কিন্তু বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের মধ্যে যে বৈর বিরোধ বৰ্তমান তার যথাসম্ভব স্পষ্ট স্বীকৃতিটা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে সঞ্চার করার কাজ থেকে তারা মুহূর্তের জন্যও বিরত হয় না; এইজন্য যাতে, বুর্জোয়া শ্রেণী নিজ আধিপত্যের সঙ্গে সঙ্গে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আসতে বাধ্য, জার্মান মজুরেরা যেন তৎক্ষণাৎ তাকেই বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারে; এইজন্যই যাতে, জার্মানিতে প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীগুলির পতনের পর যেন বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধেই অবিলম্বে লড়াই শুরু হতে পারে।
কমিউনিস্টরা প্রধানত জার্মানির দিকে মন দিচ্ছে কারণ সে দেশে একটি বুর্জোয়া বিপ্লব আসন্ন, ইউরোপীয় সভ্যতার অধিকতর অগ্রসর পরিস্থিতির মধ্যে তা ঘটতে বাধ্য, এবং ঘটবে সতেরো শতকের ইংল্যান্ড ও আঠারো শতকের ফ্রান্সের তুলনায় অনেক বিকশিত এক প্রলেতারিয়েত নিয়ে। এবং এই কারণে যে, জার্মানির বুর্জোয়া বিপ্লব হবে অব্যবহিত পরবর্তী প্রলেতারীয় বিপ্লবের ভূমিকমাত্র।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, কমিউনিস্টরা সর্বত্রই বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিটি বিপ্লবী আন্দোলন সমৰ্থন করে।
এই সব আন্দোলনেই তারা প্রত্যেকটির প্রধান প্রশ্ন হিসাবে সামনে এনে ধরে, মালিকানার প্রশ্ন, তার বিকাশের মাত্রা তখন যাই থাক না কেন।
শেষ কথা, সকল দেশের গণতন্ত্রী পার্টিগুলির মধ্যে ঐক্য ও বোঝাপড়ার জন্য তারা সর্বত্র কাজ করে।
আপন মতামত ও লক্ষ্য গোপন রাখতে কমিউনিস্টরা ঘৃণা বোধ করে। খোলাখালি তারা ঘোষণা করে যে তাদের লক্ষ্য সিদ্ধ হতে পারে কেবল সমস্ত প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সবল উচ্ছেদ মারফত। কমিউনিস্ট বিপ্লবের আতঙ্কে শাসক শ্রেণীরা কাঁপুক। শৃঙ্খল ছাড়া প্রলেতারিয়েতের হারাবার কিছু নেই। জয় করবার জন্য আছে সারা জগৎ।
দুনিয়ার মজুর এক হও!
—————-
ডিসেম্বর, ১৮৪৭ থেকে জানিয়ারি, ১৮৪৮-এর মধ্যে মার্কস ও এঙ্গেলস কর্তৃক লিখিত, ফেব্রুয়ারি ১৮৪৮ সালে লণ্ডনে প্রথম প্রকাশিত।
১৮৮৮ সালে লণ্ডনে প্রকাশিত ও এঙ্গেলস কর্তৃক সম্পাদিত ইংরাজী অনুবাদের ভাষান্তর।
—————-
1) ১৬৬o থেকে ১৬৮৯ সালের ইংরেজী রেস্টোরেশন নয়, ১৮১৪ থেকে ১৮৩০ সালের ফরাসী রেসেন্টারেশন। (১৮৮৮ সালের ইংরেজী সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
2) লেজিটিমিস্ট–অভিজাত ভূস্বামীদের পার্টি বুরবোঁ রাজবংশের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী। ‘নবীন ইংলণ্ড’—১৮৪২ সাল নাগাদ গঠিত ইংরেজ অভিজাত, রাজনৈতিক ও সাহিত্যিকদের একটি গোষ্ঠী, মতামতে রক্ষণশীল পার্টির কাছাকাছি। এর বিশিষ্ট প্রতিনিধি হলেন ডিজরেলি, টমাস কালাইল প্রভৃতি।– সম্পাদক
