এ ছাড়াও একটা কঠিন যুক্তি রয়ে যায়। তারা যদি জীবিতই হয়, তো কখনো ইউরোপায় আসে না কেন?
তারপরও লোকগাঁথা চলে। হাজার প্রজন্ম আগে, এ ভূমির বিজয়ের পর সেসব আলোর কোনো কোনোটা অনেক কাছাকাছি এসেছিল। কিন্তু ইউরোপার মাটির মুখ দেখার আগেই বিস্ফোরিত হয়েছে মহাকাশে। অবাক ব্যাপার, কঠিন ধাতুর বৃষ্টি হয়েছে তখন। সেসব দেব-ধাতু-খণ্ডকে আজও পুজো দেয়া হয়।
কিন্তু কোনো কিছুই কালো, লম্বা, বিশাল, একশিলাস্তম্ভের মতো পবিত্র নয়। সেই অকল্প অতীত থেকে সেটা দাঁড়িয়ে আছে একপিঠ সূর্যের দিক দিয়ে। অন্য পিঠটা ইউরোপার আঁধার অংশে ফেরানো। সবচে লম্বা ইউরোপানের চেয়েও দশগুণ বড়, যদি সে তার শুঙ্গকে সবচে বেশি প্রসারিত করে, তবু। এটাই রহস্য আর অনতিক্রম্যতার প্রকাশ। এটাকে কেউ কোনোদিন ছুঁয়ে দেখেনি। শুধু দূর থেকে বন্দনা করা যায়। চারপাশে ছড়িয়ে আছে ক্ষমতার বৃত্ত, যারাই যেতে চেষ্টা করে তাদেরকেই বাধা দেয়।
অনেকের বিশ্বাস এটাই সে ক্ষমতা যা আকাশের সব আলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। একবার যদি বিগড়ে যায় তো তারা তাদের মাতৃ সাগর আর উৎস মহাদেশে নেমে মিশে যাবে। তখুনি তাদের উদ্দেশ্য যাবে জানা।
.
ইউরোপানরা হয়ত জেনে অত্যন্ত অবাক হবে, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে যে এ কালো মনোলিথকেও সেই মনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে যারা ঐ ঘুরতে থাকা আলোর জন্য দায়ী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাদের ইচ্ছামতো সেই আলোর চাকতিগুলো নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে। সময় আসার আগে মনোলিথ কখনোই যোগাযোগের অনুমতি দেবে না।
সে সময় যখন আসবে… যখন, হয়ত যখন ইউরোপানরা রেডিও আবিষ্কার করবে, সেদিনই তাদের হাতের কাছে অনবরত বিস্ফোরণের শব্দগুলো ধরতে পারে… সেদিন একশিলাস্তম্ভ তার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে। এটা হয়ত প্রাণীগুলোকে মেশার সুযোগ করে দিবে, নয়ত দিবে না। সেদিন ইউরোপা আর সেই অন্য সযত্ন গ্রহটার প্রাণীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হতেও পারে।
এমন সেতু হয়ত কখনোই সম্ভব না। এই দুই অতি অপরিচিত সচেতনতা পাশাপাশি কখনোই চলতে পারবে না। এমন হলে তাদের যে কোনো এক দল সৌরজগতে রাজত্ব করবে।
কারা করবে তা এখনো কেউ জানে না।
এমনকি জানে না ঈশ্বরেরাও।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
অবশ্যই, আমার প্রথম ধন্যবাদটা স্ট্যানলি কুবরিকের জন্য। তিনি অনেক অনেক দিন আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আক্ষরিক অর্থে সার্থক সায়েন্স ফিকশন। মুভির কোনো আইডিয়া আছে কিনা।
তারপর, ধন্যবাদ যাবে আমার বন্ধু এবং এজেন্ট (দুটো একসাথে নয়) স্কট মারডিথের কাছে। মাথা খাটানোর জন্য তার কাছে পাঠিয়েছিলাম মুভির দশ পাতার একটা আউটলাইন। আরো ব্যাপকতার জন্য, আরো নিখুঁত কাজ তুলে আনার জন্য, ইত্যাদি, ইত্যাদি…
