“অ্যালিসিয়া?” গ্যাব্রিয়েল ডাক দেয় জোরে।
কোন জবাব না পেয়ে আবারো ডেকে ওঠে সে। লিভিংরুমে ঢুকে দেখে ফায়ারপ্লেসের কাছে চেয়ার নিয়ে উল্টো ঘুরে বসে আছে অ্যালিসিয়া।
“এভাবে অন্ধকারে বসে আছো কেন?” জানতে চায় গ্যাব্রিয়েল। কিন্তু কোন জবাব পায় না। “অ্যালিসিয়া?”
খুব কষ্ট করে চুপ থাকে অ্যালিসিয়া-গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল তার-কিন্তু ততক্ষণে চোখে আঁধার সয়ে এসেছিল। দেখতে পাচ্ছিল, অচেনা লোকটা বন্দুক হাতে এক কোণায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। বন্দুকের নলটা গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাক করা। তার স্বার্থেই মুখ বন্ধ রাখে। অ্যালিসিয়া।
“অ্যালিসিয়া?” গ্যাব্রিয়েল এইয়ে যায় তার দিকে। “কোন সমস্যা?”
গ্যাব্রিয়েল হাত বাড়িয়ে অ্যালিসিয়াকে ধরতে যাবে, ঠিক এসময় অন্ধকার থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকটা। চিৎকার করে ওঠে অ্যালিসিয়া, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গ্যাব্রিয়েল, লোকটা তার ওপর চেপে বসে। বন্দুকটা হাতুড়ির মত করে ধরে গ্যাব্রিয়েলের মাথায় পরপর কয়েকবার আঘাত করে। রক্ত ঝরতে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান হারায় সে।
এরপর তার অচেতন দেহটা একটা চেয়ারে বসিয়ে তাকেও তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধে আততায়ী। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফেরে গ্যাব্রিয়েলের।
“কি হচ্ছে এসব? কি-”
বন্দুকটা গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাক করে লোকটা। ট্রিগার টেনে দেয়। প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয় চারপাশ। একবার, দু’বার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার, ছয়বার। গোটা সময় চিৎকার করতেই থাকে অ্যালিসিয়া।
গ্যাব্রিয়েলকে ছয়বার গুলি করা শেষে বন্দুকটা মেঝেতে ফেলে দেয় লোকটা। এরপর কোন কথা না বলে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।
.
৪.১৫
এই হচ্ছে পুরো গল্প। অ্যালিসিয়া বেরেনসন তার স্বামীকে হত্যা করেনি। এক অচেনা আততায়ী তাদের বাসায় ঢুকে পড়ে এবং কোন প্রকার যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই নৃশংসভাবে খুন করে গ্যাব্রিয়েল বেরেসকে। এরপর রাতের আঁধারেই মিলিয়ে যায়। অ্যালিসিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ।
অন্তত অ্যালিসিয়ার কথা বিশ্বাস করলে এমনটাই ঘটেছিল বলে মেনে নিতে হবে।
কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি। একটা শব্দও না।
কিছু বড়সড় অসঙ্গতির কথা তো আমি এখনই বলে দিতে পারবো, যেমন-গ্যাব্রিয়েলকে ছয়বার না, পাঁচবার গুলি করা হয়েছিল। একটা গুলি চালানো হয়েছিল বাড়ির ছাদ বরাবর। তাছাড়া পুলিশের লোকেরা অ্যালিসিয়াকে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় নয় বরং রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় খুঁজে পেয়েছিল। দুই হাত দিয়ে দরদ করে রক্ত ঝরছিল তার। অ্যালিসিয়া আমাকে বলেনি যে লোকটা তার বাঁধন খুলে দিয়েছিল কি না। তাছাড়া পুলিশের লোকদের কেন এই কথাগুলো বলেনি এটারও যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখ্যা দেয়নি।
হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত, সে মিথ্যে বলেছে। মুখের ওপরে এভাবে অকপটে মিথ্যে বলার কারণে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। এক মুহূর্তের জন্যে সন্দেহ হলো যে সে বোধহয় পরীক্ষা করে দেখছে আমি তাকে বিশ্বাস করি কি না। যদি তা-ই হয়, তাহলে আমার মাথায় কি চলছে তা তাকে বুঝতে দেব না একদমই।
চুপচাপ বসে রইলাম ওখানে।
এই প্রথম আগে কথা বলল অ্যালিসিয়া। “আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। আজকে আর কথা বলতে পারবো না।”
মাথা নাড়লাম। একটানা এ রকম বিষয়ে কথা বলার পর যে কারো ক্লান্ত লাগবে।
“কালকে আবার দেখা করি আমরা,” বলল সে।
“আরো কিছু বলার আছে?”
“হ্যাঁ। তবে সেটাই শেষ।”
“ঠিক আছে। কালকে দেখা হবে তাহলে।”
করিডোরে অপেক্ষা করছিল ইউরি। অ্যালিসিয়াকে তার রুমে নিয়ে গেল সে। আমি আমার অফিসে চলে আসলাম।
আগেও বলেছি, সেশন শেষে সবকিছু লিখে ফেলা আমার পুরনো অভ্যাস। থেরাপি সেশনের পঞ্চাশ মিনিটে কি কি কথা হয়েছে তা যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে লিখে ফেলা একজন থেরাপিস্টের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা ছোটবড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে যাবে চিরতরে। এমনকি সেশন চলাকালীন সময়ে রোগির মুখভঙ্গি বা অভিব্যক্তি কেমন ছিল–এসবও লিখে রাখা ভালো।
তাই ডেস্কে বসে যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু লিখে ফেললাম। লেখা শেষ হতেই কাগজগুলো হাতে নিয়ে ছুটে গেলাম ডায়োমেডেসের অফিসের ফিকে। তার দরজায় ঠকঠক করলাম, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া এলো না। আবারো ঠকঠক করার পরেও যখন ডায়োমেডেস কিছু বললেন না, দরজাটা একটু ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দিলাম। দেখি যে প্রফেসর কাউচে বেঘোরে ঘুমোচ্ছেন।
“প্রফেসর?” লাভ হলো না। “প্রফেসর ডায়োমেডেস?” গলা চড়ালাম।
চমকে জেগে উঠলেন তিনি। ঘুম জড়ানো দৃষ্টি তাকালেন আমার দিকে।
“কি হয়েছে? কোন সমস্যা?”
“আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। পরে আসবো?”
ভ্রূ কুঁচকে মাথা ঝাঁকালেন ডায়োমেডেস। লাঞ্চের পর খানিকক্ষণ ভাতঘুমের অভ্যাস আছে আমার। তাহলে আর বিকালে ঝিমাতে হয় না। বয়স হলে তুমিও বুঝবে।” হাই তুলে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। “ভেতরে এসো, থিও। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে জরুরি কিছু বলবে। বসো।”
“জি, আসলেই জরুরি।”
“অ্যালিসিয়াকে নিয়ে কিছু বলবে?”
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে তার ডেস্কের উল্টোদিকের চেয়ারটায় বসে পড়লাম। এক সেকেন্ড পর প্রফেসরও তার চেয়ারটায় এসে বসলেন, চুলগুলো খাড়া হয়ে আছে একদিকে। চোখে এখনও রাজ্যের ঘুম।