আমার লোকজন একই ক্যালকুলেশন করার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু এখানে দেখি উল্টোপাল্টা অনেক কিছু ভর্তি। পাল্টানো দরকার। মনে হয় এসব ভুলের একটাকে দূর করলাম একটু আগে। তুমি কি জানো যে সবচে ভাল পানি পাম্প কিনতে পারবে শুধু ফায়ার ব্রিগেডের জন্য? শুনে অবাক হবে নাকি, বেইজিং কেন্দ্রীয় স্টেশনে লেটেস্ট মডেলের তেমন চারটা পাম্প ছিল? হঠাৎ করে ওগুলোকে বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। ফায়ার ডিপার্টমেন্ট মেয়রের অধীন নয়, তাও এ কাজে স্বয়ং বেইজিং সিটির মেয়র বাধা দেয়। সরকারের ছিনিয়ে নেয়া ঠেকানো যায়নি।
অবাক হইনি-শুধু মন আরো খারাপ হল; সন্তুষ্ট হতে পারছি না। চালিয়ে যাও প্লিজ। বলল ফ্লয়েড।
হতে পারে কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু ঐ পাম্পগুলোই স্পেসশিপ…বিশেষ করে জিয়াং স্পেসশিপের পানি সংগ্রহের জন্য হবে ঠিক আকারের। পাইপ ছড়ানোর ঠিক ধারণা নেয়া, বরফের মধ্য দিয়ে ছিদ্র করা এবং এমন আরো কিছু কাজ ঠিক আছে, মনে হয় তারা পাঁচ দিনের মধ্যে আবার শিপকে আকাশে তুলতে পারবে।
পাঁচ দিন!
যদি তাদের ভাগ্য ভাল হয় আর সব কিছু ঠিকমতো কাজ করে; যদি তাদের প্রপ্যাল্যান্ট ট্যাংকগুলো ভরতে দেরি না করে। যদি আমাদের আগে ডিসকভারির সাথে নিরাপদ কন্টাক্ট প্লেসে পৌঁছার জন্যে যেটুকু প্রয়োজন স্রেফ সেটুকু ভরে নেয়। এমনকি যদি মাত্র একটা ঘণ্টার জন্য আমাদের টোকা দেয়, ফেলে দেয় পেছনে…তাই যথেষ্ট। ওরা তারপর ডিসকভারিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দেবে। আমরা গিয়ে দেখব স্পেসশিপ ভো ভো। ওরা দাবী করবে যে বেশিকিছু উদ্ধার করতে পারেনি। ব্যস!
কিন্তু ফ্লয়েড আশা ছাড়ার মানুষ নয়, স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইনজ্ঞদের মতো কিন্তু ভিন্ন। ঠিক মুহূর্তে, তারা যাওয়ার আগেই আমরা ঘোষণা দেব যে ডিসকভারি পরিত্যক্ত নয়, শুধু পার্ক করা। পার্ক করা থাকবে যে পর্যন্ত আমরা উদ্ধার করতে না পারি। জাহাজটা দখলের যে কোনো চেষ্টা হবে স্রেফ জলদস্যুতা।
আমি শিওর এত পথ পেরিয়ে এসে এত নরম নরম কথা শুনেই চীনারা যাবে পিছিয়ে! হাহ্! অত্যন্ত ইমপ্রেসড হবে।
না হলে আর কী করতে পারি?
আমরা কিন্তু সংখ্যায় তাদেরচে অনেক বেশি। ওদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে। শুধু চন্দ্র আর কার্নোর জ্ঞান ফিরিয়ে আনব। তানিয়ার কথা ভাবলেশহীন।
তুমি কি সিরিয়াস? জাহাজে জলদস্যুদের সাথে লড়াই করার তলোয়ার কোথায়?
তলোয়ার?
সোর্ড-অস্ত্র?
