- বইয়ের নামঃ ২০১০ : ওডিসি টু
- লেখকের নামঃ আর্থার সি ক্লার্ক
- প্রকাশনাঃ সন্দেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
২০১০ : ওডিসি টু
১. প্রথম পর্ব : লিওনভ
২০১০ : ওডিসি টু – আর্থার সি ক্লাক / অনুবাদ : মাকসুদুজ্জামান খান
প্রথম প্রকাশ : জুন ২০০৫
লেখকের উৎসর্গ
মহান দুই রাশিয়ান জেনারেল অ্যালেক্সি লিওনভ-কসমোনট, সোভিয়েত ইউনিয়নের বীর, চিত্রশিল্পী।
এবং
অ্যাকাডেমিশিয়ান আন্দ্রে শাখারভ–
বিজ্ঞানী, নোবেল বিজয়ী, মহান মানবতাবাদী
অনুবাদকের উৎসর্গ
যিনি এই বইয়ের এক তৃতীয়াংশ লিখেও
অনুবাদক হিসেবে নাম দিতে চাননি
আব্বুকে
লেখকের কথা
২০০১: আ স্পেস ওডিসি উপন্যাসটা লেখা হয় ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে; প্রকাশিত হয় আটষট্টির জুলাইতে, ছবি মুক্তির পর পরই। দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ডর্স অব ২০০১-এ বলেছিলাম, চলচ্চিত্র আর উপন্যাসের কাজ সমান্তরালে চলে। ফলে আমি লেখার মোটামুটি ব্যয়বহুল পথ ধরে চলা শুরু করলাম; স্ক্রিপ্ট দেখার সুযোগ পেলাম ছবির চিত্র দেখার পর, তাও আবার দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয় পুরনো ধারণায় ভিত্তি করে।
ফলে, কাহিনীর গতিধারায় একটা সমান্তরালতা থেকে যায়, সেই সাথে পার্থক্যও রচিত হয় বিস্তর। উপন্যাসে স্পেসশিপ ডিসকভারির লক্ষ্যস্থল ছিল শনির সবচে রাজকীয় উপগ্রহ জ্যাপেটাস বা ইপেটাস। শনীয় জগতে যেতে হয়েছিল বৃহস্পতিকে পাশ কাটিয়ে। ডিসকভারি চলে যায় গ্রহরাজের অসীম গ্র্যাভিটিশনাল ফোর্স কাজে লাগিয়ে, ধনুকের ছিলার মতো এর দানবীয় শক্তিকে নিজের জন্য ব্যবহার করে এগিয়ে যায় সামনে। ভয়েজার স্পেসপ্রোব সেই একই কাজ করে ১৯৭৯ সালের অভিযানে, বাইরের দিকের দৈত্যদের সাথে প্রথম মোলাকাতের সময়গুলোতে।
ছায়াচিত্রে স্ট্যানলি কুবরিক বিজ্ঞের মতো মানুষ ও মনোলিথের মাঝখানে তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে উপস্থাপিত করেন বৃহস্পতীয় জগতে। শনিকে পুরো স্ক্রিপ্ট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, যদিও ডগলাস ট্রাম্বল তার বলয়সমৃদ্ধ গ্রহের অভিজ্ঞতা পরবর্তীকালে সাইলেন্ট রানিং চলচ্চিত্রে কাজে লাগিয়েছিলেন।
সেই ষাটের দশকে কেউ হয়তো ভাবেনি যে বৃহস্পতি অভিযান আগামী শতকে বরং মাত্র পনের বছর সামনে উপস্থিত। তারপর সামনের সেই অচেনা জগতে বিছানো শত রহস্যের দরজা খুলে গেল, আমরা দেখতে পেলাম অনেক অপ্রত্যাশিতের হাতছানি। আশা করা যায় ভয়েজার অভিযান দুটোর ফলে যে বিস্ময়ের জন্ম হয়েছে। সেটাও পেছনে পড়ে যাবে আসতে থাকা নূতন মিশনের আলোয়।
২০০১ লেখার সময় আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো সবচে শক্তিশালী টেলিস্কোপেও এক একটা ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দেখাতো। কিন্তু আজ উল্টে গেছে পাশাখেলার ছক। এখন তারা প্রত্যেকে নিজস্বতা নিয়ে উপস্থিত আমাদের চোখের সামনে; তাদেরই একজন, আইও, এখন সৌরজগতের সবচে তেজস্বী উপগ্রহ।
এ আবিষ্কারগুলোর আলোকে ছায়াচিত্র বা উপন্যাস, দুটি-ই যুগজিজ্ঞাসার সামনে পড়েছে। ছবির বৃহস্পতীয় জগৎ আর ভয়েজারের ফিল্মগুলোতে উঠে আসা গ্রহরাজের রাজত্বে অনেক ফারাক চোখে পড়ে। আজকের জগতে যাই লেখা হোক কেন, তা অবশ্যই ১৯৭৯ সালের আবিষ্কারের রসে জারিত হতে হবে; আজ আর সেগুলো অচেনা ভুবন নয়।
এখানে আরো শক্তিময় একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার জড়িত। মহাকাল পৃথিবীর ইতিহাসকে দু অংশে ভাগ করে দিয়েছে; ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা রাখার আধযুগ আগেই আমি আর স্ট্যানলি কুবরিক যখন, সত্যিকার সার্থক সায়েন্স ফিকশন (কথাটা তার) মুভি তৈরির চেষ্টায় প্রাণ আঁতিপাতি করতাম তখন ২০০১ লেখা হয়। তাই, সেই চান্দ্র বিভাজনের পর অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তন আসে লেখনীর জগতে, যথারীতি।
চাঁদের পথে পা বাড়ানোর আগেই অ্যাপোলোর অ্যাস্ট্রোনটরা চলচ্চিত্রটা দেখেছিলেন। উনিশো আটষট্টির ক্রিসমাসে অ্যাপোলো আটের ক্রুরা চান্দ্র দিগন্তে প্রথম চোখ রেখে নাকি রেডিওতে জানাতে চাচ্ছিলেন যে একটা বিশাল কালো মনোলিথ দেখা যাচ্ছে দূরে কোথাও। হায়, বাস্তবতো এমন নয়!
প্রকৃতি কত নিষ্ঠুর খেলাই না খেলতে পারে! উনিশো স্যুরের অ্যাপোলো তেরো মিশনে আরো একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
যে কমান্ড মডিউলে লোকজন থাকত সেটার নাম ছিল ওডিসি। অক্সিজেন সিলিন্ডার বাস্ট হয়ে যেতে উদ্যত হবার একটু আগে তারা রিচার্ড স্ট্রাউসের জরথুস্ত্র থিম বাজাচ্ছিল, যেটাকে বর্তমানে সারা পৃথিবী মুভিটার কল্যাণে চেনে। এনার্জি চলে যাবার সাথে সাথে জ্যাক সুয়েগার্ট মিশন কন্ট্রোলের সাথে রেডিওতে যোগাযোগ করে, হিউস্টন, উই হ্যাভ হ্যাড এ প্রব্লেম।
কাছাকাছি এক অবস্থায় ছায়াচিত্রে হাল ডিসকভারির ক্রু ফ্র্যাঙ্ক পোলকে যেভাবে বলেছিল, স্যরি টু ইন্টারাপ্ট দ্য ফেস্টিভিটিস, বাট উই হ্যাভ এ প্রব্লেম।
অ্যাপোলো তেরোর মিশন রিপোর্ট নাসাতে আসে, পরে জনসমক্ষে প্রকাশের পর নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর টম পেইন আমাকে একটা কপি পাঠান যেখানে লেখা ছিল:
আর সব সময়ের মতো যেমন করে আপনি বলেন, এমনটা হতে পারে, আর্থার।
আমি একই সময়ে ঘটিত তিন-চারটা ব্যাপারে মিল দেখে এখনো থমকে যাই।
আরো একটা সাড়া কম সিরিয়াস হলেও একই রকম অবাক করে। ছবির টেকনিক্যাল দিক দিয়ে সবচে মেধাবী কাজের মধ্যে একটা হল, ফ্র্যাঙ্ক পোল একটা গোল ট্র্যাকের ভিতরে বারবার জগিং করতে করতে ঘুরতে থাকে বিশাল সেন্ট্রিফিউজের মধ্যে। তার এ দৌড়ানো সম্ভব হয় জিনিসটার ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কৃত্রিম গ্র্যাভিটির কল্যাণে।