অন্য চাঁদগুলো?
গ্যানিমিড ভালই থাকবে, দিনের দিকটা বেশি আলো পড়বে আর কী! ক্যালিস্টে অনেক ঠাণ্ডা, তবু যদি বাইরের দিকে যথেষ্ট গ্যাস থাকে তবে একটা জীবিত প্রাণীর উৎস হলে হতেও পারে। কিন্তু আইও এখনকার চেয়েও খারাপ অবস্থায় পড়বে, আমার মনে হয়।
কোনো ক্ষতি নেই। এটা আগে থেকেই দোজখ।
আইওকে হিসাবের বাইরে রেখ না। কার্নো স্বভাবসুলভ সুরে বলল, আমি অনেক পরিশ্রমী তেলওয়ালাকে চিনি যারা এটা পেলে খুশিতে আটখানা হয়ে যাবে শুধু এ ধারণা করে যে সেখানে কোনো না কোনো দামি জিনিস আছে। কিন্তু এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার আমাকে খোঁচাচ্ছে।
তোমাকে ডিস্টার্ব করে এমন যে কোনো ব্যাপার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাসিলি অবাক গলায় বলল, ব্যাপারটা কী?
হাল কেন মেসেজটা পৃথিবীর দিকে পাঠিয়েছিল, আমরা আরো কাছে ছিলাম না?
এবার একটু লম্বা নিরবতা নেমে এল সবার সামনে। তারপর ফ্লয়েড চিন্তা করে বলল, বুঝেছি, কী বলছ তুমি। সম্ভবত সে নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে এটা পৃথিবীতে যাবে।
কিন্তু সেতো জানে, আমরা এটা রিলে করব…ওহ! তানিয়ার চোখের তারা ছড়িয়ে গেল, এতক্ষণে সে বুঝেছে, এর মানে অন্যরকম।
তোমরা কথা বলছ আমাকে ছেড়ে। অনুযোগ তুলল ভ্যাসিলি।
আমার মনে হয় ওয়াল্টার এর পেছনে দায়ী। ফ্লয়েড একটু দেখে নিল ওকে, বোম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞবোধ করা খুবই ভাল লক্ষণ। অথবা যেটাই ওয়ার্নিং দিয়ে থাকনা কেন, তার প্রতি। কিন্তু তারা শুধু এটুকুই করেছে আমাদের জন্য। মারা পড়তে পারতাম! আর, আমরা বাঁচি বা মরি, মেসেজটা পৃথিবীতে পৌঁছতেই হত।
মারা পড়িনি। জবাব দিল তানিয়া, নিজেদের বাঁচিয়েছি আমরা। নিজের ক্ষমতায়। এমনটা না হলে আমরা কিছুতেই বাঁচতাম না। জানো, সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ। বোকামির জিন বয়ে চলেছি আমরা।
আমার একটু বিশ্রী অনুভূতি হচ্ছে, মনে হয় তোমার কথাই ঠিক। বলল কার্নো বোকাটে চেহারা করে, আমরা যদি লঞ্চডেট পর্যন্ত আঠার মতো লেগে থাকতাম আর ডিসকভারিকে মাদারশিপ হিসেবে ব্যবহার না করতাম, তাহলে সে অথবা তারা আমাদের বাঁচানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করত? যে বুদ্ধিমত্তা বৃহস্পতিকে নক্ষত্র বানিয়ে দিতে পারে, তার পক্ষে আমাদের বাঁচানো কোনো ব্যাপার? কিন্তু তাদের লক্ষণ কী বলে?