আর যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাকী :
সিনর জর্জ লুই ক্যালিক, রিও ডি জেনিরো, যাঁর চিঠি আমাকে এই ঘটনার সিকুয়্যাল তৈরিতে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। (আর পরে, বছরের পর বছর আমি হয়তো বলেই যাব, বলেই যাব, এ সিকুয়্যেল হবারই কথা)।
প্যাসাডোনার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির সাবেক পরিচালক ড. ব্রুস মারি আর ড. ফ্র্যাঙ্ক জর্ডন ল্যাগ্রেঞ্জ-ওয়ান নির্ণয়ে সহায়তা করেছিলেন। আইও- বৃহস্পতির ল্যাগ্রেঞ্জ। আমি অবশ্য আরো অনেক আগে থেকেই পৃথিবী- চাঁদ ল্যাগ্রেন্স নিয়ে মাতামাতি করতাম (স্টেশনারি অর্বিটস জার্নাল অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ডিসেম্বর, ১৯৪৭) কিন্তু আমার পক্ষে আরো লাখো সমীকরণ মেলানো অসম্ভব ছিল, এমনকি আমার হাল জুনিয়র, বিশ্বস্ত এইচ/পি ৯১০০ এ এর সাহায্য নিয়েও করা মুশকিল।
নিউ আমেরিকান লাইব্রেরি ছিল ২০০১: এ স্পেস ওডিসির কপিরাইট অধিকারী। ৫১ নং অধ্যায়ের কথা নিয়েছি তা থেকে (২০০১: এ স্পেস ওডিসির ৩৭ নং অধ্যায়। এমনকি ৩০ এবং ৪০ অধ্যায়েও এর সহায়তা নিতে হয়েছে।
ঊনসত্তুরে হাজার কাজের মাঝে ইউ এস ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের জেনারেল পটার আমাকে এসকট দেখিয়েছিলেন যা পৃথিবীর সবচে বড় গর্তগুলোর অন্যতম।
ওয়েন্ডেল সলোমন্স, রাশিয়ান ভাষা নিয়ে খুব সহায়তা করেছেন (এবং রাশলিস), সময়ে সময়ে উৎসাহ যুগিয়েছেন জাঁ মাইকেল জার, ভ্যাঙ্গেলিস আর অতুলনীয় জন উইলিয়ামস।
ওয়েটিং ফর দি বারবারিয়ানস দ্রষ্টব্য।
উপন্যাসটা লেখার সময়ই আমি দেখতে পাই যে ইউরোপার রিফুয়েলিং বিষয়ে একটা পেপার লেখা হয়েছে, আউটার প্ল্যানেট স্যাটেলাইট রিটার্ন মিশনস ইউজিং ইন সিটু প্রোপ্যালান্ট প্রোডাকশন, লিখেছিলেন অ্যাস, স্ট্যানকট, নিয়েহক, আর কুড়া (অ্যাস্টা অ্যাস্ট্রোনটিকা এইট, পাঁচ-ছয়, মে-জুন উনিশশো একাশি।)।
আত্ম-শিখন প্রক্রিয়ার (জন ভন নিউম্যান মেশিন) মেশিন, বিশেষত অপার্থিব খনি কর্ম করার ব্যাপারে সিরিয়াস কাজ করেছেন ভন জিয়াংহ সেন এবং ভাব্রো। নাসার মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে (দ্রষ্টব্য, সেলফ রেপ্লিকেশন সিস্টেম-নাসা টেকনিক্যাল মেমোরেন্ডম ৭৩০৪১) যারা বৃহস্পতিতে এমন সেলফ রেপ্লিকেটিং সিস্টেম হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তাদের বলছি হিসাব দেখতে যেখানে ষাট হাজার বছরের জায়গায় বিশ বছর যথেষ্ট।
এম. রস এবং এফ. রি লরেন্স লিভারমোর ল্যাবরেটরিতে কর্মরত। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুই গবেষক দেখিয়েছেন যে গ্যাস জায়ান্টের ভিতরের কোরটা হীরা হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। তাঁদের গবেষণা ছিল ইউরেনাস আর নেপচুন নিয়ে। আমার তো মনে হয় যে ওই দুটো বাদ দিয়ে বরং গ্রহরাজের ভিতরে এমন একটা হীরা থাকার সম্ভাবনা প্রকট। ডি বিয়ার্স ইচ্ছা করলে কথাটা টুকে রাখতে পারে।