তারপরই ডাক্তার আচমকা পেশাদার হয়ে গেল, হয় করতে দেবে না। একটা গ্যাস গান হাইপোডারমিক দিয়ে ফ্লয়েডকে ব্যথাহীন ইনজেকশন দিল। বলে দিল যেন চলে আসে ঘুম পাবার সাথে সাথে। ঘুম পেতে দু ঘণ্টাও লাগবে না।
এতক্ষণ শুধুই বিশ্রাম। আদেশ করছে কত্রীর মতো।
শিপের এ লেভেলে একটা পর্যবেক্ষণ পোর্ট আছে। স্টেশন ডি-৬। যাচ্ছ না কেন সেখানে?
ধারণাটা ভালোই; ফ্লয়েডের মনে হল এবং সে বাধ্য ছেলের মতো ভেসে চলল। অতি বাধ্যতা তার বন্ধুকে অবাক করছে। ডাক্তার রুডেক্কো ঘড়িতে এক পলক তাকিয়ে অটোসেকে অল্পকথায় হুকুম দিয়ে অ্যালার্ম সেট করল ত্রিশ মিনিট এগিয়ে।
ডি-৬ ভিউপোর্টে পৌঁছে ফ্লয়েড পেল চন্দ্র আর কার্নোকে। এরিমধ্যে তারা হাজির। তারা যেন স্বীকারই করছে না ডক্টর হেউড ফ্লয়েডের অস্তিত্ব-তাকায় এমন ভাব নিয়ে। তারপর সে ঘুরল বাইরের দারুণ জাঁকজমকে ভরা প্রদর্শনীর দিকে। ঘটনাটার দর্শক শুধু ফ্লয়েড-এ চমঙ্কার পর্যবেক্ষণের জন্য নিজেকে সংবর্ধনা জানাতেও ভোলেনি। চন্দ্র এ দৃশ্য বাস্তবে উপভোগ করতে পারছে কি? মনে হয় না। তার চোখ একেবারে বন্ধ।
যেন একেবারে অচেনা এক গ্রহ সেখানে ঝুলে আছে, জ্বলজ্বল করছে চমৎকার নীল আর দীপ্তিময় সাদা আলোতে। কী অদ্ভুত! ফ্লয়েড নিজে নিজেই বলল। পৃথিবীর হলোটা কী? তাইতো, অবাক হওয়ার কিছু নেই…সে স্বাভাবিক ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। উপরের অংশ নিচের দিকে! কী বিপর্যয়! একটু সময়ের জন্য সে কাঁদল মহাশূন্যে পড়ে যেতে থাকা ঐ নিরীহ পৃথিবীবাসীর জন্যে…
দুজন ক্রু চন্দ্রের প্রতিরোধহীন শরীর সরিয়ে নিচ্ছে; সেও এখন যেন রিক্ত। যখন তারা কাননোকে নিতে ফিরে এলো, ফ্লয়েডের নিজের চোখও বন্ধ। কিন্তু এখনো চলছে শ্বাসপ্রশ্বাস।
তারপর, লোকজন যখন তাকে নিতে এসেছে, তখন তার শ্বাসপ্রশ্বাসও বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকদিনের জন্য।
২. দ্বিতীয় পর্ব : জিয়াং
দ্বিতীয় পর্ব : জিয়াং
৬. জাগরণ
তারা না বলল হাইবারনেশনে স্বপ্ন দেখব না! শুতে না শুতেই… রাগের চেয়ে বেশি অবাক লাগছে… ভাবল হেউড ফ্লয়েড। দারুণ লাল রক্তিমাভা। আর চারদিক কী শান্ত! পরিবেশ দেখে তার বারবিকিউ আর ক্রিস্টমাস ফায়ারে কাঠের গুঁড়ির পটপট শব্দের কথা মনে পড়ে যায়। অবশ্য কোনো উষ্ণতা নেই তার শোয়ার জায়গায়, অন্য কিছু অনুভব করছে যদিও এ ঠাণ্ডা সহ্য করা যায় সহজেই।
কণ্ঠগুলো গুঞ্জন করছে হালকা, এমন কোমলভাবে যে ফ্লয়েড কথা বুঝতেই পারছে না। আস্তে স্বপ্নের শব্দগুলো আরো বাড়ে কিন্তু সে বিন্দুমাত্র বোঝে না। এরপর হঠাৎ প্রচণ্ড অবিশ্বাসে নিজেকে বলল, আমি রুশ ভাষায় স্বপ্ন দেখতে পারি না!
