সত্যি, ভ্যাসিলি চিন্তিত মুখে বলল, বাইরের প্রভাব ছাড়া বৃহস্পতি নক্ষত্র হওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বড় না। ফিউশন হবে কীভাবে?
তার মানে আমরা এইমাত্র একটা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দেখলাম?
অবশ্যই। এখন আমরা জানি জাগাদকার মনে কী ছিল।
কীভাবে করেছে কৌশলটা? ভ্যাসিলি, তোমাকে যদি কাজটা দেয়া হত, কীভাবে বৃহস্পতিকে সূর্যে পরিণত করতে?
ভ্যাসিলি এক মিনিট ভাবল, তারপর কাঁধ ঝাঁকালো ভয় পাবার ভান করে।
আমি শুধুই থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমার। নক্ষত্র বানানোর কাজে তেমন অভিজ্ঞতা নেই আমার। কিন্তু একবার ভাববা…ঠিক হ্যায়, আমাকে যদি দশটা বৃহস্পতির ভর যোগ করার অনুমতি না দাও অথবা মাধ্যাকর্ষণের মান পরিবর্তনও না। করাও তো আমি অবশ্যই গ্রহটাকে আরো অনেক ঘন করে ফেলব-এটা এক আইডিয়া হতে পারে…
তার কণ্ঠ নিরবতার পথ ধরে থেমে গেল। সবাই অপেক্ষা করছে ধৈর্য ধরে। চোখগুলো সারাক্ষণ ভিউ মনিটরের উপর। সেই বৃহস্পতি-তারকা তার জন্ম বিস্ফোরণের পর মনে হয় একটু শান্ত এখন। এখন এক ঝলমলে আলোর উৎস-এখান থেকে সূর্যকে যেমন দেখায়।
আমি আরো আগ-পাশলা চিন্তা করছি-তবু এমন পথে কিছু হলে হতেও পারে। বৃহস্পতি হল…ছিল বেশিরভাগ হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ গ্রহ। যদি বিশাল অঙ্কের পরিমাণ গ্যাস ভারি মৌলে রূপান্তরিত হয় তবে-কে জানে, নিউট্রন ম্যাটারে পরিণত হলে একেবারে কোরের দিকে নেমে যাবে। হয়ত এ কাজটাই শতকোটি জাগাদকা করেছে গ্যাস শুষে নিয়ে। নিউক্লিওসিন্থেসিস-খটি হাইড্রোজেন থেকে উচ্চভরের মৌল বানানো। এ এক কৌশল হতে পারে…অতি জানার কৌশল! কোনো ধাতুর অভাব নেই-স্বর্ণ অ্যালুমিনিয়ামের চেয়েও সস্তা!
কিন্তু এ দিয়ে ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায়?
কোর অনেক ভারি হয়ে গেলে বৃহস্পতি ভেঙে পড়বে। এক সেকেন্ড সময়ও লাগবে না-সম্ভবত। তাপমাত্রা ফিউশন শুরুর জন্যে যথেষ্ট হওয়ার কথা। ওহ, তবু আরো ডজন ডজন সমস্যা আছে-কীভাবে লোহার প্রয়োজন মিটবে, রেডিয়েশনের ট্রান্সফার হবে কীভাবে, কী করে চন্দ্রশেখরের সীমা পেরুবে! ভেব না। এটা শুধু শুরু। আমি ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাব। নাহয় এরচে ভাল কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে হবে।
আমি শিওর, তুমি মাথা ঘামাবে, ভ্যাসিলি, বলল ফ্লয়েড, কিন্তু এরচে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আমাদের সামনে। তারা কেন এমন করল?
শিপের ইন্টারকম দিয়ে নাক গলাচ্ছে ক্যাথেরিনা, ওয়ানিং?
কার বিরুদ্ধে?
