এসব প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে। থাকতেই হবে।
মানুষ এসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত কোনোদিন কোনোকিছুতেই সন্তুষ্ট হবে না।
৮. সামনে দেখা : সাল বিশ হাজার এক
সামনে দেখা : সাল বিশ হাজার এক
…কিন্তু কোনো গ্যালাক্সিতে যেহেতু তারা মনের চেয়ে দামী কোনোকিছুই পায়নি তাই এর নতুন ভোরকেই সবচে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে… সব জায়গায়। পরিণত হয়েছে কৃষাণে। তাদের চাষের জমি অনন্ত নক্ষত্রবীথি। কখনো বুনেছে তারার জগতের চারা, কখনো পেয়েছে দারুণ ফসল।
মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ফসল ফলানো বাদও দিতে হয়েছে, দিতে হয়েছে পুড়িয়ে…
.
এবং গত কয়েক প্রজন্ম ধরে ইউরোপানরা একটু এদিক সেদিক অভিযানের সাহস পায়। তারা চির উজ্জ্বল দিনের প্রান্ত ছেড়ে একটু একটু যেতে পারে রাতের প্রান্তে। সেখানে আজও হয়ত সেই বরফ পাওয়া যাবে যেটা তাদের এক সময় ছেয়ে রেখেছিল। লক্ষ বছর ধরে। এমনকি কেউ কেউ সেখানে থেকেও গেছে; নিচ থেকে উঠে আসা উজ্জ্বল কিন্তু তাপহীন ঠাণ্ডা সূর্য ডুবে যাওয়া আর নানা অজানা ভয়কে জয় করতে।
এর মধ্যেই সেইসব নবীন অভিযাত্রী আবিষ্কার করে বসেছে যে মহাবিশ্ব তাদের কল্পনার চেয়েও অবাক করা। নিপ্রভ সাগরগুলোতে তারা যে স্পর্শকাতর চোখ পেতে রেখেছিল তা ভালই ফল দেয় আজকাল। আকাশে হাজারো নক্ষত্র আর চলন্ত নানা জিনিস দেখা যায় আশপাশে। তারা অ্যাস্ট্রোনমির ভিত গেঁথে দিয়েছে…পুরোহিতরা সব নক্ষত্রকে নাম দিয়েছে একেক দেবতা করে। এমনকি কোনো কোনো দুঃসাহসী তার সাদামাটা জীবনটাকে বয়ে নিয়ে বলে বেড়াচ্ছে যে তাদের এ বিরাট দুনিয়াই সব নয়। আরো হাজার ভুবন আছে কালো আকাশের বুকে।
সাগর থেকে উঠে আসার পর পরই তাদের জগতে বিস্ফোরণের মতো বিবর্তন হয়ে যায়; বরফ গলার সাথে সাথে। আজ তারা দূরের নক্ষত্রদেবদের তিনটা ভিন্ন শ্রেণীতে ফেলতে শিখেছে। সবচে গুরুত্বপূর্ণ হল কাছের সূর্য। কোনো কোনো লোকগাঁথায় পাওয়া যায় যে সূর্যটা সব সময় সেখানে ছিল না। কেউ কেউ এসব বিশ্বাসও করে। এর জন্ম হয়েছে হঠাৎ। প্রাকৃতিকভাবে ধীরে জন্মেও থাকতে পারে। কেউ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে বেড়ায়, হঠাৎ সূর্যটার জন্মের সময় ইউরোপার অনেক অনেক প্রাণী চিরতরে হারিয়ে গেছে। যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাও ভাল। সেই ছোট অনড় নক্ষত্র জীবনদায়িনী।
হয়ত ঠাণ্ডা সূর্য তার ভাই। সে কোনো খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পেয়ে থাকতে পারে-তাই হয়ত স্বর্গের দরজা থেকে অনেক দূরে ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে ওকে। আসলে এ ছোট সূর্যটা নিয়ে সাধারণ ইউরোপানের মধ্যে কোনো চিন্তাই নেই। সারাক্ষণ যারা প্রশ্ন করে বেড়ায়, তাদের দেখা যায় এ নিয়ে ভাবতে।