তখনো মনের ভিতরে গুমড়ে মরছে কথাটুকু, দর ফ্লয়েদ, দক্তর ফ্লয়েদ!
না হেউড, উত্তরটা এক মহিলা কণ্ঠের, তুমি স্বপ্ন দেখছ না। সময় এসেছে ঘুম থেকে ওঠার। মানোরম লালচে আভা মিলিয়ে যাচ্ছে। সে চোখ খুলল; মুখের উপর আলোর চমক এলে ক্ষণিক দৃষ্টিতে আবছা দেখা যায় সে শুয়ে আছে গদি আঁটা সিটে, শরীরটা ইলাস্টিক ওয়েবিং বেল্ট দিয়ে বাঁধা আর মানব-মূর্তিগুলো চারদিকে
দাঁড়িয়ে। কিন্তু তারা ফোকাসের এতটা বাইরে যে চেনা যায় না।
কার যেন নরম আঙ্গুল নেমে এসে তার চোখের পাতা বন্ধ করে দিয়ে কপাল ম্যাসেজ করছে।
নিজে নিজে চেষ্টা করো না। গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নাও… আবার… ঠিক হচ্ছে… এখন লাগছে কেমন?
ঠিক জানি না… অদ্ভুত… মাথাটা হালকা হালকা… খুব খিদে।
ভাল লক্ষণ। কোথায় তুমি তা কি জান? চোখ খুলতে পার এখন।
মানব মূর্তিগুলো দৃষ্টির ফোকাসে এল-প্রথমে ডাক্তার রুডেস্কো, তারপর ক্যাপ্টেন অর্লোভা। কিন্তু তানিয়াকে এমন লাগছে কেন! মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে বিরাট কোনো পরিবর্তন; কী সেটা… কারণটা বের করে সে ভিতরে ভিতরে খেল– প্রায় একটা ধাক্কা।
তোমার চুল আগের মতো হল কীভাবে!
যাক, তোমার চোখে ভাল লাগছে তাহলে! আশা করি তোমার দৃষ্টিতে ব্যাপারটা উন্নতি। আমি কিন্তু তোমার দাড়ি সম্পর্কে একই কথা বলতে পারছি না।
ফ্লয়েড তার হাতটা মুখে ঠেকায়। বুঝতে পারে তার কথাবার্তার আগে প্রতিবার একটু ভেবে নেয়া উচিত ছিল। চিবুক দু তিন দিনের শক্ত খাটো দাঁড়িতে ঢাকা-সাথে সাথে সব বাদ দিয়ে দিন গুনেছে ফ্লয়েড। হাইবারনেশনে চুল জন্মে একশো দিনে একদিনের সমান…তার মানে পরিবর্তন এসেছে আমার ভিতরেও। সে বলল, আমরা এখন বৃহস্পতিতে!
তানিয়া বিষণ্ণভাবে তার দিকে তাকায়, এক পলকে ডাক্তারকে দেখে, রুডেঙ্কো মাথা নেড়ে সামান্য সম্মতি দিল। সত্যিটা বলা যায়।
না হেউড। সে বলল, এখনো একমাসের পথ দূরে। ভয় পেয়ো না-শিপের কিছু হয়নি, সবই ঠিকঠাক। কিন্তু ওয়াশিংটন থেকে তোমার বন্ধুরা আমাদের বলেছে সময়ের আগেই তোমাকে জাগাতে। কিছু হচ্ছে…অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। আমরা ডিসকভারিতে পৌঁছার প্রতিযোগিতায় নেমেছি, হঠাই-বলতে ভয় হয়, মরতে বসেছি আমরা…হয়ত।
৭. জিয়াং
কমসেট স্পিকার থেকে হেউড ফ্রয়েডের কণ্ঠস্বর ভেসে এলে ডলফিন দুটো হঠাৎ করে পুলের চারদিকে বৃত্তাকারে ঘোরা বন্ধ করে সাঁতার কাটতে লাগল কিনারা ধরে। মাথা উঁচু করে রঙিন আর স্থির চোখে মনোযোগের দৃষ্টিতে তাকায় শব্দটা যেখান থেকে আসছে সেদিকে।