আমি জানি না তাতে কী বোঝায়।
স্যরি। কোনোকিছু না ও বোঝাতে পারে সে ব্যপারটা। এ নিয়ে ভেব না। এখন একটা নতুন ফাইল খোলল প্লিজ-এই নামে। কিবোর্ডে ইনপুট দিয়ে চন্দ্র টাইপ করল-ফিনিক্স।
সে সালকে প্রশ্ন করে, শব্দটার মানে জানো নাকি?
বোঝা যায় না এমন সামান্য সময় থেমে কম্পিউটার উত্তর দিল, বর্তমান বিশ্বকোষে পঁচিশটা উদাহারণ আছে এ শব্দটার।
কোনটাকে ঠিক মনে হয়?
একিলিসের গৃহশিক্ষক?
মজার ব্যাপার তো। তাকে আমি চিনলাম না। আবার চেষ্টা কর।
আগের জীবনের ছাই থেকে পুনর্জন্মলাভ করা অবাস্তব পাখি।
চমৎকার। এইতো, তুমি বুঝতে পারছ। কেন আমি একে পছন্দ করলাম?
কারণ তুমি আশা করছ যে হালকে আবার ঠিক করা যাবে।
তোমার সহযোগিতায়। তুমি তৈরি তো?
এখনও না। একটা প্রশ্ন করতে চাই।
কী প্রশ্ন?
আমি কি স্বপ্ন দেখবো?
অবশ্যই তুমি দেখবে। সব বুদ্ধিমান প্রাণী স্বপ্ন দেখে-কিন্তু কেন কেউ জানে না। চন্দ্র মুহূর্তের জন্য থামল, চুরুট থেকে আর একটা ধোয়ার ফাঁক দিয়ে প্রায় অস্পষ্ট সুরে কিছু বলল যা কখনো মানুষের কাছে স্বীকার করা মানায় না।
সম্ভবত তুমি হালকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে…যেমন আমি প্রায়ই দেখি।
৪. অভিযানের রূপরেখা
ইংরেজী অনুবাদ :
প্রতি : ক্যাপ্টেন তাতিয়ানা (তানিয়া) অর্লোভা, বিশ্বতত্ত্ববিদ কমান্ডার-মহাশূন্যযান এলেক্সি লিওনভ (ইউএনসিওএস রেজিস্ট্রেশন ০৮/৩৪২)
হতে : ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাস্ট্রোনটিক্স, পেনসিলভানিয়া এভিনিউ, ওয়াশিংটন।
বহিঃমহাশূন্য বিষয়ক কমিশন, ইউএসএসআর বিজ্ঞান একাডেমি। করোলিভ প্রসপেক্ট, মস্কো।
অভিযানের লক্ষ্য :
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপনাদের অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে :
১. ইউএস মহাশূন্যযান ডিসকভারির সাথে মিলিত হতে বৃহস্পতি জগৎ এবং সংকেত স্থানের দিকে অগ্রসর হওয়া (ইউএনসিওএস ০১/২৮৩)।
২. মহাশূন্যযানে আরোহণ এবং এটার আগের অভিযান নিয়ে সম্ভাব্য তথ্য সংগ্রহ করা।
৩. স্পেসশিপ ডিসকভারিতে সংরক্ষিত সব সিস্টেম পুনরায় সচল করা এবং যদি প্রচুর জ্বালানি থাকে, যানকে বাঁকা পথে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা।
৪. ডিসকভারি বিপদে পড়েছে যে আর্টিফ্যাক্ট দ্বারা তা খুঁজে বের করা, রিমোট সেন্সরের সাহায্যে যতটা সম্ভব ব্যাপক অনুসন্ধান করা।
৫. যদি তা পরামর্শযোগ্য হয় এবং মিশন কন্ট্রোলের অনুমতি থাকে তবে কাছ থেকে পরিদর্শনের জন্য মিলিত হওয়া।
৬. উপরিউক্ত কাজ হলে বৃহস্পতি এবং এর উপগ্রহগুলোয় উপযুক্ত জরিপ করা।
বোঝা যায় যে আগাম না জানা পরিস্থিতির কারণে অগ্রাধিকারে পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে, বা কিছু লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব হতে পারে। এ কথা পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে যে, এলিয়েন সৃষ্ট বস্তুর তথ্য পাওয়া জরুরি। কিন্তু উদ্দেশ্য হল মহাশূন্যযান ডিসকভারির সাথে নির্ধারিত জায়গায় মিলিত হওয়া; আত্মরক্ষার প্রচেষ্টাসহ অন্য সব লক্ষ্যের মধ্যে এটা অবশ্যই অগ্রগণ্য হবে।
মহাশূন্যযান-ক্রু
স্পেসশিপ এলেক্সি লিওনভের ক্রু গঠিত হবে:
ক্যাপ্টেন তাতিয়ানা অর্লোভা (প্রকৌশল প্রচালন)
ড. ভ্যাসিলি অর্লোভ (বিমানচালন জ্যোতির্বিজ্ঞান)
ড. ম্যাক্সিম ব্ৰেইলোভস্কি (প্রকৌশল-অবকাঠামো)
ড. আলেকজান্ডার কোভলেভ (যোগাযোগ প্রকৌশল)
ড. কিনোলাই ক্যাভেরিনা রুডেঙ্কো (মেডিক্যাল লাইফ সাপোর্ট)
ড. ইরিনা ইয়াকুনিনা (মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)।
অতিরিক্ত হিসেবে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাস্ট্রোনটিক্স নিচের তিনজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে পাঠাবে:
ড. হেউড ফ্লয়েড স্মারকলিপির ইতি টেনে হেলান দিল চেয়ারে। সবকিছু ঠিকঠাক। অভিযান শুরুর স্থানে ফিরে না এসে চালিয়ে যাওয়া বিষয়টাও অনুমোদিত হয়েছে। এমনকি মিশন বাতিল করার আশা করলেও পেছন ফেরার আর কোনো পথ নেই।
ফ্লয়েড এক পলক তাকায় সুইমিং পুলের অন্য পাশে দুবছরের ক্রিসের সাথে বসা ক্যারোলিনের দিকে। বাচ্চাটা মাটির চেয়ে পানিতে বেশি আরামে থাকে, এবং কিছু সময়ের জন্য পানির নিচে এমনভাবে ডুবে থাকতে পারে যে গেস্টরা ভয় পেয়ে যায় প্রায়ই। সে এখনো মানুষের মতো কথা বলতে শেখেনি। অথচ এ বয়সেই যেন বুঝতে পারে ডলফিনদের ভাষা।
ক্রিস্টোফারের এক বন্ধু এইমাত্র সাঁতার কেটে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভেতরে ঢুকে আদর পাওয়ার জন্য বাড়িয়ে দিল পিঠ। ফ্লয়েড ভাবল, পদচিহ্নহীন বিশাল মহাসাগরে তুমিও এক পথভোলা প্রাণী; কিন্তু তোমার ঐ প্রশান্ত মহাসাগর আমার সামনের বিশালতার কাছে কত ছোট ঘোঁট মনে হচ্ছে!
ক্যারোলিন ফ্লয়েডের স্থির তাকিয়ে থাকা খেয়াল করেছে। সে তার দিকে বিষণ্ণভাবে তাকালো, তবে রাগ করল না; রাগটা গত কদিন জ্বলে জ্বলে নিভে গেছে। এমনকি সে সামনে এসে কষ্টে ভরা ব্যাকুল একটা হাসি দিল। বলল, কবিতাটা ফিরে পেয়েছি, শুরুটা এমন :
যাকে তুমি ছেড়ে গেলে কেমন আছে সে নারী;
সাথে আছে আগুন ঘেরা একর জোড়া বাড়ি,
হে ধূসর বুড়ো! কেন বিধবার প্রভুর সাথে দিচ্ছ পাড়ি?
স্যরি। বুঝতে পারলাম না। কে বিধবার প্রভু?
কে নয়-কী। সাগর। কবিতাটা এক জলদস্যু নারীর শোকগাঁথা। শত বছর আগে রুডিয়ার্ড কিপলিং লিখেছিলেন।
স্ত্রীর হাত টেনে নিল ফ্লয়েড, ক্যারোলিন কোনো উত্তর দিল না; দিল না কোনো বাঁধা।