3) কথাটা বিশেষ করে জার্মানি সম্বন্ধে খাটে। সেখানে অভিজাত ভূস্বামী ও জমিদাররা বড় বড় মহাল নিজেরাই গোমস্তা রেখে চাষ করায়, তাছাড়া নিজেরাই ব্যাপকভাবে বীটচিনি ও আলুর মদ তৈরি করে। এদের চেয়ে অবস্থাপন্ন ইংরেজ অভিজাতেরা এখনও ঠিক এতটা নামেনি; কিন্তু তারাও কমতি খাজনার ক্ষতিপূরণের জন্য কমবেশী সন্দেহজনক জয়েন্ট-স্টক কোম্পানি পত্তন করার কাজে নিজেদের নাম ধার দিতে জানে। (১৮৮৮ সালের ইংরেজী সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
4) ১৮৪৮ সালের বিপ্লবী ঝড় এই সমগ্র নোংরা ঝোঁকটাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়ে, সমাজতন্ত্র নিয়ে আরও কিছু জল্পনার বাসনাটুকুও ঘুঁচিয়ে দিয়েছে এর প্রবক্তাদের। এই ঝোঁকের প্রধান প্রতিভূ ও ক্লাসিকাল প্রতিচ্ছবি হলেন কার্ল গ্র্যূন মহাশয়। (১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা)
5) ‘ফালানস্টের’ (phalansteres) হল ফুরিয়ের কল্পিত সমাজতন্ত্রী উপনিবেশ; কাবে তাঁর ইউটোপিয়া এবং পরবর্তী আমেরিকাস্থিত কমিউনিস্ট উপনিবেশকে আইকেরিয়া নাম দেন। (১৮৮৮ সালের ইংরেজী সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
ওয়েন তাঁর আদর্শ কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলিকে ‘হোম কলোনি’ বলতেন; ফুরিয়ের কল্পিত সর্বভোগ্য প্রাসাদের নাম ‘ফালানস্টের’। যে ইউটোপিয় কল্পরাজ্যের কমিউনিস্ট প্রতিষ্ঠান কাবে বর্ণনা করেছিলেন, তার নাম ‘আইকেরিয়া’। (১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা)
6) La Réforme পত্রিকার অনগামীদের কথা বলা হচ্ছে। পত্রিকাটি ১৮৪৩ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত প্যারিসে প্রকাশিত।
7) পার্লামেণ্টে এই পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতেন লেদ্রু-রলাঁ, সাহিত্য ক্ষেত্ৰে লুই ব্লাঁ, দৈনিক সংবাদপত্রে জগতে Réforme পত্রিকা। সোশ্যাল-ডেমোক্রেট নামের উদ্ভাবকদের কাছে নামটির অর্থ হল গণতন্ত্রী বা প্রজাতন্ত্রী দলের একাংশ, যার মধ্যে সমাজতন্ত্রের কমবেশি রং লেগেছে। (১৮৮৮ সালের ইংরেজী সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
এই সময় ফ্রান্সে যে পার্টি নিজেকে সোশ্যালিস্ট-ডেমোক্রোট বলত, তাদের রাজনৈতিক জীবনে প্রতিনিধি ছিলেন লেদ্রু-রলাঁ আর সাহিত্য জগতে লুই ব্লাঁ; সুতরাং আজকের দিনের জার্মান সোশালডেমোক্রাসির সঙ্গে এর ছিল দুস্তর পাৰ্থক্য। (১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
(8) মূল জার্মানে Kleinburgerel. মার্কস ও এঙ্গেলস কথাটা ব্যবহার করেছিলেন শহরবাসী পেটি বুর্জোয়ার প্রতিক্রিয়াশীল অংশগুলির অর্থে।–সম্পাদক