তানিয়া নিজের অস্ত্রের বর্ণনা দিল, ওহ। আমরা লেসার টেলিস্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করতে পারি। ওটা এক মিলিগ্রাম গ্রহাণুকেও বাস্প করে দেবে। রেঞ্জ এক হাজার কিলোমিটার। যথেষ্ট সূক্ষ্ম, কী বল?
ঠিক জানি না এসব গালগল্প আমার ভাল্লাগে কিনা। আমাদের সরকার অবশ্যই সহিংসতা পছন্দ করবে না। আত্মরক্ষার ব্যাপার হলে আলাদা।
তুমি সাদাসিধে আমেরিকান! আমরাও বাস্তবধর্মী; আমাদের সহিংস হতেই হবে। তোমার দাদা-দাদী, নানা-নানী বুড়ো বয়সে মারা গেছেন, হেউড। আমার এ পূর্ব পুরুষদের তিন জনকে মহান দেশপ্রেম যুদ্ধে খুন করা হয়েছিল। তুমি বুঝবে না নিজের অধিকার রক্ষার জন্য কেন যুদ্ধ করতে হয়। আচ্ছা, তোমরা খুব অ-সহিংস, না? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তোমাদের সরকার আত্মরক্ষার জন্য জাপানে দুবার এটম বোমা ফেলেছিল, মাই ডিয়ার?
একা থাকলে তানিয়া তাকে সব সময় উডি বলে ডাকে। কখনো হেউড নয়। তার মানে সে অবশ্যই সিরিয়াস। অথবা শুধু ফ্লয়েডের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করছিল নাকি? কে জানে?
যাহোক, ডিসকভারি কয়েক বিলিয়ন ডলার দামের হার্ডওয়ার মাত্র। জাহাজটা নয়-শুধু এর ডাটাগুলো দামি।
ঠিক বলেছ, তথ্য। ডাটাগুলো কপি করে মুছে ফেলা যাবে।
তানিয়া, তুমি সব সময়ই মনোরম সব ধারণা পাও। মাঝে মধ্যে আমি ভাবি সব রাশিয়ানের মাথায় সামান্য ছিট থাকেই।
নেপোলিয়ন আর হিটলারকে ধন্যবাদ তাদের ভুল দেখে আমরা সবদিকে সঠিকতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাকে বলো না যে এর আগে তোমার নিজের জন্যে-তাকে তোমরা কি বলো, সিম্পরিও এর সমাধান বের করোনি তুমি।
ফ্লয়েড বরং বিষণ্ণভাবে উত্তর দিল, দরকার পড়ে না। নিজের জন্য কোনো সিম্পরিও আমি করিনি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আগেই আমার জন্য করে রেখেছে রূপভেদ সহ। আমাদের স্রেফ দেখতে হবে চাইনিজরা কীসের নাগাল পায়। আমি মোটেই বিস্মিত হবে না যদি তারা আমাদের অনুমানের বাইরে আবারো কিছু করে বসে।
১০. ইউরোপার আর্তচিৎকার
খুব কসরতের ব্যাপার শূন্য অভিকর্ষে ঘুমানো। এটাও শিখতে হয়। হাত এবং পা নোঙ্গর করে রাখার সবচে ভালো পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য ফ্লয়েড প্রায় এক সপ্তাহ ট্রেনিং নিয়েছে যাতে হাত পা অস্বস্তিকরভাবে না ভাসে। এখন সে এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ। আর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। অবশ্য ঠিক ঐভাবে শুয়ে থাকার ব্যাপারটা তাকে মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখায়। ফ্লয়েড কোনোকালেও মাধ্যাকর্ষণহীনতায় শুতে পছন্দ করত বলে মনে হয় না।
কেউ একজন তাকে জাগানোর জন্য ঝাঁকুনি দিচ্ছে। না-সে অবশ্যই এখন স্বপ্নে! মহাশূন্য শিপে কখনোই গোপনীয়তা ভাঙা যায় না। কেউ অনুমতি ছাড়া কখনো অন্য কুর ঘরে ঢোকে না। সে চোখ শক্তভাবে বন্ধ করার পরও ঝাঁকুনি চলছিল।