2) অর্থাৎ সমগ্ৰ লিখিত ইতিহাস। ১৮৪৭ সালে সমাজের প্রাগৈতিহাস (pre-history), লিখিত ইতিহাসের পরবর্তী কালের সামাজিক সংগঠনের বিবরণ প্রায় অজ্ঞাতই ছিল। তারপরে, হাকস্তহাউজেন রুশদেশে জমির উপর যৌথ মালিকানা আবিষ্কার করেন, মাউরার প্রমাণ করেন, যে সকল টিউটনিক জাতির ইতিহাস শরা হয় এই সামাজিক ভিত্তি থেকে, ক্রমে ক্ৰমে দেখা গেল যে ভারত থেকে আয়ল্যান্ড পৰ্যন্ত সবত্র গ্রাম গোষ্ঠীই (village communities) সমাজের আদি রূপ ছিল কিংবা রয়েছে। গোত্রের (gens) আসল প্রকৃতি এবং উপজাতির (tribe) সঙ্গে তার সম্পর্ক বিষয়ে মর্গানের চূড়ান্ত আবিষ্কার এই আদিম কমিউনিস্ট ধরনের সমাজের ভিতরকার সংগঠনের বিশিষ্ট রূপটি খুলে ধরল। এই আদিম গোষ্ঠীগুলি ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ভিন্ন ভিন্ন এবং শেষপর্যন্ত পরস্পরবিরোধী শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়তে থাকে। এই ভাঙনের ধারাটা অনসরণের আমি চেষ্টা করেছি। আমার Der Ursprung der Familie, des Privateigenthums und des Staats“ (‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’) গ্রন্থটিতে – দ্বিতীয় সংস্করণ, স্তুতগার্ত, ১৮৮৬। (১৮৮৮ সালের ইংরেজী সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।) — বর্তমান সংস্করণের দ্বিতীয় খণ্ড দ্রষ্টব্য।–সম্পাঃ
3) গিল্ড্-কর্তা, অর্থাৎ গিল্ড্ সঙ্ঘের পূর্ণ সদস্য, গিল্ডের অন্তৰ্ভুক্ত কর্তা, উপরিস্থিত প্রভু নয়। (১৮৮৮ সালের ইংরেজি সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
4) ফ্রান্সে নবোদ্ভূত শহরগুলি সামন্ত মনিব ও প্ৰভুদের কাছ থেকে স্থানীয় স্বশাসন ও রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে তৃতীয় মণ্ডলী’ (Third Estate) রূপে প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই ‘কমিউন’ নাম গ্রহণ করে। মোটামটি বলা চলে যে বুর্জোয়া শ্রেণীর অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে এখানে ইংলণ্ডকে আদর্শ দেশ ধরা হয়েছে, রাজনৈতিক বিকাশের বেলা ফ্রান্সকে। (১৮৮৮ সালের ইংরেজী সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
ইতালি ও ফ্রান্সের শহরবাসীরা তাদের সমস্ত প্ৰভুদের হাত থেকে আত্মশাসনের প্রাথমিক অধিকার কিনে অথবা কেড়ে নেবার পর নিজেদের নগর-সমাজের এই নাম দিয়েছিল। (১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)
5) পরে মার্কস দেখান যে মজুর শ্রম বিক্রি করে না, বিক্রি করে শ্রমশক্তি। এই উপলক্ষে মার্কসের ‘মজুর-শ্রম ও পুঁজি’ গ্রন্থে এঙ্গেলসের ভূমিকা দ্রষ্টব্য, এই গ্রন্থের ৬৩-৭১ পৃষ্ঠা।–সম্পাঃ
২. প্রলেয়তারিয়েত ও কমিউনিস্টরা
প্রলেয়তারিয়েত ও কমিউনিস্টরা
সমগ্রভাবে প্রলেতারীয়দের সঙ্গে কমিউনিস্টদের কী সম্বন্ধ?
