ক্যারোলিনের এখন শুধুই তিক্ততা। তাহলে এরা হেউডকে চিনতে পেরেছে। এতদিন পরেও! অথচ ক্রিস্টোফার তার খেলার ঝাঁপির চারদিকে হামাগুড়ি দিচ্ছে, মহাশূন্যের আধা বিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে তার পিতার কণ্ঠস্বর পরিষ্কার হয়ে আসছিল আস্তে আস্তে। অথচ ছবির বইয়ের রঙ কন্ট্রোলারের সাথে খেলা বন্ধ করছে না।
… প্রিয়তমা, একমাস আগেই আমার কথা শুনে তুমি অবাক হবে না। এক সপ্তাহ ধরে তুমি হয়ত জানো যে আমরা এখানে একা নই।
এখনো ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এমন পাগলাটে কাজের মানেটা কী? পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসার মতো জ্বালানিও সম্ভবত তারা পাবে না। এমনকি বৃহস্পতি পর্যন্ত কীভাবে যাবে তাও বুঝতে পারছি না আমরা।
কখনো তাদের দেখিনি। এমন কি কাছে গিয়েও না। জিয়াং পাঁচ কোটি কিলোমিটারের চেয়ে বেশি দূরে। তারা চাইলে আমাদের সংকেতের জবাব দিতে পারে। হাতে প্রচুর সময়। অবাক ব্যাপার, আমাদের যেন চেনেই না! এখন বন্ধুদের নিয়ে খোশ গল্পে ভীষণ ব্যস্ত হয়তো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে টু মারবে-আর তখনই আমরা দেখব ওদের অ্যারোব্রোকিং সিস্টেম কতটা ভালো কাজ করে। তাদেরটা যদি ঠিকমতো কাজ করে তাহলে আমাদের মনোবলের জন্য ভালোই হবে ব্যাপারটা। আর যদি না পারে-থাক, এ নিয়ে কথা বলা বাদ দেই।
রাশিয়ানরা আগুপিছু বিবেচনা করে জিয়াংকে বেশ ভাল চোখেই নিয়েছে। প্রথমে তারা অগ্নিশর্মা হয়ে পড়েছিল, সেই সাথে হতাশ-কিন্তু অনেকেই অকপটভাবে নিজের বিস্ময় প্রকাশ করে বসে। ওরা কী করে…! শুধু বুস্টারে স্পেসশিপের বৈশিষ্ট্য দেয়ার আগ পর্যন্ত সারা দুনিয়ার চোখের সামনে তারা বানিয়েছে ঐ জাহাজ। সবচে মজার ব্যাপার, এটাকে মহাশূন্য স্টেশন হিসেবে তারা সবার সামনে চালিয়েছে এতদিন। কেউ ভেবেছে এটা লেজার দুর্গ, কেউ গোয়েন্দা দফতর-কিন্তু কেউ কি কল্পনাও করতে পারে যে আসলে একটা স্পেসশিপ তৈরি হচ্ছিল? দারুণ চালাকি। ওরা বাড়তি শক্তি খরচ করেছে অতিরিক্ত গতির জন্য। আল্লা মালুম, পরিণতি কী হবে।
যাহোক, আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। আমাদের কাছে তো পৃথিবীর মতো গোদা গোদা টেলিস্কোপ নেই; তাই এত কম দূরত্বে থেকেও ভালভাবে দেখতে পাব না। অবশ্যই আমি আশা করি তারা ডিসকভারিকে একা থাকতে দেবে। ভাগ্যের ইচ্ছা যেন আমি তাদের সাহায্য না করি। ওটা আমাদের সম্পত্তি, এবং আমি নিশ্চিত স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘণ্টায় ঘণ্টায় এ কথাটুকু তাদের মনে করিয়ে দেবে।