এটাও পরে খুঁজে বের করা যাবে।
জেনিয়া শান্ত সুরে বলল, আমার মনে হয় না এটা কোনো অ্যাক্সিডেন্ট।
এ কথায় আলোচনা থমকে যায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য, কী ভয়াবহ আইডিয়া! ফিরে তাকাচ্ছে ফ্লয়েড, কিন্তু আমার মনে হয় ধোপে টিকবে না। এমন হলে কোনো ওয়ানিং থাকত না।
হতে পারে, তুমি যদি দুর্ঘটনাবশত কোনো বনে আগুন ধরিয়ে দাও তো কিছু করার না থাকলেও সবাইকে অম্ভত সতর্ক করবে।
আরো একটা ব্যাপার পাওয়া গেল যা আমরা কোনোদিন জানতে পারব না…বোধ হয়। ভ্যাসিলি দীর্ঘশ্বাস ফেলল, আমার মনে হয় কার্ল সাগান ঠিকই বলেছে। বৃহস্পতির বুকে হয়ত প্রাণী ছিল।
পরীক্ষায় কিন্তু পাওয়া যায়নি।
তাদের পাওয়ার সুযোগ ছিল? তুমি যদি অনেক অনেক উপর থেকে সাহারা নাহয় অ্যান্টার্কটিকার কয়েক হেক্টর খুঁজে ফের প্রাণীর জন্য, তাহলে পৃথিবীর প্রাণের প্রমাণ পাবে? আমরা সারাক্ষণ বৃহস্পতির উপরে এটুকুই করেছি।
হেই! বলল ব্রেইলোভস্কি, ডিসকভারি আর হালের খবর কী?
বিকন ফ্রিকোয়েন্সিতে শাসা লংরেঞ্জ রিসিভার সেট করে খোঁজা শুরু করে দিয়েছে সাথে সাথেই। কোনো সিগন্যালের নাম গন্ধ নেই।
একটু পরেই সে নীরব দলটার দিকে তাকালো, ডিসকভারি নেই।
কেউ ডক্টর চন্দ্রের দিকে তাকায়নি; কিন্তু সবার পক্ষ থেকেই ঝরে পড়ছে নীরব সমবেদনা। কোনো পিতা তার সন্তানকে হারালে বাকিদের কী বলে সান্ত্বনা দেয়ার থাকতে পারে?
কিন্তু হাল তাদের জন্য আরো একটা চমক হয়ে আসবে।
৫৩. উপহার, এ স-ব জগৎ
শতবার পৃথিবীর দিকে গিয়েছে রেডিও ম্যাসেজ। বিস্ফোরণের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। ছোট, সাধারণ কিছু কথা বার বার বলা হয়েছিল।
সব জগৎ তোমাদের-শুধু ইউরোপা ছাড়া।
সেখানে নামার কোনো চেষ্টাই করোনা।
তিরানব্বইবার ঘোষণাটা সম্প্রচার করা হয়। এরপর শব্দগুলো জট পাকিয়ে যায়। হঠাৎ করেই শুধু ইউরোপা ছাড়া কথাটুকু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
এবার বুঝলাম, ফ্লয়েড বলল, যখন দারুণ ভয় পাওয়া মিশন কন্ট্রোল এই মেসেজটা পাঠায় তাদের কাছে। এটা বিদায়বেলার উপহার। একটা নতুন সূর্য এবং এর চারপাশে একটা নতুন সৌরজগৎ। জানোতো, সব সৌর জগতেই জোড়া সূর্য দরকার প্রকৃত পরিপূর্ণ আলোকশক্তি আর ভারসাম্যের জন্য।
কিন্তু মাত্র তিনটা কেন? প্রশ্ন করল তানিয়া।
আমরা বেশি আশা না করি… মজা করে জবাব দিল ফ্লয়েড, একটা দারুণ কারণ খুঁজে পেয়েছি। আমরা জানি, ইউরোপায় জীবন আছে। বোম্যান-অথবা তার বন্ধুরা, তারা যাই হোক না কেন-এ এলাকায় আমাদের নাক গলানো পছন্দ করে না।
আরেক অর্থে ভাল। ভ্যাসিলি গলা চুলকে বলল, আমি কিছু হিসাব করেছি এ নিয়ে। আমার মনে হয় দ্বিতীয় আদিত্যকে এভাবেই বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার এ হারেই সূর্যটা আলো ছড়াতে থাকবে। বরফ জমাট ইউরোপা পরিণত হবে চমৎকার ট্রপিক্যাল এলাকায়; বরফ গলে গেলেই। এখনি গলছে।