সে আরেকবার মনোযোগ দিয়ে চাইনিজ শিপের চমৎকার ছবির দিকে তাকায়। এটা যে স্পেসশিপ সে খবর বেরিয়ে যাবার পর ভোলা হয় ছবিটা। ঠিক পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়ার মুহূর্তে তোলা। পরে নেয়া হয় আরো শট-তেমন পরিষ্কার আসেনি, কারণ ততক্ষণে এটা প্রাইং ক্যামেরা থেকে অনেক দূরে চূড়ান্ত স্তরে বৃহস্পতির দিকে প্রচণ্ড বেগে বেরিয়ে যাচ্ছে। ঐ ছবিগুলো তাকে সবচে বেশি উৎসাহ দেয়। আরো দরকারি ব্যাপার হল কেটে ফেলা ড্রয়িং আর তাদের কৃতিত্বের দামটা বিচার করা।
সবচে নির্ভরযোগ্য সম্ভাবনাটাই মেনে নেয় সবাই; আসলে চাইনিজরা কী করতে চাচ্ছে তা বোঝা মুশকিল। সৌর জগতে আড়াআড়ি পথে পাগলের মতো তারা এসেছে, যাতে লিওনভকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া যায়। তাদের নব্বই ভাগ প্রোপ্যাল্যান্ট শেষ। ফিরবে কী করে! অন্যদিকে লিওনভ পৃথিবীর আকর্ষণ ছাড়ার পরই বন্ধ করে জ্বালানি পোড়ানো। পুরোপুরি সুইসাইড মিশন না হলে শুধু হাইবারনেশনের পরিকল্পনা হতে পারে। পরে উদ্ধার করতে পারে অন্য কোনো চৈনিক তরী। ফ্লয়েডের মন বিশ্বাস করে না চাইনিজ হাইবারনেশন টেকনোলজি টিকে থাকার মতো উন্নত। এ ব্যাপারে ওরা বরাবর ভুল করে। এমনকি কাঁচা ঘটনার তুবড়ি মেরে এর তথ্য সার্কিটে গোলমাল খুঁজতে গিয়ে প্রায়ই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে হয়েছিল একে। আচ্ছা! জিয়াংয়ে একটা দারুণ কাজ করেছে দ্রুত আসার পরিকল্পনাটা-তা হলো সময়ের স্বল্পতা বিবেচনা করা। ওরা আসলেই হাইবারনেশনে যায়নি বলেই হয়ত ক্রুদের জীবনের দু মাস বাঁচাতে এসেছে এত দ্রুত। ফ্লয়েড আশা করে তার কাছে পাঠানো বিষয় আরও যত্নের সাথে ফিল্টারিং করা উচিত ছিল। এ বিশাল ডাটার অনেক অংশই মিশনের ক্ষেত্রে আবর্জনা।
তবু, যা খুঁজেছিল তা যখন জানতে পারেনি, আন্দাজে কিছু না বলাই ভাল। কোনো ব্যাপার প্রথমে অবাস্তব বা অর্থহীন মনে হলেও শেষে মাঝেমধ্যে তা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফ্লয়েড আরেকবার দ্রুত পাঁচশ পৃষ্ঠার ডাটার উপর চোখ বুলিয়ে যায়। ডায়াগ্রাম, চার্ট, ফটোগ্রাফের মধ্যে কোনো কোনোটা এমন ঝাপসা দাগ ওয়ালা যে প্রায় যে কোনো কিছু হিসেবে বিক্রি হতে পারে। নিউজ আইটেম, সায়েন্টিফিক কনফারেন্সের প্রতিনিধির তালিকা, টেকনিক্যাল প্রচারণার টাইটেল এবং এমনকি বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়ায় এক কমার্শিয়াল ডকুমেন্ট এটা। গুপ্তচরবৃত্তি এক নিপুণ শিল্প। এ শিল্প এখন মারাত্মক ব্যস্ত। বোঝাই যায় ওরা অনেক জাপানী হলোমেমরি মডিউল বা সুইস গ্যাস-ফ্লো মাইক্রোকন্ট্রোলার বা জার্মান তেজস্ক্রিয়তা ডিটেকটরগুলোর শুকনো লেকের মধ্যে গন্তব্যের খোঁজ করে থাকতে পারে। তারা হাইবারনেশনে পাঠাবে না, আত্মহত্যা করবে না, আসার পথেই ৯০% জ্বালানি শেষ করেছে, আর মাত্র একটা পথই খোলা…এ এলাকাতে তাদের প্রোপ্যাল্যান্ট আছে! তবে কি বৃহস্পতির পথে এটা তাদের প্রথম মাইল ফলক নয়?