এটা সত্যি, তাদের অন্ধকার অভিযানে ঐ জিনিসগুলো ভালই সাহায্য করে। যারা সেই আঁধার দেশের যাত্রী, তারা একটা দাবী করত সব সময়। কেউ বিশ্বাস করে কেউ করে না। কালো আকাশটা নাকি দূরের সূর্যের মতো আরো অগণিত আলোয় আলোয় ভরা। সেগুলো ঠাণ্ডা সূর্যের চেয়েও অনেক অনেক ছোট দেখায়। একেকজন একেক উজ্জ্বলতা নিয়ে মিটমিট করে। তাদের অবস্থান নির্দিষ্ট।
এ স্থিরচিত্র ছাড়াও তিনটা চলন্ত জিনিস খুবই জটিল হিসাব মেনে মেনে চলে, এত কঠিন হিসাব কেউ বের করতে পারবে না। শুধু বোঝা যায়। আর আকাশের বাকিদের থেকে ত্রিকন্যা অনেক বড়। তারা বাড়ে আবার কমে, কখনো চাকতি, কখনো আধ-চাকতি, আবার কখনো একেবারে চিকণ, বাঁকা…
তারা অবশ্যই মহাবিশ্বের আর সব জিনিসের চেয়ে উজ্জ্বল, আরো আরো কাছে। কারণ তাদের পরিবর্তনশীল পিঠের চিত্র প্রায় স্পষ্ট দেখা যায়।
অবশেষে সবাই মেনে নিয়েছে যে আরো দুনিয়া থাকতে পারে। কিন্তু দু একজন পাগলাটে ছাড়া কেউ মানতে রাজি নয় সেসব বিশ্ব ইউরোপার মতো বড় বা গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে একটার রাতের আকাশ বিরাট বিরাট আঠার মতো লালচে গোলায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, ব্যাপারটাকে ইউরোপানরা বুঝতে পারে না শত চেষ্টা করেও। তাদের পরিবেশে আজো কোনো অক্সিজেন নেই। তাই তারা আগুনকে বুঝতেও পারবে না। মাঝে মাঝে ভিতর থেকে অনেক অনেক কী যেন আসে বেরিয়ে, সেই সূর্যের কাছাকাছি বিশ্বটায়। এটা নিশ্চই থাকার মতো জায়গা নয়। এমনকি ইউরোপার রাতের প্রান্তের চেয়েও খারাপই হবে। তাদের কাছে এক নরক হয়ে দেখা দেয় সেটা।
বাইরের আরো দূরের দু চাকতি একটু শান্ত এলাকা। কিন্তু কিছু কিছু হিসাবে আরো বেশি রহস্যময়। যখন তাদের উপর রাত নেমে আসে তখন আলোর ঝলকানি দেয় দেখা। কিন্তু সেই আলো আরো ভিন্ন, আরো দ্রুত পরিবর্তনশীল। তারা একটা স্থির উজ্জ্বলতায় জ্বলে চলে। চলছে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায়; যদিও প্রজন্মান্তরে সে এলাকা বিবর্তিত হয়।
কিন্তু সবচে অবাক করে সেই ছোট ছোট সূর্যগুলো। মিটমিটে। আলোর আকাশে সেগুলোও মাঝে মাঝে চলন্ত দেখায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের সূর্যের জীবন্ত প্রাণীর আলো হিসাব করে ইউরোপানরা বলে যে মিটমিটে আলোও জীবন্ত প্রাণীর আধার। কিন্তু তাদের সম্ভাব্যতার ভাবনা এ চিন্তাটাকে নাকচ করে দেয়। তার পরও কোনো কোনো পাগলাটে ইউরোপান বিশ্বাস করে যে, সেই সূর্যগুলো, সেই দুনিয়াগুলোতে আছে জীবন।