ব্যাপারটা নিশ্চই খুব খারাপ-তবু চৈনিক বন্ধুরা যদি আমাদেরকে সময়ের আগে না জাগাতো তাহলে আরো এক মাস তুমি আমার কথা শুনতে পেতে না। কিন্তু এখন যেহেতু ডক্টর ডেস্কো আমাদের ঘুম থেকে তুলেছে সেহেতু আমি আজ থেকে প্রতি দুদিন অন্তর কথা বলব।
প্রাথমিক ধাক্কাটা যাবার পর আমি সেরে উঠছি ভালভাবে-জাহাজ আর এর ক্রুদের জানছি, আমার স্পেস ল্যাক খুঁজে পাচ্ছি-যে সময়টা ছিলাম ঘুমিয়ে। বড় ব্যাপার হল আমার বাজে রাশিয়ান বলাটাকে দিতে পারছি দক্ষতা। অবশ্য সেই দক্ষতা ব্যবহার করার প্রচুর সুযোগ নেই-প্রত্যেকে ইংরেজিতে কথা বলছে, রাশিয়ান চর্চা করি কীভাবে? আমরা আমেরিকানরা কী জঘন্য ভাষাবিদ! আমি মাঝে মাঝে আমাদের অন্ধ দেশপ্রেম বা আলসেমির জন্য লজ্জা পাই।
শিপে ইংরেজির মর্যাদা আছে ঠিকই-চিফ ইঞ্জিনিয়ার শাসা কোভলেভ কাজ করছে বিবিসি ঘোষক হিসেবে। আসলে তুমি যদি যথেষ্ট দ্রুত কথা বলতে পার কিছু ভুল করলেও কোনো ব্যাপার না। জেনিয়া মার্শেঙ্কো খুব সাহসী মেয়ে। শেষ মুহূর্তে ও ইরিনা ইউকুনিনার বদলে উঠেছে। কথায় কথায় শুনে আমি খুশি হয়েছি যে ইরিনা বেঁচে গেছে ভালোভাবেই। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অবশ্য অবাক হব না সে যদি আবারো হ্যাং গ্লাইডিং আরম্ভ করে।
দুর্ঘটনার কথা বলতে গেলে বোঝাই যায় জেনিয়ার ভাগ্যও খুব একটা ভাল না। প্লাস্টিক সার্জন ভালভাবেই করেছে তার কাজ-তবু যে কেউ বুঝবে যে মেয়েটা কখনো না কখনো মারাত্মকভাবে পুড়েছিল। সে ক্রুদের কাছে যেন শিশু। অন্যরা তার সাথে এমন ব্যবহারই করে। আমি বেচারা বলতে যাচ্ছিলাম ভাল ব্যবহার করে। তার প্রতি সবার মনোভাব নরম।
ক্যাপ্টেন তানিয়ার সাথে মিলেমিশে চলছি কীভাবে সেটা ভেবে হয়ত অবাক হচ্ছ তুমি। ভাল কথা, আমি তাকে খুব পছন্দ করি।কিন্তু রাগানোর মোটেও ইচ্ছা নেই। কোনো সন্দেহ নেই সে-ই চালায় এ শিপটা।
আর সার্জন কমান্ডার রুডেঙ্কো-দুবছর আগে হনলুলু অ্যারোস্পেস কনভেনশনে দেখেছ তাকে। আমি শিওর তুমি ঐ শেষ পার্টির কথা ভুলে যাওনি। বুঝতে পারবে কেন আমরা তাকে ক্যাথেরিনা দ্য গ্রেট বলে ডাকি-অবশ্যই তার পে ছ-নে-র বিস্তৃত ইতিহাসের জন্য।
নাহ, যথেষ্ট পরচর্চা হয়েছে। আমি ওভারটাইম করলে সারচার্জ আশা করতাম। তাছাড়া, এই ব্যক্তিগত কলগুলো পুরোপুরি প্রাইভেট মনে করতে হবে। কিন্তু যোগাযোগে প্রচুর পথ থাকে, অন্য কোনো রুট থেকে মাঝে মধ্যে যদি ম্যাসেজ পাও, ভাল, অবাক হয়ো না।
আমি থাকলাম তোমার কথা শোনার অপেক্ষায় মেয়েদের বলো তাদের সঙ্গে পরে কথা হবে। তোমাদের সবার জন্য ভালবাসা-ক্রিস আর তোমাকে মিস করি সব সময়। প্রতিজ্ঞা করছি ফিরে এসে আর কখনো যাব না কোথাও। রাগের একটু শব্দ করে পুরোপুরি কৃত্রিম কণ্ঠে বলল, মহাশূন্যযান লিওনভ থেকে সাত হতে শুরু হয়ে চার শত বত্রিশ স্টোকে প্রেরণ শেষ হল।