প্রায় দশকখানেক পরে, অসাধারণ সাফল্য পাওয়া স্কাইল্যাবের ক্রুরা আবিষ্কার করল যে তাদের এ মহাকাশতরীর ডিজাইনাররা একই জ্যামিতি অনুসরণ করেছে। স্কাইল্যাবের ভেতরটাকে ঘিরে একটা শক্তিময় ক্যাবিনেটের রিং বসানো ছিল। স্কাইল্যাব ঘুরত না কিন্তু ক্রুরা ঠিকই ইঁদুরের গোল খাঁচায় দৌড়ানোর মতো করে শারীরিক কসরত করে নিতে পারত। এমনকি তাদের সেই ঘোরার দৃশ্য টেলিভিশনে পাঠানো হয়েছিল। (আমি কি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটার নাম করব?) সেইসাথে একটা ছোট্ট বার্তা পাঠানো হয়, স্ট্যানলি কুবরিকের এটা দেখা উচিত।
তিনি দেখেছিলেন, আমি টেলিসিনটা পাঠিয়ে দিই তাঁর কাছে। (আর কখনো ফেরত পাইনি জিনিসটা। যথারীতি। আমাদের স্ট্যানলি খুবই বিশ্বস্ত একজন ব্ল্যাকহোল। তার কাছে কোনোকিছু গেলে…)
বাস্তবের সাথে মুভিটার আরো একটা মিলের কথা না বলে পারি না, অ্যাপোলো-সয়ুজ কমান্ডার কসমোনট অ্যালেক্সি লিওনভ আঁকা, চাঁদের কাছে। জাতিসংঘের বহির্মহাবিশ্বের শান্তিময় ব্যবহার বিষয়ক একটা কনফারেন্সে আমি ছবিটা দেখি। বিস্ময়কর। আমাদের চলচ্চিত্র মাত্র কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে। তার আইডিয়ার সাথে মুভির প্রথম দৃশ্যের অনেক অনেক মিল, প্রথমে চাঁদের পেছনে উদিত হচ্ছে ধরণী, তার পেছনে সূর্য। মস্কোতে তিনি আর শাখারভ মিলে আমাদের প্রতীক্ষায় মহাকাশ বইটা লেখেন ১৯৬৭ সালে। সেটার ৩২ পৃষ্ঠায় এ নিয়ে লেখা আছে। ছবিটার একটা স্কেচ, তার অটোগ্রাফসহ ঝুলছে আমার অফিস দেয়ালে। আরো বিস্তারিত জানতে ১২ তম অধ্যায়ে দেখতে পারেন।
হয়তো এ থেকে আরো একজন গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কম পরিচিত লোকের নাম উঠে আসতে পারে। হিউয়েন-সেন জিয়াং। মহান থিওডর ফন কারম্যান আর ফ্র্যাঙ্ক জে ম্যালিনার সাথে গুটেনহ্যাম অ্যারোনটিক্যাল ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)-এ। প্যাসাডেনের প্রখ্যাত জেট প্রোপালশন ল্যাবের উত্তরসূরী এটি। তিনি ক্যালটেকের প্রথম গদার প্রফেসর ছিলেন, চল্লিশের দশক জুড়ে আমেরিকার রকেট বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে চলেন। ম্যাককার্থি যুগের অন্যতম বিশ্রী ঘটনা ঘটে যায় এরপর। নিজের দেশে ফেরার কথা বলতেই গ্রেফতার হন। পরের দু দশক তিনি চৈনিক রকেট প্রোগ্রামের অন্যতম পুরোধা ছিলেন।
সবশেষে, ২০০১ এর ৩৫ তম অধ্যায়ে জ্যাপেটাসের নয়ন নামে একটা আজব কথা আছে। আমি এখন মহাকাশবিদ ডেভিড বোম্যানের করা সেই আবিষ্কারের ব্যাখ্যা দিচ্ছি যেখানে আছে, এক উজ্জ্বল সাদা ডিম্বাকার এলাকা… চারশো মাইল লম্বা আর দুশ মাইল চওড়া… একেবারে চৌকো… তার উপর, দেখতে এমন যেন… ছোট্ট চাঁদটার মুখে রঙ মাখা হয়েছে। এমনকি কাছাকাছি আসার পর বোম্যানের মনে হল যেন কোনো উজ্জ্বল চোখ চেয়ে আছে তার দিকে। তারপর সে দেখল, ঠিক কেন্দ্রে এক বিন্দু। দেখে যাকে ঠিক মনোলিথ বলে ভুল হয়।
মজার ব্যাপার, ভয়েজার-১ এর পাঠানো ইপেটাস বা জ্যাপেটাসের প্রথম ছবিতে এক সাদা গোল ডিম্বাকার দেখা যায় যার ঠিক মাঝখানে এক কালো বিন্দু।
কার্ল সাগান জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি থেকে আপনার কথা ভেবে… সহ একটা প্রিন্ট আউট পাঠান। জানি না ব্যাপারটা নিয়ে হতাশ হতে হবে নাকি আশায় বুক বাঁধতে হবে, ভয়েজার-২ পথটা খোলা রাখছে এখনো।
অপ্রতিরোধ্যভাবেই, আমি আগের বই টেনে নিয়ে যেতে চাইনি। এর দ্বিতীয় পর্ব লেখার ইচ্ছা ছিল না। কাহিনী টেনে নেয়ার চেয়ে একেবারে নতুন কোনো ধারণা পরের খণ্ডে আনার চেষ্টা করেছি তাই। এখানে, ছবি বা ২০০১ উপন্যাস, কোনোটাই পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়নি। কিছুটা মিল রাখা হয়েছে চলচ্চিত্রের সাথে। বইটাকে একেবারে স্বাধীন করার চেষ্টা ছিল। এ বইতে ইচ্ছা ছিল বর্তমানের বিজ্ঞানের আলোকে তুলে আনার।
যে ধারণা, অবশ্যই, পুরনো হয়ে যাবে ২০০১ সালের মধ্যে…
আর্থার সি ক্লার্ক
কলম্বো, শ্রীলঙ্কা জানুয়ারি, ১৯৮২
প্রথম পর্ব : লিওনভ
১. সেন্টারে মুখোমুখি
পরিমাপের এ মেট্রিক যুগেও তিনশ মিটার না বলে এক হাজার ফুটের টেলিস্কোপ বলা হয় বিশাল গোল ডিশটাকে। গ্রীষ্ম মণ্ডলে সূর্যের বিশ্রাম দরকার; পাহাড়ে বসানো এ বিশাল ডিশের অর্ধেকটা ঢেকে গেছে ছায়ায়। উপরে ঝুলন্ত অ্যান্টেনা কমপ্লেক্সের তিন কোণা র্যাফট এখনো আলোয় ভাসছে। অনেক নিচ থেকে আকাশ-তারের গোলক ধাঁধায় দুজন মানুষের মতো দেখা যায়। আশপাশে সাপোর্ট ক্যাবল আর ওয়েভ বাহক ভরা। তাদের দেখতে হলে দিতে হবে খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
ডক্টর দিমিত্রি ময়শেভিচ তার পুরনো বন্ধু হেউড ফ্লয়েডকে বলল, এখনি সময়। অনেক কিছু নিয়ে কথা বলতে হবে। জুতা, স্পেসশিপ, সীলগালা আর বিশেষ করে মনোলিথ; বুঝতেই পারছ, কাজে ফেল মারা কম্পিউটারটা নিয়ে কথা বলতে হবে।
এজন্যেই আমাকে কনফারেন্স থেকে বের করে আনলে? আমার মনে হয় না। কার্ল ঐ গলাবাজির এস ই টি আই বক্তৃতা অনেক দিয়েছে। আমি নিজেই আগাগোড়া আউড়ে যেতে পারব… আশপাশের পরিবেশ দারুণ, কী বল? তুমি তো জানো, আমি সব সময় এরিসিবোর কাছে থাকতাম। কখনোই অ্যান্টেনার কথাটা তুলে ধরিনি।
তোমার জন্য লজ্জাজনক, হেউড। এ নিয়ে তিনবার এখানে এলাম। ভেবে দেখ, এই এখানে আমরা সারা বিশ্বকে শুনছি কিন্তু কেউ আমাদের কথা আড়ি পেতে শুনতে পাবে না। সুতরাং সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারি আমরা।