ঠিক এটুকু নীতি নেয়া হয় অশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই পুনঃপরীক্ষা এবং কম্পিউটার মডেলে কাজ করার পর। অভাগা ডিসকভারি এমন ভাল খেল দেখানোয় একটা সিদ্ধান্ত আসে-মানবীয় পরিকল্পনা প্রাকৃতিকভাবে বা ভাগ্যের জোরে নির্দয়ভাবে সংশোধন করতে হতে পারে। আর মহাবিশ্বের আড়ালের সেই শক্তির ভয়তো থাকবেই।
আচ্ছা! ডক্টর ফ্লয়েড তুমি ওখানে, ভ্যাসিলি ম্যাগনেটো হাইড্রোডাইনামিক ফিডব্যাকের ব্যাখ্যা দিচ্ছে অতি উৎসাহে, এমন সময় বাধা দিয়ে এক মহিলা কণ্ঠ বলল, তুমি আমার কাছে রিপোর্ট করোনি কেন?
এক হাতে আলতোভাবে পাক খেয়ে আস্তে আস্তে তার অক্ষরেখায় ঘুরল ফ্লয়েড। এক ডজন পকেট এবং থলে সজ্জিত অস্বাভাবিক এক ইউনিফর্ম পরা মাতৃ জাতির এক বিশাল মূর্তি দেখতে পেল সে। মহিলার প্রভাব কার্তুজ বেল্ট পড়া রাশিয়ান অশ্বারোহী এক সেনা সদস্যের চেয়ে কম না।
নাইস টু মিট ইউ এগেইন, ডক্টর। আমি এখনও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখছি। আশা করি হিউস্টন থেকে পাঠানো মেডিক্যাল রিপোর্ট পেয়েছ তুমি।
টিগ সেন্টারের ঐ সব চিকিৎসা! গরু-ছাগলের খুরা রোগ খুঁজে বের করি না আমি। ওসব বিশ্বাস করব না!
ক্যাথোরিনা রুডেঙ্কো এবং অলিন টিগ মেডিকেল সেন্টারের মধ্যে অনুভূত পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্কে ফ্লয়েড ভালই জানতো যদিও ডাক্তারদের মন খোলা হাসি আর কথাবার্তাকে কম বিশ্বাস করত না। ডাক্তার তার অকপট উৎসাহের দৃষ্টি দেখে গর্বিতভাবে প্রশস্ত কোমরের চারিদিকে কাপড়ের বেল্টে আঙ্গুল গুঁজে দিল, বলল, জিরো গ্র্যাভিটিতে গতানুগতিক পিচ্চি কালো ব্যাগ ব্যবহারযোগ্য নয়-জিনিস পত্র ভেসে বেরিয়ে যায় আর দরকারের সময় তুমি খুঁজে পাবে না সেগুলো জায়গামতো। আমি নিজে এ পোশাকের ডিজাইন করেছি। এটা আস্ত এক মিনি চিকিৎসা কেন্দ্র। এ দিয়ে আমি এপেনডিক্স বের করতে পারব-পারব একটা শিশু প্রসব করাতে।
আশা করি ঐ বিশেষ সমস্যা এখানে দেখা দেবে না।
আরে! একজন ভাল ডাক্তারকে সবকিছুর জন্য রেডি থাকতে হয়।
কাপ্তান অর্লোভা আর ডাক্তারের মধ্যে কী বৈষম্য! ফ্লয়েড ভাবল। নাকি রুডেঙ্কোকে সঠিক পদবী সার্জন-কমান্ডার রুডেঙ্কো নামে ডাকা উচিত তার? ক্যাপ্টেনের আছে একজন ব্যালে নর্তকীর সাবলীলতা আর তীক্ষ্ণতা; অন্যদিকে ডাক্তার মোটামুটি মাদার রাশিয়ার আদি প্রতীক। চ্যাপ্টা চষা মুখ, ছবিটা পুরো। করতে শুধু একটা শাল প্রয়োজন-ফ্লয়েড নিজে নিজে বলল; এ-ও বলল, নিজেকে বোকা বানিও না। এ হল সেই মহিলা যে কোনারভ ডাকি দুর্ঘটনায় কমপক্ষে এক ডজন জীবন রক্ষা করেছিল–অবসরের আলসেমির বদলে সম্পাদনা করেছিল এনালস অব স্পেস মেডিসিন বা মহাশূন্য ঔষধের বর্ষপঞ্জি। তাকে অচেনা কোটি কিলোমিটারের পথে পেয়ে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করো, ফ্লয়েড।