শ্রমিক শ্রেণীর অন্যান্য পার্টি গুলির প্রতিপক্ষ হিসাবে কমিউনিস্টরা স্বতন্ত্র পার্টি গঠন করে না।
সমগ্রভাবে প্রলেতারিয়েতের স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্র কোনো স্বার্থ তাদের নেই।
প্রলেতারীয় আন্দোলনকে রূপ দেওয়া বা গড়ে পিটে তোলার জন্য তারা নিজস্ব কোনও গোষ্ঠীগত নীতি খাড়া করে না।
শ্রমিক শ্রেণীর অন্যান্য পার্টি থেকে কমিউনিস্টদের তফাতটা শুধু এই : (১) নানা দেশের মজুরদের জাতীয় সংগ্রামের ভিতর তারা জাতি-নিবিশেষে সারা প্রলেতারিয়েতের সাধারণ স্বার্থটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাকেই সামনে টেনে আনে। (২) বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর লড়াইকে যে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে হয় তার মধ্যে তারা সর্বদা ও সর্বত্র সমগ্র আন্দোলনের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।
সুতরাং কমিউনিস্টরা হল একদিকে কার্য ক্ষেত্রে প্রতি দেশের শ্রমিক শ্রেণীর পার্টিগুলির সর্বাপেক্ষা অগ্রসর ও দঢ়চিত্ত অংশ — যে অংশ অন্যান্য সবাইকে সামনে ঠেলে নিয়ে যায়। অপরদিকে, তত্ত্বের দিক দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকাংশের তুলনায় তাদের এই সুবিধা যে শ্রমিক আন্দোলনের এগিয়ে যাওয়ার পথ, শর্ত এবং শেষ সাধারণ ফলাফল সম্বন্ধে তাদের স্বচ্ছ বোধ রয়েছে।
কমিউনিস্টদের আশু লক্ষ্য শ্রমিকদের অন্যান্য পার্টির উদ্দেশ্য থেকে অভিন্ন: প্রলেতারিয়েতকে শ্রেণী হিসাবে গঠিত করা, বুর্জোয়া আধিপত্যের উচ্ছেদ, প্রলেতারিয়েত কর্তৃক রাজনৈতিক ক্ষমতা অধিকার।
কমিউনিস্টদের তাত্ত্বিক সিদ্ধান্তগুলি মোটেই এমন কোনো ধারণা বা মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নয় যা বিশেষ কোনো ভাবী বিশ্বসংস্কারকের রচনা বা আবিষ্কার। যে শ্রেণী-সংগ্রাম, যে ঐতিহাসিক আন্দোলন আমাদের নিজের চোখের সামনে বৰ্তমান, তা থেকে বাস্তব যে সম্পর্ক গুলির উৎপত্তি, কমিউনিস্ট তত্ত্ব কেবল তাকেই সাধারণ সূত্ররূপে প্রকাশ করে। প্রচলিত মালিকানা সম্পর্কের উচ্ছেদটা মোটেই কমিউনিজমের একান্ত বৈশিষ্ট্য নয়।
ঐতিহাসিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের সমস্ত মালিকানা সম্পকেও ঐতিহাসিক বদল ঘটেছে।
যেমন, ফরাসী বিপ্লব বুর্জোয়া মালিকানার অনুকূলে সামন্ত সম্পত্তির উচ্ছেদ করে।
সাধারণভাবে মালিকানার উচ্ছেদ নয়, বুর্জোয়া মালিকানার উচ্ছেদই কমিউনিজমের বৈশিস্ট্যসূচক দিক। কিন্তু শ্রেণীবিরোধের উপর, অল্পলোকের দ্বারা বহুজনের শোষণের উপর প্রতিষ্ঠিত উৎপাদন এবং উৎপন্ন দখলি ব্যবস্থার চূড়ান্ত ও পূর্ণতম প্রকাশ হল আধুনিক বুর্জোয়া ব্যক্তিগত মালিকানা।
এই অর্থে কমিউনিস্টদের তত্ত্বকে এক কথায় প্রকাশ করা চলে: ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ।