লিওনভের মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জীবন পাওয়া যায় বৃহস্পতির চাঁদে। এগুলোর কি কোনো সম্পর্ক থাকার কথা টাইকো একশিলাস্তম্ভের সাথে? কোনো সম্পর্ক আছে আইওর কাছের কক্ষপথের জিনিসটার সাথে? ওটাওতো কোনো না কোনো প্রাণীর সৃষ্টি।
সিক্স ও ক্লক সোভিয়েত সভায় ঐ রহস্যময় জিনিসটা বিতর্কের এক প্রিয় বিষয়। সবাই এটুকু বোঝে যে ডক্টর চ্যাংয়ের দেখা জীবটা কোনো উঁচু স্তরের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ রাখতে পারেনি; যদি এটার আচরণ সম্পর্কে তাঁর কথা ঠিক হয়। কোনো প্রাণীই নিজের সহজাত প্রকৃতির কারণে নিজেকে বিপন্ন হতে দিতে পারে না। এমনকি কারণ থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নেয় না কখনো। ওটার বুদ্ধি কি উইপোকার চেয়ে বেশি? বাতির দিকে পতঙ্গের মতোই নিজের জীবন নষ্ট করে এগোয়।
ভ্যাসিলি অর্লোভ দ্রুত আরেক বিপরীত উদাহরণও টানে যা এ যুক্তিকে দেয় দুর্বল করে, এমনকি খণ্ডনও করে, আর ডলফিনদের দিকে একবার তাকাও, সে বলে যায়, আমরা তাদের বুদ্ধিমান বলি, কিন্তু কীভাবে তারাই মাঝেমধ্যে নিজেদেরকে দল বেঁধে খুন করে? করে আত্মহত্যা! এও এক কারণ। বোকামির চেয়ে কারণটাই বড় হয়ে দেখা দিলে বুদ্ধিমান প্রাণী জীবনের ঝুঁকি নিবেই। মানুষ সব কালেই যুদ্ধ করে। সুইসাইড স্কোয়াডও থাকে।
ডলফিনদের কাছে যাওয়ার কোনো কারণ দেখি না, নাক গলালো ম্যাক্স ব্রেইলোভস্কি, আমার ক্লাশের দারুণ মেধাবীদের মধ্যে একজন ইঞ্জিনিয়ার কোনো এক স্বর্ণকেশী কাইভের প্রেমে পড়ার পর শেষবার যখন তার কথা শুনি তখন সে কাজ করত একটা গ্যারেজে। অথচ ও স্পেস স্টেশনের ডিজাইন করার কারণে স্বর্ণপদক পেয়েছিল। মেধার কী অপচয়!
আসলেই, মন সব নষ্টের গোড়া। যে প্রাণীর আবেগ থাকে সে প্রাণী বুঝেশুনে বোকামি করবেই।
যদি ডক্টর চ্যাংয়ের ঐ ইউরোপান বুদ্ধিমান হয়েও থাকে, অবশ্যই উচ্চ স্তরের কোনো প্রাণী না। আবার বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জীববিদ্যা পৃথিবীর নমুনা আর উদাহরণের উপর নির্ভর করে না। তাই বিচারও করা যায় না এক হিসাব মাথায় রেখে।
অতি উন্নত প্রাণিকুল সামুদ্রিক হতে পারে না এমন কথা উঠেছে সবসময়। পৃথিবীকেন্দ্রীক প্রমাণও পাওয়া যায়। উন্নত প্রাণী সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন সমস্যায় ভরা প্রতিকূল পরিবেশ। কিন্তু সমুদ্র ততোটা চ্যালেঞ্জিং কোনো পরিবেশ নয়। পরিবেশটা আরামের। নেই কোনো পরিবর্তন। সর্বোপরি, কীভাবে একটা জলজ সৃষ্টি উন্নয়ন করবে আগুন ছাড়া? অন্তত প্রকৌশল বিদ্যার ক্ষেত্রে? আর প্রকৌশলের ধাপ বন্ধ থাকলে সভ্যতার আর সব দরোজাও তালা দেয়া থেকে যায়।
এখনো অবশ্য সভ্যতার পক্ষে যুক্তি থাকে, মানব সভ্যতা যে রাস্তায় চলেছে তাই হয়ত একমাত্র পথ না। মানুষের সর্বকালের সমস্যা হচ্ছে নিজেকে দিয়ে অন্যের বিচার করা। আরেক রহস্যঘেরা জগতের সম্পূর্ণ সভ্যতাটাই জলের নিচে থাকতে পারে। সৃষ্টিজগতের বাকি সবগুলোই হয়ত তেমন।
একটা ব্যাপার অস্বাভাবিক। কোনো মহাজাগতিক ভয়াবহ সৃষ্টি ইউরোপায় উঠে থাকতে পারে কিন্তু ভুলের কোনো চিহ্ন না রেখে চলে যাওয়াটাই রহস্যময়। নিজের অস্তিত্বের সামান্যতম নিদর্শন না রেখে ঐ সৃষ্টিটা চলে গেল বিশাল গড়ন, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, পাম্প বা আর সব মানব সৃষ্ট জিনিসপত্র স্রেফ ধ্বংস করে দিয়ে। কিন্তু ইউরোপায় এক মেরু থেকে আরেক মেরুতে শুধুই সমতল কঠিন বরফ আর কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রুক্ষ নগ্ন পাথর ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি।