অবাঞ্ছিত ক্রুরা ইচ্ছা না থাকলেও চলে গেল ব্রিজ থেকে-কিন্তু ত্রিশ মিনিটের কিছুটা আগেই সবাই ফিরে এল ভ্যাসিলির বিরক্তি বাড়াতে। সে তার ধারণার উপর ক্রুদের বিশ্বাসের কমতি দেখে বকুনিও দিল। মজার ব্যাপার, তখনি জিয়াংয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী আলো-সংকেত বিস্ফোরিত হয়ে লাউড স্পীকারে বেরোল পরিচিত শব্দ; বীপ,..বীপ…বীপ…
ভ্যাসিলি অবাক হয়েছে, তার বাহাদুরির হিসাবটা ভুল! দুঃখও পেয়েছে কিছুটা। কিন্তু বাকিরা তার ভুলের দিকে খেয়াল না দিয়ে বরং স্পেসশিপটার ফিরে আসার আনন্দে মাতোয়ারা। দ্রুত সেও যোগ দেয় হাততালির খেলায়। ফ্লয়েড দেখেনি কে প্রথম হাততালি শুরু করে। জিয়াং বিদ্রোহী হতে পারে, হয়ত চুরি করতে যাচ্ছে ডিসকভারিকে, কিন্তু তারা সবাই মানব-নভোচারি। বাড়ি যত্তো দূরেই হোক যে কোনো মানুষ যখনই ভ্রমণ করে মহাশূণ্যে-প্রথম জাতিসংঘ মহাশূন্য চুক্তির মহৎ বাণী হিসেবে সে মানবজাতির দূত।
তারা যদি চাইনিজদের সফলতা নাও চেয়ে থাকে, কখনো তাদের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া কামনা করোনি।
এর সাথে অবশ্য একটা বড় স্বার্থ জড়িত, ফ্লয়েড ভাবতেও পারেনি। এখন তো লিওনভের নিজের সফল হবার সম্ভাবনাও বাড়ছে, এজন্যেও সবাই খুশি হয়ে থাকতে পারে। জিয়াং প্রমাণ করল অ্যারোট্র্যাকিং ম্যানুভার আসলেই সম্ভব। বৃহস্পতির ডাটা ঠিক; এর বায়ুমন্ডলে অপ্রত্যাশিত এবং সম্ভবত মারাত্মক বিস্ময়ের কিছুই নেই।
চমৎকার! তানিয়া বলল, আমার মনে হয় অভিনন্দন পাঠানো উচিত। কিন্তু আমাদের অভিনন্দন পেলে তারা প্রাপ্তিস্বীকারও করবে না।
সাথীদের কয়েকজন তখনো ভ্যাসিলিকে নিয়ে করছে কৌতুক। আর বেচারা তার কম্পিউটারের আউট পুটের দিকে সরল অবিশ্বাসে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
আমি বুঝতে পারছি না! সে বিস্ময়ে বলল, এখনো তাদের বৃহস্পতির পিছনে থাকার কথা। শাসা-তাদের বিকনের গতির একটা রিডিং আমাকে দাও তো!
আরো একটা শব্দহীন ডায়ালগ ঢোকানো হল কম্পিউটারে, তারপর ভ্যাসিলি দিল একটা লম্বা নিচু স্বরের শীষ, কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। তারা একটা বন্ধ কক্ষপথে, ভাল-কিন্তু এ অর্বিটটা তাদের ডিসকভারির কাছে যেতে দেবে না। যে কক্ষপথে তারা এখন আছে এটা তাদের নিয়ে যাবে আইও থেকে দূরের পথে। আবার পাঁচ মিনিটের জন্য খুঁজে পেলে আমি ঠিক ডাটা পাব।
যত যাই হোক তাদের অবশ্যই নিরাপদ অর্বিটে থাকতে হবে, তানিয়া বলল, পরে ঠিক করা যায় অর্বিটের কোথাও গন্ডগোল থাকলে।
সম্ভবত। কিন্তু ঠিক করতে গেলে কয়েকটা দিনের অপচয় হয়। তাদের জ্বালানি থাকলেও এ কাজ করার সাহস পাবে না। আমার এমনটাই মনে হচ্ছে।
সুতরাং আমরা এখনো তাদের নিয়ম মাফিক টোকা দিতে পারি।
এত্তো আশা না করাই ভাল। আমরা এখনো বৃহস্পতি থেকে তিন সপ্তাহ পিছিয়ে। পৌঁছার আগেই ওরা এক ডজন কক্ষপথ গড়ে নিতে পারে আর ডিসকভারির সংকেত স্থানের জন্য সবচে সুবিধাজনক অর্বিটটা বেছে নিতেও পারে।
মনে হয় ওদের হাতে অনেক জ্বালানি।
অবশ্যই। এবং তা এমন কিছু যা ধারণা করে আমরা শুধু শিক্ষা নিতে পারি।
এসব কথাবার্তা এমন দ্রুত এবং উত্তেজনাপূর্ণ রাশিয়ান ভাষায় বলা হল যে ফ্লয়েড পড়ে গেল অনেক পেছনে। তানিয়ার মায়া হয় বেচারা ফ্লয়েডের জন্য। সে ব্যাখ্যা করল যে জিয়াং অনেক দূরে চলে গেছে। বাইরের উপগ্রহের কাছাকাছি একটা অর্বিট; তার মানে বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে বিশাল এক কক্ষপথে ঘুরছে মহাকাশযানটা। সব শুনে ফ্লয়েডের প্রথম প্রতিক্রিয়া হল, তারপর মারাত্মক বিপদে পড়তে পারে। তারা যদি সাহায্যের আবেদন জানায় কী করবে তুমি?
ঠাট্টা করছ, না? তারা সাহায্য চাইবে তুমি ভাবলে কী করে? ওরা খুব অহংকারী। যাহোক, অসম্ভব। আমরা সাহায্য করতে পারি না, তুমি তো ভালই জান। আমাদের জ্বালানি থাকলেও…।
অবশ্যই। তোমার কথাই ঠিক। তবে মানব জাতির নিরানব্বই শতাংশ অরবিটাল মেকানিক্স বোঝে না। তাদের কাছে অসহযোগিতার কারণ ব্যাখ্যা করা এক কঠিন ব্যাপার। তারা চিৎকার করে গলা ফাটাবে, লিওনভ কেন জিয়াংকে সাহায্য করতে যায়নি এত কাছে থেকেও! রাজনৈতিক জটিলতা নিয়েও আমাদের চিন্তাভাবনা শুরু করা উচিত-সাহায্য করতে না পারলে ব্যাপারটা আমাদের সবার জন্যই খারাপ দেখায়। ভ্যাসিলি, তোমার কাজের আউটপুট পাওয়ার সাথে সাথে আমাকে তাদের শেষ কক্ষপথটার বর্ণনা দেবে?
আমি একটু হুক ওয়ার্কের জন্যে নিচে নামার কেবিনে যাচ্ছি।
ফ্লয়েডের কেবিন, বরং বলা ভাল কেবিনের এক তৃতীয়াংশ তখনো স্টোরের মালামালে ভর্তি। সেখানটার বেশিরভাগই পর্দায় ঢাকা বাংক। বোধ হয় চন্দ্র আর কার্নো লম্বা ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাদের দখলে যাবে বাংকের জায়গাটা। ফ্লয়েড নিজের স্বার্থে কাজের কিছুটা ক্ষেত্র পরিষ্কারের ব্যবস্থা করল এমনকি অন্য একটা
দুঘন মিটার স্থান দখলের আশা করল যেটা তার দরকার নেই। স্রেফ যখনই কেউ। ফার্নিচারগুলো সরাতে তাকে সহায়তা করবে তখনি সেটুকুর দখল আসছে।
ফ্লয়েড আনলগ করল তার ছোট কমিউনিকেশন ক্যাবিনেট, ডিজঅ্যাব্রাপশন কি বসিয়ে জিয়াংয়ে পাঠানো ওয়াশিংটনের খবরের জন্য কল করল। সে ভয় পাচ্ছে, খবরটা হয়ত অন্য রিসিভাররাও ডিকোড করে পড়ে ফেলবে। সাইফারটাদুশ ডিজিট মৌলিক সংখ্যার গুণফলের উপর বানানো। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা তার সুনামের উপর বাজি ধরেছে এ দাবি করে যে তারা আসল সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দ্রুততম কম্পিউটারও এতে ফাটল ধরাতে পারবে না-আফসোস, এ এমন এক দাবি যা কখনো প্রমাণ করা যাবে না।