এখন, ডক্টর ফ্লয়েড, কথা হল-আমাদের ছোট্ট শিপটা খুঁটে খুঁটে দেখার জন্য পরে যথেষ্ট সময় পাবে। আমার সাথীরা এর কথা বলবে বিনয়ের সাথেই। কিন্তু করার মতো হাজারো কাজ আছে তাদের। তুমি সাহায্যও করতে পার। যত তাড়াতাড়ি পারি আমি তোমাকে-তোমাদের তিন জনের সবাইকে সুন্দর এবং ঠাণ্ডা অবস্থায় পেতে চাই। তারপর চিন্তা আমাদের কম থাকবে।
ভয় পাবার ভান করল ফ্লয়েড, আমি ঐ ভয়ই পাচ্ছিলাম, কিন্তু পুরোপুরি তোমার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছি। তুমি যখনই বলবে…।
আমিও সব সময় তৈরি। বললাম তো, তৈরি, প্লিজ এসো আমার সাথে।
শিপের হাসপাতালটা এক অপারেশন টেবিল, দুটো এক্সারসাইজ বাইসাইকেল, কিছু যন্ত্রপাতি রাখার কেবিনেট আর একটা এক্স-রে মেশিন রাখার মতো বড়। ডাক্তার রুডেঙ্কো দ্রুত সবার সারা শরীর পরীক্ষা করানোর পর অপ্রত্যাশিতভাবে জিজ্ঞাসা করল, ডক্টর চন্দ্রের গলার চেনের সঙ্গে ঐ ক্ষুদ্র সোনার সিলিন্ডারটি কি কোনো ধরনের যোগাযোগ যন্ত্র? সে কি ওটা সরাবে না? আসলে সে যে কোনো কিছু খুলে ফেলার ব্যাপারে খুব লজ্জা পায়।
ফ্লয়েড না হেসে পারেনি। কিছুটা অভিভূত মহিলার প্রতি বিনয়ী ভারতীয়র প্রতিক্রিয়া কল্পনা করা খুবই সহজ।
এটা একটা লিঙ্গম।
একটা কী?
তুমি হলে ডাক্তার, তোমার উচিত চিনতে পারা। পুরুষের উর্বরতার প্রতীক।
অবশ্যই-চেনা উচিত ছিল। বোকামি করেছি। সে কি হিন্দু রেওয়াজী লোক? কড়া আনুগত্যের ভেজিটেরিয়ান? এসব প্রশ্ন করতে আমাদের কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। এখন নিরামিষাশী হয়েও লাভ নেই।
ভয় পেও না-ন্যায্য সতর্কতা ছাড়া তোমাদের সব খাবারই সে খাবে। অবশ্য এলকোহল ছুঁয়ে দেখবে না; গোপন একটা কথা বলি…ধর্ম বা অন্য কোনো কিছুর ব্যাপারেই চন্দ্র গোঁড়ামি করে না, অতি গোঁয়ার্তুমি করে শুধু একটা বিষয়ে-কম্পিউটার। একবার সে আমাকে বলেছিল তার দাদা বেনারসে পুরোহিত ছিলেন। তিনিই তাকে ঐ লিঙ্গম দিয়েছেন।বংশ পরম্পরায় ওটা তাদের পরিবারের রেওয়াজ।
ফ্লয়েড খানিকটা আশ্চর্য হল, সে মনে করেছিল অন্যরকম, অথচ-ডক্টর রুডেস্কো কোনো অপ্রতিভতাই দেখায়নি। বরং চিকিৎসক তার সংস্কৃতির দিকে পুরো শ্রদ্ধা রেখে মনে করল নিজের স্মৃতি।
আমি তার অনুভূতি বুঝতে পারছি একটু। আমার নানী আমাকে একটা সুন্দর অহিকন দিয়েছিল-ষোল শতকের জিনিস। আমি ওটা আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু কপাল খারাপ। অহিকনটার ওজন পাঁচ কেজি।