একটু অস্থির নিরবতা নেমে আসার পর ফ্লয়েড নিজ দায়িত্বে সেটা ভাঙল।
সবকিছুর পরে, সে মাথা নেড়ে বলল, আমি অত্যন্ত খুশি যে এ প্রশ্নের উত্তর আর কখনোই জানতে হচ্ছে না।
৫৪. দুই সূর্যের মাঝে
রাশিয়ানরা ওয়াল্টারের গান আর চাঙ্গা করা কথাগুলো মিস করবে ফেরার পথে। শেষ কয়েকদিনের চমকের পর সেই পুরনো সূর্য আর পৃথিবীর দিকে ফিরে যাওয়াটা নিতান্তই সাদামাটা দেখাবে তাদের চোখে-ভাবছে হেউড ফ্লয়েড। কিন্তু সবার সারা জীবনের চাওয়া একটা একঘেয়ে, বিরক্তিকর চমকহীন ফেরা।
এরই মধ্যে এসে গেছে তার ঘুম ঘুম ভাব। কিন্তু এখনো চারপাশটা বুঝতে পারছে, বাকিদের কথায় দিতে পারছে সাড়া। আমাকে কি…মরার মতো দেখাবে হাইবারনেশনে থাকার সময়? নিজেকেই প্রশ্ন করল সে। খুব পরিচিত একজনের প্রতি নিয়মিত চেয়ে থাকাটা খুব বিরক্তিকর-যদি সে মাসের পর মাস ধরে ঘুমায়। সম্ভবত এটাই কারো মরণশীলতার কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।
কার্নো পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু চন্দ্র এখনো একটু একটু জাগ্রত, বেশিক্ষণ টিকবে না, শেষ ইঞ্জেকশন কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। এখন আর সে সে নেই। এখন আর ক্যাথেরিনার দৃষ্টির সামনে নিজের নগ্নতার জন্য দুঃখিত নয়। তার শরীরের একমাত্র বাড়তি অংশ, সেই স্বর্ণের শিবলিঙ্গটা যেন লজ্জায় তার কাছ থেকে সরে যেতে চাইছে ভেসে ভেসে, যে পর্যন্ত চেইনে টান না পড়ে।
সব ঠিকঠাক চলছেততা, ক্যাথেরিনা?
কাঁটায় কাঁটায়। কিন্তু তোমাকে হিংসা হয় আমার। আর বিশ মিনিটের মধ্যে তুমি বাড়ি ফিরবে।
যদি স্বস্তি থাকে। তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে যে কোনো ভয়াবহ স্বপ্ন দেখব না?
আজ পর্যন্ত কেউ রিপোর্ট করেনি।
আহা…জেগে কারো মনে নাও থাকতে পারে।
স্বভাবমতো ক্যাথেরিনা তার কথাটাকে খুব গুরুত্বের সাথে নেয়, অসম্ভব! হাইবারনেশনে স্বপ্ন দেখলে সাথে সাথে ই ই জি রেকর্ড তাদের সরিয়ে দেবে। ওকে, চন্দ্র, চোখ বন্ধ কর। আহ! সে যাচ্ছে। এবার তোমার পালা, ফ্লয়েড, তোমাদের ছাড়া শিপটা একেবারে খালি লাগবে। ২৬০ ও ২০১০; ওডিসি টু
থ্যাঙ্কস, ক্যাথেরিনা…একটা সুন্দর ভ্রমণ হোক তোমাদের।
যদিও সে ঘুমানোর পথে, তবু সার্জন-কমান্ডার রুডেস্কোর চেহারা দেখে কিছু একটা আঁচ করছে। ব্যাপারটা কী হতে পারে-লজ্জা? যেন ডাক্তার বলতে চায় কোনো কথা, কিন্তু মনস্থির করতে পারছে না।
ঘুমের ঘোরেই ফ্লয়েড জিজ্ঞেস করল, ব্যাপার কী, ক্যাথেরিনা?
এখনো কাউকে বলিনি-কিন্তু কথা বলার কথা না তোমার! একটা ছোট সারপ্রাইজ আছে।
তোমার… তাড়াতাড়ি করা… উচিত…
ম্যাক্স ব্রেইলোভস্কি আর জেনিয়া বিয়ে করবে।
এটা… একটা… সারপ্রাইজ… হওয়ার কথা?
না, প্রস্তুত করার জন্য বললাম। পৃথিবীতে ফিরেই আমি আর ওয়াল্টারও একই কাজ করব ঠিক করেছি। তুমি কী বল?
এবার বুঝলাম কেন দুজনে এত সময় ব্যয় করতে। হ্যাঁ, এটা আসলেই এক চমক… কে ভেবেছে এ কথা?