রিপোর্টটাতে কিছু আইটেম কাকতালীয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে মিশনের সাথে যেগুলোর সম্পর্ক নেই। চাইনিজরা যদি সিঙ্গাপুরের কোনো অস্ত্র বা বিজ্ঞান সংস্থার মাধ্যমে আমেরিকায় এক হাজার ইনফ্রারেড সেন্সরের জন্যে কোনো গোপন অর্ডার দিয়ে থাকে, তা শুধুই সামরিক। এটা যে লেসার দুর্গ নয় বরং স্পেসশিপ তাতে প্রমাণ হলোই। লেজারের কথা এ রিপোর্টে ক্যান রে বাবা! খুবই অস্বাভাবিক! জিয়াং হিট সিকিং মিসাইলের পেছনে দৌড়াতে চায়। অথচ হিট সিকিং মিসাইল তৈরি করা হয় আকাশ যানের পেছনে ছোটার জন্য। অথবা এংকরেজ, আলাস্কা আর গ্লোসিয়ার জিওফিজিক্স প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞ আর যন্ত্রপাতি চাওয়াটা আসলে ধোকাবাজি। কোন্ ঢিলা মাথা ভেবেছে যে গভীর মহাশূন্য অভিযানে কোনো দরকার থাকতে পারে–
মৃদুহাসি ফ্লয়েডের ঠোঁটেই জমে গেল। ঘাড়ের পেছনে চামড়ার হামাগুড়ি বুঝতে পারে সে। মাই গড! তারা কি ঝুঁকি নেয়নি? এতবড় সাহস! আচ্ছা, এতক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছুর অর্থ।
ছবিগুলোর পেছনে উল্টে দেখে ফ্লয়েড। অনুমান করে চাইনিজ শিপের পরিকল্পনা। হ্যাঁ, এটা স্রেফ কল্পনা-ড্রাইভ পরিবর্তন ইলেকট্রোডগুলোর পাশের ও পেছনের থামের মতো জিনিসগুলোর আকার তাকে ধাঁধায় ফেলে।
ফ্লয়েড ব্রিজে কল দিল, ভ্যাসিলি, তুমি কি তাদের কক্ষপথ বের করেছ?
হ্যাঁ। নাবিক উত্তর দিল একদম সংযত কণ্ঠে। যেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফ্লয়েড সাথে সাথে বলল যে তাদের ফুয়েল সমস্যার সমাধান দেখা যায়। সে চেষ্টা করল সমাধান করার।
তারা ইউরোপার সাথে সিগন্যাল প্লেস তৈরি করছে, তাই না?
অন্য প্রান্ত থেকে বিস্ফোরণের মতো হাঁপানোর একটা শব্দ এল।
আশ্চর্য! এমন বেমক্কা কাজের খবর তুমি কীভাবে জানলে?
জানিনাতো-স্রেফ অনুমান।
কোনো ভুল থাকার কথা নয় ভ্যাসিলির মনে পড়ে যায় কত বড় হাস্যকর ভুল করেছে একটু আগে,– আমি ছটা জায়গায় জিয়াংয়ের ফিগার চেক করলাম। তাদের ব্রেকিং ম্যানুভারের সমস্যা মনে করি যেটাকে সেটা হয়ত সমস্যা না। সমাধান। তারা ইউরোপার পথে-ব্যাপারটা কাকতালীয় নয়। সতের ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছবে।
এবং কক্ষপথে ঢুকবে।
সম্ভবত; এজন্য বেশি এনার্জি খরচ হবে না। কিন্তু ব্যাটাদের মতলব কী? ভ্যাসিলি এখনো খাবি খাচ্ছে।